আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শাওনের নকশায় হুমায়ুনসমাধি

বৃহস্পতিবার নুহাশপল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে হুমায়ূনের কবর প্রাঙ্গণে সংস্কার কাজ চলছে। মূল কবরের উপর উঁচু করে বসানো হয়েছে সাদা মার্বেলের স্ল্যাব। আর কবর ঘিরে পিরামিড আকৃতিতে উঠে যাওয়া মাটিতে লাগানো হয়েছে সবুজ ঘাস। সমাধিপ্রাঙ্গণ ঘিরে দেয়া হচ্ছে স্বচ্ছ কাচের দেয়ালে।
শাওন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হুমায়ূন আহমেদ  ‘কাঠ পেন্সিলে’  যেভাবে লিখে গেছেন, সে অনুযায়ী সবুজ ঘাসের ওপর তার কবরে ধবধবে সাদা মার্বেল পাথর সংযোজন করা হয়েছে।

আমি সিমেট্রিক ডিজাইন করেছি।
“এটা তো যেনতেন মানুষের কবর না। তাই এর ডিজাইনে বিশেষত্ব রাখা হয়েছে। গেট দিয়ে কেউ প্রবেশ করলে সরু করিডোর দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পর কবরের দিকে তার মনোযোগ পড়বে। কবরের চারপাশে সমান ব্যাসের রাস্তা রাখা হয়েছে।

মাঝখানে রয়েছে কবরের মূল অংশ। ”
সমাধিতে প্রবেশের দুটি পথ রাখা হয়েছে। পশ্চিমের পথ দিয়ে সমাধীতে প্রবেশের পর জিয়ারত বা শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বেরিয়ে যাওয়ার পথ রাখা হয়েছে। আর পূর্ব দিকের পথটি রাখা হয়েছে শুধু পরিবারের সদস্যদের জন্যে।
সমাধী ঘিরে দেয়ালে লাগানো কাচে হুমায়ূনের সব উপন্যাস, নাটক, চলচ্চিত্র ও কাজের নাম লেখা থাকবে বলে জানান শাওন।


ক্যান্সারে আক্রান্ত জনপ্রিয় এই কথাশিল্পী ২০১২ সালে ১৯ জুলাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে মারা যান। তার কবরের স্থান নিয়ে পরিবারের মধ্যে চলা চারদিনের টানাপড়েনে বিভক্ত হয়ে পড়ে পুরো দেশ। শেষ পর্যন্ত স্ত্রীর ইচ্ছায় ২৪ জুলাই এই নুহাশপল্লীর লিচুতলায় তাকে সমাহিত করা হয়।
হুমায়ুনহীন এই এক বছর কেমন কাটল নুহাশপল্লীর?
শাওন বললেন, “তার মৃত্যুর পর নুহাশপল্লীর অগ্রযাত্রা যেন থমকে গেছে। নুহাশপল্লীর উন্নয়নের জন্যে তিনি নতুন নতুন পরিকল্পনা করতেন।

নানা স্বপ্ন দিয়ে এই জায়গাটা সাজাতেন। তিনি বেঁচে থাকলে নুহাশপল্লীকে হয়ত আরো অনেক সুন্দর করে সাজাতেন। এখন তিনি নেই। তাই সব থমকে গেছে। ”
নুহাশপল্লীতে ‘ভূত বিলাস’ এর মতোই  ‘হাউস কাব্বালা’ নামে আরেকটি কটেজ তৈরি করতে চেয়েছিলেন হুমায়ূন।

তার সেই স্বপ্নও পূরণ করতে চান শাওন।
তিনি জানালেন, হুমায়ূন যখন বেঁচে ছিলেন, প্রতি রমজানে অন্তত দু-তিন দিন নুহাশপল্লীতে ইফতার করতেন। নুহাশের কর্মচারী, ইউনিটের কর্মী এর ব্যক্তিগত বন্ধু বা প্রতিবেশীদের নিয়ে ঘরোয়া পরিবেশে সাদামাটা ইফতার হতো সেগুলো।
তাই শুক্রবার লেখকের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে ইফতার, দোয়া আর কোরআনখানী ছাড়া অন্য কোনো আয়োজন করা হয়নি বলে জানালেন শাওন।
“ইফতারে খেঁজুর তার চাই-ই-চাই।

পিঁয়াজু, ছোলা, বেগুনীর সাথে মুড়ি মেখে সবাই একসাথে বিছানা পেতে বসে ইফতার করতে পছন্দ করতেন। আর ইফতারের পরপরই পছন্দ করতেন তেহারী খেতে। মৃত্যুবার্ষিকীতে এসব থাকবে। ”
হুমায়ূনের মা আয়েশা ফয়েজসহ পরিবারের সবাইকে ইফতারে দাওয়াত করা হয়েছে বলেও শাওন জানালেন।
নুহাশপল্লীর কেয়ারটেকার সাইফুল ইসলাম বুলবুল জানান, দুই শিশুপুত্র নিষাদ ও নিনিতকে নিয়ে গত বুধবার রাতে নুহাশ পল্লীতে আসেন শাওন।

হুমায়ূনের প্রথম স্ত্রীর সন্তান শিলা, নোভা, ও ছেলে নূহাশও এসে বাবার কবর জিয়ারত করে গেছেন।
শাওন জানান, স্বামীর মৃতুর পর পরিবারের হাল ধরতে নাটক পরিচালনার পাশাপাশি অর্কিটেকচারের কাজও তিনি করছেন। তিন বন্ধুর সঙ্গে গুলশানে ডটস লিমিটেড নামে একটি ফার্মও খুলেছেন ৮-৯ মাস আগে। এছাড়া তিন সহপাঠী মিলে ঢাকায় ‘সেন্ট্রাল পার্ক’ নামে একটি রেস্তোরাঁ খোলারও কাজ চলছে। ২৫ জুলাই এর উদ্বোধন হবে।


আমেরিকায় জনপ্রিয় হওয়া টেলিভিশন সিরিয়াল ‘ফ্রেন্ডস’ থেকে ধারণা নিয়ে এই রেস্তোরাঁ বানাচ্ছেন বলে জানালেন শাওন।
তার পরিচালনায় ‘আঙুল’ ও ‘বীণার অসুখ’ নামে দুটি নাটকের কাজও শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এবারের ঈদে সেগুলো প্রচারিত হবে।
“হুমায়ূন আহমেদ নিজের পুরোনো নাটক আর সিনেমা দেখতে, নিজের লেখা বই পড়তে ভালবাসতেন। নিউ ইয়র্কে থাকার সময় নিজের নাটক নিমফুল দেখে বলেছিলেন, এ নাটকটা নতুন করে বানালে আরো সুন্দর করতে পারতেন।

আমি বলেছিলাম, ঢাকায় ফিরে নিমফুল আবার বানব।
“তিনি নেই, তাই নিমফুল আমি নতুন করে বানিয়েছি। তার মতো হবে না জানি । তারপরও করেছি। ”
হুমায়ূনের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার শাওনের বানানো সেই ‘নিমফুল’ সম্প্রচার করছে চ্যানেল আই।


হুমায়ূনের কাজ আর তার স্মৃতির মাঝে থেকেও তার অনুপস্থিতি কাতর করে ত্রিশের ঘরের শাওনকে।
“নুহাশপল্লীতে সেই পল্লরি গাছ, ভূত বিলাস, বর্ষা বিলাস, লিলাবতী দীঘি, ময়ূর নৌকা, দাবার ঘর, সবুজ মাঠ- সবই আছে। তিনিই শুধু নেই। তার জায়গায় শুধুই শূন্যতা। এ শূন্যতা কোনদিন পূরণ হবে না।


সোর্স: http://bangla.bdnews24.com     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।