আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কাজলের দিনরাত্রি এবং সিনেমাকড়ের ঘরবসতি

নির্বোধের ব্লগে স্বাগতম। জানি না অনেক কিছুই; জানতে চাই, তাই ভুল করি বারবার ফরিদুর রেজা সাগর শ্রদ্ধাষ্পদেষু, সালাম নিবেন। আশা করি ভালো আছেন। পর সমাচারএই যে, একথা আমাদের কারোরই অজানা নয় যে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে আপনার ও ইমপ্রেস টেলিফিল্মে র অবদান অনেক, বিশেষ করে অশ্লীলতার জোয়ারের সেই সময়টাতে সুস্থধারার সিনেমা চর্চায় ইমপ্রেস অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু অতি সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের অর্থাৎ সাধারণ চলচ্চিত্রপ্রেমীদের কাছে ইমপ্রেসের আচরণ অনেক প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।

ইমপ্রেসের সম্ভবত অতি উৎসাহই এর কর্মকান্ডকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। গত বছরের কথাই ধরা যাক। আমরা কমবেশি সবাই জানি যে বাংলা সাহিত্য ও চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি পুরুষ হুমায়ুন আহমেদের প্রতি আপনাদের অন্যরকম প্রবল একটা ভালোবাসা আছে এবং আপনারাও ভালোভাবেই জানেন যে বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ তাকে ভালোবাসে ও মনে করে নিজের পরিবারের একজন হিসেবে। আপনাদের এই ভালোবাসাকে আমরা সম্মান করি। কিন্তু আমাদের কাছে মনে হচ্ছে যে আপনারা মানুষের সেন্টিমেন্টকে তুচ্ছজ্ঞান করেছেন ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ সিনেমার বেলায়।

বিভিন্ন জায়গায় যতটুকু পড়েছি তাতে জেনেছি যে হুমায়ূন আহমেদের প্রবল ইচ্ছে ছিল যাতে তার এই সিনেমাটি সিনেমা হলে দেখানো হয়। একটা প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করছে, আচ্ছা, আপনারা সিনেমা হল বলতে কি শুধু একটা সিনেপ্লেক্স আর বলাকা সিনেমা হলকেই বোঝেন? এই দুই জায়গায় সিনেমা প্রদর্শন করলেই কি বড়পর্দার সব দর্শককে কাভার দেয়া হয়ে যায়? আমরা নিশ্চিত হুমায়ূন আহমেদ আসলে চেয়েছেন যেন এই সিনেমাটি দর্শকরা বড়পর্দায় দেখে। কিন্তু আপনারা করলেন কী? আপনারা আপনাদের মুনাফার জন্য অচিরেই টেলিভিশনের কাছে সিনেমাটি বিক্রি করে দিলেন। আর বললেন কী? - হুমায়ূন আহমেদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য নাকি আপনারা টেলিভিশনে ‘ঘেটুপুত্র কমলা’র প্রদর্শন করতে যাচ্ছেন । এটা শ্রদ্ধা প্রদর্শনের কোন ক্যাটাগরির মধ্যে পড়ে? একজন সৎ সিনেমা নির্মাতার স্বপ্নই হলো তার সিনেমাটি বড় পর্দায় প্রদর্শনের ব্যবস্থা করে সর্বোচ্চ সংখ্যক দর্শকের কাছে সিনেমাটিকে পৌঁছে দেয়া।

হুমায়ূন আহমেদেও এমন স্বপ্নই দেখেছেন। কিন্তু আপনারা তার স্বপ্নকে যেমন চাপা দিয়েছেন তেমনি দর্শকদেরকে বঞ্চিত করেছেন ‘ঘেটুপুত্র কমলা’র মতো দর্শকবান্ধব একটি সিনেমা বড় পর্দায় দেখার সুযোগ না দিয়ে। আপনারা স্রেফ প্রতারণা করেছেন বলে আমাদের মনে হচ্ছে। আমরা প্রায় সবাই জানি যে দেশের শীর্ষ দুই-তিনটি পরিবেশকের মধ্যে আপনারা অন্যতম। পরিবেশনার ক্ষেত্রে আপনাদের পারদর্শিতা ব্যাপক।

আপনারা কি সিনেমা হলমালিকদের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন? যদি তারা নিতে আগ্রহী না-ই হয় তাহলে কেন বিভিন্ন জেলার স্থানীয় চলচ্চিত্র সংসদ অথবা অন্যান্য সাংস্কৃতিক সংগঠনের মাধ্যমে এটা প্রদর্শনের ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন না? আপনারা যেসব বাঁধার সম্মুখীন হয়েছেন তা আমাদেরকে খুলে বলুন। আসলেই কি কোনো বাঁধার সম্মুখীন আপনারা হয়েছিলেন? নাকি চেষ্টাই করেন নি? এই যে আপনাদের চেষ্টা-ইচ্ছে নিয়ে প্রশ্ন উঠছে এটা কিন্তু আরও ঘনীভূত হচ্ছে এখন। কারন? পত্রিকার মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি যে আগামী ঈদ-উল-ফিতরে সদ্যপ্রয়াত সিনেমা নির্মাতা সজল খালেদ পরিচালিত একমাত্র পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা ‘কাজলের দিনরাত্রি’ চ্যানেল আই তে মুক্তি পেতে যাচ্ছে। অবশ্য এটাও জেনেছি যে একই সঙ্গে যমুনা ফিউচার পার্কের ব্লকব্লাস্টার সিনেপ্লেক্সেও এটি মুক্তি দেয়া হবে। সাথে আপনার মন্তব্যও পড়লাম, আপনি বলেছেন সজল খালেদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্যই নাকি এই প্রদর্শন ব্যবস্থা।

সেই একই কথা বলেছেন। আমরা যদ্দূর জানি সজল খালেদ এটা সিনেমা নির্মান করেছেন, টেলিফিল্ম বা নাটক না। এবং তিনিও হলে দেখানোর ব্যাপারে ইচ্ছেপ্রকাশ করেছেন। তাহলে কেন আপনারা টেলিভিশন আর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত দুঃপ্রবেশ্য সিনেপ্লেক্স এর মধ্যে সিনেমাকে বন্দী করতে চাইছেন? থাক, উত্তরটা দিতে হবে না। আমরা খুব ভালোভাবেই জানি সেটা।

যদি টেলিভিশনে রিলিজ দিতেই চান তাহলে এটাকে টেলিফিল্ম বা নাটক বলে পরিচয় করিয়ে দিন। বিজ্ঞাপনের ফাঁকে ফাঁকে সিনেমা দেখানোর জঘন্য প্রবণতা বাদ দিন, প্লিজ। একবার চিন্তা করে দেখেছেন কি, আপনারা কত বড় প্রতারণা করছেন? এই প্রতারণার শেষ কোথায়? আপনারা সিনেমা হলের দর্শদেরকে আর কত বঞ্চিত করবেন? আপনাদের দৌড় যদি প্রত্যন্ত সিনেমা হল পর্যন্ত না যায় তাহলে চলচ্চিত্র সংসদগুলোকে সাথে নিন। আমরা তো স্বীকার করছি আপনারা বাংলাদেশের সিনেমার জন্য অনেক করেছেন, কিন্তু এভাবে টেলিভিশনের মধ্যে সিনেমাকে বন্দী করে রাখলে বাংলাদেশের সিনেমাকে ধ্বংসের দায়ও আপনাদেরকেই নিতে হবে। [img|http://cms.somewhereinblog.net/ciu/image/137880/small/?token_id=79622be15e4aab6bf6fcf2a5cd5cb911 মোটকথা, আমরা সিনেমা হলে অথবা অডিটোরিয়ামে বড় পর্দায় ‘কাজলের দিনরাত্রি’ সহ সকল সিনেমা দেখতে চাই।

সারা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংখ্যক দর্শক সিনেমা হলে সিনেমাটি দেখার পরে নাহয় টেলিভিশনে রিলিজ দিন। টেলিভিশনে প্রদর্শনের পরদিন ‘ঘেটুপুত্র কমলা’র মতো যদি দেখি ‘কাজলের দিনরাত্রি’ সিনেমাটিও গান-ভিডিও ডাউনলোডের দোকান থেকে নিয়ে মানুষ মোবাইলে অথবা কম্পিউটারের মনিটরে দেখছে, তাহলে সত্যিই আবারো কান্না পেয়ে যাবে। এই কান্না বঞ্চিত হওয়ার কান্না, হলে গিয়ে বন্ধু-বান্ধব নিয়ে সিনেমা না দেখতে পারার বঞ্চনা; এই কান্না বাংলাদেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ধ্বংস হতে দেখার কান্না; সিনেমার উন্নতির কথা বলে একদল লোভী-বর্বরের সিনেমার মতো একটা ভালোবাসার জিনিসকে নিয়ে খেলা করতে দেখার কান্না। প্লিজ,ফরিদুর রেজা সাগর, শ্রদ্ধার আসন থেকে আপনাকে সরিয়ে নেবেন না। আপনি দীর্ঘায়ু হোন।

ভালো থাকুন। এফডিসিতে একচক্কর কাজলের দিনরাত্রি ঈদ আয়োজনে চ্যানেল আই ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ৪১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.