আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশে ওপেন স্ট্রীট ম্যাপের উদ্যোক্তা সৈয়দ ইসতিয়াক আহমেদ

কম্পিউটার ইনজিনিয়ার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফারহানা শারমীন [সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার, এরগো – ভেনচরস লিমিটেড], ছবি তুলে দিয়েছেন. জুবায়ের-বিন-ইকবাল [কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইউ.আই.ইউ] সম্প্রতি বুয়েটের চারজন তরুণ সাজেদুর রহমান,আসিফ সেতু, সৈকত ও সৈয়দ ইসতিয়াক আহমেদের দল বুয়েট এপিকেলিপটিক তাদের মোবিএড প্রজেক্টটির জন্য “স্পন্দন বি ইন্টারপ্রিয়িয়নশিপ কনটেস্ট “ এ চ্যাম্পিয়ন হয়। ৫৭টি দলের মধ্যে ১৩টি দল ফাইনালে যায়। বাঘা বাঘা প্রজেক্ট প্রোপোশাল প্রেজেন্টের পর মোবিএড প্রজেক্টটিকে বিজয়ী ঘোষনা করে স্পন্দন বি । http://spaandanb.org/ec2011/result.php বাংলাদেশের জন্য এই প্রথম নয় আরও কিছু অবদানের জন্য সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ স্মরণীয় হয়ে রইবেন। তিনি বুয়েটের কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের তরুণ শিক্ষকদের মধ্যে এক অগ্রগামী উজ্জ্বল নক্ষত্র।

তিনি সর্বদা ছাত্রদের নিয়ে গবেষণার কাজে নিয়োজিত থাকেন। তার ব্যক্তিগত গবেষণাধর্মি গ্রুপ এইচ.টি.আই এর উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য তিনি বহুকাংক্ষিত ইন্টারন্যাশনাল ফুলব্রাইট স্কলারশিপ “সাইন্স এন্ড টেকনলজি এওয়ার্ড ২০১০-২০১১ “ এ ভূষিত হয়েছেন। প্রতিবছর ব্যুরো অফ এডুকেশনাল এন্ড কালচারেল এফেয়ার(ই.সি.এ.) অফ দা ইউ.এস. ডিপার্টমেন্ট অফ ষ্টেট হতে এই ফুলব্রাইট স্কলারশিপ দেওয়া হয়। তাকে অনেকটা এভাবেই কিছু অভিধানে ভূষিত করা রেখে দেওয়া হয়েছে। Click This Link ।

ওপেন স্ট্রীট ম্যাপকে বাংলাদেশে প্লট করার উদ্যোক্তা তিনিই। স্পেনে আয়োজিত দা ষ্টেট অফ দা ম্যাপ(এস.ও.টি.এম.) কনফারেন্স ২০১০ এ ওপেনস্ট্রিটম্যাপ ট্রাভেল স্কলারশিপ প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে তিনিই অংশগ্রহণ করেন।  ওপেন স্ত্রীট ম্যাপে কর্মসূচী সকলের মধ্যে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করেছে সে সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি।  ওপেন স্ট্রীট ম্যাপ বস্তুত ম্যাপের উইকিপিডিয়া এর মতো। আমরা যদি পৃথিবীর পুরোটুকুকে সুন্দর করে কম্পিউটারে ম্যাপ করতে পারি, ডিজিটাল ম্যাপ তৈরি করতে পারি তাহলে আমাদের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়া অনেক বেশি সহজ হয়ে যাবে।

জি.এস.এম ম্যাপ বুয়েট ওপেন স্ট্রিট ম্যাপ এর ইনিশিয়াল ষ্টেজ। প্রথম যখন ওপেন স্ট্রিট ম্যাপ বানানো শুরু হয় তখন জি.পি.এস. ব্যবহার করতে হয়। তারপর ওটাকে একেবারে ওপেন স্ট্রিট ম্যাপে ইনিশিয়াল প্লটে তুলতে হয়।  ওপেন স্ত্রীট ম্যাপে “একশন ওয়ার্ল্ড কাপ“ নিয়ে যে কর্মসূচী সকলের মধ্যে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করেছে সে সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি।  আমাদের হাতে জিপিএস আছে মাত্র পাঁচটা।

আমরা ২০১১ এর জানুয়ারিতে ওপেন স্ট্রিট ফাউন্ডেশন থেকে সবে অনুমোদন পেয়েছি। এই ম্যাপ বানানোটা আসলে অনেক বড় ব্যাপার। এটা একদিনে হবে না। সেজন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমরা ছোট ছোট প্রজেক্ট এঁর মাধ্যমে এই কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। কমিউনিটি একশন এর সাথে যৌথভাবে আমাদের প্রথম প্রজেক্টটা ছিল ‘একশন ওয়ার্ল্ড কাপ‘ ।

যেটা ছিল ওয়ার্ল্ড কাপে খেলা দেখতে যেসব বিদেশীরা আসবে তারা আমাদের দেশকে জানে না আমাদের দেশের কোথায় কি আছে তা জানে না, তাদের জন্য আমরা দরকারী জায়গাগুলিকে ম্যাপের মাধ্যমে প্লট করছিলাম। আমাদের প্রথম টার্গেট ছিল স্টেডিয়ামের চারদিকের হোটেল, হসপিটাল ও পুলিশ স্টেশন এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলিকে প্লট করা এবং সেগুলোতে পৌঁছার জন্য আনুষঙ্গিক প্রধান রাস্তাগুলিকে ম্যাপে দেখাচ্ছিলাম।  পরবর্তিতে কমিউনিটি একশন এর সাথে যৌথভাবে ওপেন স্ট্রিট ম্যাপের কাজ করেছেন। কমিউনিটি একশন কতটুকু সহায়তা করেছে।  আমি এক্ষেত্রে সৌভাগ্যবান্‌যে আমি দেশি বিদেশী বন্ধুদের সাহায্যের হাত পেয়েছি।

এর মধ্যে আমি প্রথমেই বলতে চাই কমিউনিটি একশন এর সোহায়লা রিদওয়ান আর নাবিলা ইদ্রিসের কথা। সোহায়লা রিদওয়ান আমার ভালো বন্ধু । সে এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে পড়ছে। ওদের মূল কাজটা ছিল কমিউনিটিকে সার্ভিস দেওয়া আর আমার কাজটা ছিল টেকনোলজির মাধ্যমে কমিউনিটিকে সার্ভিস দিব । আমার যখনই কোন ভোলেনটারিং/সার্ভিসের দরকার হত ওরাই আমাকে ভোলেনটায়ার দিত।

ওদের নেটওয়ার্ক অনেক বড়। ওদের অনেকের সাথেই আমার পরিচয় আছে। সেজন্য আমরা কাজটা অনেক খানি এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছি।  ফুলব্রাইট স্কলারশিপ “সাইন্স এন্ড টেকনলজি এওয়ার্ড“ এর জন্য আপনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। পি.এইচ.ডি করার জন্য আপনি নিউইয়র্কে অবস্থিত কর্নেল ইউনিভার্সিটিতে যাচ্ছেন।

আপনার অনুভূতি কেমন?  খুব ভালো একটা অনুভূতি। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর একজন বা দুজন করে ফুলব্রাইট স্কলারশিপ পাচ্ছেন। এরমধ্যে বুয়েটে কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট ২০০৭-২০০৮ সাল থেকে প্রতিবছর টানা একজন বা দুজন করে ফুলব্রাইট স্কলারশিপ পাচ্ছেন। তাদের মধ্যে একজন হতে পেরে আমি গর্বিত বোধ করছি। আমি আশা করছি বাংলাদেশ এ ধারা অব্যাহত রাখবে।

তবে প্রথাগত একাডেমিক লেখাপড়ার পাশাপাশি গবেষণা কাজে অবদান রাখার জন্য এ পুরস্কার দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে আমি মনে করব যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণামূলক কাজে আরেকটু জোর দেওয়া উচিত প্রথাগত একাডেমিক লেখাপড়ার পাশাপাশি।  পি.এইচ.ডি টা করছেন কিসের উপর?  আমার গবেষণার ফোকাসটা “হিউমেন কম্পিউটার ইন্টারেকশন“ এর উপরে। এখানে হিউমেন(আমরা) কম্পিউটার এর বিভিন্ন টেকনোলজি দিয়ে কীভাবে মানুষের জীবনের বিভিন্ন সমস্যার উপর আলোকপাত করতে পারি। সে ব্যাপারগুলোকে ডিল করে।

এক্ষেত্রে আমি যে জিনিসের উপর ফোকাস করি সেটা হল যে মানুষের ইমোসন বা আবেগকে কিভাবে কম্পিউটারের সাহায্যে নির্ধারণ করা যায় এবং সেটাকে ব্যবহার করে কিভাবে আমরা বেটার সার্ভিস দিতে পারি। আমার ব্যক্তিগত গবেষণার মধ্যে অটিরসটিক বাচ্চাদের নিয়ে কাজ ছিল। বর্তমানে আমরা ওপেন স্ত্রীট ম্যাপ নিয়েও কাজ করছি।  আপনার ব্যক্তিগত গবেষণাধর্মি গ্রুপ হিউম্যান টেকনোলজি ইন্টারেকশন সম্পর্কে কিছু বলুন।  হিউম্যান টেকনোলজি ইন্টারেকশন এর প্রথম কাজটা শুরু হয় এম.আই.টি. মিডিয়া ল্যাবের একজন পি.এইচ.ডি স্টুডেন্ট এর সাথে| তার কাজের এক্সটেনশণ ছিল যে অটিস্টিক বাচ্চাদের স্পিচ ডেভলপমেন্ট এর জন্য কম্পিউটার গেম তৈরি করা যায় কিনা।

এক্ষেত্রে আমরা মোহাম্মদপুরে অবস্থিত অটিসম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের সাথে একটা পাইলট রান করে । ২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত নিজে একটিভলি কাজ করি ও অটিস্টিক বাচ্চাদের জন্য কিছু কম্পিউটার গেম তৈরি করি। সাধারণত অটিস্টিক বাচ্চারা কম্পিউটার গেম শিখালে ওটাতে বেশি এটেনসন দেয়। কম্পিউটার গেমের মাধ্যমে ওদেরকে শুদ্ধ উচ্চারণ শিখানোটাই উদ্দেশ্য ছিল। এর মধ্যে “এ কম্পিউটার গেম বেসড এপ্রচ ফর ইনক্রিসিং ফ্লুয়েন্সি ইন দা স্পীচ অফ দা অটিস্টিক চিলড্রেন“ ও “এ-ক্লাসঃইন্টিলিজেন্ট ক্লাসরুম সফটওয়ার ফর দা অটিস্টিক চিলড্রেন“ প্রজেক্টটি“ উল্লেখযোগ্য।

“  বহুল আলোচিত “এ-ক্লাসঃইন্টিলিজেন্ট ক্লাসরুম সফটওয়ার ফর দা অটিস্টিক চিলড্রেন“ প্রজেক্টটি“ সম্পর্কে জন্যতে চাচ্ছি।  এ প্রজেক্টের আইডিয়াটা এরকম ছিল যে, আমাদের ক্লাস রুমের মধ্যে যদি কিছু অটিস্টিক বাচ্চা থাকে এবং কিছু স্বাভাবিক বাচ্চা থাকে তখন অটিস্টিক বাচ্চারা নিজের কাজ করার জন্য এবং নিজেকে বোঝার জন্য দরকারি ইনভায়রনমেন্ট পায় না। এই সমস্যা দূর করতে আমরা কাষ্টমাইজড ইনভায়রনমেন্টে তাদের পড়াশুনার ব্যবস্থা প্রস্তাব করি। এ প্রজেক্ট সংক্রান্ত পেপারটি মালয়শিয়ায় মার্চ ২০১১ এ অনুষ্ঠিত IEEE সিম্পোজিয়াম অন কম্পিউটার এন্ড ইনফরমেটিকসে খুব ভাল একটা রিভিউ পায়। বর্তমানে প্রজেক্টটিকে আরো উন্নত করার চেষ্টা চলছে|  “মোবাইল ফোন বেসড এপ্রচ ফর মাইক্রোক্রেডিট ইন রুরাল বাংলাদেশ“ প্রজেক্টটিতে ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচিকে নতুন আঙ্গিকে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে।

 এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কোলাবরেশনে কাজটি হয়েছে। ওদের অবজার্ভাসন ছিল যে, বাংলাদেশে ক্ষুদ্রঋণ করা হচ্ছে কিন্তু মাইক্রোক্রেডিট একটিভিতিস(ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি)সফল হচ্ছে না। গরীব কুটিরশিল্পী বা কৃষকরা ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি থেকে টাকা নিয়ে তাদের আগের যেসব দেনা ছিল যা পরিশোধ করতেই টাকাটা ব্যবহার করে ফেলছে। এরফলে তাদের ভাগ্য উন্নয়ন হচ্ছে না বরং তাদের ঋণের পরিমাণ বেড়েই যাচ্ছে। সিলেটের জামালগঞ্জে ওরা একটা সার্ভে চালায়।

সেখান থেকে এসব তথ্য বের হয়ে আসে| আমাদের প্রস্তাবিত সিস্টেমে আমরা ঋণগ্রহীতাদের হাতে হার্ডক্যাশ না দিয়ে মোবাইলের মাধ্যমে ব্যালান্স ট্রানসফার করে দিব এবং সেখান থেকে তারা শুধু তাদেরকেই টাকা দিতে পারবে যারা তাদের সাথে কৃষিকাজ বা বাণিজ্যে জড়িত। ঋণ পরিশোধ বা অন্য কোন ব্যক্তিগত কাজে তারা টাকা ব্যয় করতে পারবে না।  “স্মার্ট ব্ল্যাড ব্যাংক কুয়েরি :“এ নভেল মোবাইল ফোন বেসড প্রাইভেসি- এওয়ার ব্লাড ডোনার রিক্রুটমেন্ট এন্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ফর ডেভলপিং রিজিয়নস“ ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সেকেন্ড প্রাইজ পেল।  আমাদের কারও রক্তের দরকার হলে আমরা আশেপাশের লোকদের বলি বা পত্রিকায় বা টিভিতে বিজ্ঞাপন দেই। এতে কিছু সমস্যা হয়| যেমন এ পজিটিভ রক্তের প্রয়োজন, অনেকের কাছে বলা হয়েছে কিন্তু তাদের এ পজিটিভ রক্ত নেই।

আবার টি.ভি.তে বিজ্ঞাপনটি সম্প্রচারিত হলে যাদের সেই রক্ত নেই, তাদের সময়টা অপচয় হয় টি.ভি.তে বিজ্ঞাপনটি দেখে। যার কাছে ঐ গ্রুপের রক্ত আছে শুধু তার কাছে মেসেজগুলো পাঠাতে পারলে ভাল হত। আমাদের প্রোপোজড সিস্টেমটা এরকম যে, যখন মোবাইল সিম রেজিষ্ট্রেশন করবে তাদের প্রত্যেকের রক্তের গ্রুপ দেয়া থাকবে। যখন কারও রক্তের দরকার হবে তখন তাদের আশেপাশে যারা ওই মুহূর্তে সাহায্য করতে পারবে তাদের কাছে মেসেজ পাঠানো হবে যদি তারা দিতে ব্যর্থ হয় তবে তাদের আশেপাশে যারা প্রতিবেশি আছে তাদের কাছে যাবে। এরকম করে যেতে থাকবে।

এখানে তারা প্রাইভেসি মেইনটেইন করার জনা যে রক্ত দিচ্ছে তার প্রাইভেসি যাতে কোনভাবে লিক না হয় সে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।  এন ইফিসিয়েন্ট সিস্টেম ফর সার্চিং ফ্রিকুয়েন্সি লস্ট অবজেক্টস ইউসিং বাইনারী ডিটেকসন সেন্সর“ নামে স্নোফল থেকে হারিয়ে যাওয়া বস্তু বা মানুষকে সনাক্ত করার জন্য প্রজেক্টি করেছিলেন। এ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি।  কানাডায় স্নোফল হয়,অনেকে স্কি করতে গেলে এভালেন্স হয় অর্থাৎ বরফ ধ্বসে পড়ে। বরফের নীচে চাপা পড়ে যাওয়ায় সে কোথায় আছে তা বরফের নীচে খুঁজে পাওয়াও মুশকিল।

এই সমস্যাটাকে সমাধান করার জন্য তারা একটা জিওমেট্রিকেল সলিউসন দাঁড় করেছিলামা  “এন ইমপ্রুভড এন্ড কষ্ট ইফিসিয়েন্ট ভয়েস একটিভেতেড রীমট হোম মেইন্টেনেন্স সিস্টেম ইউসিং সেলুলার টেকনোলজি“ প্রজেক্টি স্মার্ট হোম তৈরিতে সহায়তা করবে। এটির সম্পর্কে কিছু বলুন।  এটা আমার ফাইনাল ইয়ারে ইন্টারফেসিং সাবজেক্টের প্রজেক্ট ছিল। আমাদের গ্রপের মেম্বাররা সবাই উচ্চশিক্ষাত্রে বিদেশে গিয়েছে। এটা বাইরে থেকে ভয়েস কমান্ড দিয়ে বাড়ির লাইন ফ্যান বন্ধ করা যায়।

মোবাইল থেকে পাওয়া ভয়েস সিগন্যালকে আমি ইন্টারফেস হিসেবে দাঁড় করিয়েছিলাম। হার্ডওয়ার এবং সফটয়ারের ভাল একটা কম্বিনেসন ছিল।  সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ, মোঃ আরিফুল ইসলাম ,মাসুদ হাসান “সিলেক্টেড টপিকস অফ কম্পিউটেশনাল জিওমেট্রি: পলিগনস,সারকেলস এন্ড স্পেয়রস“ নামে জার্মানি থেকে প্রকাশিত বই দেখতে পাচ্ছি। ডঃ মাসুদ হাসানের সাথে আপনার কিছু জিওমেট্রির কাজ চলছে। সেগুলো সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি।

 এটা আসলে আমার আন্ডারগ্রেডুয়েট কাজের কনটুনিয়েশণ। আমি পিউর থিউরিটিক্যাল বেকগ্রাউন্ড থেকে এসেছি। আমার সৌভাগ্য ছিল যে আন্ডারগ্রেডুয়েট ফাইনাল ইয়ারে ডঃ মাসুদ হাসান স্যারের সাথে কাজ করেছি। উনি “ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াটারলু“ থেকে কম্পিউটেসনাল জিওমেট্রি তে পি.এইচ.ডি করে এসেছেন। এই কাজটি ছিল কাটিং ওপটিমাইজ করার| কোন একটা শেপ থেকে আরেকটা শেপে কেটে ফেললে কীভাবে কাটতে হয়,কীভাবে কাটলে কাটার কস্ট কম হয় এ নিয়েই কাজ ছিল।

ইন্ডাস্ট্রিতে এটার অনেক এপ্লিকেশন আছে। পরবর্তিতে আমরা থিসিস আকারে না রেখে বড় অডিয়েন্স এর কাছে পৌছানোর জন্য সেটাকে বই আকারে বের করি। ঢাকায় আয়োজিত চতুর্থ ইন্টারন্যাশনাল ওয়ালকম , জাপানে আয়োজিত ৭তম জাপান কনফারেনস অন কম্পিউটেশনাল জিওমেট্রি এন্ড গ্রাফ (যে.সি.সি.জি.জি) ও ইন্ডিয়ায় আয়োজিত ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন এডভান্স ইণ কম্পিউটিং কনট্রোল এন্ড টেলিকমিউনিকেসন, টেকনোলজিস (এ.সি.টি) তে জিওমেট্রির পেপার গুলি উপস্থাপিত হয়।  যুক্তরাষ্ট্র বিখ্যাত টেইলর এন্ড সিস ফ্রেন্সিস গ্রুপ, সিআরসি প্রেস ও আউরব্যাচ পাবলিকেসনে “সিকিউরিটি অফ সেলফ অরগানাইজিন নেটওয়ার্কসঃ মানেট,ডাব্লু এস এন,ডাব্লু এম এন“ বইটিতে ভিনেট ও জে.এস.পি সার্ভলেট এর কারেন্ট সিকিউরিটি চেঞ্জ আপনার রচিত। সিকিউরিটির কাজটি জানতে চাচ্ছি।

 ভিনেট(ভেহিকুলার এডহক নেটওয়ার্ক) জে.এস.পি সার্ভলেট এবং কস্ট প্লাটফর্ম টোটাল বেপারটা আমরা সার্ভে করি। যতগুলো ভিনেট প্রোটকল ছিল কয়েকটার প্রত্যেকটার সিকিউরিটির ট্রাস্টটেবেলিটি এবং সিকিউরিটি প্রোপরসনের কাজ নিয়ে কোন জায়গায় কি লেকিং আছে সেইগুলি বের করি। পরবর্তিতে আমাদের নিজেদের কয়েকটি প্রোপোসল ছিল সেখানে কি করে এগুলোকে হেন্ডেল করে একটা প্লাটফর্ম তৈরি করা যায়, যদিও সেটা হাইপোথিটিক্যাল সলিউসন ছিল না। কিন্তু তখন পর্যন্ত এর থেকে বেটার সলিউসন ছিল না তাই এটা আমরা প্রোপোজড করি। এছাড়াও কোরিয়াতে ডিসেম্বর ২০০৯ এ দ্বিতীয় ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন কম্পিউটার এন্ড ইটস এপ্লিকেশনস(সিএসএ) তে “পলিসি রিকরমিন্টস টু ইনশিউর সিকিউরিটি ইন এন্টারপ্রাইজ গ্রীড সিকিউরিটি সিস্টেমস“ নামে সিকিউরিটির উপর আমার আরেকটা পেপার প্রদর্শিত হয়।

 ২০০৯ এ জাপানের কানাযাওয়াতে অনুষ্ঠিত জাপান কনফারেন্স অন কম্পিউটেসনাল জিওমেট্রির এন্ড গ্রাফস( যে.সি.সি.জি.জি) তে আপনার অংশগ্রহণ সম্পর্কে কিছু বলুন।  এটা আসলে আমার এটেন্ড করা বড় আকারের একটা কনফারেন্স। আমি খুব সৌভাগ্যবান যে এরিখ ডিমেইন ( Erik Demaine of MIT ) এর সাথে দেখা করতে পেরেছিলাম,যিনি কম্পিউটার সাইন্সের প্রবাদ পুরুষ টাইপের। মাত্র ৩০ বছর বয়সে সে ৩০০ টার উপর পেপার পাবলিসড করেছে। এখন সে এম.আই.টি এর একজন ফেকালটি মেম্বার।

আমার কম্পিউটেসনাল জিওমেট্রির একটা কাজ এরিখ ডিমেইনের কাজের এক্সটেনসন ছিল। প্রথম ঐ কনফারেন্সে এরিখ ডিমেইনের সাথে দেখা হয় ও কথা হয়। তার থেকে অনুপ্রেরণা পাই এই কাজ এগিয়ে নেওয়ার জন্য। এটা আমার সারাজীবন মনে থাকার মত একটা ইভেন্ট।  আপনার প্রথম কনফারেন্স খুলনাতে আই.সি.সি.আই.টি সম্পর্কে কিছু বলুন।

 খুলনার লোকাল একটা কনফারেন্স আই.সি.সি.আই.টিতে আমার প্রেজেন্ট করা প্রথম পেপার ছিল। এখানে আমার জিওমেট্রির প্রথম পেপারটা যায়। ওখানে বেশ কিছু বরেণ্য মানুষদের সাথে আমার দেখা হয়। যদিও এদের সাথে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় আগে থেকেই ছিল। তারপরও নিজের রিসার্চ ওয়ার্ক এত বড় মানুষদের সামনে বলা বা প্রেসেন্ট করা এবং তাদের জিজ্ঞাসিত প্রশ্নে অংশ নিয়ে যথাযথ উত্তর দেয়া(তাদের করেসপণ্ডিং কয়েছসেনে এড্রেস করা)তখন আমার জন্য একটা ভাল এক্সপেরিয়ে্ন্স ছিল।

 বুয়েটে আয়োজিত ওয়েলকাম ২০১০ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি।  ওয়েলকাম বাংলাদেশে প্রতি ২ বছরে একবার হয়। বাংলাদেশ ও ইন্ডিয়ার মধ্যে এলগরিদমের উপর সবচেয়ে বড় কনফারেন্স ধরা যেতে পারে। দুটা পেপারই জিওমেট্রির উপর ছিল ডঃ মাসুদ হাসানের সাথে। বাংলাদেশ কম্পিউটার সাইন্সের বড় বড় লোক ছিল।

ইয়ানুসকা এসেছিল। এছাড়াও করান্ট ইন্সটিটিউট অফ ম্যাথমেটিকস রিসার্চ প্রফেসর জেনোস পেচের সাথে পরিচয় হয়। এত বড় মাপের মানুষদের সংস্পর্শ পরবর্তিতে আমাকে গবেষণা কাজে আরও উদ্ভূত করে। বাংলাদেশে এত বড় মাপের লোকদের হোস্ট করতে পেরে আমরা নিজেরও আনন্দিত। বুয়েটের তিনটা পেপারের মধ্যে দুটা পেপারই আমার ছিল।

 আইডিয়াল স্কুলে পড়া অবস্থায় মিনিস্ট্রি অফ এডুকেসন হতে ৯৫‘ “প্রাইমারি স্কলারশিপ ইন টেলেন্টপুল“ ও আইডিয়াল স্কুল হতে ৯৭‘ বেস্ট স্টুডেন্ট এওয়ার্ড । মিনিস্ট্রি অফ এডুকেসন হতে ৯৮‘ জুনিয়র স্কলারশিপ এওয়ার্ড। স্কলারশিপ ফোরাম স্কলারশিপ পরীক্ষায় ৯৮ ও ৯৯ এ “ফাস্ট ইন দা ফাস্ট গ্রেড“ এতগুলি প্রাপ্তি দেখতে পাচ্ছি। আইডিয়াল স্কুলে পড়াশুনা কেমন নিয়ম কানুন ছিল?  আইডিয়াল স্কুলে অনেক কড়াকড়ি করে। স্কুলে ভাল লাগার থেকে ভীতিটা বেশি কাজ করেছে।

স্কুল থেকে বের হয়ে ভীতিটাই বেশি মনে পড়ত। কিন্তু সময় যত গিয়েছে তত আমরা বুঝতে পেরেছি আইডিয়াল স্কুল একটা গাঁথুনি আমাদেরকে দিয়ে দিয়েছে যা পরবর্তিতে প্রচণ্ডভাবে সাহায্য করেছে। ওখানে বিজ্ঞান বিভাগে তখন খুব ভাল শিক্ষকরা ছিলেন। ওখানে পড়াশুনার সুস্থ প্রতিযোগিতা ছিল। ছাত্রদের নিজেদের গড়ে তোলার ব্যাপারে খুব সাহায্য করে আইডিয়াল স্কুল।

 নটেরডেম কলেজের “এওয়ার্ড অফ মেরীট“ আর “পারফেক্ট এটেনডেন্স এওয়ার্ড“ এ দুটির প্রাপ্তি একই সাথে খুব কম নটেরডেমিযানেরই আছে।  নটেরডেম কলেজের দুটা বছর আমার জীবনের সেরা দুই বছর ছিল। এটা মনে হয় প্রত্যেকটা নটরডেমিয়ানই একই কথা বলবে। খুবই আনন্দে কেটেছে সময়টা। পড়াশুনার মধ্যে চমৎকার আনন্দ ছিল।

টপ একাডেমীক স্কোর থাকার কারণে এওয়ার্ডগুলো পেয়েছিলাম। পরবর্তিতে এইচ.এস.সি পরীক্ষায় মিনিস্ট্রি অফ এডুকেসন হতে বোর্ড স্কলারশিপ (টেলেন্টপুল)টা সহজে পাওয়া গিয়েছে।  নটেরডেমে পড়াশুনা যে ধাঁচে চলে স্টুডেন্টদের কীভাবে সাহায্য করে?  আমি যে সময়ে নটেরডেমে ছিলাম যে সময়ে নটেরডেম খুব প্রশংসাযোগ্য অবস্থানে ছিল। । সেখানে খুব ফেয়ার সিস্টেম ছিল।

খুব কঠোর নিয়মকানুন মেনে চলা হত। শিক্ষক এবং কর্মচারী সবাই কঠিনভাবে সময় মেইনটেইন করত। আমরা সবসময় এটা মেনে চলেছি এবং আমাদের সারাজীবন এটা কাজে লেগেছে।  বুয়েটে প্রোগ্রামিং কনটেস্টে অংশগ্রহণ ও এ.সি.এম. আই.সি.পি.সি. এশীয়া রিজিওনাল প্রোগ্রামিং কনটেস্টে ষষ্ঠ রেংক ও ৯তম স্থান।  প্রোগ্রামিং কনটেস্টে খুব শুরু থেকে জড়িত ছিলাম না।

মাঝে একটা পিরিয়ড আমি জড়িত ছিলাম। আর মধ্যে অনিন্দ্য দাস এবং মোঃ ফারুকের সাথে ঢাকা রিজিয়নের হয়ে এ.সি.এম কনটেস্টে অংশ নেই। আমি বেশ কিছু লোকাল প্রোগ্রামিং কনটেস্টে অংশ নিয়েছি। এরপর ইউ.আই.ইউ তে কোচ হিসেবে কাজ করেছি। বুয়েটে কয়েকটা কনটেস্টে কোচ হিসেবে কাজ করেছি।

 বুয়েটে পড়া অবস্থায় চমৎকার একাডেমীক রেজাল্ট করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আইএসকে ফাউন্ডেশন হতে “ইমদাদ–সিতারা খান স্কলারশিপ“পেয়ে এসেছেন।  স্কুল ও কলেজের ধারাবাহিকতা বুয়েটেও ছিল। তাই এ অর্জনগুলো পেয়েছি। অবশ্যই অনেক চমৎকার অনুভূতি।  বুয়েটের দিনগুলি কেমন ছিল স্টুডেন্ট হিসেবে টিচারদের সাথে আবার টিচার হয়ে স্টুডেন্টদের সাথে?  ছাত্র হিসেবে বুয়েটের সময়গুলো খুব ভাল ছিল।

বুয়েটের সহপাঠীরা এবং সিনিয়র ও জুনিয়ররা সবাই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খুব ভাল অবস্থানে আছে। সম্প্রতি মঞ্জুরুর রহমান অ তানায়িম মূসা গুগলে জয়েন করেছেন। এছাড়াও বড় বড় ইউনিভার্সিটিতে উচ্চতর ডিগ্রি এবং প্রচুর পেপার পাবলিকেসন করেছেন সেরকম অনেকজন আছেন। আমরা অনেক ভাল ভাল শিক্ষককে পেয়েছি এখানে। বুয়েটে ঢুকেই দেখলাম বুয়েটের আনাচে কানাচে ভাইয়ারা মাইক্রোসফট যাচ্ছে,গুগলে যাচ্ছে।

বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে রিসার্চে যাচ্ছে সেখান থেকে আমরা প্রচণ্ড উৎসাহ পেতাম। তখন ছিল বুয়েটের স্বর্ণযুগ। বর্তমান প্রজন্মে এই সুরটা মিস করি। তবে শিক্ষক হবার পর অনেক ট্যালেন্ট স্টুডেন্টদের পেয়েছি। তাদের সাথে কাজ করতে পেরে নিজেকে অনেক সৌভাগ্যবান মনে করি।

 আপনি বিভিন্ন কনটেস্টে জাজ হিসেবে যাচ্ছেন।  আমি জাজ হিসেবে অনেক নবীন। আমার পাশে অনেক প্রবীণ ও জ্ঞানী লোক থাকেন। আমাকে সিলেক্ট করাতে আমি সত্যি আনন্দিত ও কৃতজ্ঞবোধ করি। তবে বাংলাদেশে কনটেস্টগুলি আরেকটু বস্তুনিষ্ঠ ও ফেয়ার হওয়া উচিত।

মাঝে মাঝে কিছু কনটেস্টে নির্বাচিত বিজয়ী নিয়ে প্রশ্ন চলে আসে।  এইচ.টি.আই এর কি হবে আপনার অবর্তমানে?  আমি হয়ত ২০১১ এ ইউ.এস.এ তে কোন একটা ইউনিভার্সিটিতে পি.এইচ.ডি করার উদ্দেশ্যে চলে যাব। তখন খুব বড় একটা কনসার্ন হবে হিউমেন কম্পিউটার ইন্টারেকশন[এইচ.টি.আই] এর কি হবে। পরবর্তিতে এই গ্রুপকে কে লিড করবে? এতদিন আমি একা জিনিসগুলোকে হ্যান্ডল করেছি। তবে আমি আশা করছি নতুন নতুন প্রজেক্ট চলে আসছে এবং আমরা এরকম কোন লিডার পাব যে এদের মধ্যে থেকেই উঠে আসবে।

ওপেন স্ট্রিট ম্যাপের কাজ চলবে। সারা দেশে প্লট করা হবে। আমি বিদেশ থেকে যত সাহায্য সহযোগিতা দেবার চেষ্টা করব। আপনাকে ধন্যবাদ সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদের ওয়েবসাইট : http://kallol.echoz.com/ , HTI এর ওয়েবসাইট : http://htibd.org/, ব্লগ : http://shorob.com/2011/08/18/ গিয়ে “কিছু খবর অনুপ্রেরণা যোগায়…“ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.