ভালবাসি মা-মাটি-দেশ। স্বপ্ন দেখি একটি সুন্দর সকাল। এক নতুন সূর্যোদয়ের।
১২ ফেব্রুয়ারিতে স্বাগত জানানো তরুণ প্রজন্মের আন্দোলন ১৫ মার্চ-এ ‘আওয়ামী লীগ ঘরানার ও নাস্তিকদের চত্বর হয়ে গেল? এটাই স্বাভাবিক, শাহবাগের তরুণরা শর্তটি পূরণ করেনি যে। আপনাদের তুলনা মেলা সত্যিই ভার।
আপনারা একাত্ম হতে জানেন? আহবান কিভাবে করতে হয়, কখন করতে হয় তা জানেন? আদেশ আর আহবান যে এক নয় তা বোঝেন তো?
বিএনপির ১২ ফেব্রুয়ারির দেয়া বিবৃতিতে ‘একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার আন্দোলনে তরুণ প্রজন্ম বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা গণদাবী হলে নিশ্চয়ই তরুণ প্রজন্ম বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে। কিন্তু তার আগে বিএনপিও তো তরুণ প্রজন্মের দাবীকে সম্মান জানাবে। আগে তো তাদের সাথে একাত্ম হবেন। আপনারা তো একাত্ম হতেই পারলেন না।
আপনাদের কাছে তরুণ প্রজন্ম তথা মানবতা বিরোধী অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবী জানানো গন মানুষের থেকে যদি বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয় জামাত-শিবিরের ক্যাডার, তাদের সমর্থিত ভোট। তাহলে কি করে শাহবাগ চত্বরের সাথে একাত্ম হবেন? আর কি করেই বা একে মেনে নেবেন?
বিএনপি নেত্রী চাইলেই যে সবাই দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে তা বাস্তবায়নে ঝাঁপিয়ে পরবে তাই বা তিনি কেন ভাবেন? সবাই তো আর উচ্ছিষ্টভোগী নয়; যে প্রতিদানের প্রসঙ্গ আসবে। আর তাছাড়া সবাই ঐ অনৈতিক উচ্ছিষ্টের আশায় বসেও থাকে না। যারা থাকে তাদের তো আমরা লোভী-নির্বোধ, হিংস্র হায়েনা বলে ডাকি। যারা নেত্রীর বলার আগেই ককটেল মজুদ করে।
হরতাল ডাকতে না ডাকতেই ঝাঁপিয়ে পড়ে অসহায় মানুষের উপর। ছিঁড়ে কুরে খায়, আগুনে ঝলসায়। তাণ্ডব নৃত্য করে মানুষের লাশ নিয়ে। কিন্তু ম্যাডাম সমস্যা হল, এই হায়েনারা অন্ধকারে থাকে। ওরা অন্ধকারকেই ভালবাসে।
আর তাই এদের দিয়ে জনগণের মঞ্চের স্বপ্ন বাস্তবায়ন অত সহজ নয়। জনগণের মঞ্চ তো জনগণই সফল করে। তবে শর্ত হল সে মঞ্চ থেকে উঠতে হবে সাধারণ মানুষের মুক্তির দাবী, দায় মোচনের দাবী, ক্ষমতায় যাবার পথ প্রশস্তের দাবী নয়। জননেতার জন্য সে পথ জনগণই প্রশস্ত করে দেয়। গণজাগরণ মঞ্চকে দেখুন! দাবী যখন হয় প্রাণের, তখন কে ডাকল সেটা বড় কথা নয়।
ডাক পেলেই হল। মানুষ নিজের তাগিদেই এসে জড়ো হয়।
আপনি দলিয় ক্যাডারদের দিয়ে হরতাল করাতে পারবেন। নৈরাজ্য চালাতে পারবেন, লাশের পর লাশ ফেলতে পারবেন, জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দিতে পারবেন লোকালয়ের পর লোকালয়। শুধু পারবেন না এদেরকে সাধারণ মানুষের মুখোমুখি করতে।
কারণ অপরাধীরা সর্বদাই সত্যকে ভয় পায়। এরা অহিংস আন্দোলন করতে পারে না। আপনি শত চেষ্টা করেও আপনার নেতাদের দিয়ে আমরণ অনশন করাতে পারবেন না। বড়জোর প্রতীকী অনশন মাত্র। তার বেশি নয়।
তাই, আপনাকে জনগণের মঞ্চ করতে হলে জনগণকে নিয়েই করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে গিয়ে নয়। হরতাল-জ্বালাও-পোড়াও-নৈরাজ্য বাদ দিয়ে একটা নয় একশটা মঞ্চ করুণ। তাও ভাল। আমরা বাঁচি।
দেশকে তো অনেক দিলেন। আর নাইবা দিলেন। এবার আমরা নাহয় না পেয়েই ধন্য হলাম!
শাহবাগ আন্দোলনের সূচনাকারীরা আপনাদের মত ঝানু রাজনীতিবিদ নন বলেই আজ সেখানে আওয়ামী লীগ প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়েছে। আর তা তারা করেছে তাদের স্বার্থেই। যেমন আপনারা আজ শুধুমাত্র স্বার্থে আঘাত হানার কারণেই এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
অথচ চাইলেই পারতেন একাত্ম হতে। ঘাটতি ছিল সৎ সাহসের। এ দেশের নেতৃবৃন্দের মাঝে যার অভাব সবথেকে বেশি। স্বার্থহানী ঘটলে বিরুদ্ধ অবস্থান নেয়ারই কথা। তাই বলে মঞ্চের সবাইকে নাস্তিক বলতে হবে? যারা নিজেরা নিজেদের আস্তিক বলছেন তাদের কি উপযুক্ত প্রমান ব্যতিরেকে নাস্তিক বলা যায়? যদি কেউ ব্লগে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) সম্পর্কে কটূক্তি করে থাকে।
যদি কেউ পবিত্র ধর্ম ইসলামকে অবমাননা করে থাকে। আমরা অবশ্যই তার বিচার চাই। তাদের বিচার নিশ্চিত করতে যে বা যারা এই ন্যক্কারজনক কাজটি করেছে বা করছে তথ্য প্রমাণসহ তাদের পরিচয় প্রকাশ করুণ। সেই সাথে তাদের বিরুদ্ধে আরও সোচ্চার হন। মঞ্চের বিরুদ্ধে কেন?
যদি বলেন গণজাগরণ মঞ্চের সবাই নাস্তিক তা মেনে নেয়ার কোন কারণ নেই।
কেননা শাহবাগ চত্বরের উদ্যোক্তারা ব্লগার হলেও একে যারা সফল করছেন তাদের বেশিরভাগই বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীর এবং বিভিন্ন শ্রেণী পেশার সাধারণ মানুষ শুধুমাত্র ব্লগার নন। আর ব্লগার মাত্রই নাস্তিক; এটা যারা বলে তারা ব্লগ কি? ব্লগে কি হয় তাই জানে না। এই না জানাদের দলে থেকে নেতৃত্ব কিভাবে দেবেন? আগে জানুন কোন ব্লগার দোষী। কতটুকু দোষী। বা আদৌ দোষী কিনা।
সুকৌশলে তাদের উপর অপবাদ চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে কেনা সেটাও যাচাই করুণ। তারপরে সিদ্ধান্ত নিন। একটা গন আন্দোলন শুরুর পরে তাঁর উদ্যোক্তাদের পূর্বকৃত কর্মকাণ্ড নিয়ে দোষারোপ করতে শুরু করলে প্রথমেই যে প্রশ্নটি সামনে চলে আসে; তা হল এতদিন পরে কেন তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেন? আগেই কেন এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেন না? তাছাড়া যাদের দোষী সাব্যস্ত করা হচ্ছে তারা তো অস্বীকার করছে। কাজেই যিনি অভিযোগ উত্থাপন করছে তারই দায়িত্ব এটা প্রমাণ করা।
হেফাজতে ইসলামের সদস্যদের মত বলবেন আমাদের নেতাদের কাছে তথ্য প্রমাণ আছে।
কিন্তু তাদের নেতারা তা প্রকাশ না করে বায়বীয় অভিযোগ তুলবেন। অভিযুক্তদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগও দেবেন না। এটা তো হেফাজতের নেতাদের মানায়। দুদিন পরে যদি জামাত-শিবির নিষিদ্ধ হয় কে জানে হয়ত এই হেফাজতে ইসলামের আড়ালেই জামাতের নব উত্থান দেখা যাবে। তাদের পক্ষে এ ধরনের আচরণ মোটেই অস্বাভাবিক নয়, কিন্তু দায়িত্বশীল একজন নেত্রীর বেলায় তা একেবারেই বেমানান।
রাজনীতিবিদ গনের নাকি নিজস্ব কিছু ভাষা আছে যাকে রাজনীতির/মাঠের বক্তব্য বলা হয়। যা মূলত তাদের অন্যায়/অসত্য কথার দায়মুক্তি দিতেই বলা হয়। যদিও সাধারণ মানুষও তাদের সে কথাকে তেমন গুরুত্ব দেয়না। তাই বলে একটি দলের প্রধান একজন নেত্রীর কথা তো আর গুরুত্বহীন হতে পারে না। আমাদের দুর্ভাগ্য হোক আর সৌভাগ্য হোক আমাদের নেতা এবং নেত্রী দ্বয়ের অন্ধ ভক্তের অভাব নেই।
যারা তাদের কথাকে বেদবাক্য মানে। তাই নেতা নেত্রীদেরও এটা মনে রাখা উচিত।
গণজাগরণ মঞ্চ থেকে যিনি বা যারা যতটাই সুবিধা আদায় করে নেন না কেন। সেটা তাদের সফল কুট কৌশল বলেই বিবেচিত হবে। তবে একে নিজেদের করে নেয়ার ক্ষমতা কারোরই নেই।
আজ এ মঞ্চের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ গণ মানুষের বিরুদ্ধে আপনার অবস্থানকেই স্পষ্ট করে তুলবে। যদি সেখান থেকে ফিরে আসতে চান তাহলে আরেকটি দুর্নীতি বিরোধী মঞ্চের ডাক দিন। সেখান থেকে ঘোষণা দিন, আপনি এবং আপনার দল দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। আপনার সে ঘোষণাকে যুক্তিগাহ্য করতে সাথে এটাও বলুন যে, আপনার সন্তানদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির যে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। আপনি তারও সুবিচার করবেন।
যদি প্রমাণিত হয় তারা দোষী তাহলে তাদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করবেন। কে না আপনার পেছনে সমবেত হবেন? মানুষের জন্য আন্দোলন করুন, তাদের মুক্তির জন্য আন্দোলন করুণ। অমানুষ রক্ষার নয় অমানুষ নির্মূলের জন্য আন্দোলন করুণ। শান্তির ডাক দিন।
নিশ্চয়ই আপনার ডাকে এ দেশের মানুষ সাড়া দিবে।
আর তা না করে যদি এভাবে জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন তাহলে আর যাই হোক অভীষ্ট লক্ষে পৌছুতে পারবেন না। সময়ই মানুষকে চরম সত্যের মুখোমুখি দাড় করায়। সময়ের সেই নিক্তিতে সহজেই পরিস্ফুট হয়ে ওঠে প্রত্যেকের স্বরূপ। নিজেকে জাতির সামনে উপস্থাপনের এটাই সময়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।