আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বড়বেলার ঈদ

অন্যায়ের প্রতিবাদ করার মত সাহস নেই। কোন অন্যায় দেখলে তাই দাপিয়ে বেড়াই, নিজেই নিজের সাথে। । জীবণের এই কুড়িতম রোজার প্রান্তলগ্নে এসে যখন ফিরে তাকাই ছোটবেলার ঈদ্গুলোর দিকে, কী যেন এক অজানা শূন্যতায় ভড়ে ওঠে এই মন, হু হু করে ওঠে বুকের ভেতরটা। ।

সেই ছোটবেলার ঈদ, আর আজকের বড়বেলার ঈদ ,, মনে হয় যেন যোজন যোজন পার্থক্য। মেলাতে পারিনা একটা কে আরেকটার সাথ। শুধু মনে হয় কি যেন নেই, কি যেন নেই। ঈদের আনন্দ ছাপিয়ে সেই না পাওয়ার বেদনাটাই যেন ভাষাহীন বোবা প্রাণীর মত থেকে থেকে গুমড়ে কেঁদে মরে। আমাদের বাপ-চাচারা চার ভাই।

চাচাতো ভাই-বোনদের সংখ্যাটাও তাই নেহায়েত কম নয়। বাবার চাকরির সুবাদে যদিও থাকতে হয় শহরে, তারপরও প্রতি ঈদে বাড়ি যাওয়া চাই। ঈদে সবাই মিলে যে মজা করা যায়, একলা বাসায় বসে কি সেটা হয়? কিন্তু যত বড় হচ্ছি ততই পরিচয় হচ্ছে কঠিন পৃথিবীর রূঢ় বাস্তবতার সাথে। সময় থেমে নেই , ছোট্টটি নেই আমার বোনেরাও। ।

একে একে সবারি বিয়ে হয়ে গেছে, বাকি মাত্র আর একজন। ঈদে তাই বাড়িতে গেলে আর পাওয়া যায়না কাউকে। আর আমাদের পরিবারটাও এমন যে, ভাই দের তুলনায় বোনদের সংখ্যাটাই বেশি। অবশ্য ভাইদের সবাইকেও ইদানিং পাওয়া যায় না। পড়াশুনার জন্য কিংবা জীবিকার তাগিদে ছিটকে পড়েছে তারা দেশে কিংবা দেশের বাইরে, হয়তো দেখা যায় ঈদের সময় ছুটি ছাটা পাচ্ছেনা , তাই আসতেও পারছেনা।

মনে আছে ঈদের আগের দিনগুলোতে পিঠে বানানোর ধুম পড়ে যেত। মা-চাচিরা পিঠা বানাতেন, তাদের সাহায্য করত চাচাতো বোনেরা । । আর আমরা তো আমড়া-কাঠের ঢেঁকি, কিচ্ছুটি পারতাম না, পাশে বসে শুধু নাড়াচাড়া করতাম। গভীর রাতে বসত মেহেদী'র আসর।

আমাদের যে আপুটা সুন্দর মেহেদী লাগাত, তার কাছে মেহেদী লাগানোর জন্য রীতিমত মারামারি লেগে যেত আমাদের মধ্যে। আর সে বেচারী অন্যদের মেহেদী দিয়ে দিয়ে আর নিজে মেহেদী দেয়ার সময় পেত না। ঈদের সকালে তাড়াহুড়া করে গোসল করে, মুরব্বীদের সালাম করে সবাই মিলে বেড়িয়ে পড়তাম পাড়া বেড়াতে। এবাড়ি থেকে ও বাড়ি, ও বাড়ি থেকে সে বাড়ি... সারাদিন টই টই ... বিকেলে আবার ফুফুর বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া, সেখান থেকে বাবার নানুবাড়ি ... অথচ এখন ,, ঈদের আগের দিন সেই পিঠা বানানোর ধুমও পড়েনা, আর সকালে পাড়া বেড়ানোর সেই মানুষও খুঁজে পাওয়া যায় না। একলা আর কাহাতক ঘুরাফিরা করা যায়।

নিজেই নিজের হাতে মেহেদী দিয়ে কাকের ঠ্যাং , বকের ঠ্যাং আঁকি । মনটাই খারাপ হয়ে যায়। বাড়িতেও বেশি যেতে ইচ্ছে করে না, মনে হয় ওই খালি বাড়িটা যেন আমাকে গিলতে আসছে। সে যাই হোক, আরেকটা ঈদ আসছে ,, বাস্তবতা মেনে নেওয়াটাই আপাতত বুদ্ধীমানের কাজ। অন্তত এতোটুকু বুঝতে পারছি, আমরাও বড় হচ্ছি।

ভাল থাকবেন সবাই, আগাম ঈদ মোবারক ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।