... খুব কৌশলে রুনু ইডেন কলেজের গেট পার হলো। ভুলেও আজ সে বান্ধবীদের নজরে পড়তে চায় না। রুনুর কেন যেন মনে হচ্ছে পরিচিত সবাই ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ওকে নিয়েই ভাবছে। আজ রুনু বাতেনের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছে।
সম্ভববত এজন্যই তার এরকম মনে হচ্ছে। বাতেন ঠিক জায়গায় ঠিক সময় এসে পৌঁছালো।
আজই ওদের প্রথম দেখা। পরিচয় মাত্র ১৪ দিনের। শুধ্য পরিচয়ই না, একটা সম্পর্কও হয়েছে ওদের মধ্যে।
প্রেম অথবা ভালোবাসার কাছাকাছি কোন সম্পর্ক। তারপরও রুনর কাছে বাতেন একরকম রহস্য।
ওদের পরিজয় রং নাম্বারে, মানে মোবাইল ফোনে। প্রথম দিকে ঝাড়িঝুড়ি। তারপর গতানুগতিক যা হয় আর কি, ওদের বেলাতেও তাই হয়েছে।
সব রহস্যের অবসান ঘটিয়ে আজ তাদের দেখা হল। রুনু ভাবে ছেলেটা দেখতে খারাপ না, বেশ হ্যান্ডসাম। রুচিবোধও ভালো-কালো প্যান্ট, সাদা শাট, কালো ব্লেজার, টাইটাও মানানসই। সেভ করেছে, চুল গুছিয়ে রেখেছে। বাতেন লম্বায় ছয়ফুট।
পড়া শনাতেও ভালো। প্রথম সারির একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ পড়ছে। এক কথায় রুনুর কল্পনার চয়েও ভালো। এমন একা ছেলে তার প্রেমে পাগল-এটা ভাবতেই তার ভালো লাগে। তারপরেও রুনুর মনটা বারবার খাঁ খাঁ করে ওঠে।
মনে হয় আরমান বাতেনের চেয়েও ভালো। বাতেনের নাক বোচা, আরমানের নাকটা অনেক সুন্দর। দুপুরে ওরা মিনি চাইনিজ খাবে বলে ঠিক করেছে। দেখা করতে আসার আগে রুনুর এমনটাই বায়না ছিল। এরপর যাবে বই মেলায়।
রুনু মনে মনে ভেবে রেখেছে সে বই কেনার বাইনা ধরবে। নিশ্চয় বইয়ের দাম তাকে দিতে হবে না। বান্ধবীদের দেখে সে শিখেছে মার্কেটে গিয়ে বান্ধবী লিপষ্টিক কেনার বাইনা ধরে, আর বিল দেয় তার বয়ফ্রেন্ড। ওরা এখন এসেছে ইস্টান মল্লিকায়। যাবে তিন তলায় একেবারে শেষ মাথয়, মিনি চাইনিজ রেস্টুরেন্টে।
এ মার্কেটে রুনু আগেও অনেকবার এসেছে। এখানে শুভ ভাই নামে তার একজন পরিচিত। কিন্তু শুভ ভইকে দেখেই আজ মাথা নিচু করে হাটে রুনু, যেন তাকে দেখেইনি। রেস্টুরেন্টের ভিতরে ঢোকে দুজন। বেশ পরিপাটি করে সাজ নো গোছানো।
ওরা এ কোনায় গিয়ে বসে। রুনুর হাতে খাবারের তালিকা কিন্তু বাতেনের হঠাৎ কিযেন হলো। বাতেনকে খুব অস্থির দেখাচ্ছে। তার ফোনে মিসকল এলো। সঙ্গে সঙ্গে ফোন ব্যাক করলো বাতেন।
‘স্লামালেকুম বড় ভাই, কেমন আছেন? রুনু এক্সিউজ মি, আসছি। ’
বাতেন রেস্টুরেন্টের বাইরে গেলো। রুনু খাবারের অর্ডার দিন কিন্তু বাতেন আর আসে না। রুনু অস্থির হয়ে উটলো। অবশেষেবাতেন এলো।
রুনু জিজ্ঞেস করে, কোথায় গিয়েছিলে?’
বাতেন খুব বিনয়ের সঙ্গে বলে, ‘বাসায় একটা ঝামেলা হয়েছে। প্লিজ কিছু মনে কর না, আমার ফোনে ক্রেডিট শেষ তোমার ফোনটা একটু দাও তো।
‘হ্যাঁ, অবশ্যই। ’ বলেই রুনু তার একমাত্র ভাইয়ের ইটালি থেকে পাঠানো আই ফোনটি ব্যাগ থেকে বের কেরে দেয়। বাতেন নাম্বর টিপতে টিপতে বাইরে যায়।
রুনু ভাবে গত ক’দিনে যে পাঁচশত টাকার কথা বলেছে সে দু’এক মিটিন কথা বললে কি এমন যায় আসে। তবে ভালোবাসার বিষয়ে এখনো কোন সিন্ধন্ত নিতে পারেনি রুনু।
১৫ মিটিন পার হয়ে গেল, খাবরও এলো কিন্তু বাতেন এখনো এলো না। আরো ১০ মিনিট গেল, বাতেনের আসার কোর খবর নেই । রুনুকে বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে।
সে, রেস্টুরেস্টের বাইরে আসে। না বাইরে বাতেন নেই, নিচ তলাতেও নেই, মার্কেটের আসে পাশে পর্যন্ত নেই। ফোনের দোকান থেকে বাতেনকে ফোন করে রুনু। কিন্তু বাতেরনের ফোন বন্ধ।
রুনু বুদ্ধিমান মেয়ে।
আর খোঁজার বৃথা চেষ্টা করে না। হোস্টেলে ফেরার জন্য রিকশা নেয়। তার মনটা কেমন যেন করছে। সে নিজেকে জিজ্ঞে করে, ভালোবাসার মানে কি-এমন এক প্রশ্নের উত্তরে ডাক্তার মোহিত কামালের জবাব, ‘ভালোবাসা হলো চিন্তার বিশ্লেষণ। ’ আনিসুল হক বলেন, ‘ভালোবাসা হল একটি ফাঁদ।
’
আসলেই ভালোবাসা মনপোড়ারানের মতো জিনিস। কিন্তু রুনুর কাছে ভালোবাসা মানে কি? ‘দুপুরে মিনি চাইনিজ খাওয়া, বিকেলে কফি!’ আর বাতেনের কাছে? ‘আই ফোন!’
আয়রে ভালোলবাসা...!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।