আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হিরোশিমার বিভীষিকা! আমরা যেন আঁধারের পথযাত্রী।

মহাজাগতিক সংস্কৃতির পথে .. .. গাঢ় অন্ধকার থেকে আমরা এ পৃথিবীর আজকের মুহুর্তে এসেছি। বীজের ভিতর থেকে কী ক’রে অরণ্য জন্ম নেয়, জলের কনার থেকে জেগে ওঠে নভোনীল মহান সাগর, কী ক’রে এ প্রকৃতিতে- পৃথিবীতে, আহা ছায়াচ্ছন্ন দৃষ্টি নিয়ে মানব প্রথম এসেছিল, আমরা জেনেছি সব, অনুভব করেছি সকলি। সূর্য জ্বলে, কল্লোল সাগর জল কোথাও দিগন্তে আছে, তাই শুভ্র অপলক সব শঙ্খের মতন আমাদের শরীরের সিন্ধু-তীর। আমরা এসেছি আজ অনেক হিংসার খেলা অবসান ক’রে, অনেক দ্বেষের ক্লান্তি মৃত্যু দেখে গেছি। আজো তবু আজো ঢের গ্লানি-কলঙ্কিত হয়ে ভাবি রক্তনদীর পারে পৃথিবীর বিভিন্ন জাতির শোকাবহ অঙ্ক কঙ্কালে কি মাছি তোমাদের মৌমাছির নীড় অল্পায়ু সোনালি রৌদ্রে, প্রেমের প্রেরণা নেই-শুধু নির্ঝরিত শ্বাস পণ্যজাত শরীরের মৃত্যু-ম্লান পণ্য ভালোবেসে তবুও হয়তো আজ তোমরা উড্ডীন নব সূর্যের উদ্দেশে।

.. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. অন্ধকার থেকে/জীবনানন্দ দাশ প্রতি আগস্টে যেন আমাদের মনে করিয়ে দেয় আমরা কিভাবে পৃথিবীকে ধীরে ধীরে এক মৃত্যু কলোনীতে পরিণত করছি। ছায়াছবির ফ্লাশব্যাকের মতো সাদাকালো দৃশ্যপটে শুধু মৃত্যুর শোভাযাত্রা! যেখানে মানবিকতার শোধবোধ চুকিয়ে সংঘাতকে আলিঙ্গণ করার এক সুতীব্র মনোবৃত্তি। আজ হিরোশিমায় নৃশংস বোমা হামলার ৬৬ বছর পার হলো। আমরা তো মনস্তাত্ত্বিকভাবে বিবর্তিত হয়ে এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছি যেখানে প্রেম-ভালোবাসা-বাৎসল্যের পরিবর্তে জায়গা করে নিয়েছে পরস্পরের প্রতি ঘৃণাবোধ, হিংসাপরায়ণতা, লালসা, …… যতো প্রকার খারাপ প্রবৃত্তি আছে সেগুলোকে নিমিষেই এই তালিকায় যুক্ত করে ফেলা যায়, তাতে অত্যুক্তি হবে না মোটেই। কাজেই মৃত্যুর মতো স্পর্শকাতর ব্যাপারগুলোয় আমাদের সহানুভূতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি মেলা ভার।

আমরা আর শোকে কাতর হই না, পাথর হই না, অপরাধবোধে বিহ্বলও হই না, আমরা আত্মতৃপ্তিতে মেতে থাকি নিজেদের পোষ্য অনুভূতিকে ঘিরে। তাই আমাদের এই বোধ কাতর করে না যে, কতো কতো প্রাণ নিমিষেই উবে গিয়েছিল শুধুমাত্র কিছু মানুষের প্রতিশোধপরায়ণতার জের ধরে। সেই মানুষগুলোর কিছু স্বপ্ন ছিল, যেমন আছে আমাদের; সেই মানুষগুলো হাসতো-খেলতো-ভালোবাসতো-কাঁদতো, যেমন আমরা এখনো করি-স্বভাবজাত না হলেও। মানুষগুলো নিরাপরাধ ছিল কিনা কিংবা অপরাধী সে বিচারের দায়ভার কেউ না নিয়েই ধ্বংসের খেলায় মেতে ওঠাটাই জরুরী হয়ে পরেছিল সেসময়। যেমনটি আমরাও আজো মেতে উঠি।

উঠবও অনন্তকাল অবধি, কেউ আটকাতে পারবে না। মানবিকতার উর্ধ্বে এখন আমরা। আর তাইতো অহরহ হিরোশিমা-নাগাসাকির পুনরাবৃত্তি। কনভেনশনের পর কনভেনশন কখনোই ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি এই দস্যুতাবৃত্তিকে। অন্ধকার থেকে কবে কোন এককালে শুরু হয়েছিল আমাদের পথচলা, একটুখানি জ্ঞানের নাগাল পেয়ে আমরা নিজেদের তাবৎ দুনিয়ার সভ্য দুপেয়ে জীব হিসেবে আখ্যা দিতে দ্বিধা করিনি, কিন্তু আলোর পথে চলতে চলতেই চিরচেনা রেপটাইল কমপ্লেক্সের দ্বান্দ্বিকতায় আবার কখন যে আমরা অন্ধকারের চোরাগলিতে পা বাড়িয়েছি নিজেরাই জানি না।

আমরা তো এখন আঁধারের পথযাত্রী। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।