ভিন্দেশী
আব্দুল হামীদ আহমাদ*
( লেখক পরিচিতিঃ সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১৯৫৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন গল্পকার আব্দুল হামীদ আহমদ। ১৯৭৩ সাল থেকেই তিনি লেখালেখির সাথে জড়িত যদিও তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা মাধ্যমিক পর্যন্তই। বর্তমানে বিখ্যাত সাপ্তাহিক “গালফ নিউজ” এর প্রধান সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং আমিরাত লেখক ইউনিয়নের প্রধান। )
-১-
ছোট্ট ঘরটার সামনে উপচে পড়া ভীড়। ছেলে বুড়ো সবার সমান কৌতূহল ঘরটাকে ঘিরে।
গৃহহীনদের জন্য তৈরী করা এই ঘরগুলোর সামনে কখনোই এত মানুষ জড়ো হয়নি। সবার নাকে মুখে কাপড়, নারীর বিলাপ আর শিশুদের ক্রন্দনে এক ভীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।
কেউ একজন সাহস করে দেখে এসে জানাল, “ দরজা তো বন্ধ। ”
অপর একজনের কন্ঠ শোনা গেল, “এত দুর্গন্ধ আর সহ্য করা যাচ্ছে না। ”
তৃতীয় কোন ব্যাক্তি মত প্রকাশ করল, “উহ্ ইঁদুর মরা গন্ধ একেবারে।
”
সূর্যের তাপে দগ্ধ পৃথিবী, বালি নয় পায়ের তলায় যেন জলন্ত অঙ্গার। তবু বাড়তেই থাকে ঘর্মাক্ত, শ্রান্ত মানুষের ভীড়। তীব্র দাবদাহে মানুষের শরীর যেন গলে গলে পড়ছে। ঘরের ভিতর থেকে আসা কটুগন্ধ আর মানুষের ঘামের দুর্গন্ধ মিলেমিশে অসহণীয়, দমবন্ধ এক পরিস্থিতি।
কে যেন নিশ্চিত হতে চাইল, “এটা তো মারিশের বাড়ী।
তাই না?”
উত্তরে কেউ জানাল, “হ্যাঁ, তবে মারিশ"তো এ বাড়ী ছেড়ে চলে গেছে। ”
এবার একটি নারী কন্ঠ, "সে নিজে আমাকে জানিয়েছিল যে সে ওমানে ফিরে যাবে। ’’
আরেকজন বলল, “তবে কাকে সে রেখে গেছে এ বাড়ীতে?”
“তার গাধাটাকে রেখে গেছে বোধহয়। ”
কেউ মন্তব্য করল,“সবকিছুই কেমন আজব লাগছে। ”
প্রথমজনই আবার বলল,“মারিশ কখনোই ওর গাধাটাকে রেখে যাবে না।
সে অবশ্যই ওটাকে সঙ্গে নিয়েছে। ”
কথা বলতে বলতে লোকেরা আরো শক্ত করে চেপে ধরল নাকের কাপড়। একরাশ বিরক্তি আর অসন্তোষ গুনগুনিয়ে উঠে সবার মাঝে।
“ উহু! এ কোন ধরণের গন্ধ রে বাবা!”
এই ভীষণ হট্টগোল আর গন্ডগোলের মধ্যেও একটি শিশু কৌতূহলে মাকে জিজ্ঞেস করে,“মারিশ কে মা?” কিন্তু সে প্রশ্ন মা শুনতে পায় না।
-২-
যখন সে এক পায়ে দাাঁড়িয়ে থাকা লম্বা পাম গাছটার শীর্ষে ওঠে তখন এক তীক্ষè সোঁদা গন্ধ তার নাকে ঢোকে।
গন্ধটা কেমন যেন আদ্র,সিক্ত একদম অন্যরকম। এ গন্ধে তার শরীর জেগে উঠে। নারীদেহ ভোগের বাসনা তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। আশে পাশে কত নারী সে হরহামেশা দেখে, কিন্তু কখনো কাউকে স্পর্শ করে দেখেনি। সারাটা জীবনই সে নারীসঙ্গ থেকে বঞ্চিত।
দুপুরে পাম চারা নিয়ে সে ফিরে আসে তাঁবুতে। কিছু খেজুর আর কফিই তার খাবার। তারপর আয়েশ করে ওমানী তামাকের ধোঁয়া টানতে বসে। পাম গাছের ডাল আর খড়ের তৈরী তাঁবুর একপাশ সে টেনে সরিয়ে রাখে যেন বাতাস ঢোকে। চরম ক্লান্তি দূর করতে ঘুমানো দরকার কিন্তু তার চোখে ঘুম আসে না।
তার মন চলে যায় দূর অতীতে, ভাগ্যান্বেষে ভাইকে সঙ্গে নিয়ে ওমানের ‘বাতিনা’ গ্রাম ছেড়ে আরব আমিরাতে চলে আসার স্মৃতি তাকে বিপর্যস্ত করে।
গাধার পিঠে মালসামান চাপিয়ে হেঁটে রওনা হয়েছিল দু ভাই। মারিশ একটু পর পরই লাঠি দিয়ে তাড়া দিচ্ছিল গাধাকে। পর্বত,পাথুরে উপত্যকা আর মরুভূমির দূর্গম পথ পাড়ি দিয়েছিল তারা পায়ে হেঁটে। কতদিন লেগেছিল তাদের সে পথ অতিক্রম করতে,মারিশ আজ তা মনে করতে পারে না।
সে শুধু মনে করতে পারে কঠিন ছিল সে সফর। তার ভাই বলেছিল,“বাতিনা ছেড়ে এখন আমরা এখন অনেক দূরে। ”
“আমাদের অবশ্যই উপকূলে অঞ্চলে পৌঁছতে হবে। ”
“মারিশ,আমার খুব মনে পড়বে গ্রামের কথা। ”
“আমরা ওখানে কাজ করতে পারব,ভালো খেয়ে পরে বাঁচতে পারব।
”
“আমরা কবে ফিরব?”
“একমাত্র আল্লাহই জানেন এ কথা। ”
আরব আমিরাতে এসে তার ভাই দুবাইয়ে মিষ্টান্ন প্রস্তুতকারী হিসেবে নাম করে। আর কৃষক মারিশ দুবাই এর জুমাইরা গ্রামেই স্থায়ী হয়। অতীতের এসব কথা মনে করে সে কিছুতেই তার কান্নাকে দমন করতে পারে না। আবার সে ঘুমানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে তখনই তার মনে পড়ে বো জাসসিম তাকে আজ বাসায় ডেকেছে দুম্বা জবাই করার জন্য।
বো জাসসিমের দুই ছেলের খাতনা উপলক্ষেই এই আয়োজন। ছুরি নিয়ে মারিশ বেরিয়ে পড়ে বো জাসসিমের বাড়ীর দিকে।
-৩-
কেউ একজন বলল,“গরম যেমন বাড়ছে গন্ধটাও তেমন তীব্রতর হচ্ছে। দমবন্ধ হয়ে আসছে একেবারে। ”
চশমাপরা এক তরুণ বলল,আমাদের অবশ্যই পুলিশকে খবর দিতে হবে।
সঙ্গে স্বাস্থ্য অফিসারকেও জানাতে হবে। ”
আরেক তরুন জবাবে বলল,“এই দুর্গন্ধ থেকে মহামারী হবে। ”
হঠাৎ একব্যক্তি ভীড় ঠেলে খুঁজতে লাগল,কে যেন বলল,মারিশ ওমান চলে গেছে?”
একটি নারীকন্ঠ প্রত্যুত্তর করল,“সে নিজে আমাকে বলেছিল। ”
লোকটি জবাবে বলল,কিন্তু চার দিন আগেই তো আমি তাকে দেখেছি বিষন্ন হয়ে পাম গাছের নিচে বসে থাকতে। ”
অনেক আওয়াজে গমগম করে উঠল সেই ভীড়।
মানুষের ভীড়ে বাড়ল তাপমাত্রা,বাড়ল কোলাহল। সেই শিশুটা আবারো জানতে চাইল,“ও মা,মারিশ কে?” কিন্তু তার কচি কন্ঠ তীব্র হৈ চৈ এ চাপা পড়ে গেল আর একবার।
-৪-
নি:সঙ্গতা আর যন্ত্রণা ভুলতে আজ সে অনেকক্ষণ তামাকে ডুবে আছে। সালেম চলে গেছে তাকে ছেড়ে। বেশ কিছুদিন থেকে তার সাথে আর দেখা হয়না।
তারা একসঙ্গে ধূমপান করত আর পরস্পরের সুখ দুখের সঙ্গী ছিল। বিস্মিত হয়ে সেদিন সে জানতে চেয়েছিল,“ কিন্তু কেন তুমি ফিরে যেতে চাও মারিশ?”
বেদনাহত হয়ে সে উত্তর দেয়,“কিভাবে থাকব আমি এখানে? কেউ তো ঘুরেও তাকায় না আমার দিকে। ” তার চোখের পাতা কেঁপে উঠে,নিজেকে সামলে নিয়ে আবেগ আপ্লুত কন্ঠে সে বলে,“ সবার থেকে আলাদা হয়ে,বিস্মৃত হয়ে আমি থাকতে চাই না। ”
“কিন্তু...!”
বন্ধুর কথা থামিয়ে দিয়ে অশ্র“সিক্ত হয়ে সে বলেছিল,“ আর পাম চাষের কথা কেউ ভাবে না। আর দুম্বাও এখন জবাই করা হয় বাজারে,জবাইকরার বিশেষ দোকানে।
”
“কিন্তু তুমি তো শহরে প্রহরী হিসেবে কাজ করতে পার। অথবা শ্রমিক হিসেবে। আমি তো প্রহরীর কাজ করছি। অথবা, কেন তুমি তোমার ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করছ না? সেটাই তো তোমার জন্য উত্তম। ”
“দুই বছর আগেই তো আমার ভাই মারা গেছে।
”
“আল্লাহ তার আত্মাকে শান্তিতে রাখুন। ”
নাক রগড়ে কান্না থামিয়ে বন্ধুকে কফির পাত্র এগিয়ে দিয়ে সে বলেছিল,“আজকাল কাজ করতে গেলে প্রয়োজন হয় পরিচয়পত্র,নাগরিকত্বের সনদ আর পাসপোর্ট। এসব ছাড়া কেউ আমাকে কাজে নিবে না। ”
নিরাশায় নিশ্চুপ হয়ে যায় মারিশ। “পরিচিত ভালো মানুষগুলো সব চলে গেছে বা মারা গেছে।
এখন কেউ আর আমাকে চিনে না। "
অদ্ভুত এক নিরবতায় দুইটি মানুষ হতভম্ব হয়ে বিষাদমাখা দৃষ্টি বিনিময় করে।
“ত্রিশটা বছর তুমি কাটালে এই দেশে অথচ আজ মনে হচ্ছে তুমি কখনো ছিলেই না এখানে। তাই না মারিশ?”
“যে পথ ধরে এসেছিলাম সে পথ ধরেই ফিরে যাব আমি। বাতিনায় আমি বৃক্ষায়নের কাজ শুরু করব।
”
মারিশ তার জিনিষপত্র গুছিয়ে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। যাবার আগে সালিমকে বলল,“সালিম আমার গাধাটাকে নেবে? হয়ত তোমার কাজে লাগবে এটা। ”
ওমানের বাসে উঠিয়ে দিতে সালিম তার সঙ্গে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত যায়। বিদায় মূহুর্তে দুই বন্ধু দীর্ঘক্ষণ পরস্পরকে জড়িয়ে রাখে,অশ্র“সিক্ত হয়ে শেষবিদায় জানায় মারিশ তার প্রিয় বন্ধুকে।
-৫-
আমার বয়স যখন আট তখন মারিশ এসেছিল আমার বাবার কাছে।
আমাদের পাম বাগানে সে বাবাকে সাহায্য করত। তার অনেক কথা শুনে তাকে দেখার ভীষণ কৌতুহল হয়েছিল আমার। খুব আগ্রহ নিয়েই একদিন তার সঙ্গে দেখা হয়েছিল।
বাগানের একপ্রান্তে ছায়ায় বসে তাকে নিয়েই কথা হচ্ছিল বাবার সঙ্গে.“মারিশ কি করে বাবা?”
“সে একজন কৃষক। বাবা”
“তার ছেলেপুলে নাই?”
“না,সে একাই থাকে তার কুঁড়েঘরে।
তার না আছে স্ত্রী, না পরিবার। ”
“সে কেন বিয়ে করে না বাবা?”
“সে এক দরিদ্র ওমানী কৃষক। এমন অসহায় মানুষকে কে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করতে রাযী হবে?”
এমন সময় গলা খাঁকারী দিয়ে লম্বা কালো শাশ্র“মন্ডিত এক লোক কাঁধে কুড়াল কোদাল নিয়ে এগিয়ে আসে আমাদের দিকে। হলদেটে মস্তকাবরণ দিয়ে তার মাথা আবৃত। হয়তো একসময় কাপড়টি সাদা রং এর ছিল।
তার চোখ দুটো সরু, নাকের ডানদিকটা লালচে আর কুঁকচানো। যেন ইঁদুর কামড়ে নিয়েছে। নীল সবুজ ডোরাকাটা লুঙ্গী আর ঘামে ময়লায় জবজবে সাদা জামা ছিল তার পরনে।
সে আমার সঙ্গে স্বভাবসুলভ রসিকতাপূর্ণ কথাই বলল।
বাবা তার কথায় না হেসে পারলেন না।
“মারিশ, ঠাট্টা কৌতুক ছাড়া তুমি দেখছি কথাই বলতে পার না । ”
মারিশের হাসি ছিল অনবদ্য আর প্রাণবন্ত। সেদিন সারাক্ষণই আমি মারিশের কাছাকাছি ছিলাম। কাজ শেষে বাবা আর মারিশ যখন খেতে বসল আমার মা তাদের খেজুর আর কফি দিয়ে আপ্যায়ন করলেন। ঠাট্টাচ্ছলেই মা তখন মারিশকে প্রস্তাব দিলেন,“ হানতোমার সঙ্গে তোমার বিয়ের কথা ভাবছি আমরা,তোমার কি মত মারিশ?”
আমি চিনতাম হানতোমাকে।
সে ছিল কৃষ্ণকায় আর লাস্যময়ী। গাধার পিঠে করে সে গ্রামবাসীর জন্য সুপেয় পানি বয়ে আনত। মার পিছু পিছু থাকতাম বলে সে আমাকে বলত,“তুমি যে মায়ের আঁচলধরা ছেলে হয়েছ। ”
মারিশ তার উচ্ছ্বল হাসি দিয়ে জানিয়ে দিল,“আমি তাকে চাইনা আমার জীবনে। ”
মারিশকে আমি খুব পছন্দ করতাম।
তাকে দেখা যেত সর্বত্রই,পথে ঘাটে,পাম গাছের নীচে,উৎসবে পার্বণে,বিয়ে বা খাতনা অনুষ্ঠানে,কুয়োর ধারে কিংবা সমূদ্রতীরে। সবার সাথেই রসিকতা করত। তার অনন্য হাসির আওয়াজে শোনা যেত যখন তখন। এরপর আমি উচ্চশিক্ষার্থে বিদেশ চলে যাই। বহুদিন পর ফিরে এসে আর তাকে সে ভাবে পাইনি,তার কথা আলোচনা করতেও শুনিনি কাউকে।
-৬-
জনতার ভীড়ে ছোট ঘরটি এখন আর দেখাই যাচ্ছে না। সূর্যটাও ঝলসে দিচ্ছে চারপাশ। তীব্র তাপেও মানুষের হৈ চৈ আর গুঞ্জনে কোলাহল বেড়েই চলেছে।
“ভাইসব, আমাদের অবশ্যই কিছু একটা করতে হবে। ”
একজন জানতে চাইল,“আমরা কি করব? পুলিশকে ডাকব কি?”
আরেকজন মত দিল,“না, আমরা নিজেরাই দরজা ভেঙ্গে দেখব কি আছে ভিতরে।
”
এ কথা সমর্থন করে অন্য একজন আহবান জানাল, গরম অসহনীয় হয়ে উঠেছে। এভাবে আর দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব নয়। দরজা ভাঙ্গা ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় নেই। ”
এবার সবাই সমর্থন করল,“তবে চলুন সেটাই করি আমরা। ”
সবাই মাথা উঁচিয়ে দেখার চেষ্টা করল।
তিনজন মানুষ দরজায় আঘাত করতে লাগল। দরজাটা খুলে পড়া মাত্রই ভীষণ শোরগোল শুরু হয়। তুমুল হট্টগোলে সবাই হুড়োহুড়ি করে এগুতে থাকে। ছোটরা এত গন্ডগোলে ভয় পেয়ে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে। তীব্র দুর্গন্ধ গরম বাতাসের সঙ্গে মিশে জলপ্রপাতের মত সবার উপর দিয়ে বয়ে যায়।
“উঁহু রে একি বিকট গন্ধ”
লোকেরা আতঙ্কিত হয়ে চিৎকার করে,“ও আল্লাহ! আমাদের সহ্য শক্তি বৃদ্ধি করে দাও। ”
-৭-
পরদিন উম্মু আব্দুল্লাহ তার প্রতিবেশী উম্মু হুসাইনের সাথে কথা বলছে। তার দুচোখে অশ্র“ টলমল। উম্মু আব্দুল্লাহ বলছেন,“হায় আল্লাহ! লোকটা তবে কুকুরের মতই মারা পড়ল। ”
“লোকেরা বলছিল লাশটা ফুলে ঢোল হয়ে ছিল।
আবু হুসাইন বলছিল,কারো পক্ষে তাকে সনাক্ত করা সহজ ছিল না । ফুলে ফেঁপে তার মুখটা বিকৃত হয়ে গিয়েছিল,চোখটা পর্যন্ত দেখা যাচ্ছিল না। তার নাক আর মুখ থেকে নাকি পোকাও বেরিয়ে আসছিল। ”
ঘৃণায় বালিতে থুথু ফেলে উম্মু আব্দুল্লাহ। “এভাবে কি কোন মানুষ মরে? কি বিচিত্র জীবন!”
“কী অদ্ভুত যুগে বাস করছি আমরা! এমন একটা সময় যখন ভাই ভুলে থাকছে ভাইকে।
”
উম্মু আব্দুল্লাহ আরো বললেন,“আমার স্বামী বললেন,আবু নাসসারের সঙ্গে মারিশের দেখা হয়েছিল পাঁচদিন আগে। সে জানতে চেয়েছিল, সে ওমান যায়নি কেন? সে জানিয়েছিল,সে রওনা হয়েছিল কিন্তু বর্ডারে সে বাধা পায়। তাকে সীমান্ত অতিক্রম করতে দেয়া হয়নি কারণ তার পাসপোর্ট নেই। সে অনেকভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছে যে সে আসলে ওমানী। কিন্তু তাকে আরব আমিরাতেই ফেরত পাঠানো হয় যেখানে সে ত্রিশ বছর ছিল।
জীবিকার জন্য এসেছিল। কেউ তার কথা বিশ্বাস করেনি, তাই তাকে আবার ফিরে আসতে হয়েছে।
উম্মু হুসাইন ব্যথিত হয়ে বলল,“আর তাই তারা তাকে বঞ্চিত করল মাতৃভূমি আর আপনজনদের সঙ্গ থেকে। ”
উম্মু আব্দুল্লাহ বলল,“কিন্তু এরা তাকে আরব আমিরাতের পাসপোর্ট দিতেও সম্মত হয়নি। ”
“আল্লাহ তাকে ক্ষমা করুন আর তার আত্মাকে স্থায়ী শান্তি দিন।
”
দুজনেই নীরব হয়ে যায়।
উম্মু হুসাইন একটু পরে জানায়,“তুমি কি বুঝতে পেরেছ,মারিশের মৃত্যু স্বাভাবিক ভাবে হয় নি?”
বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে উম্মু আব্দুল্লাহ বিস্ময় প্রকাশ করে,“কি বললে?”
“যারা ঘরের দরজা ভেঙ্গে ঢুকেছিল তারা তার শরীরে অনেক আঘাতের চিহ্ণ দেখেছিল। তার ঘাড়ের কাছের আঘাতটা ছিল অনেক গভীর। আর শুকনো কালো রক্তের দাগ ছিল মেঝেতে। একটা ধারালো কাস্তেও নাকি পড়ে ছিল তার পাশে।
“তবে কি সে আত্মহত্যাই করেছে?”
ভয়ে বিস্ময়ে গালে হাত রেখে জানতে চাইল উম্মু আব্দুল্লাহ। জোরে নি:শ্বাস ফেলে সে বলতে লাগল,“হায় মারিশ! কঠিন হতাশা আর মানসিক যন্ত্রণাই তোমাকে মেরে ফেলল! কী নি:স্ব হয়েই না তুমি মারা গেলে। না স্ত্রী, না পরিবার-- কেউই রইল না তোমার। ”
পরবর্তী একমাস শুধু এ আলোচনাতেই সবাই ব্যস্ত থাকল কি ঘটেছিল মারিশের ভাগ্যে।
মহিলারা একে অপরের কাছে তাকে নিয়ে গল্প করতে থাকল আর পুরুষরাও তাকে ভেবে অশ্র“ দমাতে পারেনি।
এবং সবার মধ্যে জেগেছিল এক অব্যক্ত অপরাধবোধ।
মর্মস্পর্শী ঘটনা বিস্মৃত হবার আগে শিশুটি আবারো তার মায়ের কাছে জানতে চায়,“মারিশ কে, মা?”
ভাষান্তর: তাসনীম আলম
ধষধসঃধংহরস@মসধরষ.পড়স
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।