ভালবাসি
মামলা পিছু ছাড়ছে না এরশাদের। মামলার পর মামলা। নব্বইয়ের গণরোষের মুখে পতনের পর থেকে এ স্বৈরশাসককে মামলা নিয়ে যে পরিমাণ নাকানিচুবানি খেতে হয়েছে এর আগে বা পরে কোনো শাসককে এ ধরনের হেনস্তার শিকার হতে হয়নি। নব্বইয়ে পতনের পর টানা প্রায় ৫ বছরের মতো জেলই খেটেছেন তিনি। এরপর বড় দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি রাজনীতিতে তাঁকে নিয়ে খেলছে নানা কায়দায়।
এরশাদও এ ক্ষেত্রে জলের মতো- যে পাত্রে যান সে পাত্রের আকার ধারণ করে ‘সমঝে’ চলার চেষ্টা করেন। কথিত আছে, ক্ষমতার পালাবদলের সময়সন্ধিতে তিনি হয়ে পড়েন বেসামাল। সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না ঠিক কোন দিক ছেড়ে কোন দিকে যাবেন। কার পক্ষ ছেড়ে কার পক্ষে কথা বলবেন। কিংবা বুঝে উঠতে পারেন না কখন কী বলতে হবে।
সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে তিনি বারবার পড়ে যান মহাবিপাকে। এখন এই কথা বললেন তো পরক্ষণেই সেই কথা অস্বীকার করছেন অবলীলায়। কারণ তিনি হয়তো ভালো করেই জানেন, এখনো তাঁর জন্য অপেক্ষা করে আছে মামলার ‘জুজু’। ক্ষমতাসীনরা বারবার সে ‘জুজু’র ভয় দেখিয়ে নাচিয়ে থাকেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে।
এবার শোনা যাচ্ছে তিনি আরো একটি মামলায় জড়াতে যাচ্ছেন।
যদি এ মামলাটি হয়ে থাকে, তবে তিনি হবেন হত্যামামলার আসামি। আর আসামি হিসেবে তিনি সঙ্গে পাচ্ছেন তাঁর সাবেক স্ত্রী বিদিশাকে। একই মামলার আসামি হওয়ার সুবাদে বিদিশার সঙ্গে এরশাদের আবার নতুন করে সম্পর্কের মোড়ও ঘুরতে পারে বলে মন্তব্য অনেক রসিক রাজনীতিকের।
রাজনীতিকরা আরো যে খবরটি দিচ্ছেন সেটি হলো- এ মামলায় জড়ালে আগামী নির্বাচন নিয়ে এরশাদের সব ধরনের হিসাব-নিকাশ উল্টে যাবে। শত বঞ্চনার পরও তাঁকে ক্ষমতা ছাড়ার সর্বশেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অন্তত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটেই থাকতে হবে।
জানা গেছে, বর্তমানে আওয়ামী লীগের প্রধান মিত্র, সাবেক এই স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে দায়ের করা হতে পারে নাজনীন হত্যা ও তাঁর পুত্র গুমের মামলা। গুঞ্জন রয়েছে, এরশাদের কথিত পুত্র এরিকই নাজনীনের সন্তান। শিগগিরই এরশাদের বিরুদ্ধে এই হত্যা ও গুমের মামলা দায়ের হতে পারে বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে। আর এতে এরশাদে সঙ্গে আসামি হতে পারেন তাঁর সাবেক স্ত্রী বিদিশা।
সূত্র জানায়, মহাজোটে থাকা-না থাকা নিয়ে সম্প্রতি আওয়ামী লীগ তাঁর ওপর বেজায় চটেছে।
আর সম্প্রতি গাজীপুর সিটি নির্বাচনে তাঁর অবস্থান নিয়েও ক্ষমতাসীন দলটি ভীষণ বিরক্ত। মহাজোট মনে করে, এরশাদ যেকোনো সময় যেকোনো অঘটন ঘটাতে পারেন। তাই তাঁকে বাগে রাখতে নতুন মামলায় জড়ানো ছাড়া আর কোনো পথ নেই। তাই গোপনে এমন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তবে সেই গোপন কথাটিও আর রইল না গোপন।
এ মামলায় সত্যি সত্যিই ফেঁসে যেতে পারেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ! এমন আশঙ্কা এখন তাঁর অতিকাছের মানুষদেরও।
সূত্র জানায়, এরশাদের ছেলে বলে পরিচিত এরিক আসলে এরশাদ বা বিদিশার সন্তান নয়। এরিকের আসল মায়ের নাম নাজনীন। নাজনীনকে হত্যা করে তাঁর ছেলেকে (এরিক) নিয়ে আসেন বিদিশা। পরে তাঁকে নিজেদের পুত্র বলে দাবি করেন তাঁরা।
সূত্রের দাবি, এরশাদ-বিদিশার বিয়ের আগেই এরিক চলে আসে তাঁদের সংসারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারদলীয় এক নেতা বলেন, এরশাদকে আইনি প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসা হলে তাঁর মহাজোট ছেড়ে দেওয়ার স্বপ্ন হারিয়ে যাবে। মহাজোট ছেড়ে নতুন কোনো জোট করা বা একক নির্বাচনের চিন্তাও ভুলে যাবেন তিনি। অধরাই রয়ে যাবে এরশাদের স্বপ্ন। মোট কথা, মহাজোট যেভাবে চাইবে তাকে সেভাবেই কাজ করতে হবে।
সূত্র আরো জানায়, বিষয়টি এরই মধ্যে এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশার কান পর্যন্ত পৌঁছেছে। তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের বলেছেন, ‘এরিক আমার সন্তান তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ’ এদিকে এরশাদও এরিককে তাঁর ছেলে বলেই দাবি করেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে এ ঘটনা চাউর হওয়ার পর থেকে রসিক রাজনীতিবিদরা চটুল মন্তব্য করতেও ছাড়ছেন না। তাঁরা অনেকেই বলছেন, ‘এরশাদ সাহেব পড়েছেন মাইনকার চিপায়’ (সম্প্রতি বহুল প্রচলিত প্রবাদ)।
এখন তার সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপই পারে তাঁকে এ রকম বিপদ থেকে রক্ষা করতে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।