আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঈদের লাল জামা

আমার এখানে প্রবেশের পূর্বে একবার ভাবুন, ভাল কিছু পাবেননা। ভাল কিছু দিয়ে যেতে পারলে ওয়েলকাম। -আম্মু আমার আরেকটা ড্রেস লাগবে। - কি বল, তোমারতো এখন চারটা ড্রেস। একটা ঈদের কয়টা লাগে?? - নাাাাাাা, আমার একটা লাল ড্রেস লাগবে আচ্ছা বাবা কিনে দেব, এখন কান্না থামাও।

লাল ড্রেস পেয়ে টিনটিন সেকি খুশি। তার এখন ৫টা ড্রেস। এই বাবু কই??? বসে বসে টিভি দেখ। কেউ আসলে দরজা খুলিওনা। আম্মুকে ডাকবা।

কেমন?? আম্মু গোসল সেরে আসছি। - আচ্ছা আম্মু। তার লাল জামাটি পড়ে বসে বসে একা টিভিতে টম এন্ড জেরী দেখায় ব্যস্ত টিনটিন। টম এন্ড জেরী তার খুবই প্রিয়। একা একা বসে টিভি দেখে আর একা একা হি হি করে হাসে।

হঠাৎ বেলের আওয়াজে তার হাসির মাঝে ছেদ পড়ে। দরজার সামনে চেয়ার টেনে তার উপর দাড়িয়ে ছোট ছিদ্র দিয়ে দেখে। না কাউকেতো দেখা যায়না। আবারো বেল বেজে উঠে। আবারও একি কায়দায় গিয়ে দেখে।

না কাউকে দেখা যায়না। না সে এবার আম্মু না দেখে মতো দরজাটা খুলে। দেখে একটা তার সমান ছোট বাচ্ছা দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে। তাকে দেখেই সে ফিক করে হেসে দেয় -তোমার ড্রেস কই?? নেঙটু কেন?? -আমি নেঙটু কই?? প্যান্ট পরছিনা?? -তোমার টুনটুনি দেখা যায় ছেলেটা তাড়াতাড়ি তার প্যান্টের সামনে দুহাত দিয়ে ঢেকে দেয়। - হি হি খালি গায়ে থাকলে আম্মু বলে নেংটু।

- তুমি নতুন জামা পড়োনাই কেন?? আজকে না ঈদ? - আমার নতুন কাপড় নাই। - ঈদে আম্মু কিনে দেয়নাই? - না, মায়ে কইছে একটা লাল জামা আইনা দিবো ঈদের পরে। - ওহ, এখানে কি করো? হারিয়ে গেছো?? - নাহ, ভিক্ষা চাই। মায়ে পাঠাইছে। - ভিক্ষা কি?? - টেকা চাই।

- টেকা না টাকা, টাকা দিয়ে কি করবা?? - ভাত খামু। টেকা দিবো তোমার আম্মায়?? - টিভি দেখবে?? টম এন্ড জেরী চলতেছে। তুমি টম এন্ড জেরী দেখ? - না, ওইটা আবর কি?? আমি যাইগা, টেকা দিবোনা? - তুমি কোথায় থাক? - নিচে বস্তিতে - তোমাদের বাসায় এসি আছে? - এসি কি?? - হি হি হি টিভি আছে? - টিভি নাই, মায়ের সাথে একবার এক রাজার ঘরে যাইয়া দেখছিলাম। -সেমাই খাবে? - না, টেকা দিতে বল তোমার মায়েরে, নাইলে আমি যাইগা। মায়ে মারবো।

টিনটিন এত কিছু বলেই যাচ্ছে। সে আছে তার তালে। কিন্তু পাগলার এত কিছু দেখার শুনার সময় নাই। আজ ঈদের দিন। আজকে যত মানুষের ধারে ধারে যেতে পারবে ততই লাভ।

ঈদের দিন সবাই উদার হস্তে দান করে। তাই কেউ না দিলে সেখানে তার সময় নষ্ট করার কোন দরকার নেই। আজ যদি বেশি করে টাকা না নিয়ে যেতে পারে তাহলে মায়ের হাতে নিশ্চিত মাইর খাবে। তাই সে টিনটিনের এত কথায় বিরক্ত হয়ে বার বার তাদের থেকে টাকা ভিক্ষা দেবে কিনা চানতে চায়। না দিলে দাড়িয়ে লাভ কি?? এরিই মাঝে তার মা বাথরুর থেকে আওয়াজ দেয়, এই বাবু কার সাথে কথা বলো?? পাগলার সাথে আম্মু পাগলা কে?? পাগলা পাগলা আরকি।

এই পাগলা তুমি ড্রেস নিবে??? আমার অনেক ড্রেস । তুমি একটা নিবে?? না মায়ে কইছে টেকা নিতে খালি। টিনটিন তার পকেটে হাত দেয়। নামাযে যাবার সময় বাবার দেয়া ৫০০টাকার মোছড়ানো নোটটা বের করে বলে, এটা নেবে?? পাগলার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। এত টেকা?? -তোমার মায়ে মারবোনা?? - না এটা আমার টাকা।

এটা নাও, দাড়াও এই লাল জামাটা নেবে?? নাও নাও আমার অনেক জামা। বলতে বলতে টিনটিন তার সদ্যকেনা ঈদের তার সবচেয়ে প্রিয় লাল জামাটা খুলে পাগলাকে দিয়ে দেয়। পাগলাতো ৫০০টাকা আর লাল ড্রেস পেয়ে আনন্দে আত্মহারা। এক মুহুর্তও আর দেরী করেনা। বাসার দিকে দৌড়ে চলে যায়।

-কিরে বাবু তুমি নেঙটু কেন?? তোমা জামা কই?? -দিয়ে দিছি আম্মু। -কাকে দিছো?? -পাগলারে -পাগলা আবার কে?? - বস্তিতে থাকে। জানো আম্মু তার না কোন জামা নেই, তার আম্মু তাকে ঈদের জামা কিনে দেয়নাই। তাই নেঙটু নেঙটু ভিক্ষা করছে। বাবা যে টাকা দিয়েছিল তাও দিয়ে দিছি আম্মু।

আম্মু তুমি বকা দেবেনাতো আমাকে?? -না বাবা, বকা দেবোনা। টিনটিনের মা তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খায়। চোখের কোনে এক ফোটা জল অনুভব করে।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.