আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ন্যাড়া বেলতলায় একবার ই যায় - সত্য ঘটনা অবলম্বনে

১৫ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৫, মঙ্গলবার আজ আমার জীবনে একটা অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে গেল যা আমি কল্পনাও করি নাই। আজ আমি পুরা সারে আট ঘন্টা হাজত বাস করে এলাম। *ঘটনার আদ্যপান্ত* সকাল সারে সাতটায় ঘুম থেকে উঠে অতি প্রয়োজনিয় কাজ সেরে সুজনের বাসায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে শুরু করলাম সুজন আমার বন্ধুদের মধ্যে একজন। সুজন ই গতকাল মানে ১৪ই ফেব্রুয়ারী আমাকে ফোনে ওর বাসায় যাওয়ার জন্য বলে রেখেছিল। উদ্দেশ্য ছিল ক্রিকেট ম্যাচ খেলা।

তো যাওয়ার আগে দেখি আব্বু ঘুম থেকে উঠে গেছে। এখন কি করি? যাই হোক আব্বুকে কোনরকম ফাকি দিয়ে সুজনের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম কাধে আমার কোচিং এর ব্যাগ(উল্লেখ্য কোচিং, স্কুল ফাকি দেওয়া আমার নিত্তনৈমিত্তিক ব্যাপার ছিল)। ওর বাসায় যাওয়ার পর সুজনের সাথে কথা বলে টলে খেলার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম। সিদ্ধান্ত হল যে মিরপুর-১২ এর সিরামিক মাঠে খেলা হবে। তারপর আমরা মোত ৭ জন এক সাথে মিরপুর ১১ নং বাসস্ট্যান্ডে গেলাম।

বাসে উঠে আমি সুজন, রাজন বসলাম বাসের একেবারে পিছনের সিটে। রাজ এনামুল এবং সজিব বসল বাসের একেবারে পিছন থেকে তৃতীয় সিটে। আর আমদের শ্রদ্ধেয়(!!!!) রিপন ভাই বসেছিল চালকের পিছনের সিটে। বাস যখন পল্লবী সারে ১১ নং বাসস্ট্যান্ড পিছনে ফেলে দূর্বার গতিতে এগুচ্ছে তখন বাসের কন্ট্রাক্টার ভাড়া চাইতে এল। সুজন ভাড়া দিতে অপারগতা প্রকাশ করে।

এরি মধ্যে আমার সামনের সিটে যে কোবরা-৭ (ঢাকা গোয়েন্দা পুলিশ এর একটি দল) এর দুইজন বসা ছিল তা আমরা বলতে পারব না। একটা কথা তো না বললেই নয় দিনটি ছিল হরতাল, সরকার যানবাহনের অতিরিক্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত ব্যাবস্থা গ্রহন করেছিল। ফিরে আসি আসল কথায়, বাস যখন মিরপুর ১২ নং এর কাছাকাছি রাজ ফাজলামো করে কন্ট্রাক্টারকে বলল "এই বেটা হরতালে আবার ভাড়া কিসের, বাস ভাইঙ্গা দিলে কি করবা????"। সাথে সাথে আমি তাকে থামায় দিলাম আর হাল্কা ঝারি দিলাম। তো এই কথা কোবরা-৭ এর লোকগুলি শুনে ফেলে।

তো এরি মধ্যে বাস আমাদের গন্তব্যস্থলে পৌছে গেছে। আমরা সবাই যখন বাস থেকে নামছি তখন দেখলাম একটা লোক রাজের হাত ধরে আছে এবং তাকে কি যেন জিজ্ঞেস করছে। পরে বুঝলাম এ তার ফাজলামোর পুরস্কার(!!)। আমি আর সুজন কাছে গেলাম এবং পুলিশকে বোঝানোর বৃথা চেষ্টা করলাম এবং এই অনুরোধের পুরস্কার সরুপ আমরাও তাদের কাছে আটক হলাম। দুঃখের বিষয় এই যে কোন দোষ না করেও একমাত্র রাজের কারনে আমাদের পুলিশের পিকআপে ওঠানো হল।

ইতিমধ্যে একটা মজার ঘটনা ঘটে গেল, পুলিশরা যখন আমাদের নাম ঠিকানা লিখছিল চখন সুজনের বাবার নাম জিজ্ঞেস করায় সুজন উত্তর দেয় "আমার চাচা মিল্কভিটার সেক্রেটারি" কথাটা বলার সাথে সাথে গাড়িতে বসা কোবরা-৭ এর অফিসার গাড়ি থেকে নেমে তার লৌহের ন্যায় হাতটি সজরে সুজনের গালের উপর নামিয়ে দেন। তারপর যা হওয়ার তাই হল সুজন আর কোন কথা বলতে পারল না। ইতিমধ্যে এনামুল এবং সজিবকে ওরা ছেড়ে দিল, বাকি রইলাম আমরা চারজন। অতপর আমাদের পুলিশের গাড়িতে উঠানো হল, প্রচন্ড খারাপ লাগছিল, খারাপ এর মাত্রাটা আরো বাড়ল যখন দেখলাম একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের ক্যামেরা আমাদের দিকে তাক করা, বুঝতে দেরি হলনা যে আমরা বিখ্যাত হতে চলেছি। এরপর ওরা আমাদের ১১ নং বাসস্ট্যান্ডে নিয়ে আসা হয়।

এরপর আমাকে গাড়ি থেকে নামানো হল, আমি ভাবলাম আমকে হয়তবা ছেড়ে দিতে পারে, একটু পরেই আমার ভুল ভাংল যখন আমাকে বলা হল যে সুজন এর অবিভাবককে দেকে আনতে হবে। তো আমি তাদের কথা মত সুজনের আব্বা ও চাচাকে ডেকে আনলাম। তারা এসে সমস্ত ঘটনা জানলেন এবং আমাদের ছেড়ে দেওয়ার সুপারিশ করলেন কিন্তু কোন লাভ হলোনা ওরা আমাদের ছাড়ল না। পরে কোবরা-৭ এর ইন্সপেক্টর জানালেন হরতাল শেষ না হওয়া পর্যন্ত জেলখানায় থাকতে হবে। পরে আমাদের মিরপুর ২ নং থানায় নিয়ে ১৪ শিকের(১৪ শিক ছিল কিনা যথেষ্ট সন্দেহ আছে) ভেতর নিক্ষেপ করা হয়।

ভিতরে যা দেখলাম তা বর্নণা করার ভাষা আমার জানা নাই। যাই হোক ঢোকানোর পূর্বে পায়ের জুতা এবং বেল্ট খুলে নেওয়া হল। এরপর ধীরে ধীরে সারে ৮ ঘন্টা পার করলাম। সন্ধ্যা সারে ৬টায় যখন বের হলাম ততক্ষনে আমাদের জুতা এবং বেল্ট উধাও হয়েছে। এরপর খালিপেটে, খালিপায়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম তিক্ত এক অভিজ্ঞতা নিয়ে।

বাসায় যাওয়ার পর যা হয়েছিল তা না হয় পাঠকরা নাই জানলেন ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.