বিচ্যুত যৌবনে জোছনা আমায় করেছে উম্মাদ
আমিনী কেবল উপলক্ষ
মুফতি আমিনীকে হাইকোর্টে তলব করা হলো সদ্য সংশোধিত সংবিধানকে ছুঁড়ে ফেলে দেবার আহ্বান জানানোর ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য। আমিনী তার বক্তব্যের ব্যাখ্যায় কি বলেছেন তা সংবাদপত্রের পাতায় আসেইনি বরং মূখ্য হয়ে উঠেছে সরকার সমর্থক ও সরকার বিরোধী আইনজীবীদের হট্টগোল আর হাতাহাতির খবর। ইদানিং পল্টন ময়দান কিংবা ঢাকার অন্যান্য রাজপথের মতো হাইকোর্ট প্রাংগন ও বিচারকের এজলাসও রাজনৈতিক উত্তাপে সর্বদা গরম থাকে। বিচার বিভাগ যেকোন দেশের মানুষের শেষ ভরসা স্থল, এখানে এসে যদি মানুষ ন্যায় বিচার ও সঠিক দিক নির্দেশনা থেকে বঞ্চিত হয় তাহলে সহিংসতা আর সম্মুখ যুদ্ধই হয় ফায়সালার পথ। যা যেকোন রাস্ট্র ও সমাজে অনাকাঙ্খিত, অপ্রত্যাশিত।
তাই এমনকি স্বৈরশাসকেরাও সর্বদা সচেষ্ট থাকে বিচার বিভাগকে না ঘাটাতে। বিচার বিভাগের নূন্যতম একটা সম্মান বজায় রাখতে। আর আজ দুঃখজনক হলেও সত্য যে বাংলাদেশের রাস্ট্র ব্যাবস্থায় বিচার বিভাগ এক প্রশ্নবোধক অবস্থানে প্রায় চলে এসেছে। এ অবস্থাই বলে দেয় স্বদেশ আমার কোন পথে চলছে।
শেখ হাসিনাই একমাত্র দেশপ্রেমিক
কিছুদিন পূর্বে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সভায় সদম্ভে বলেছেন তার চেয়ে বড় দেশপ্রেমিক বাংলাদেশে আর কেউ নাই।
আমিও তাই বলি দেশের সরকার প্রধান দেশপ্রেমের পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে তবেই হয়ে থাকেন। তাই তার মতো দেশপ্রেমিক আর ক'জনাই বা থাকবেন। তাই বলে একমাত্র দেশপ্রেমিক এমন কল্পনা প্রসূত ধারনা না থাকাই উচিত একজন সরকার প্রধানের। তবুও মেনে নিলাম কারন আমাদের সরকার প্রধান আমার অবজার্বেশানে এখনো আনাড়ী, অদূরদর্শী, একগুঁয়ে ও প্রতিহিংসাপরায়ন। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ তার আচার আচরন ও অপরিপক্ক কতাবার্তার সাথে অভ্যস্থ হয়ে পরেছে।
তাই আমরা আমজনতা এমন কথা বার্তা শুনেও মনে কিছু নিইনা। আমরা বাংলাদেশের মানুষ এমনই সবকিছু সহ্য করে যাই। সব কিছুতেই মানিয়ে চলার চেস্টা করি। আমরা এক সময় সিরাজুদ্দৌলাকে মেনেছি তার পতনের পর ষড়যন্ত্রকারী মীরজাফরকেও মেনেছি। এই মেনে চলার প্রবনতা আমাদেরকে উন্নত বিশ্ব থকে শতাব্দি পিছনে ফেলে রেখেছে।
যাইহোক ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতায় মুখ বুজে না হয় সহ্যই করলাম আমাদের ক্ষমতাশীলদের এমন দূর্গন্ধ।
খালেদার আপোসহীন মনোভাব
কিন্তু যখন একজনের এমন সদম্ভ ও ভুল বক্তব্যকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য ও নির্জলা মিথ্যাকে আড়াল করার জন্য আরো কিছু ক্ষমতাশালী মানুষ সাফাই গেয়ে যান তখন আর চুপ করে থাকা যায়না। প্রতিবাদ না করতে পারি ঘৃনাতো করা উচিত। খালেদা জিয়ার একটা বক্তব্য নিয়ে বেশ আলোচনা - সমালোচনা চলছে। তিনি বলেছেন বর্তমান সংবিধান ছুঁড়ে ফেলা হবে।
এই বক্তব্যের অনেক ব্যাখ্যাই ইতোমধ্যে চলে এসেছে। আমরা সবাই জানি বিরোধী দলের নেত্রী আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তুলনায় অনেক বেশী উদার, ধৈর্যশীল, সংযত। কম কথা বলেন বলে সাধারন মানুষের কাছে তার গ্রহনযোগ্যতাও অনেক বেশী। তবে তিনি মাঝে মাঝে হার্ডলাইনে যেয়ে অনেক শক্ত ও কঠিন কথা বলে ফেলেন। এই যেমন সংবিধান ছুড়ে ফেলা কারন তিনি এটাকে আওয়ামীলীগের দলীয় সংবিধান বলে আখ্যায়িত করেছেন।
তিনি যখন শক্ত ও হার্ডলাইনে যান তখন সেটা দেশ ও জাতির জন্য মংগলজনক হয়। স্বৈরাচার এরশাদের পতন এই খালেদা জিয়ার আপোসহীন মনোভাবের কারনেই হয়েছিলো। সবাই যখন এরশাদের বেডরুমে গোপনে লাভ ক্ষতির হিসেব করছেন তখন এই খালেদা জিয়া পুলিশ, বিডিআর ও মিলিটারীর দাবড়ানী খেয়েও রাজপথ ছাড়েননি। আবার তিনি যখন নমনীয় হন তখন তার ছেলেদের আশে পাশে জন্ম হয় গিয়াস, মিয়াস আরো কত ফাউলদের। তবুও সংবিধানের যেসব অংশে আওয়ামীলীগ অনাকাংখিত পরিবর্তন এনেছে এগুলোকে ডাস্টবিনে ফেলতেই হবে।
আগুনে ঘি ঢেলে দিলেন আদালত
যে সংবিধানে বিগত ৩৫ বছর ধরে একটা মূল স্তম্ভ ছিলো '' আল্লাহর উপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস''. এটা উঠিয়ে দেয়া হলো কেবল মাত্র সংসদে সংখ্যা গরিষ্ঠতার জোড়ে। বুড়ো আংগুল দেখানো হলো প্রশ্নাতীত সংখাগরিষ্ঠ ৯০ শতাংশ মুসলমান জাতি সত্তার প্রতি। তাই স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে হঠাৎ সংবিধান থেকে এটা উঠিয়ে দিয়েই কি অসাম্প্রদায়িক হয়ে গেলাম। বিগত আওয়ামীলীগ সরকার ও বিগত ৩৫ বছর কি তাহলে সাম্প্রদায়িক ছিলো। দেশে কি এতো দিন অন্যান্য ধর্মের অস্তিত্ব ছিলোনা।
তাই বলছিলাম এমন বিতর্ক ও বিতর্ক উদ্রেককারী বিষয় থেকে সবারই বিরত থাকা উচিত। আর আদালতের তো আরো বেশী সতর্ক ও সংযত থাকা কাম্য। কারন আমরা কেউই চাইনা আদালত শেষে বিতর্কিত হোক। তাই আমীনি সাহেবকে তলব করে ব্যাখ্যা চাইতে গিয়ে যখন খালেদা জিয়াকে টেনে এনে তার দেশপ্রেম নিয়ে সন্দেহ করেন তখন কাকতালীয় ভাবে প্রধানমন্ত্রীর দেশপ্রেমিকত্বকেই প্রতিষ্ঠা করার অপপ্রায়সে সংযোগ খুঁজে পান অনেকেই। মাননীয় আদালত পরোক্ষভাবে খালেদাকে দেশদ্রোহী বানানোর চেস্টা না করলেই পারতেন।
এতে হাসিনাই যে একমাত্র দেশপ্রেমিক সেটা প্রতিষ্ঠার একটা সুযোগ বলেই প্রতীয়মান হয়ে পরে। বরং আলাদাভাবে খালেদার বক্তব্যের জন্য ব্যাখ্যা চাওয়া যেতে পারতো। তাতে হয়তো হৈ হট্টগোলও হতো না, হাতাহাতি মারামারিও হতোনা। আদালতের সামনে এমন ঘটনা ঘটার সুযোগ নিশ্চয় আদালতের জন্য খুব একটা সম্মানজনক নয়।
প্লিজ গর্ত খুড়বেন না
বিচার বিভেগের বর্তমান অবস্থা দেখে শত্রুর জন্য গর্ত খুড়ার গল্পটা খুব মনে পড়ছে।
বাঙালীকে নিয়া হাজারো গল্প আছে, উপরোক্ত গল্পটাও বাঙালীর জন্য বিশেষভাবে প্রযোজ্য। কারন বাঙালীই একমাত্র জাতি যারা অন্যের জন্য গর্ত খুড়ে শেষে নিজেই সে গর্তে পড়ে মারা যায়। বাঙালীই একমাত্র জাতি যারা খাল কেটে কুমির এনে নিজেই সে কুমীরের খাবারে পরিনত হয়। তাই সবশেষে সরকারীদল, বিরোধী দল, বিচারবিভাগের সকল মহামান্য বিচারক সবার প্রতি করজোড়ে বিনীত অনুরোধ গর্ত খুড়বেন না। কারন আপনাদের দ্বারা গর্ত ভরাট করার কোন নিদর্শন এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে নেই।
দয়া করে দেশকে রেহাই দিন, সাধারন মানুষকে মুক্তি দিন চোরাবালীর সময়গুলো থেকে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।