ডাকে পাখি, খোলো আঁখি। দেখো সোনালী আকাশ, বহে ভোরেরো বাতাস। (পোস্টটি অনেক তথ্যবহুল বিধায় আকারে বেশ কিছুটা বড়, তাই সম্মানিত পাঠকমহলের নিকট লেখাটা একটু ধৈর্য ধারণ করে পড়ার জন্য অনুরোধ রইলো)
ভূমিকা:
সম্মানিত ব্লগারবৃন্দের নিকট আমার একটি বিশেষ অনুরোধ: বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্লগে ভারতীয় দাদা, ভাদা, ভাকু, ভাজাকাররা সীমান্তে বিএসএফ এর নির্বিচার হত্যা ও নির্যাতনের সপক্ষে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের প্রসঙ্গ তুলে ধরে সীমান্ত-হত্যাকে বৈধ ও আইনসঙ্গত হিসেবে তুলে ধরার জন্য সাফাই গায় কিংবা সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু সেইসব ভারতীয় দাদা, ভাদা, ভাকু, ভাজাকাররা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তাদের স্বগোত্রীয় ভারতীয়দের অবৈধ অনুপ্রবেশ ও সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধকর্ম সম্পর্কে কোন জ্ঞান রাখে না কিংবা জ্ঞান রাখলেও সেটা কৌশলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তাদের সেই বিষদাঁতকে ভেঙ্গে দেয়ার জন্যই গত বেশ কয়েকদিন ধরে আমি অনেক খাটাখাটি করে অনেক তথ্য খুঁজে পেতে বিভিন্ন সংবাদ-প্রতিবেদনের আর্কাইভমূলক এই পোস্টটি তৈরী করেছি।
আপনাদের সকলের নিকট আমার একটি একান্ত অনুরোধ রইলো, আপনারা এই পোস্টটি কিংবা পোস্টের লিঙ্কটি অনুগ্রহ করে সংগ্রহ করে রাখুন। কেননা, কোন ভারতীয় দালাল যদি ভবিষ্যতে কখনো বাংলাদেশীদের অনুপ্রবেশকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে বিএসএফ এর সীমান্ত-হত্যাকে বৈধ করার চেষ্টা করে তাহলে সাথে সাথে এই পোস্টটি সেখানে তুলে ধরে তাদের বিষদাঁতকে ভেঙ্গে দিবেন। বিএসএফ এর অন্যায় সীমান্ত-হত্যাকান্ডের সপক্ষে সাফাই গাওয়া ভারতীয় দালালদের বিষদাঁতকে যদি এর মাধ্যমে চিরতরে ভেঙ্গে দেয়া যায় তাহলেই আমার এতদিনের পরিশ্রম সার্থক হবে। সবাইকে ধন্যবাদ।
উপক্রমনিকা:
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘ ২৪২৯ কিলোমিটার বিস্তৃত সীমান্তরেখা বিদ্যমান।
এই সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বাস করে দুটি দেশেরই সীমান্তবর্তী লক্ষ লক্ষ মানুষ। এই বিষয়ে একটি অনস্বীকার্য সত্য হলো যে উভয় দেশেরই সীমান্তবর্তী মানুষেরা ভাগ্য-পীড়িত হতদরিদ্র। এই সকল দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে বেঁচে থাকার তাগিদে সীমান্তের এপাড়ে-ওপাড়ে বিভিন্ন ধরনের বৈধ-অবৈধ লেন-দেন ও ব্যবসার উপর নির্ভর করে থাকতে হয়। উদাহরণস্বরূপ: গরু চোরাচালান, মাদক চোরাচালান, কাপড় চোরাচালান, খাদ্য-পণ্য চোরাচালান ইত্যাদি ইত্যাদি। এরই খাতিরে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মানুষেরা যেমন সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতীয় অংশে প্রবেশ করে তেমনি ভারতের সীমান্তবর্তী অংশের মানুষেরাও সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের অংশে প্রবেশ করে।
এই বিষয়ে ছোট্ট একটা উদাহরণ দেয়া যাক, সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের স্থাপন করা সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার কারণে দুটি দেশের দরিদ্র মানুষদের মধ্যে চোরাচালানভিত্তিক ছোটখাটো যে ব্যবসাগুলো বন্ধ হওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে তাতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্রেফ ভারতের ত্রিপুরাতেই ২.৫ থেকে ৩.০ লক্ষ মানুষ। কারণ, ত্রিপুরার এই মানুষেরা তাদের জীবিকার জন্য বাংলাদেশের মানুষদের উপরেই নির্ভর করে থাকতো, যে কারণে ত্রিপুরার এই সকল মানুষেরা সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার কারণে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের উপর অত্যন্ত নাখোশ।
তথ্যসূত্র: বিবিসি নিউজে প্রকাশিত সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার উপর ক্ষুব্ধ ত্রিপুরার সীমান্তবর্তী মানুষদের নিয়ে একটি সংবাদ প্রতিবেদন
আশা করি এর থেকে কিছুটা হলেও অনুমান করা যাচ্ছে যে জীবিকার তাগিদে প্রতিদিন কি পরিমাণ ভারতীয় বৈধ-অবৈধ ভাবে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে বা প্রবেশ করতে চায়। অথচ ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সবসময় দাবি করে আসছে যে কেবল বাংলাদেশীরাই ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশের জন্য উন্মুখ এবং ভারতীয় সীমানার ভেতরে প্রবেশ করার অপরাধেই বিএসএফ তাদেরকে গুলি করে হত্যা করে কিংবা বিভিন্ন উপায়ে শারীরিক নির্যাতন করে।
কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে এই যে বাংলাদেশীদের চেয়ে ভারতীয়রাই সবথেকে বেশী সীমান্ত পেরিয়ে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে।
কিন্তু বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বিডিআর কোন ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীকে দেখামাত্র গুলি ছুঁড়ে না বলে কখনোই কেউ জানতে পারে না যে কতোজন ভারতীয় অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশের সীমান্তের ভেতরে ঢুকেছিলো কিংবা অনুপ্রবেশকারী ভারতীয়দের সংখ্যাধিক্য ঠিক কতো হতে পারে। বিডিআর এর হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে কিংবা নির্যাতনের শিকার হয়ে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করা ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীরা কখনো মৃত্যুবরণ করে না বলে দেশী ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে কখনোই ফলাও করে সীমান্তে ভারতীয় হত্যার খবর বের হয় না। যে কারণে আন্তর্জাতিক মিডিয়া ও বিশ্ববিবেক বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অবৈধ ভারতীয় অনুপ্রবেশের বিষয়ে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রয়েছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশকারী কোন ভারতীয় যদি বিডিআর কিংবা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে থাকে তাহলে আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষ তাদেরকে নিরাপদ হেফাজতে নিয়ে যথাযথ আইনগত প্রতিবিধান নিশ্চিত করে।
সীমান্তে নির্বিচারে বাংলাদেশী হত্যা বিএসএফ কর্তৃক সংগঠিত কোন বিচ্ছন্ন ঘটনা নয়, এটা দিল্লীর একটি পরিকল্পিত নীলনকশা।
বিভিন্ন ভারতীয় পত্র-পত্রিকা ও বিভিন্ন সময়ে ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের সাক্ষাতকার পর্যালোচনা করলে জানা যায় যে ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশীদের অনুপ্রবেশকে তারা বাংলাদেশী ‘অভিবাসন’ বা Immigration হিসেবে প্রতিপন্ন করছেন এবং এই অভিবাসনকে তারা প্রতিবেশী বাংলাদেশ কর্তৃক সীমান্ত দিয়ে অবাধ মুসলিম-জনসাধারণের অনুপ্রবেশের মাধ্যমে হিন্দুপ্রধান ভারতে পরিকল্পিত ‘ইসলামীকরণ’ বা Islamization সংঘটন হিসেবে মনে করছেন। এ কথা থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে দিল্লীর ভারতীয় নীতিনির্ধারকেরা তাদের স্ব-সংজ্ঞায়িত এই ‘ইসলামীকরণ’ বা Islamization কে অনতিবিলম্বে বন্ধ করার জন্য সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে তৎপর হয়েছেন এবং এরপরেও কোন বাংলাদেশী অনুপ্রবেশ করলে তাকে দেখিবামাত্র গুলি (Shoot-at-Sight) করার নির্দেশ দিয়ে রেখেছেন।
পরিকল্পিত ‘ইসলামীকরণ’ বা Islamization এর এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। হিন্দুপ্রধান ভারতে মুসলিম জনসংখ্যার হার ১৩.৪%, কাজেই ১২১ কোটি জনসংখ্যার ভারতে মুসলিম জনসাধারণের সংখ্যাগত পরিমাণ ১৬.২১৪ কোটি যা বাংলাদেশের সর্বমোট জনসংখ্যার চাইতেও বেশী। যে দেশে বাংলাদেশের সর্বমোট জনসংখ্যার চাইতেও বেশী মুসলিম বসবাস করে সেই দেশে বাংলাদেশ কি করে মুসলিম অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে পরিকল্পিত ‘ইসলামীকরণ’ বা Islamization সংঘটিত করে? আর তা ছাড়া বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের কেবলমাত্র হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরাই ভারতে অভিবাসী হওয়ার জন্য সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করে থাকে।
এটা বাদে অন্য যারা অনুপ্রবেশ করে তারা জীবিকার প্রয়োজনেই অনুপ্রবেশ করে পরে আবার ফিরে আসে, চিরস্থায়ীভাবে ভারতে থেকে যাওয়ার জন্য যায় না কিংবা অভিবাসী হওয়ার জন্য যায় না।
ভারতের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে আরেকটা অভিযোগ করা হয়, সেটা হলো বাংলাদেশ নাকি পরিকল্পিতভাবে সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে ভারতের আসাম রাজ্যের মুসলিম জনসংখ্যার হার অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে এবং এই কারণে নিকট ভবিষ্যতে আসাম নাকি একটি মুসলিম-প্রধান প্রদেশে পরিণত হবে!
এই অভিযোগও সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। আসামে মুসলিম মোট জনসংখ্যার হার ৩০.৯% এবং এই হার ’৪৭ এর দেশভাগের আগ থেকেই বিদ্যমান ছিলো। কারণ, আসামের দুটা জেলা করিমঞ্জ(৫৩%) ও হাইলাকান্দি(৫৭%) মুসলিম প্রধান জেলা এবং অন্য আরেকটি জেলা কাছারের মুসলিম(৪৬%) জনসংখ্যাও প্রায় হিন্দুদের(৫০%) কাছাকাছি। এর কারণ প্রধানত দুটি।
প্রথমত, আসামের বরাক উপত্যকার অর্ধেকই ছিলো ১৪ শতক থেকে মুসলিম তুর্ক-আফগান শাসনামল ও পরবর্তিতে মুঘল শাসনের অন্তর্ভুক্ত, যে কারণে বরাক উপত্যকায় মুসলিম জনসংখ্যা ও মুসলিম সংস্কৃতির বিকাশ ঘটতে থাকে সেই ১৪ শতক থেকেই।
দ্বিতীয়ত, ইংরেজ শাসনামলে ইংরেজ সরকার কর্তৃক পরিকল্পিতভাবে পূর্ব বাংলা থেকে মুসলিম বাঙ্গালী কৃষকদেরকে আসামে স্থানান্তরকরণ ও অভিবাসন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের ফলশ্রুতিতে ভাইসরয় লর্ড কার্জন অবিভক্ত বাংলাকে ভেঙে দুই ভাগ করেন। সিলেট তো আগেই ছিল, এবার গোটা পূর্ববাংলাই অন্তর্ভুক্ত হয় চিফ কমিশনার্স প্রভিন্সে। নতুন নাম হলো 'ইস্টবেঙ্গল-আসাম' প্রভিন্স।
প্রধান হলেন ইংরেজ লেফটেন্যান্ট গভর্নর, রাজধানী শিলং থেকে স্থানান্তর হলো ঢাকায়। এ সময় রাজস্ব আদায় আরো বাড়ানোর জন্য ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে চাষাবাদের উদ্যোগ নেয় সরকার। স্থানীয় অহমিয়ারা কৃষিকাজে অনভ্যস্ত থাকার কারণে পূর্ববাংলার মুসলিম চাষীদের আসামে নিয়ে আসা হয় সরকারি উদ্যোগে। শুরু হয় স্থানান্তর ও বসতি স্থাপনের নতুন অধ্যায়। এর আগে এ অঞ্চলে কখনো পাট চাষ না হলেও প্রথমে ৩০ হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করা হয় পাট চাষের জন্য।
তৎকালীন সময়ের সবচেয়ে অর্থকরী এই ফসলের উৎপাদনে বাঙালি কৃষকদের দক্ষতা অতুলনীয় ছিল বলে ১৯১৯-২০ সালে পাট চাষের জমির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় এক লাখ ছয় হাজার একর, একই সঙ্গে আসামে মুসলিম অভিবাসীর সংখ্যা দাঁড়ায় পাঁচ লাখ ৭৫ হাজারে। আশা করি এখন বুঝা যাচ্ছে, কেন আসামে মুসলিম বাঙ্গালীদের সংখ্যা ৩০.৯%।
তথ্যসূত্র: আসামের বরাক উপত্যকা
তথ্যসূত্র: দৈনিক কালের কন্ঠে প্রকাশিত পূর্ব বাংলা ও আসাম নিয়ে একটি সংবাদ প্রতিবেদন
আশা করি এখন বুঝা যাচ্ছে যে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ যে সব কারণে এবং যে সব সন্দেহের ভিত্তিতে সীমান্তে কোন বাংলাদেশী দেখামাত্র নির্বিচারে গুলি করে ও নির্যাতন করে হত্যা করছে সেইসব কারণসমূহ একেবারেই ভিত্তিহীন এবং তীব্র অবিশ্বাসে ভরা অলীক কল্পনাপ্রসূত। বরং তারা এইকথা ঘুনাক্ষরেও জানে না যে তাদের দেশের সীমান্তরক্ষী বিএসএফ ও সীমান্তবর্তী ভারতীয় অধিবাসীরা কিভাবে বিভিন্ন প্রয়োজনে দলে দলে অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে বিভিন্ন অপরাধ সংগঠিত করে এবং বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর সব কর্মকান্ডে জড়িত হয়। বাংলাদেশের যুবসমাজকে ধ্বংস করার জন্য বিভিন্ন নিষিদ্ধ ভারতীয় মাদকদ্রব্যের চালান বয়ে আনা, বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা অতিক্রম করে ইলিশের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ বিচরণস্থলগুলোতে এসে ভারতীয় জেলেদের দ্বারা কোটি কোটি টাকার ইলিশ চুরি করে নিয়ে যাওয়া, বাংলাদেশের সীমান্তে ঢুকে বাংলাদেশী কৃষকদের ক্ষেতের ফসল কেটে নিয়ে যাওয়া নয়তো ক্ষেতের ফসল ট্রাক্টর নিয়ে মাড়িয়ে নষ্ট করে দেয়া, বাংলাদেশের সীমানার ভেতরে ঢুকে বাংলাদেশীদের জমি দখল করে ট্রাক্টর-পাওয়ারটিলার দিয়ে ইচ্ছা মতো জমি চাষবাস করা, বাংলাদেশের ভিতরে ঢুকে বিএসএফের সহযোগিতায় বাংলাদেশীদের গরু বা গবাদি পশু ধরে নিয়ে যাওয়া, ভালো চাকরীর লোভে বাংলাদেশে ঢুকে ভারতীয় আত্মপরিচয় গোপন করে বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরী করা, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নারী ও শিশু পাচার, জঙ্গীবাদের বিস্তার ঘটানোর জন্য ভারতীয় ইসলামী জঙ্গীদের অনুপ্রবেশ, এমন কি পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগরাছড়িতে পাহাড়ি-বাঙ্গালী সংঘর্ষে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ইন্ধন যোগানোর কাজেও জড়িত হওয়া, কি কি অপরাধ করছে না ভারতীয় অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরা?
বাংলাদেশের সীমান্তের ভিতরে ভারতীয় অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের কিছু কৃতকর্মের উদাহরণ উল্লেখ করছি:
অবৈধভাবে সমুদ্রসীমা অতিক্রম করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরস্থ ইলিশের সবথেকে প্রসিদ্ধ বিচরণস্থলগুলো থেকে ভারতীয় জেলেরা কোটি কোটি টাকার ইলিশ চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে:
ইলিশের ভরা মৌসুমে অবৈধভাবে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা অতিক্রম করে ইলিশের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ বিচরণস্থলগুলো থেকে কোটি কোটি টাকার ইলিশ চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে ভারতীয় জেলেরা, তাদের দৌরাত্ম্যে বাংলাদেশী জেলেরাই নিজেদের সমুদ্রসীমায় মাছ ধরতে যেতে পারছে না।
বাংলাদেশী জলসীমায় যেসব এলাকায় ইলিশের মূল বিচরণক্ষেত্র সেখানে ভারতীয় জেলেদের তৎপরতায় দেশীয় জেলেরা যেতে পারছে না। ভারতীয় জেলেদের দ্রুতগামী ট্রলার, বাইনোকুলার, ওয়্যারলেসসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকে। এ ছাড়া তারা সংঘবদ্ধ থাকায় আমাদের জেলেরা ভয়েও তাদের ধারেকাছে যায় না। একদিকে পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী বাংলাদেশ থেকে কম দামে ইলিশ বাগিয়ে নেয়ার পাঁয়তারা করছেন আর অন্যদিকে উনার দেশের জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমা থেকে বিনা পয়সাতেই কোটি কোটি টাকার ফ্রি ইলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে, কি অসাধারণ ইলিশলোভী ভারতীয় তৎপরতা !!
পৃথিবীর মোট ইলিশের ৫০-৬০% আহরিত হয় বাংলাদেশ থেকে, আর ভারত থেকে আহরিত হয় ১৫-২০%। বাংলাদেশের জলসীমা থেকে এভাবে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার ইলিশ চুরি করে নিয়ে যাওয়ার ফলশ্রুতিতে সম্প্রতি ভারতের ইলিশ আহরণ দুই থেকে আড়াই ভাগ বেড়ে গেছে, যা বাংলাদেশের জন্য সত্যিই উদ্বেগজনক।
যদি এই অবস্থা চলতে থাকে তাহলে হয়তো অচিরেই পাটশিল্পের মতো ইলিশও আমাদের দেশ থেকে হারিয়ে যাবে।
এ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুন বাংলাদেশের সংবাদপত্রগুলিতে এই নিয়ে কিছু সংবাদ প্রতিবেদন:
দৈনিক প্রথম আলোর প্রতিবেদন
দৈনিক মানবজমিনের প্রতিবেদন
দৈনিক সমকালের প্রতিবেদন
দৈনিক আমার দেশের প্রতিবেদন
দৈনিক সকালের খবরের প্রতিবেদন
দৈনিক সংগ্রামের প্রতিবেদন
কিছুদিন আগে শ্রীলঙ্কান নৌবাহিনী একই অপরাধে শত শত ভারতীয় জেলেকে গ্রেফতার করেছিলো এবং বেশ কিছু জেলেকে গুলি করে হত্যাও করেছিলো, কিন্তু আমাদের দেশের ভারত-বান্ধব উপরমহলের ভয়ে আমাদের নৌবাহিনী ভারতীয় জেলেদের এই সকল অপরাধ স্রেফ চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করতে পারে না।
তথ্যসূত্র: NDTV News - Indian fisherman killed as Lankan Navy opens fire
তথ্যসূত্র: BBC News - Sri Lanka arrests Indian fishermen 'in its waters'
বাংলাদেশের সীমানার ভিতরে ঢুকে ভারতীয়রা এবং বিএসএফ যখন ইচ্ছা তখন বাংলাদেশীদের গরু চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে:
ভারতীয় দাদারা অনেক সময় আয়েশ করে করে থাকেন যে বাংলাদেশীরা নাকি ভারতীয় গরু চুরি করার জন্য ভারতে ঢুকে, সীমান্তে বিএসএফ আসলে বাংলাদেশী গরু-চোরদেরই গুলি করছে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু, মূল সত্য হচ্ছে যে ভারতীয়রাই এবং বিএসএফ-ই সুযোগ পেলে যখন তখন বাংলাদেশের ভিতরে ঢুকে জোরপূর্বক বাংলাদেশীদের গরু চুরি করে নিয়ে যায় (চড়া মূল্যে অন্য জায়গায় বিক্রি করার জন্য)। বাংলাদেশীরা যদি ভারত থেকে গরু আনে তাহলে অবশ্যই গরুর ভারতীয় মালিককে গরুর মূল্য পরিশোধ করে তারপরেই সীমান্ত পার করে গরু বাংলাদেশে আনে, যদিও বিএসএফ যখন তখন তাদের উপর হামলা চালায় এবং তাদেরকে আহত-নিহত করে।
বাংলাদেশী কোন নাগরিক কখনোই কোন ভারতীয়র গরু চুরি করে না, বরং আসল গরু-চোর হচ্ছে ভারতীয়রা নিজেই এবং তাদের চুরির সঙ্গী তাদেরই সীমান্তরক্ষী বিএসএফ।
এই সংক্রান্ত কিছু সংবাদ:
বাংলাদেশের ভিতর ঢুকে গরু চুরির করার সময় চট্টগ্রামের মীরসরাইতে ভারতীয় নাগরিক আটক
সিলেটের জৈন্তাপুরে থেকে ভারতীয়রা খাসিররা বাংলাদেশী অধিবাসীদের ১৬টি গরু ধরে নিয়ে গেছে, পরে ১৩টি গরু উদ্ধার করেছে বিডিআর
সিলেটের ডাউকি সীমান্তে ভারতীয়রা খাসিয়ারা বাংলাদেশীদের ৩১টি গরু চুরি করে নিয়ে গেছে
শ্রীপুর সীমান্তে বাংলাদেশীদের ১৩টি গরু নিয়ে গেছে ভারতীয়রা
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থেকে বাংলাদেশী কৃষকের ৩টি গরু ও ৩টি ছাগল ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সীমান্ত থেকে ৩টি গরু ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ
তেঁতুলিয়া সীমান্তে বিএসএফ এর চুরি করা ২টি গরু ও ১৩টি ছাগল উদ্ধার করেছে বিডিআর
দৌলতপুর সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যাওয়া বাংলাদেশী কৃষকদের ২ শতাধিক গরু ও ভেড়া উদ্ধার করলো বিডিআর
দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলায় বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের ৪০টি গরু জোরপূর্বক নিয়ে গেলো বিএসএফ
ভালো চাকরীর লোভে অবৈধভাবে বাংলাদেশের ভেতর ঢুকে ভারতীয় আত্মপরিচয় গোপন করে বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানে চাকরী করছে ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীরা:
বিএসএফ এর নির্বিচার সীমান্তহত্যার পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে প্রায় সবসময়েই বাংলাদেশের ব্লগগুলোতে আগত ভারতীয় দাদারা বলে থাকেন যে দরিদ্র বাংলাদেশীরা নাকি ভালো চাকরীর লোভে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে প্রবেশ করার জন্য সর্বদা উন্মুখ হয়ে থাকে, ফেলানী হত্যার সময়েও কলকাতার ব্লগসাইট লোটাকম্বলে দাদারা ফেলানী-হত্যার বিচার না চেয়ে বরং ভারতে যেন কাজের সন্ধানে আসতে না হয় সেই জন্য বাংলাদেশীদেরকে স্বাবলম্বী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং এই সেইদিনও সামুর কলকাতাবাসী এক ব্লগার দাদা বলে গেলেন যে ভালো কাজ পাওয়ার জন্যই বাংলাদেশীরা অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে যায়। কিন্তু, বড়লোক ভারতীয়রাও যে চোরের মতোন চুপি চুপি সীমান্ত পাড়ি দিয়ে গরীব বাংলাদেশে ঢুকে বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরী করার লোভ সামলাতে পারে না সেটা দাদারা বোধহয় জানেন না। বাংলাদেশের সরকারী হাসপাতালের নার্স থেকে শুরু করে স্বর্ণকার, বাংলাদেশী অয়েল মিলের কর্মচারী কোন চাকরীর লোভ ছাড়তে পেরেছে ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীরা?
ভারতীয় আত্মপরিচয় গোপন করে বাংলাদেশের সরকারী হাসপাতালে কর্মরত এক নারী
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর থেকে জাল ডাক্তারী সনদ সহ অবৈধ অনুপ্রবেশকারী ভারতীয় ভুয়া ডাক্তার গ্রেফতার
চট্টগ্রামে জুয়েলারী কারখানার কর্মচারী দুই অবৈধ ভারতীয় আটক
পাবনার ঈশ্বরদীতে অয়েল মিলের প্রজেক্টে কর্মরত অবৈধ ভারতীয় নাগরিক আটক
এ দিকে ২০০৯ সালের হিসাব অনুযাযী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের প্রস্তুতকৃত তথ্য-উপাত্ত মোতাবেক ২০০৯ সালেই বাংলাদেশে অবস্থানকারী অবৈধ ভারতীয়দের সংখ্যা ছিলো প্রায় ৫ লক্ষ, যে সব ভারতীয়রা বাংলাদেশের বিভিন্ন এনজিও, গার্মেন্টস, টেক্সটাইল, আইটি প্রতিষ্ঠানসহ বিবিধ সংস্থায় অবৈধভাবে কাজ করে হুন্ডির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে ভারতে টাকা পাচার করে চলেছে। এদের বেশিরভাগই ট্যুরিস্ট ভিসার মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রবেশ করে, কিন্তু ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও ভারতে ফিরে না গিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করে যাচ্ছে।
প্রাপ্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম রাজ্যসমূহ থেকে লক্ষ লক্ষ ভারতীয় অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করে উন্নত জীবন ও জীবিকার খোঁজে বাংলাদেশের বিভিন্ন শহর এবং গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে, কেননা উল্লেখিত ভারতীয় রাজ্যসমূহ অপেক্ষাকৃত অত্যন্ত অনুন্নত ও দারিদ্রপীড়িত।
আরেক হিসাব থেকে দেখায় যায়, বাংলাদেশে পোশাকশিল্পে কর্মরত ২৬ হাজার বিদেশী নাগরিকদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই হচ্ছে ভারতীয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে ওয়ার্কপারমিট নিয়ে গার্মেন্টস, বায়িং হাউস, ফ্যাশন হাউস, এয়ারলাইন্স ও বিভিন্ন বিপণন প্রতিষ্ঠানে লক্ষাধিক ভারতীয় কাজ করছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। বৈধ কাগজপত্র না থাকায় এদের আয়ের সঠিক হিসাব নেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে। ফলে মোটা অঙ্কের বেতন-ভাতা পেলেও রাজস্ব দিতে হয় না এসব অবৈধ বিদেশীর।
এর ফলশ্রুতিতে দেশ থেকে পাচার করা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ।
সূত্রমতে, ভারতীয় নাগরিকের বেশিরভাগই এদেশে ‘ট্যুরিস্ট ভিসায়’ এসে আর ফেরত যাচ্ছেন না। কাজের ক্ষেত্র খুঁজে নিয়ে থেকে যাচ্ছে বাংলাদেশেই। এসব অবৈধ অভিবাসীর প্রকৃত পরিসংখ্যান সরকারি কোনো সংস্থার কাছে নেই। পুলিশও তাদের খুঁজে পায় না।
জানা গেছে, এসব অভিবাসী কোনো কোনো ক্ষেত্রে একবার ওয়ার্ক পারমিট নিলেও তা আর নবায়ন করে না। অভিযোগ রয়েছে, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের জোগসাজশে এবং প্রভাবশালীদের ক্ষমতাবলেই বাংলাদেশে থেকে যাচ্ছে এসব বিদেশী। কখনও কখনও তারা এদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্যও হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অন্যদিকে কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশি যোগ্য নাগরিক।
তথ্যসূত্র:
বাংলাদেশের চাকরির বাজার চলে যাচ্ছে ভারতীয়দের দখলে - দৈনিক আমারদেশ
বাংলাদেশে অবৈধ ভারতীয় - উইকিপিডিয়া
ভারতীয়রা অবৈধভাবে বাংলাদেশের অবস্থান করে নিয়মবহির্ভূতভাবে বাংলাদেশের ভোটার আইডি কার্ড ও জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে নিচ্ছে এবং এর মাধ্যমে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা করায়ত্ত করা সহ সংবিধান বহির্ভূতভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।
শুধু তাই-ই না, বাংলাদেশের ভেতর অবস্থিত ভারতীয় ছিটমহলের বাসিন্দাদেরকে দেদারসে ছবিসহ জাতীয় ভোটার তালিকায় বেআইনীভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে:
অবৈধভাবে বাংলাদেশের অবস্থানের সাথে সাথে এই ভারতীয়রা এখন বাংলাদেশের বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা লাভের পথেও ধাবিত হচ্ছে। এর জন্যে তারা বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটার আইডি কার্ড সংগ্রহ করছে এবং অধিকারবহির্ভূতভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন নাগরিক সুযোগ সুবিধা ভোগ করে চলেছে। শুধু তাই-ই না, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কিছু চিহ্নিত ভারতীয় নাগরিক কর্তৃক ভোট দেওয়া সহ আরো অসংখ্য ভারতীয় নাগরিকের নির্বাচনে অংশগ্রহনের অভিযোগ উঠেছে এবং আদালত তদন্ত করে এই অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পেয়েছে। সিলেটের মৌলভীবাজারে'ও ভোটার তালিকায় অবৈধ ভারতীয়দের উপস্থিতি সনাক্ত হয়েছে। ভারতীয়দের এমন দেদারসে অবৈধভাবে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত মহাসচিব মো: সিরাজুল ইসলাম সবাইকে সজাগ থাকার আহবান জানিয়েছেন যেন জাতীয় ভোটার তালিকায় কোন ভারতীয় কোন অবস্থাতেই অন্তর্ভুক্ত না হয়।
এ দিকে বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অবস্থানরত ভারতীয় ছিটমহলবাসীদের'কে বেআইনীভাবে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। ভারতের সাথে বাংলাদেশের ছিটমহল বিনিময় সমস্যাটি অনেক পুরনো এবং এই সমস্যাটি সমাধান প্রক্রিয়া এখনো আলোর মুখ দেখে নি সাম্প্রতিক সময়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর এই বলে বিরোধিতার কারণে যে "বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ছিটমহল বিনিময় হলে বাংলাদেশ নাকি ভাগে বেশী জায়গা পেয়ে যাবে!!"। এখনো যেহেতু ছিটমহল সমস্যার কোন সমাধান হয় নি সেহেতু বাংলাদেশে অবস্থিত ছিটমহলবাসীদের'কে ভারতীয় নাগরিক হিসেবেই গণ্য করা নিয়মসম্মত এবং এই ছিটমহলবাসীদের'কে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির কোন আইনগত সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন।
তথ্যসূত্র:
ভারতীয় নাগরিক মন্টু চন্দ নম দাস বাংলাদেশের ভোটার!
ভোটার আইডি কার্ড সহ ভারতীয় নাগরিক রাজকুমার জালানের অবৈধভাবে বাংলাদেশে ব্যবসা ও বসবাস
বগুড়ায় ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তকালে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় থেকে ভারতীয় নাগরিক গ্রেপ্তার
পশ্চিমবঙ্গের অধিবাসী পীযুষ রাহা ভারত ও বাংলাদেশের অভিন্ন ভোটার
কোনো ভারতীয় নাগরিক যেন ভোটার না হয় সেই বিষয়ে সতর্ক থাকতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব সিরাজুল ইসলাম
মৌলভীবাজারের ছবি সহ জাতীয় ভোটার তালিকায় বহু ভুয়া ভারতীয় জাল ভোটার সনাক্ত
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন : ভুয়া ভোটার ভারতীয় নাগরিকদের বিরুদ্ধে কমিশনে প্রমাণ দাখিল করলেন মেয়র প্রার্থী
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটার তালিকায় ভারতীয় নাগরিক : হাইকোর্টের নির্দেশনার ৯ দিন পরও পদক্ষেপ নেয়নি ইসি
ফুলবাড়ীতে ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে ভারতীয় ছিটমহলবাসীর হিড়িক
ফুলবাড়ীতে হালনাগাদ ভোটার তালিকায় ভারতীয় ছিটমহলবাসীদের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে বিপাকে প্রশাসন
নীলফামারীতে ভোটার তালিকায় ভারতীয়দের অন্তর্ভূক্তি
পঞ্চগড়ে ভারতীয় ছিটমহলবাসী ভোটার - বেআইনী বললেন নির্বাচন কমিশনার
বাংলাদেশে জঙ্গী তৎপরতা বাড়াতে সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে প্রবেশ করছে ভারতীয় ইসলামী জঙ্গীরা:
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোতে একথা ফলাও করে প্রচার করা হয় যে বাংলাদেশের ইসলামী জঙ্গীরা নাকি সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করে সেদেশে জঙ্গী তৎপরতা বাড়াচ্ছে, ভারতে অভ্যন্তরে ইসলামী জঙ্গী তৎপরতার জন্য বাংলাদেশ দায়ী ইত্যাদি ইত্যাদি।
কিন্তু বাস্তবতা বলছে সম্পূর্ণ বিপরীত কথা, ভারত থেকে ইসলামী জঙ্গীরা অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে বাংলাদেশে জঙ্গী তৎপরতা বাড়াচ্ছে এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতা বাড়িয়ে তুলছে।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্নস্থানে ভারতীয় ইসলামী জঙ্গী গ্রেফতারের ঘটনা এ কথা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে ২ ভারতীয় জঙ্গি আটক
ভারতীয় জঙ্গী মনসুর ঢাকায় গ্রেপ্তার
ভারতীয় জঙ্গী ওবায়দুল্লাহ ঢাকায় গ্রেফতার
ভারতীয় জঙ্গী এমদাদুল্লাহ ঢাকায় গ্রেফতার ও ৪ দিনের রিমান্ডে
ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে আমাদের কৃষকদের ক্ষেতের ফসল কেটে নিয়ে যাচ্ছে এবং কৃষকদের ক্ষেতের ফসল ট্রাক্টর দিয়ে মাড়িয়ে নষ্ট করে দিচ্ছে:
সিলেটের তামাবিল সীমান্তে বিএসএফের সহযোগিতায় ভারতীয় নাগরিকরা সীমান্তের ১৫০ গজ ভেতরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে কৃষকদের ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছে। বিডিআর বাধা দিলেও সে বাধা মানছে না তারা। নিজেদের জমির ধান অন্যরা কেটে নেয়া সত্ত্বেও কিছু করতে না পারার ক্ষোভ ও আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে পড়েছে সীমান্তের কৃষকরা।
এদিকে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সীমান্তে ভারতীয়রা ট্রাক্টর দিয়ে বাংলাদেশী কৃষকদের ফসলের মাঠ চষে দেয়ার ঘটনায় সীমান্তে এ উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
উপজেলার ভারত সীমান্ত সংলগ্ন মোহাম্মদপুর এলাকার কৃষকরা তাদের জমিতে দীর্ঘদিন ধরে চাষাবাদ করে আসছিল। গতকাল বিকালে ভারতের বাউশমারী এলাকার শত শত ভারতীয় কৃষক লাঠিসোটা নিয়ে বিএসএফের সহযোগিতায় ১৫৭ নম্বর সীমান্ত পিলার পার হয়ে অনুপ্রবেশ করে ট্রাক্টর দিয়ে বাংলাদেশী কৃষকদের ওই ফসলের মাঠ চষে দেয়। মোহাম্মদপুর সীমান্তবাসী এ ঘটনার প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠে। সীমান্ত এলাকার মানুষের মধ্যে এ নিয়ে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে উপজেলার বগমারী ক্যাম্পের বিডিআরের পক্ষ থেকে ভারতের বাউশমারী ক্যাম্পের বিএসএফের কাছে বাংলাদেশী কৃষকদের জমি চষে দেয়ার প্রতিবাদ জানানো হয়।
সিলেটে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছে ভারতীয়রা : সহযোগিতা করছে বিএসএফ
বাংলাদেশী কৃষকদের ফসল নষ্ট করে দিল ভারতীয়রা : দৌলতপুর সীমান্তে তীব্র উত্তেজনা
উল্টো ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীরাই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে বাংলাদেশী ভূমি দখল করে সেখানে ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার দিয়ে ইচ্ছামতোন জমি চাষ করছে:
সীমান্তে অসহায় বাংলাদেশ
সিলেটের জৈন্তাপুর সীমান্তে বিডিআরের বাধা উপেক্ষা করে নতুন নতুন এলাকা দখল ও চাষাবাদ অব্যাহত রেখেছে ভারতীয় নাগরিকরা।
গতকালও বিএসএফের সহযোগিতায় সীমান্তের ১২৭৯ ওয়ান এস পিলার সংলগ্ন আলুবাগান এলাকায় জমি দখল করে পাওয়ারটিলার দিয়ে চাষাবাদ শুরু করে ভারতীয়রা। এ সময় বিডিআর তাদের বাংলাদেশ ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে বললে পাত্তাই দেয়নি দখলদাররা। বিডিআরের পতাকা বৈঠকের আহ্বানেও সাড়া দেয়নি বিএসএফ। বাধা উপেক্ষা করে ভারতীয় নাগরিকরা চাষাবাদ অব্যাহত রাখায় জৈন্তাপুর সীমান্তজুড়ে বাংলাদেশী নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
১২ই আগস্ট, ২০১০ এ সিলেটের জৈন্তাপুর সীমান্ত কিছুদিন শান্ত থাকার পর বিএসএফের অপতত্পরতায় আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
গত ২ দিন ধরে ভারতীয় নাগরিকরা বিএসএফের সহায়তায় বাংলাদেশের ভেতরে ঢুকে আবারও চাষাবাদ শুরু করেছে। ধরে নিয়ে যাওয়া বাংলাদেশী কৃষকের ৩১টি গরু এখনও ফেরত দেয়নি বিএসএফ। কৃষকের কান্নায় ভারি হয়ে উঠছে সীমান্তের বাতাস। উপরের নির্দেশ না থাকায় জোরালো কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না বিডিআর।
এদিকে সিলেটের শ্রীপুর সীমান্তে বিডিআরের বাধা উপেক্ষা করে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ করে গতকালও চাষাবাদ করেছেন ভারতীয় খাসিয়ারা।
বাংলাদেশি নাগরিকেরা খাসিয়াদের প্রতিহত করতে চাইলে বিডিআর তাতে বাধা দেয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে জনতা বিডিআরের একটি চেকপোস্ট ভাঙচুর করেছে। স্থানীয় লোকজন জানান, গতকাল সকাল ৯টায় সিলেটের শ্রীপুর সীমান্তের মিনাটিলা এলাকায় বিএসএফের সহযোগিতায় ১৫-২০ জন ভারতীয় খাসিয়া বাংলাদেশ ভূখণ্ডের প্রায় দেড় শ গজ ভেতরে ঢুকে চাষাবাদ শুরু করেন। এর ঘণ্টাখানেক পর পাশের কাঁঠালবাড়ি এলাকায়ও একইভাবে আরো ২০-২৫ জন খাসিয়া বাংলাদেশ ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ করে চাষাবাদ চালান। বিডিআর প্রথমে মৌখিকভাবে বাঁধা দিলে তারা তা উপেক্ষা করে চাষাবাদ অব্যাহত রাখেন।
দুপুর ১২টার দিকে বিডিআর লাল পতাকা উত্তোলন করলে খাসিয়ারা সীমান্তের ওপারে ফিরে যান। দুপুর ১টার দিকে অর্ধশতাধিক খাসিয়া কাঁঠালবাড়ি এলাকায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে ফের চাষাবাদ শুরু করেন। এ সময় সীমান্তের ওপারে বিএসএফ কড়া প্রহরায় ছিল। বিডিআর তাদের বাধা দিলেও তারা তা আমলে না নিয়ে চাষাবাদ অব্যাহত রাখেন। এ অবস্থায় স্থানীয় আড়াইশতাধিক লোক ঐক্যবদ্ধ হয়ে খাসিয়াদের তাড়া করার চেষ্টা করেন।
এতে বিডিআর বাধা দিলে ক্ষুব্ধ জনতা কাঁঠালবাড়ি বিডিআর চেকপোস্টে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেন।
অন্যদিকে খাগড়াছড়ি জেলার নারাইছড়ি থেকে সাজেক বাঘাইছড়ির ব্যাটালিয়ন পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার সীমান্ত বিডিআর ও সেনাবাহিনীর কোন স্থাপনা তথা কাটাতারের বেড়া না থাকায় অবাধে অনুপ্রবেশ করছে এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় নাগরিক অনুপ্রবেশ ও অবৈধভাবে চাষাবাদসহ চোরাচালানের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। নারাইছড়ি কলাবন্যা ও ফুলছড়ি এলাকাসহ পার্শ্ববর্তী বিস্তীর্ণ পাহাড়ী এলাকায় ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের লোকজন অনুপ্রবেশ করে দীর্ঘদিন ধরে বৃনিধন ও জুম চাষ করে আসছে।
অপরদিকে সীমান্তবর্তী মৌলভীবাজার জেলার ৩ উপজেলার ৫টি স্থানে ১হাজার ৬শ একর বাংলাদেশী ভুমি দখলে নিয়ে বিভিন্ন ফসলাদির চাষ করছে ভারতীয়রা।
সিলেটের জৈন্তাপুরে জমি দখল করে চাষাবাদ অব্যাহত রেখেছে ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীরা
বিডিআর এর বাঁধা উপেক্ষা করে জৈন্তাপুরে চাষাবাদ চালিয়ে যাচ্ছে ভারতীয়রা
শ্রীপুর সীমান্তে ভারতীয় খাসিয়াদের অবৈধভাবে বাংলাদেশী জমি দখল করে চাষাবাদ
খাগরাছড়ি জেলার নারাইছড়ি কলাবন্যা ও ফুলছড়ি এলাকাসহ পার্শ্ববর্তী বিস্তীর্ণ পাহাড়ী এলাকায় ভারতের ত্রিপুরা রা।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।