গত বৃহঃস্পতিবার ১১/১০/২০১২ তারিখ মো ইয়ান সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার এ ভূষিত হয়েছেন।
সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী মো ইয়ান বলেছেন অনেকদিন পর বিশ্বব্যাপী পাঠকের চোখ সমসাময়িক চীনা সাহিত্যের উপর নিবদ্ধ হবে।
“ এটা (আমার পুরস্কার বিজয়) অবশ্যই একটা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে, কিন্তু এই প্রভাবকে অতিমূল্যায়ন করা ঠিক হবে না ” মো চীনের পূর্ব প্রদেশ শ্যানডং এ তার নিজ শহর গোয়ামিতে জিনহুয়ার সাথে এক একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন।
শতাব্দী দীর্ঘ ইতিহাসে গত বৃহঃস্পতিবার প্রথম চীনা নাগরিক হিসাবে মো সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার জয় করেন যা পুরো দেশ জুড়ে লেখক ও পাঠকদের মাঝে আনন্দবার্তা বইয়ে দেয়।
বিজয়ের কোন উচ্চাশা ছিলনা
এই ৫৭ বছর বয়সী সাহিত্যিক বলেন নোবেল বিজয়ের মত উচ্চাশা তার ছিল না, তিনি বলেন “ সত্যিকার অর্থে , আমি মনে করি নোবেল বিজয়ে আমার খুবই ক্ষীণ সম্ভাবনাই ছিল”।
“ বিশ্ব জুড়ে এবং চীনে আরো অনেক ভালো লেখক আছেন। এটা আনেকটা এ রকম আমি এমন একটি পুরস্কারের জন্য একটা দীর্ঘ লাইনে দাড়িঁয়ে ছিলাম যেটা কেবলমাত্র একজন ব্যাক্তিকে বছরে একবার দেয়া হয়। ”
তিনি বলেন, জনসমক্ষে প্রকাশ করবার ২০ মিনিট পূর্বে সুইডিশ একাডেমির স্থায়ী সচিব টেলিফোনে তাকে তার পুরস্কার প্রাপ্তির কথা জানান।
শৈশব থেকেই অধ্যায়ন আবিষ্ট
মো এক গ্রামীন কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহন করেন এবং ১২ বছর বয়সে তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়, বাড়ির জাঁতাকলে তেলের বাতির টিমটিমে আলোয় বই পড়তে শুরু করেন তিনি যেহেতু মাঠে কাজ করতে চাইতেন না।
তিনি বলেন “ আমার শৈশবে কেবল গুটিকয় বইই আমাদের গ্রামে সহজলভ্য ছিল।
আমাকে পড়ার জন্য একটি বই খুঁজে পেতে প্রত্যেক উপায়কেই ব্যবহার করতে হতো। আমি অন্যদের সাথে বই বিনিময় করতাম এবং এমন কি বইয়ের বিনিময়ে অন্যের জাঁতাকলে পাকা গম চূর্ণ করে দিতাম” ।
“যখন গ্রামে পাওয়া যায় এমন সব বই আমি পড়ে শেষ করে ফেললাম, তখন আমার মনে হয়েছিল বিশ্বে আমিই সর্বাপেক্ষা জ্ঞানী ব্যক্তি”
“ যখন হাতে পড়বার মত আর কোন বইই ছিল না তখন আমি এমন কি চীনা ভাষার অভিধান পড়তে শুরু করেছিলাম। আমি এটা এতবার পড়েছিলাম যে এমনকি আমি ঐ অভিধানের মধ্যেও ভুল খুঁজে পাচ্ছিলাম। ”
হ্রাসমান পাঠাভ্যাস পরিবর্তনে সীমিত প্রভাব
“ এখন মানুষের আছে অবসর কাটানোর অনেক উপায়, যেমন অনলাইন চ্যাটিং এবং গান শোনা, কাজেই একজনের পড়ার সময় নিশ্চিতভাবে কমে গেছে,” মো বলেন।
মো বলেছেন “তার নোবেল বিজয় দেশ জুড়ে যে সাড়া ফেলেছে তা সত্বেও এটা চীনা জনগণের মধ্যে পাঠাভ্যাসের ব্যাপক উন্নতি ঘটাবে অতোটা তিনি প্রত্যাশা করেন না। ” “ আমি মনে করি আগামী এক মাসের মধ্যেই এই উন্মাদনার অবসান ঘটবে, এমন কি আরো আগেও হতে পারে এবং সবকিছু আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরত যাবে” বলেন নোবেল বিজয়ী মো ।
চীনা একাডেমি অব প্রেস এন্ড পাবলিকেশন্স এর ২০১১ সালে করা এক সমীক্ষায় দেখা গেছে গড়ে একজন চীনা নাগরিক বছরে ৪.৩ টি বই পড়েন যা পশ্চিমা দেশগুলোর গড় বই পাঠের তুলনায় অনেক অনেক কম।
সাহিত্য কখনো ধ্বংস হবে না
মো বলেন “সাহিত্য বিশ্বব্যাপী বরং একটি নির্জন এবং নিঃসঙ্গ ক্ষেত্র। এটা চলচিত্র এবং অনান্য মধ্যমের মত বিপুল জন-আকর্ষী নয়”।
মো বলেন একবার তিনি কোন একটা প্রবন্ধে পড়েছিলেন যেখানে লেখক ১৯৩০ এর দশকে হলিউডি সিনেমার প্রতি জনতার ভিড় লক্ষ করে আশংকা প্রকাশ করেছিলেন যে ভবিষ্যতে উপন্যাসের আর পাঠক থাকবে কিনা!! অনেক দশক পরেও মানুষ অদ্যাবধি সাহিত্যের প্রতি ইতিবাচক মনোভাবই পোষণ করে। তিনি বলেন, এবং পাশাপাশি এখন চলচিত্র, ইন্টারনেট এবং টেলিভিশন অনেক মানুষকে সাহিত্য থেকে দূরেও সরিয়ে নিয়েছে , । লেখক বলেন, যাই হোক না কেন “ সাহিত্য কখনো ধ্বংস হবে না”।
সাহিত্য হলো ভাষার সৌন্দর্য এবং এই ভাষিক সৌন্দর্য অনান্য শিল্পের সৌন্দর্য দ্বারা প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হবে না বলে তিনি মনে করেন।
তিনি বলেন “এমনকি আপনি যদি প্রথিতযশা,কোন লেখকের বই বারবার পড়তে থাকেন , তখনও ঐ বইয়ের ভাষিক সৌন্দর্য এবং তার অর্ন্তগত চরিত্র সমূহের নিয়তি আপনাকে স্পর্শ করবে ,” ।
“ আমি বিশ্বাস করি এটা ভাষারই সৌন্দর্য এবং জাদু। এবং এটা কখনো ধ্বংস হবে না”।
উপন্যাস এবং চলচিত্র
মো, যার আসল নাম গুয়ান মোয়ে, আশির দশক থেকে তার বিখ্যাত উপন্যাস “বিগ ব্রেষ্ট এন্ড ওয়াইড হিপস” এবং “রেড সোরগাম” এর লেখক হিসাবে পরিচিত, পরে যেটাকে ভিত্তি করে পরিচালক ঝেং ইমো পুরস্কার বিজয়ী চলচিত্র নির্মাণ করেছেন।
মো বলেন, যদি একটি উপন্যাসকে সফলভাবে চলচিত্রে রূপয়িত করা যায় তাহলে তার প্রভাব এবং ঐ উপন্যাসের লেখকের জনপ্রিয়তা অনেকগুণ বেড়ে যায়।
তিনি বলেন তার এই পর্যবেক্ষণ পুরস্কার জয়ী চলচিত্র “রেড সোরগাম” এর উদাহরণ থেকে জাত।
পুরস্কারের অর্থ
১.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পুরস্কারের অর্থ কিভাবে ব্যয় করবেন জানতে চাইলে, মো বলেন তিনি বেইজিং এ একটি বাড়ি কেনার পরিকল্পনা করছেন। “(আমার ধারণা) এটা বেশ বড়ই হবে” তিনি হাসতে হাসতে বলেন।
“ কিন্তু অন্যেরা আমাকে বলেছেন রাজধানীর কিছু এলাকায় বাড়ির মূল্য প্রতি বর্গমিটার ৫০,০০০ ইউয়ান ( প্রায় ৮০০০ ডলার) ছুঁেয়ছে, সেক্ষেত্রে আমি এই পুরস্কারের অর্থ দিয়ে ১২০ বর্গমিটারের একটি এপার্টমেন্ট কিনতে সমর্থ হবো। ”
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।