শুক্রবার সকাল। আকাশে মেঘের আনাগোনা। প্রকৃতিও যেন বিষণ্ন। মা শাওনের সঙ্গে নিষাদ ও নিনিত এল বাবা হুমায়ূনের কবরে। ফুল দিয়ে জানাল শ্রদ্ধা।
এরপর ছোট্ট হাতজোড়া তুলে করল মোনাজাত।
নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতে চিরনিদ্রায় শায়িত লেখকের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে এভাবেই অনাড়ম্বরভাবে স্মরণ করছেন তাঁর পরিবার ও নুহাশ পল্লীর কর্মীরা।
তার পরও সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শত শত ভক্ত ছুটে আসেন প্রিয় হুমায়ূন আহমেদের কবর জিয়ারত করতে। কবর জিয়ারতের আগে তারা কবরে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করেন।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের হোতাপাড়া থেকে কাদাজলমাখা ও শালবন পরিবেষ্টিত সড়ক পেরিয়ে আট কিলোমিটার সামনে এগোলেই নুহাশ পল্লী। পাখির কলকাকলী, কাদাজল, বনবীথিকা আর বৃষ্টি বড় ভালোবাসতেন হুমায়ূন আহমেদ। তাই ১৯৯৭ সালে মাটির কাছাকাছি থেকে শিল্পচর্চা আর গ্রামীণ প্রকৃতির উদার স্পর্শ পেতেই গাজীপুরের পিরুজালিতে ভাওয়ালের শালবন পরিবেষ্টিত ৪০ বিঘা জমিতে গড়ে তোলেন ‘নুহাশ পল্লী’। এখানে রয়েছে দুর্লভ প্রজাতির অন্তত আড়াই শ বৃক্ষ ও গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ—যার প্রায় সবগুলোই বৃক্ষপ্রেমী হুমায়ূন আহমেদ নিজ হাতে লাগিয়েছেন।
গেল বছর ১৯ জুলাই মারা যাওয়ার পর ২৪ জুলাই লেখক হুমায়ূন আহমেদ চিরনিদ্রায় শায়িত হন সেই নুহাশ পল্লীতে।
নুহাশ পল্লীতে প্রবেশ করেই হাতের বাঁ পাশে লিচুতলায় শায়িত হওয়া লেখকের করবস্থানটিতে কমপ্লেক্স তৈরির কাজ চলছে। দশনার্থীদের জন্য আলাদা দরজা তৈরি করা হয়েছে, যাতে মূল পল্লীতে না প্রবেশ করেই লেখকের কবরের সান্নিধ্য পান তাঁর ভক্ত-অনুরাগীরা। এরই মধ্যে সাদা মারবেল পাথরে বাঁধাই করা হয়েছে কবরের মূল বেদি। চারপাশে স্বচ্ছ কাচঘেরা ফলকে লেখকের বাণী ও রচনা উত্কীর্ণ করার কাজও এগিয়ে চলছে।
হুমায়ূন আহমেদের কবরে কমপ্লেক্স সৃষ্টির পরিকল্পনায় তাঁরই লেখার কাব্য-কল্পনা স্থান পেয়েছে বলে জানালেন লেখকের স্ত্রী শাওন।
নুহাশ পল্লীর ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম জানান, আজ শুক্রবার বাদ জুমা আশপাশের কয়েকটি মাদ্রাসা ও এতিমখানার ছাত্ররা কোরআন খতমে অংশ নেয়। বিকালে তারা কবর জিয়ারত শেষে ইফতার ও দোয়া অনুষ্ঠানে যোগ দেবে। ইফতার মাহফিলে পাঁচ থেকে ছয় শ লোকের আয়োজন করা হয়েছে।
মেহের আফরোজ শাওন জানান, হুমায়ূন আহমেদ জীবদ্দশায় নিজের মতো করে নুহাশ পল্লীর বাসিন্দাদের নিয়ে রোজা পালন করতেন। শুক্রবার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী রোজার মধ্যে পড়ায় লেখকের রোজা পালনের পুরোনো সেই ঐতিহ্যকে মনে রাখতে চাইছেন তাঁর কর্মীরা।
লেখকের প্রয়াণ দিবসকে কখনোই উদযাপনের পর্যায়ে নিয়ে যাবেন না বলে জানালেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।