আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অনুবাদ ধারাবাহিক সায়েন্স ফিকশন: আইজাক আসিমভের কারেন্ট অব স্পেস। (২য় পর্ব)

দিল ঠান্ডা তো দুনিয়া ঠান্ডা। আইজাক আসিমভের ইম্পিরিয়াল সিরিজের বই কারেন্ট অভ স্পেস এর অনুবাদ এর একটা চেষ্টা। প্রথম পর্ব এক: কুড়িয়ে পাওয়া অজ্ঞাত পরিচয় মানুষটি। রিক হাতের খাবার চামচটা নামিয়ে রেকে লাফিয়ে উঠে দাড়ায়। উত্তেজনায় এমনই কাপা কাপছে, তাকে আধা ময়লা সাদা দেয়ালটায় হেলান দিতে হয়।

"আমার মনে পড়েছে! চিৎকার করে সে। নিজেদের মধ্যে কথা কথা বলতে বলতে খেতে ব্যস্ত মানুষগুলো তার দিকে একবার তাকিয়ে আবার খাবারে মন দিল। রিকের দিকে তাকিয়ে কেউ সময় নষ্ট্ করতে চায় না, নেহাত হফাত চিৎকারে তার দিকে তাকানো সবার। রিক এবারে একটু আস্তে বলে, আমিএকান গুরুত্বপুর্ন কাজ করতাম। আমার একটা চাকরী ছিল!” চুপ কর, বোকা কোথাকার! কেউ একজন বলেই বসে বিরক্ত হয়ে।

খাবারের দিকে মন দাও রিক। বিরক্ত কোর না। “ আর একজন ধমক মারে তাকে। রিক চুপ করে। ঘরের পরিবেশ আবার আগের মত অবস্থায় ফিরে যায়।

কেউ কেউ তার দিকে তাকিয়ে একটা ভঙ্গি করে। পাগলা রিক বলে মন্তব্যও করতে শোনা যায় কাউকে। এর কোন কিছুই রিক কে স্পর্শ করে না। ধীরে ধীরে সে তার টেবিলে বসে পড়ে। আনমনে খাবার চামচটা নাড়তে নাড়তে চিন্তা করতে থাকে।

হাতের উল্টোপিঠের দিকে নজর যায় তার। একটা নাম্বার পাকা ভাবে তার হাতের উপরে ছাপ মেরে দেয়া। না দেখেও সে এই নাম্বারটা বলতে পারবে, আসলে এখানকার সবাই পারবে, যার যার নিজেরটা। এটা তাদের পরিচয় সুচক নাম্বার। তবে সবার নামের সাথে নামও থাকে, তার নেই।

স তারে কোন নাম নেই। তারা তাকে রিক বলে ডাকে কারন তাদের ভাষায রিক মানে চরম অপদার্থ অথবা বোকা টাইপের কিছু একটা। আর বেশিরভাগ সময়ই তারা তাকে ডাকে পাগলা রিক বলে। কিন্তু এখন থেকে হয়ত বলবে না, চিন্তা করে রিক। তার আরও বিশ করে মনে পড়বে সে কি ছিল, কি করত।

তখন কেউ তাকে পাগলা রিক বলবে না। মিল শ্রমিক হিসেবে কাজে যোগ দেবার পরে এই প্রথম এমন কিছু মনে পড়ল, যেটাকে তার কাছে গুরুত্বপুর্ন মনে হযেছে। সে যদি আর একটু বেশি চেষ্টা করতে পারত, সব কিছু দিয়ে চেষ্টা করতে পারত, তবে হয়ত আরও অনকে কিছু মনে পড়ত। হঠাৎ করে তার ক্ষুধা মরে যায়। চামচ সহ খাবারের সব সরন্জাম সরিযে রেখে চিন্তায় ডুবে যায় সে।

হাতের তালুতে চোখ ডলতে ডলতে সে আঙ্গুল দিয় মাথার চুলগুলোকে আকড়ে ধরে জোরে। সবটুকু মনোযোগ দিয়ে সে মনে করে যেতে চেষ্টা করে যেতে থাকে, কোন একটা স্মৃতি, যে কোন স্মৃতি। একটু পরে তাকে দেখা যায় টেবিলে মাথা দিয়ে ফুপিয়ে কাদছে। বিকেলবেলা রিক কে কারখানা থেকে বের হতে দেখে এগিয়ে তার পাশে হাটতে থাকে ভেলোনা মার্চ, তার ছুটির জন্যই অপেক্ষা করছিল সে। নিজের মনে হাটতে থাকা রিক প্রথমে তাকে কেয়াল করেনি।

একটু পরে খেয়াল হতে থেমে দাড়িয়ে তাকায় সে ভোলোনার দিকে। ভেলোনার চুল সোনালী আর ধুসর এর মাঝামাঝি একটা শেড। দুটো বড় বড় চুলের কাঁটা মাথায় তার। সস্তা চুম্বকায়িত কাটাগুলো চুলগুলোকে মাথার সাথে আটকে রেখেছে তার। পরনে একদম সাদামাটা সুতির হালকা পোষাক।

আমি শুনলাম আজ দুপুরের খাবারের সময় কি যেন ঝামেলা হয়েছে?” জানতে চায় সে। তার গলায় কড়া রকমের দক্ষিনের গেয়ো লোকেদের টান। রিকের নিজের কথা বলার ভাঙ্গি সম্পুর্ন আলাদা। মৃদু, মার্জিত এবং নাঁকি একটা টান আছে তার কন্ঠস্বরে। সবাই তার এই কথা বলার ভঙ্গির জন্য তাকে নিয়ে হাসাহাসি করে।

অবশ্য তবে তাকে নিয়ে হাসাহাসি করার কারন এই একটাই নয়। এটা নিয়ে কষ্ট পায় না রিক। ভোলোনা তাকে বলেছে বোকা-গাধারা যা পায়, তাই নিয়েই হাসাহাসি করে, সুতরাং এটা নিয়ে কষ্ট পাবার কিছু নেই। কিছু হয়নি লোনা” মৃদু স্বরে উত্তর দেয় সে। ভেলোনা জোর করে“ আমি শুনলাম তুমি নাকি বলেছ তোমার কি যেন মনে পড়েছে।

সত্যি, রিক?” ভেলোনাও তাকে রিক বলে। যখন রিক প্রথম এখানে আসে, ভেলোনা নাম বা অন্য কিছূ নিয়েই চিন্তা করার সময় পায়নি তাকে ছাড়া। যখন খেয়াল করল, ততদিনে সবার ডাকে রিক নামটা চালু হয়ে গেছে। আর সে তার নিজের নামটাও যেখানে মনে করতে পারে না, সেখঅনে মানুষ তো সুযোগ নেবেই। ভেলোনা একবার চেষ্টা করেছিল তার নাম বার করার।

অনেক খোজ করে নিউ সিটির পুরাতন একটা ডিরেক্টরী নিয়ে এসে সব গুলো নাম এক এক করে পড়ে শুনিয়েছে রিককে, কয়েকবার। রিকের কাছ থেকে কোন সাড়া পায়নি, এমন কোন আচরণও সে করেনি আনমনে যে সেটা থেকে সামান্যতম ধারনা করা যাবে কোন নাম তার মনে দাগ কেটেছে কিনা। রিক ভোলোনার দিকে পুরোপুরি তাকয়,“ আমাকে হয়ত কিারখানার কাজটা ছাড়তে হবে। ভেলোনা একটু চমকে যায়। তার গোলগাল, ধ্যাবড়া মুখটাকে দেখে মনেহয় সে চিন্তায় পড়ে গেছে।

“ আমার মনে হয় কাজটা ছেড়ে দেয়া তোমার উচিৎ হবে না। নিয়মিত কাজ করার ফলে তোমার অনেক উন্নতি হয়েছে। নিজেকে খুজে পেতে হবে আমাকে, অনেক সময় দিতে হবে এ জন্য। ” উত্তর দেয় রিক। নিচের ঠোট কামড়ে ধরে ভেলোনা, আমার মনে হয় তোমার সে চেষ্টা না করাই ভাল।

” রিক মুখ ঘুরিয়ে নেয়। সে জানে ভেলোনা তার খারাপ চায় না কখোনই। এই ভেলোনা-ই তার কারখানার কাজটা জুটিয়ে দিয়েছে অনেক কষ্ট করে। তার তো কারখানার যন্ত্রপাতি সম্পর্কে কোন জ্ঞানই ছিল না, একটু থেেেম আবার ভাবে রিক, হয়ত ছিল, সে মনে করতে পারছে না। সেই সময়গুলোর কথা এখন আবছা মনে পড়ে, রিক ছিল একদম বাচ্চার মত।

কথা বলতে পারতো না, খেতে পারতো না। জানতোই না, খাবার কি জিনিস। এই মেয়েটিই তাকে দেখে রেখেছে, খাইয়েছে, এক কথায় বাচিয়ে রেখেছে রিককে। আমাকে চেষ্টা করতেই হবে। ” আবার বলে রিক।

তোমার কি আবার মাথা ব্যথাটা শুরু হয়েছে রিক?” না, এইবারে আমি সত্যিকারেই মনে করতে পারছি আমার চাকর‌্যী, আমার কাজ কি ছিল, আগে-” থেমে যায় সে। আসলে নিশ্চিৎ না ভেলোনাকে বলবে কিনা। মেয়েটা অযথাই অনেক দুশ্চিন্তা করে। দুরে তাকায় সে। সময়টা বিকেল, সুর্য ডুবতে এখনও প্রায় দু ঘন্টা সময় বাকি।

চারপাশের দৃশ্যগুলো একঘেয়ে, কারখারা শ্রমিকরা সারি বেধে বার হচ্ছে, এখঅনে সেথানে জটলা পাকিয়ে এক একটা দল সারাদিন কি ঘটলো আর কি ঘটেনি সেটা নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত। তবে রিক জানে, একটু এগুলে সামনেই অপেক্ষা করছে খোলা মাঠ আর ফসলের ক্ষেত, তার উপরে পড়›ত সুর্যের লাল-সোনালী আলোর খেলা। সে খোলা মাঠ আর ক্ষেত এর দিকে আনমনে তাকিূেয় থাকতে খুব পছন্দ করে। সেই প্রথম সময় থেকেই, যখন লাল-সোনালী রং এর মানে কিংবা নাম জানত না, যখন সে এই ভঅললাগা প্রকাশ করার ক্ষমতাই রাকত না, তভন থেকেই এই দৃশ্যটা তাকে শান্ত করেছে, স্থির করেছে। সেই সময়গুলোতে ভেলোনা তাকে ধার করা ডায়াম্যাগনেটিক স্কুটারে করে এখানে নিয়ে আসত প্রতিদিন।

তারা শুন্যে দু ফুৃট ভাসমান স্কুটারে করে রাইড করতো মাইলকে মাইল. চলে আসতো গ্রাম এবং সব রকম মনুষ্য সংস্পর্শ থেকে অনেক দুরে। তখন রিক এর সামনে থাকতো কেবল প্রকৃতি অপার সৌন্দর্য, মুখের উপরে স্কুটারের গতির কারনে জোড়াল বাতাস আর নাকে ক্রিট ব্লসম ফুলের সুবাস। তারা বেশিরভাগ সময়েই গিয়ে বসত রাস্তার ধারের কোন খোলা জমিতে। সাথে থাকতো প্রিয় কিছু খাবার আর চারপাশে রং-গন্ধের খেলা। তারা বসে দেখতো সুর্যের ডুবে যাওয়া, ডুবে যাবার সময় লাল-সোনালী রং এর বিভিন্ন খেলা।

রিককে এখন দেখে মনে হচ্ছে তার নতুন স্মৃতিটা নিয়ে বেশ এলোমেলা অবস্থায় আছে। “লোনা“ হাত ধরে টানে সে, “চল ঐ মাঠটাতে যাই, যেখানে আগে যেতাম। ” এখন অনেক দেড়ি হয়ে গেছে রিক। একটু পরেই সন্ধ্যা হবে। ” প্লিজ লোনা, তাহলে শুধু শহরের একটু বাইরে।

” রিকের চোখে আকুতি ঝরে পড়ে। ভেলোনা কোমরে নীল কাপড়ের বেল্ট এ গুজে রাখা পার্সটা নেড়ে দেখ একবার, হয়ে যাবে টাকায়। রিক তার হাত ধরে, চল এবারে। চলবে ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.