ভালো আছি জামায়াতের সাথে একবার ব্যাপক তর্ক হয়েছিলো আমার সাতক্ষীরায় । কয়েকজন পাতি নেতা উপস্থিত ছিলেন সেখানে । তারা বলেছিলো, সরকারের বিরুদ্ধে তাদের যে আন্দোলন, সেটা জিহাদ । আমি বললাম, না, এটা কোনো জিহাদ নয়, এটা সংগ্রাম । তারা ব্যাপক হৈচৈ শুরু করলে পরে আমি বলেছিলাম, জনাব, জিহাদ হলে তো আপনাদের অধিকাংশ নেতাকর্মী এতদিনে ‘ওয়াজিবুল কতল’ আখ্যা পেয়ে যেতেন ।
কেন, কেন ?
পুলিশের পিটনি খেয়ে এই যে ‘জিহাদের ময়দান’ থেকে আপনাদের পলায়ন, এ ব্যাপারে শরীয়তের ফাতওয়া কি, একটু বলবেন ? কৌশলগত কারণেও যদি হয়, তাহলে সেটা কি প্রতিবারই কার্যকর করতে হবে ? একবারও তো কৌশলগত কারণে পুলিশকে ব্যারাকে পালাতে দেখলাম না । আপনাদের তো কোনোবার পালানো বাদ দিতেও দেখলাম না ?
হেফাজত পালাইছে, না তাদের জোর কইরা সরাইছে, সে প্রশ্ন তুলমু না, কিন্তু নেতৃবৃন্দ পালালো ক্যান ? গোপন আস্তানা থেকেও তাদের কোনো বিবৃতি নাই ক্যান ? জেল-জুলুমের এত ভয় থাকলে, তখন তারা মাঠে নামছিলো ক্যান ? এতগুলি মানুষকে নেকড়ে মুখে ছেড়ে দিছিলো ক্যান ?
সরকারের ফাঁদে পা দিয়া মুরগির খামারে ঢুইকা পড়ার সিদ্ধান্ত তাগোরে ক্যাডায় দিছিলো ? অবস্থান-অবরোধ করতেছিলি কর । ওইটা ছাইড়া ক্যান তুই ভিতরে ঢুকলি, বাপ ? তিনিদিন ঢাকাঢোকার পয়েন্ট বন্ধ থাকলে সরকারের পশ্চাদপথ দিয়া বাঁশ ঢুইকা যাইতো না ? ভিন্ন ভিন্ন পথে লাখো মানুষের সমাগম থাকলে হামলার কৌশলডা খুঁইজা পাইতেই তো সরকাররে ত্যনা প্যাচানি শুরু করতে হইতো ! মনে হইছে, আ তু-তু-তু-তু কইরা সরকার ভাত ছিটাইয়া ডাকছে, আর সব মুরগির মতো খোঁয়াড়ে আইয়া ঢুকছে হুরহুর কইরা । মেহমান তো সেই কহন আইয়া বইয়া রইছে ! যত রাইতই হউক, তাদেরে তো দুইডা ডাইলভাত পাতে দিতে হইবো, নাকি ?
জোশ মেঁ হুঁশ রাখনা চাহিয়ে…..হুজুর, কই গেলো এই বয়ান ? আহ, চারিদিকে শুধু মানুষ আর মানুষ….জোশে জযবায় চরমোনাইয়ের মতো ফাল মাইরা ওঠে প্যান্ডেলের মাচায়…কই গেলো এতই মত্ততা । মির্জা গালিব, তাই বুঝি বলছিলেন, “শরাব পীনে দো মুঝে মসজিদ মেঁ বৈঠ কর..অরনা তুম কাহাঁ কে, তুম কাহাঁ নেহি হো”……
“কওমি মাদরাসায় কোরবানির চামড়া দিয়া কি এতদিন ভুল করলাম ?” এই প্রশ্ন যারা করে, তাদেরে আপনারা কোন যুক্তি দিয়া বুঝাইবেন যে, ওই ভাঙচুর আপনেরা করেন নাই ? বডিংয়ে চুলা জ্বালানোর ম্যাচও আপনাদের কালেকশন করে আনতে হয়, রাস্তায় আগুন জ্বালানোর মুরোদ কই আপনাদের ? তাইলে, ‘আপনেরা’ মানে কি কেবল মাদরাসার ছাত্র ? সাধারণ টুপি-দাড়িবিহীন মানুষের এই ১৩ দফায় কোনো অংশ নাই ?
গণহত্যা বলে এই যে প্রচারণা, এর স্বপক্ষে আপনাদের একটা জোরালো ডকুমেন্ট কি আছে, হুজুর ? তুরাগের লাশ, বুড়িগঙ্গার মরদেহ, ক্যান্টমেন্টের গণকবর আর বিজিবির ৯ ট্রাক----কী এসব ? কোথায় বিএসএফ ? কোথায় এত নিহত মানুষের স্বজন ? কোথায় তাদের আহাজারি ? নিখোঁজ মানুষেরা কি মায়ের অভিযোগও কেড়ে নিয়ে গেছে ?
নাকি এই নিখোঁজেরা সব হোস্টেলে থাকা নিরীহ ছাত্র ? যাদের বাবা-মায়ের কাছে এখনও সংবাদ পৌঁছে নি যে, সে মাদরাসায় নেই ? কিংবা নেই পৃথিবীতেই…কোথায় তাদের তালিকা ? এখনও প্রস্তুত হয় নি ?
নিখোঁজের তালিকায় নেই একজন শীর্ষ নেতাও ।
হোয়াই হেফাজত ? হোয়াই ?
যদি নিখোঁজের এই সংখ্যা সঠিক না হয়, তাহলে এই গুজবে হেফাজতের দুইটি ক্ষতি হলো । এক. সাধারণ মানুষের মধ্যে একটি ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে, যা হেফাজতকে সামনে এগুতে বাধাগ্রস্ত করবে ।
দুই. একরাতে নির্বিচারে ৫০ বা ৬০ জন মানুষ মেরে ফেলাটা একটি সরকারের রাক্ষুষে মনোভাবের পরিচয় বহন করে । সেটাকে কয়েকহাজার বলে সংখ্যাটা নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত ধুম্রজাল সৃষ্টি করায় এখন ৬০ সংখ্যাটা হয়ে গেছে নস্যি । এবং মনে হচ্ছে ওরকম ৫০-৬০টা লাশ ফেলে দেয়া সরকারের জন্য জায়েজ ।
ওটা নিয়ে মাথব্যথার কিছু নেই । মাথাব্যথা হবে হজারখানেকের প্রমাণ পেলে ।
হতে পারে, যারা দেশটাকে অস্থিতিশীল করতে চেয়েছে, এটা তাদেরই একটি সূক্ষ্ম সাইকোলজি থেকে উৎপন্ন গুজব ।
প্লিজ, আমার বিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন না । ছাত্রজীবনে কোনোদিন উস্তাদদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো তো দূরে থাক সমালোচনা করার অধিকারও আমার ছিলো না….হয়তো আজও নেই ? কিন্তু দরসে অবাধ প্রশ্ন করার অনুমতি আপনিই আমাকে দিয়েছিলেন ।
আজও দিন । আজও যুক্তিসিদ্ধ জবাব দিন, হুজুর । জবাব দিন । মানুষকে রাস্তাঘাটে মজলুম ভিখিরি বানাইয়া মারার ফন্দি কইরেন না ! প্লিজ, প্লিজ, প্লিজ…. ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।