আমি বিদ্রোহী ছাত্রলীগের মুফতি শহিদুল!
ফজলুল বারী, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বঙ্গবন্ধুর নীতি-আদর্শ থেকে শিক্ষা নেবার আবারও আহবান জানালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ছাত্রলীগ আয়োজিত সভায় ২৭ আগষ্ট প্রধানমন্ত্রী আহবানটি জানান। এর চব্বিশ ঘন্টা যেতে পারলো না, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম এর এক্সক্লুসিভ সচিত্র রিপোর্টে সবাই দেখে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক না, কপট ভন্ড মুফতি আমিনীর কিসিমের একশ্রেনীর ফতোয়াবাজ-সালিশবাজ ‘মুফতি শহিদুল’ও ছাত্রলীগে ঢুকে পড়েছে! অথবা ডিজটাল স্বপ্নের সরকারের এ কেমন এনালগ ফতোয়াবাজি-সালিশবাজি কিসিমের ছবি!
ছাত্রলীগ নামধারী এই ষণ্ডা-গুণ্ডাটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দিনেদুপুরে সালিশ বসিয়ে কিশোরসহ মানুষ পিটিয়েছে! ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি গণমাধ্যমে প্রকাশ পাবার পরও গুণ্ডাটিকে গ্রেপ্তার করা হয়নি! শাহবাগ থানার ওসি রেজাউল করিম বলেছেন, এভাবে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ায় তিনি শহিদুলকে সতর্ক করেছেন! এ যেন এক মহা দলবাজ ওসির মহা ধড়িবাজ বক্তব্য! তাহলে কী ছাত্রলীগ নামধারী এক গুণ্ডাকে এভাবে প্রকাশ্যে আইন নিজের হাতে তুলে নেবার প্রমাণ পাবার পরও তাকে গ্রেপ্তার না করার অপরাধে এখন আমাদের শাহবাগ থানার এই দলবাজ-ধড়িবাজ ওসি’র পদচ্যুতি গ্রেপ্তারের দাবিও তুলতে হবে?
বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণের আহবানের পরপর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এভাবে দিনে দুপুরে মিডিয়ার লোকজনের সামনে ষণ্ডা শহিদুলের এমন সালিশ সভা, বিচারের নামে মানুষ পিটানো কি প্রধানমন্ত্রীকে উপহাস না আমাদেরকে? ছবিটি রিলিজের পর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, আইন প্রতিমন্ত্রীর বক্তৃতা দেখলাম মিডিয়ায়। কিন্তু এভাবে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার গুণ্ডার বিরুদ্ধে কোন বক্তব্য বা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা দেখা গেলো না। এই মন্ত্রীরা কী মানুষ না? না মন্ত্রিত্বের স্বার্থে মুজিব কোট আর বক্তৃতা ছাড়া বঙ্গবন্ধুর নীতি আদর্শের প্রতি বিন্দুমাত্র ভক্তি শ্রদ্ধা তাদের আছে? এমন ভালোই তারা দেশ-প্রশাসন চালাচ্ছেন, তাই নয় কী! না আবুল মন্ত্রীদের তালিকায় তারাও নামটা তুলতে চাইছেন!
ছবিটি রিলিজের পর প্রতিক্রিয়া জানতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হলের আবাসিক একাধিক ছাত্র বন্ধুর কাছে ফোন করেছিলাম।
তারা উল্টো শ্লেষাত্বক প্রশ্ন ছুঁড়ে জবাব দেন, দেশের কী হাল টের পান না?
আপনি অষ্ট্রেলিয়ায় বসে নিউজ-ছবি দেখে ফোন করেছেন! প্রাইম মিনিস্টারের অফিসে কী ইন্টারনেট কানেকশন নেই? তারা কী এসবের কিছুই দেখেন না? এসব খেদোক্তির কী জবাব হতে পারে?
এরপর যে সব তথ্য দেয়া হলো তা আরও ভয়ংকর! ছাত্রলীগ নামধারী ওই বিভীষণরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ছিচঁকে সব আয়-রোজগারের তদারককারী-হেফাজতকারী! সালিশের বিষয়টা ছিল ওই সব ব্যবসার বখরা সংক্রান্ত! বখরার পেমেন্ট ঠিকমতো না দেয়াতে ওই সালিশ-বিচার!
আরও জানা যায় ফুলের মতো পবিত্র গুণ্ডা শহিদুল চরিত্র! নিজেদের দাপট দেখাতে-জাহির করতে সে মাঝে মাঝে রাত-বিরাতে সবার সামনে ফুটায়! গুড়ুম শব্দে তখন থরথর কাঁপে ক্যাম্পাসের শান্তি! পুলিশ আর হল প্রশাসন তাহলে কী করে? জানতে চাইলে বলা হয় পুলিশতো এসব দূর্বৃত্তের পাহারাদার! আর হল প্রশাসকরা এদের দয়ার ওপর নির্ভরশীল! ওরা রাখলে উনারা থাকবেন অথবা ‘আউট’! ‘গো’ হোম’! অতএব----! আদুভাই শহিদুলরাও বেপরোয়া!
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম এর সচিত্র রিপোর্টে বলা হয়েছে ছাত্রলীগের নব দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমের ডান হাত এই সালিশবাজ শহিদুল! জহিরুল হক হলের আবাসিক ছাত্র বন্ধু যাদের সঙ্গে কথা হয়েছে, তারাও বলেছেন। ‘ইহা সইত্য, হার্ন্ডেড পার্সেন্ট’। নাজমুল হক মিডিয়াকে বলেছেন, ঘটনার ডিটেইলস তিনি জানেন না। জেনে বলবেন। এতক্ষণে কী ডিটেইলস জেনেছেন নেতা নাজমুল? জানার পর পর কী ওই গুণ্ডাকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন? কেনো নয়? এরপর যদি ওই ‘গুণ্ডা মুফতি শহিদুলের’ আকাম-কুকামের ভাগবাটোয়ারার গানাবাজনাও আপনার অ্যাকাউন্ট-ক্যারিয়ারের দিকে চলে আসে!!!
ছাত্রলীগের নয়া নেতৃত্বের পূর্নাঙ্গ কমিটি এখনও বাজারে ছাড়া হয়নি।
সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণার পর অমুক ভালো, অমুক হার্ন্ডেড পার্সেট চাঁদা নেয় না, খায় না, রেগুলার স্টুডেন্ট, এমন নানান কর্নার থেকে তাদের প্রশংসা করা হয়। প্রশংসা শুনে অনেকের ভালোই লেগেছে। কিন্তু শহিদুলের মতো চিহ্নিত একজন যদি ছাত্রলীগের নয়া সাধারণ সম্পাদকের দক্ষিন হস্ত(!)হন, তাহলে প্রশংসাসমূহ প্রত্যাহারের জোর সুপারিশ করা যেতে পারে, তাই নয় কী?
এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ অপর সব ‘অতিশয় মান্যিগন্যি মাননীয়দের’ কাছে কিছু খাসা প্রশ্ন, আপনাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ যে সব সময় বলে, যারা এক ছাত্রলীগ সামাল দিতে পারেন না, তারা দেশ চালাবে কী করে, আর আপনারা যে তখন ছাত্রলীগে শিবির ঢুকেছে বলে খালি চিল্লান, শিবির কেন বের করতে পারেন না বা এসব ব্যারামের দাওয়াই বা কী?
গত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ছাত্রদলের ডরে ভীরু কাপুরুষ ছাত্রলীগের ক্যাডার-মস্তানরাও ঢাবি ক্যাম্পাস থেকে তফাতে থাকতেন। মাঝে মাঝে শাহবাগ আর আজিজ সুপার মার্কেটের কোনায় এসে, ওই দেখা যায় তাল গাছ, ওই আমাদের গাঁ’, ওইখানেতে বাস করে কানা বগির ছা’র মতো, ‘ওই দেখা যায় ঢাবি’ বলে এক দৌড়ে চলে যেতেন, ক্ষমতার পালাবদলের পর তারাই হয়ে গেলেন সিংহ-পুরুষ(!)ষণ্ডা একেকজন!
তারা তখন টেন্ডারের বাক্স থেকে শুরু করে পাবলিক টয়লেট কোন কিছু দখলে অরূচি দেখান না! বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক থেকে শুরু করে হাসপাতালের ডাক্তার-নার্স, পুলিশ থেকে শুরু করে নানা শ্রেনী পেশার মানুষ আজকাল প্রায় এখানে সেখানে এসব ‘হঠাৎ সিংহ’দের পিটুনি খায়। দখল-মারামারি-চাঁদাবাজি ন্যাক্কারজনক অবস্থায় পৌঁছলে নিজস্ব মান-সম্মান রক্ষায় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রীর পদ থেকেও সরে দাঁড়ান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী থাকলেন কী থাকলেন না, ওসবে গা’ করেনি ছাত্রলীগ নামধারী কতিপয় ষণ্ডার দল! অতঃপর যেন ওই ষণ্ডা-গুণ্ডার কাছে হার মানতে হয় প্রধানমন্ত্রীকেও! ছাত্রলীগ নামধারীদের গুণ্ডামি-মস্তানি বন্ধ না হলেও তাদের প্রোগ্রামে ফেরত যান প্রধানমন্ত্রী! এসব নিয়ে হতাশ অনেকে বলেন, যারা দেশের প্রধানমন্ত্রীকেও খামোশ বানাতে পারে, তাদের বিষয়-আশয় নিয়ে এমন হা-হুতাশের কী আছে!
অতএব ছাত্রলীগ নামধারী ষণ্ডা-গুণ্ডাদের দখল-সন্ত্রাস অব্যাহত চলাতে তাদের নিজেদের মারামারির কারণে একেরপর এক নানা শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়াও অব্যাহত আছে! আজকাল আর কোথাও ছাত্রদল বা শিবিরের সঙ্গে ছাত্রলীগের মারামারি-দ্বন্দ্বের খবর তেমন পাওয়া যায় না! শুধু শোনা-দেখা যায় ছাত্রলীগের অমুক গ্রুপ, অমুক গ্রুপের রক্তক্ষয়ী মারামারি-দ্বন্দ্ব! টেন্ডারে-বখরায় না মিললে এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের ক্যাডার-সমর্থক কোপায়! ছাত্র শিবির স্টাইলে হাত-পায়ের রগ কেটে দেয়!
অতএব টেন্ডারের নিরাপত্তা রক্ষায় এখনও নানা জায়গায় র্যাব সদস্যদের হাজির-মোতায়েন রাখতে হয়। নিরুপায় অবস্থায় মাঝে মাঝে ছাত্রলীগ নামধারী দূর্বৃত্ত ক্যাডার অনেককেও গ্রেফতার করতে হয়। পরিস্থিতির ভয়াবহ চেহারা দেখে সুশীল সমাজের সদস্যরা রাগে-দূঃখে হাত কামড়ান। কারণ বাংলাদেশ সৃষ্টির আন্দোলনের পর্বে পর্বে নেতৃত্বের ভূমিকায় সমুজ্জ্বল নাম শিক্ষা শান্তি প্রগতি’র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। বা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ মানে বাংলাদেশের ইতিহাসের আরেক নাম।
আরেকটি কারনেও তারা বিব্রত হন। আওয়ামী লীগ সরকারকে অনেকের ব্ল্যাংঙ্ক চেক সাপোর্টের বড় একটি উপলক্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। ছাত্রলীগ নামধারীদের তান্ডবে এই বিচার স্বপ্ন ব্যাহত হয় কিনা তা নিয়েও অনেকে শঙ্কায় পড়েন। বলা বাহুল্য এসব ষণ্ডা-গুণ্ডাদের তাণ্ডব, সরকারের নানা ব্যর্থতা, ড্যাম কেয়ার মনোভাবে শুধু যুদ্ধাপরাধী না, কোন ইস্যুতেই সরকারের চেহারা-সুরতটি আর সফেদ-সুন্দর করে না।
ইতিহাস স্রষ্টা সেই ছাত্রলীগ কেন হঠাৎ এমন মারদাঙ্গা এ্যাকশন ভরপুর ইতিহাস বিবর্জিত হয়ে গেলো? অনেকে এরজন্যে নানা ঘটনা উল্লেখ করেন।
আমির হোসেন আমুসহ একাধিক নেতাকে দুষেন। যারা নানা সময়ে ছাত্রলীগকে কুক্ষিগত করে ব্যবহার করেছেন। বা এখন ছাত্রলীগের নেতৃত্ব ঠিক করেন প্রধানমন্ত্রীর বাড়ির লোকজন! সেখান থেকে যাকে যেভাবে গাইড বা প্রধানমন্ত্রীকে ব্রিফ করা হয় তাদের কপাল সেভাবেই ঘষামজা হয়। ছাত্রলীগের নিউ জেনারেশন্সও নেতা হওয়ার জন্য মূলধারার ছাত্রদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। নেতা হওয়ার তেমন কিছু বৈঠকখানার ঠিকানা চিনে ফেলেছে।
সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গেও তাদের কোন মিল-মোহাব্বত, যোগাযোগ সম্পর্ক-সম্পৃক্তিও নেই বা দরকারও নেই!
অনেকদিন থেকে শেখ হাসিনার হয়ে ছাত্রলীগের কমিটি চূড়ান্তের কাজ করেন ওবায়দুল কাদের। ওকে কমিশন নামের একটি কনসেপ্টও ছাত্রলীগে চালু আছে। চলতি কমিটির সঙ্গেও কাজ করছেন তিনি। মন্ত্রিত্বে না থাকার গুনে আজকাল বিবেকের মতোও নানা কথা বলেন ওবায়দুল কাদের বা বলতে পারেন! ‘মুফতি শহিদুল’ ছবিটি দেখে আপনার মাঝে কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল কাদের ভাই! জানতে ইচ্ছে করছে। এই ছাত্রলীগের নেতাই কী ছিলেন আপনি ওবায়দুল কাদের!!!
এভাবে নিজস্ব সংগামী ঐতিহ্য হারিয়ে ছাত্রলীগ হয়ে গেছে অমুক অমুকের ঠ্যাঙ্গাড়ে বাহিনী।
আজকের ছাত্রলীগের অনেক নেতা-কর্মী জানে না বঙ্গবন্ধু বা মুক্তিযুদ্ধের বিশদ-বিস্তারিত ইতিহাস। বা জানতে হয় না! তাদের শুধু শেখানো হয়, ‘শ্লোগান আছে—আছে—কোন সে শ্লোগান শেখ হাসিনা’---ব্যাস! এই ছাত্রলীগের তাই আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হলে ছাত্রদল বা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরলে আবার ছাত্রলীগ হয়ে যেতেও সময় লাগে না। আজকের শহিদুলরা উত্তরসূরী ছাত্রলীগের সেই নষ্ট প্রজন্মের!
একটি তথ্যঃ সরকার ছাত্রলীগ নামধারী গুন্ডাদের সামাল দেয় না বা দিতে পারে না কেনো? ড মহিউদ্দিন খান আলমগীর সিডনি আসার পর তাঁকে প্রশ্নটি করা হয়েছিল। জবাবে হাসতে হাসতে তিনি বলেন, বিএনপি-ছাত্রদল যখন সরকার বিরোধী আন্দোলন করবে তখন ছাত্রলীগের এসব দুষ্টু ছেলেদের দরকার পড়বে না! সালিশবাজ মুফতি শহিদুল যদি ছাত্রলীগের ব্যানারে সরকারের এই সো-কল্ড ‘দুষ্টুছেলে প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রডাক্ট’ হয়, তাহলেতো তার বা তাদের গ্রেপ্তার হওয়ার কোন কারন দেখি না!
ফজলুল বারীঃ সিডনি প্রবাসী সাংবাদিক।
বাংলাদেশ সময় ১১৪৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০১১
news link: Click This Link
this pold news link:http://www.banglanews24.com/detailsnews.php?nssl=bb5c3a7f993b7cb25b2410e212e0386a&nttl=2011082855521#.TlokxAiStyM.facebook
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।