কালের কণ্ঠ ডেস্ক
বিগত সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তাঁর বিতর্কিত দুই ছেলে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোকে রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চেয়েছিলেন। এমনকি ছেলেদের সঙ্গে যেতে দিলে তিনি বিদেশে নির্বাসনে যেতেও প্রস্তুত ছিলেন। তবে খালেদার ইচ্ছা অনুযায়ী তখনকার সরকার সৌদি ভিসার ব্যবস্থা করতে না পারায় তাঁদের আর যাওয়া হয়নি। স্বামী জিয়াউর রহমান সাবেক সেনা কর্মকর্তা হওয়ার পরও তাঁর পরিবারের প্রতি তখনকার সেনাবাহিনীর আচরণে খালেদা জিয়া নাখোশ ছিলেন।
২০০৭ সালে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত প্যাট্রিসিয়া এ বিউটেনিসের সঙ্গে এক বৈঠকে খালেদা জিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চেয়েছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে বিউটেনিসের পাঠানো গোপন তারবার্তা থেকে এ তথ্য জানা গেছে। সম্প্রতি বিকল্প ধারার গণমাধ্যম উইকিলিকস অন্য অনেক তারবার্তার সঙ্গে এটিও প্রকাশ করে। তখনকার শেরাটন (বর্তমান রূপসী বাংলা) বিউটেনিসের সঙ্গে প্রথমে খালেদা জিয়া ও তাঁর পুত্রবধূ (তারেকের স্ত্রী) জুবায়দা রহমান একান্ত বৈঠক করেন। খালেদা জিয়া ও জুবায়দা রহমান তারেকের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা কামনা করেন। জুবায়দা অভিযোগ করেন, তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে।
তিনি দাবি করেন, তারেকের বিপুল জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে তাঁকে হয়রানি করা হচ্ছে। ২০০৩ সালের ডাক্তারি পরীক্ষার সনদ দেখিয়ে স্বামীকে অসুস্থ দাবি করে জুবায়দা বলেন, চিকিৎসার জন্য তারেককে জামিন দেওয়া উচিত।
খালেদা জিয়া ও জুবায়দা দাবি করেন, তাঁদের পরিবারের কোনো সদস্যের বিদেশে কোনো সম্পত্তি বা টাকাপয়সা গচ্ছিত নেই। তারেক ও অসুস্থ কোকোর বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর নেওয়া পদক্ষেপে খালেদা জিয়া বিস্ময় প্রকাশ করেন। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে উদ্দেশ করে খালেদা জিয়া বলেন, 'আমরা একই পরিবারের (সেনা বাহিনী) সদস্য।
কিন্তু তারা আমাকে পর্যন্ত কিছু জিজ্ঞেস করেনি। ' বিউটেনিসের কাছে খালেদা প্রশ্ন রাখেন, 'আমাকে বলুন, তারা কী চায়? কেন তারা আমার বিরুদ্ধে?'
খালেদা জিয়া ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের দুর্ভোগের কথা শুনে মার্কিন রাষ্ট্রদূত সহমর্মিতা প্রকাশ করেন। তবে বিউটেনিস কোনো ব্যক্তির মামলার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হস্তক্ষেপ করতে পারে না বলে জানান। রাষ্ট্রদূত বলেন, বড় দুই দলের আটক নেতারা যখন তাঁদের সহায়তা কামনা করেন, তখন তাঁদের পক্ষ থেকে এটুকু বলা ছাড়া আর কিছু করার নেই যে কাউকে দোষী বা নির্দোষ প্রমাণ করার দায়িত্ব তাঁদের না। তাঁরা কেবল সরকারকে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সব বন্দির সঙ্গে মানবিক আচরণ করার আহ্বান জানাচ্ছেন।
খালেদা জিয়া বলেন, সৌদি আরবের চার্জ দি অ্যাফেয়ার্স তাঁর বাসায় এসে ওই দেশে যাওয়ার ব্যাপারে কথা বললেও সরকার তাঁকে সৌদি ভিসা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। বিদেশে যাওয়া মানে নির্বাসন কি না_বিউটেনিস এ প্রশ্ন করলে খালেদা বলেন, 'সরকারই সবকিছু জানাবে। ' তবে খালেদা জিয়া রাষ্ট্রদূতকে বলেন, প্রথমদিকে তিনি তারেককে পরে পাঠানো হবে_এই শর্তেই বিদেশে যেতে রাজি হয়েছিলেন। তবে ওই মুহূর্তে তিনি দুই ছেলেকে নিয়েই বিদেশে যেতে চান।
আলোচনার একপর্যায়ে খালেদা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রমের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হয়ে গেলে তিনি দলের সংস্কারে সহায়তা করবেন।
রাষ্ট্রদূতের এক প্রশ্নের জবাবে খালেদা বলেন, স্থগিত হওয়া নির্বাচনের আগে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, সে ব্যাপারে তিনি অনুতপ্ত নন। বরং এজন্য তিনি আওয়ামী লীগের নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তকে দায়ী করেন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।