আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রিয়তা (প্রিয় কবি - প্রিয় কবিতা) - ৪

১। নাস্তিক -নির্মলেন্দু গুণ নেই স্বর্গলোভ কিংবা কল্প-নরকের ভয়, অলীক সাফল্যমুক্ত কর্মময় পৃথিবী আমার৷ চর্মচোখে যা যা দেখি, শারীরিক ইন্দ্রিয় যা ধরে, তাকেই গ্রহন করি৷ জানি, নিরাকার অপ্রত্যক্ষ শুধুই ছলনা, বিশ্বাস করি না ভাগ্যে, দেবতার বরে৷ আমার জগত্ মুগ্ধ বাস্তবের বস্তুপুঞ্জে ঠাসা, তাই সে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য, অতীন্দ্রিয় নয়৷ অন্ধতার বধ্যভূমি আমার হদৃয়৷ সেই শ্রেষ্ঠ মানব-সন্তান, যার মন মুক্ত ভগবান৷ আমার মস্তক নিত্য নত সেই নাস্তিকের তরে৷ ২। আমাদের মা - হুমায়ুন আজাদ আমাদের মাকে আমরা বলতাম তুমি, বাবাকে আপনি। আমাদের মা গরিব প্রজার মত দাঁড়াতো বাবার সামনে, কথা বলতে গিয়ে কখনোই কথা শেষ ক’রে উঠতে পারতোনা। আমাদের মাকে বাবার সামনে এমন তুচ্ছ দেখাতো যে মাকে আপনি বলার কথা আমাদের কোনোদিন মনেই হয়নি।

আমাদের মা আমাদের থেকে বড় ছিলো, কিন্তু ছিলো আমাদের সমান। আমাদের মা ছিলো আমাদের শ্রেনীর, আমাদের বর্ণের, আমাদের গোত্রের। বাবা ছিলেন অনেকটা আল্লার মতো, তার জ্যোতি দেখলে আমরা সেজদা দিতাম বাবা ছিলেন অনেকটা সিংহের মতো, তার গর্জনে আমরা কাঁপতে থাকতাম বাবা ছিলেন অনেকটা আড়িয়াল বিলের প্রচন্ড চিলের মতো, তার ছায়া দেখলেই মুরগির বাচ্চার মতো আমরা মায়ের ডানার নিচে লুকিয়ে পড়তাম। ছায়া সরে গেলে আবার বের হয়ে আকাশ দেখতাম। আমাদের মা ছিলো অশ্রুবিন্দু-দিনরাত টলমল করতো আমাদের মা ছিলো বনফুলের পাপড়ি;-সারাদিন ঝরে ঝরে পড়তো, আমাদের মা ছিলো ধানখেত-সোনা হয়ে দিকে দিকে বিছিয়ে থাকতো।

আমাদের মা ছিলো দুধভাত-তিন বেলা আমাদের পাতে ঘন হয়ে থাকতো। আমাদের মা ছিলো ছোট্ট পুকুর-আমরা তাতে দিনরাত সাঁতার কাটতাম। আমাদের মার কোনো ব্যক্তিগত জীবন ছিলো কিনা আমরা জানি না। আমাদের মাকে আমি কখনো বাবার বাহুতে দেখি নি। আমি জানি না মাকে জড়িয়ে ধরে বাবা কখনো চুমু খেয়েছেন কি না চুমু খেলে মার ঠোঁট ওরকম শুকনো থাকতো না।

আমরা ছোট ছিলাম, কিন্তু বছর বছর আমরা বড় হতে থাকি, আমাদের মা বড় ছিলো, কিন্তু বছর বছর মা ছোটো হতে থাকে। ষষ্ঠ শ্রেনীতে পড়ার সময়ও আমি ভয় পেয়ে মাকে জড়িয়ে ধরতাম। সপ্তম শ্রেনীতে ওঠার পর ভয় পেয়ে মা একদিন আমাকে জড়িয়ে ধরে। আমাদের মা দিন দিন ছোটো হতে থাকে আমাদের মা দিন দিন ভয় পেতে থাকে। আমাদের মা আর বনফুলের পাপড়ি নয়, সারাদিন ঝরে ঝরে পড়েনা আমাদের মা আর ধানখেত নয়, সোনা হয়ে বিছিয়ে থাকে না আমাদের মা আর দুধভাত নয়, আমরা আর দুধভাত পছন্দ করিনা আমাদের মা আর ছোট্ট পুকুর নয়, পুকুরে সাঁতার কাটতে আমরা কবে ভুলে গেছি।

কিন্তু আমাদের মা আজো অশ্রুবিন্দু, গ্রাম থেকে নগর পর্যন্ত আমাদের মা আজো টলমল করে। ৩। সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড -(অ্যালেন গিন্সবার্গ কবিতার বাংলা অনুবাদ। ) শত শত চোখ আকাশটা দেখে, শত শত শত মানুষের দল, যশোর রোডের দুধারে বসত বাঁশের ছাউনি কাদামাটি জল। কাদামাটি মাখা মানুষের দল, গাদাগাদি করে আকাশটা দেখে, আকাশে বসত মরা ইশ্বর, নালিশ জানাবে ওরা বল কাকে।

ঘরহীন ওরা ঘুম নেই চোখে, যুদ্ধে ছিন্ন ঘর বাড়ী দেশ, মাথার ভিতরে বোমারু বিমান, এই কালোরাত কবে হবে শেষ। শত শত মুখ হায় একাত্তর যশোর রোড যে কত কথা বলে, এত মরা মুখ আধমরা পায়ে পূর্ব বাংলা কোলকাতা চলে। সময় চলেছে রাজপথ ধরে যশোর রোডেতে মানুষ মিছিল, সেপ্টেম্বর হায় একাত্তর, গরুগাড়ী কাদা রাস্তা পিছিল লক্ষ মানুষ ভাত চেয়ে মরে, লক্ষ মানুষ শোকে ভেসে যায়, ঘরহীন ভাসে শত শত লোক লক্ষ জননী পাগলের প্রায়। রিফিউজি ঘরে খিদে পাওয়া শিশু, পেটগুলো সব ফুলে ফেঁপে ওঠে এইটুকু শিশু এতবড় চোখ দিশেহারা মা কারকাছে ছোটে। সেপ্টেম্বর হায় একাত্তর, এত এত শুধু মানুষের মুখ, যুদ্ধ মৃত্যু তবুও স্বপ্ন ফসলের মাঠ ফেলে আসা সুখ।

কারকাছে বলি ভাতরূটি কথা, কাকে বলি করো, করো করো ত্রান, কাকে বলি, ওগো মৃত্যু থামাও, মরে যাওয়া বুকে এনে দাও প্রান। কাঁদো কাঁদো তুমি মানুষের দল তোমার শরীর ক্ষত দিয়ে ঢাকা, জননীর কোলে আধপেটা শিশু একেমন বাঁচা, বেঁচে মরে থাকা। ছোটো ছোটো তুমি মানুষের দল, তোমার ঘরেও মৃত্যুর ছায়া, গুলিতে ছিন্ন দেহ মন মাটি, ঘর ছেড়েছোতো মাটি মিছে মায়া। সেপ্টেম্বর হায় একাত্তর, ঘর ভেঙে গেছে যুদ্ধের ঝড়ে, যশোর রোডের দুধারে মানুষ এত এত লোক শুধু কেনো মরে। শত শত চোখ আকাশটা দেখে, শত শত শত শিশু মরে গেল, যশোর রোডের যুদ্ধ ক্ষেত্রে ছেঁড়া সংসার সব এলোমেলো কাদামাটি মাখা মানুষের দল, গাদাগাদি করে আকাশটা দেখে, আকাশে বসত মরা ইশ্বর, নালিশ জানাবে ওরা বল কাকে।

ঘরহীন ওরা ঘুম নেই চোখে, যুদ্ধে ছিন্ন ঘর বাড়ী দেশ, মাথার ভিতরে বোমারু বিমান, এই কালোরাত কবে হবে শেষ। শত শত মুখ হায় একাত্তর যশোর রোড যে কত কথা বলে, এত মরা মুখ আধমরা পায়ে পূর্ব বাংলা কোলকাতা চলে, এত মরা মুখ আধমরা পায়ে পূর্ব বাংলা কোলকাতা চলে॥ ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।