নিজের অস্তিত্বকে জানান দিতে চাই বাবাকে নিয়ে লিখব এ রকম ইচেছ মনের মধ্যে লালন করছি কিছুদিন ধরে । কিন্তু উপযুক্ত প্লাটফর্মের অভাবে মনের এ সুপ্ত ইচে্ছ মনেই রয়ে গেছে এতো দিন ধরে । শেষে ভাবলাম লিখে কি হবে । কে পড়বে এসব। আর কারইবা আছে এত সময়।
তার চেয়ে বড় কথা কে ছাপাবে এ সব ছাইপা্শ। কিন্তু আজ এই ব্লগ যে সুযোগ আমাকে দিল তার জন্য আমি সম্পূ্র্ণ কৃতগ্গ কর্তৃপক্ষের কাছে।
বাবা শব্দটি কেমন জানি। দুই অক্ষরের এ শব্দ দিয়ে আসলে বুঝানো যাবেনা কি এর মাহাত্ব্য। জন্মের পর হতে যে মানুষটি কিসের এক অজানা টানে তার সন্তানের লালন পালনের সমস্ত দায়ভার ঘাড়ে নিয়ে, অপার ভালোবাসায় ভরিয়ে দিয়ে সারাটি জীবন যক্ষের ধনের মত আগলে রাখেন তা কেবল এ বাবার পক্ষে সম্ভব।
আমার বাবা ও ঠিক তেমনি একজন মানুষ। জন্মের পর হতে তাকে একজন আদর্শ হিসেবে পেয়েছি। জীবনের কঠিন বাস্তবতা পেরিয়ে, সকল বাধা-বিঘ্ন অতিক্রম করে আজ আমি ঠিক যে জায়গায় দাঁড়িয়ে তার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব তাঁর। জ্ঞান হওয়ার পর থেকে তাঁর প্রতিটি প্রদক্ষেপ এ আমি যা পেয়েছি, তাঁর প্রতিটি কর্মকাণ্ডে আমি যা দেখেছি তা প্রতিটি মানুষের জন্য অণুসরণীয় হতে বাধ্য। এ পর্যন্ত সবই ঠিক ছিল।
কিন্তু এর পরের অংশটি বড়ই বেধনাবিধুর।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ভালো একটা ডিগ্রি নিয়ে যখন উচ্চশিক্ষার আশায় বিদেশ যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর ঠিক তখনই আচমকা এক ধাক্কায় আমার স্বপ্ন ভেঙে খানখান। বাবার মৃত্যু সব এলোমেলো করে দিয়ে গেল। রেখে গেল বিশাল এক ক্ষত-যার ব্যথা এখোনো আমি নীরবে সয়ে যাচ্ছি।
ছোটবেলা থেকে আমি মা হারা মানুষ।
মা এর আদর কেমন তা কখনোই বুঝতে পারিনি। কেবলই অনুভব করার চেষ্ঠা করেছি মাএ। আর তাই আমার সমস্ত আদর আব্দার ছিলো এই বাবাকে ঘিরেই। আর সেই বাবাই যখন হঠাৎ করে চোখের আড়াল হলেন তখন আমার সমস্ত পৃথিবী যেন দূলতে লাগল। ঠেস দিয়ে দাঁড়াব ঠিক সেই জায়গাটা ও যেন খুঁজে পাচ্ছিলামনা।
আমার এই কঠিন সময়ে সীমার সাহায্য না পেলে হয়তো কখোনো আর দাঁড়ানোই হতোনা। কারণ আজ আমি নিঃস্ব,এতিম। যাই হোক, আমি বাবাকে নিয়ে আজ দুই কলম লিখতে পারছি এই তো আমার বড় পাওয়া। বাবাকে নিয়ে আমি গর্ব করে কিছু বলতে পারছি এই তো আমার জীবনের পরম আরাধ্য।
একমাএ ছেলের অভাব-অভিযোগ শুনতে গিয়ে যে লোকটি আজীবন কঠোর পরিশ্রম করেছে ,দিনে-রাতে দুদণ্ড বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ পাইনি তার জন্য আসলে এমন দুঃখবোধ করারইবা কি হেতু থাকতে পারে।
থাকতে পারে। কেননা এ যে যেনতেন ব্যাপার নয়। আমার বাবা একজন সামান্য রিক্সাচালক বৈ আর কিছুই নয়। তাঁকে নিয়ে গল্পের ফুলঝুরি ছুঠানোর মত কথামালা ও যে আমার ভাণ্ডারে নেই। নিজে সামান্য শিক্ষাই শিক্ষিত না হয়ে ও তাঁর ছেলেকে বাংলাদেশের সেরা বিদ্যাপীঠে পড়ানোর মত মন-মানসিকতা যে ব্যক্তি অন্তরে ধারণ করেন তাঁকে আর যাই হোক অশিক্ষিত বলা যায়না কোন মতেই।
মানুষের মত মানুষ হওয়ার পরামর্শ দিতেন যিনি নিত্যরত তাঁকে আমার জীবনের সেরা আদর্শ ভাববো নাতো কাকে ভাববো।
আজ তাই আমার এটাই চাওয়া, আল্লাহ যেন ঊনাকে জান্নাতবাসী করেন। জীবনে সুখের সামান্যটুকু ছোঁয়া যিনি পাননি তিনি যেন অনন্তকাল ধরে পরম প্রশান্তিতে থাকেন পরজীবনে এটাই আমার একমাএ কামনা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।