আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছেলে আছে, আছে পুত্রবধু তবুও আজ পথের ভিখারী জবুনা বেগম

গ্রাম-প্রকৃতি-সবুজ-সারল্য যেখানে মিলেমিশে একাকার, সেখানে ফিরে যেতে মন চায় বার বার। বৃদ্ধা জবুনা বেগম। বয়স ৬৯ বছর। নানা রোগবালাইয়ে আক্রান্ত এই বৃদ্ধা গত পাঁচ বছর ধরে বাড়ি ছাড়া। নির্ঘুম রাত কাটান নবীনগর উপজেলার সলিমগঞ্জ কলেজের বারান্দায়।

দিনের বেলা একটু সাহায্যের আশায় থাকেন বিভিন্ন গাছতলায়। তার দুটি পা অবশ হয়ে পড়ায় তিনি চলেন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। অমানবিক জীবনযাপন করলেও জবুনার স্বজনরা কেউই তার খোঁজ নেন না। কারণ পুত্রবধূ এবং নাতি-নাতনীদের অত্যাচার, অপমান সইতে না পেরেই তিনি ঘর ছাড়া হয়েছেন। দরিকান্দি ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামের মৃত আবদুর রহমানের স্ত্রী জবুনা।

১৯৭২ সালে স্বামী মারা যান। এরপরই তার জীবনের গতিপথ বদলাতে শুরু করে। জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যেতে জবুনা দুই ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে পাড়ি জমান ময়মনসিংহে। বর্তমানে তার বড় ছেলে মিজান চাকরি করেন রংপুরে আর ছোট ছেলে মজিবুর নরসিংদীতে গাড়ির মেকানিক হিসেবে কাজ করেন। তাদের দু’জনের আর্থিক অবস্থাও মোটামুটি ভালো।

কিন্তু ২০০৫ সালে তার জীবনে ঘটে দুঃখজনক ঘটনা। দুই ছেলের স্ত্রী ও সন্তানদের শারীরিক নির্যাতন, গালিগালাজ সইতে না পেরে ওই বছর তিনি ছেলেদের কাছ থেকে চলে যান নিজের বাবার বাড়ি বাঞ্ছারামপুরের পাহাড়িয়াকান্দি গ্রামে। কিন্তু নিজের কোন সহায়-সম্পদ না থাকায় গ্রামে ফেরার পর থেকে তিনি চরম অমানবিক জীবনযাপন করছেন। আÍীয়-স্বজনরা কেউ তার ভরণ-পোষণ না দেয়ায় গত ৫ বছর ধরেই জবুনা নবীনগরের সলিমগঞ্জ কলেজের বারান্দা ও পশ্চিম পাশের গাছতলায় জীবনযাপন করছেন। অধিকাংশ সময়ই তাকে উপোস থাকতে হয়।

কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে কথা হয় জবুনা বেগমের সঙ্গে। কাঁদতে কাঁদতে বলেন, বাবা আমার জীবনে কোন চাহিদা নাই। হুদা (শুধু) একটা ঘর আর আমার পাও দুইডারে যুদি (যদি) কোন বড়লোক মাইনষে (মানুষ) ভালা কইরা দিত তইলে আমি হারা (সারা) জীবন তারে দোয়া কইরা যাইতাম। তারে যেন আল্লা বেহেসত নেয়। জবুনা বলেন, কেউ দিলে খাই, না দিলে পেট কামড়াইয়া থাহি, আল্লাহ কি আমারে দেহে না? একথা বলেই অঝোরে কাঁদতে থাকেন জবুনা বেগম।

জবুনা বেগম আরও বলেন, মাইনষে (মানুষে) খালি পুতপুত (ছেলে) করে, এইতা কইরা লাভ কি। পুতে যুদি সাহায্যে করত তইলে কি আমি গাছতলায় থাহন লাগে। আল্লায় যে আমারে কেরে নেয় না জানি না। মইর‌্যা গেলে গা মনে অয় কিছুডা শান্তি পাইলাম অইলে। বিত্তবান লোকজন যদি আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে বৃদ্ধার দুই পায়ের চিকিৎসা করে দিতেন তাহলে বৃদ্ধা হয়তো সুস্থ জীবনযাপন করতে পারতেন।

একই কলেজের ছাত্র রুবেল মিয়া, মো. শান্ত মিয়া, শান্ত কুমার রায় বলেন, দরিদ্র এই বৃদ্ধা কলেজের বারান্দায় মশার কামড় খেয়ে রাত যাপন করেন। সলিমগঞ্জ কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ বশিরুজ্জামান বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ মহিলাটি না খেয়ে খোলা আকাশের নিচে অসহায় অবস্থায় পড়ে আছে। তার দুটি ছেলে থাকা সত্ত্বেও বৃদ্ধ বয়সে এই করুণ দুর্দশা যে কোন মানুষের হƒদয়কে নাড়া দেয়। তাই সমাজের বিত্তবান মানুষ তার পাশে এসে দাঁড়ালে এই করুণ জীবনের অবসান হবে। এ ব্যাপারে সলিমগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইউনুছ বলেন, এই মহিলা সত্যিকার অর্থে অনেক কষ্টে জীবন কাটাচ্ছে।

সমাজের বিত্তশালী লোকজন যদি সাহায্যের হাত বাড়াত তাহলে মায়ের সমতুল্য জবুনা বেগম হয়তো জীবনের শেষ সময়টুকু কিছুটা ভালোভাবে কাটাইতে পারতেন। অসহায় এই মহিলার পুনর্বাসন ও চিকিৎসার জন্য সমাজের বিত্তশালীরা এগিয়ে আসার আহ্বান করছি। সলিমগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. পরশ মিয়া বলেন, এই বৃদ্ধার বিষয়টি জানা নেই। বিষয়টি তিনি খোঁজ নিয়ে মহিলার বয়স্ক ভাতা পাওয়ার বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন। এদিকে দরিকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম স্বপন বলেন, যেহেতু জবুনা বেগম আমার ইউনিয়নের নাগরিক তার ভাতা ও আর্থিক সাহায্যের ব্যবস্থা অবশ্যই করব।

সূত্রঃ- আজকের দৈনিক যুগান্তর ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.