গ্রামীণ সমাজের বাস্তবতা আর অশ্লীলতার বিপক্ষে অবস্থান।
কথা নামক মেয়েটি শহরে বাবার কাছে থেকে পড়াশুনা করছে , উচ্চ শিক্ষিতা হবেন । গ্রামের সবাই ওকে নিয়ে গর্ব করে ভবিষ্যতে ডাক্তার হয়ে গ্রামের লোকজনের সেবা শুশ্রুষা করবে ।
পড়াশুনার চাপে বয়স আর শরীরের দিকে খেয়ালই রাখা হয়নি, (গ্রামে প্রচলিত আছে মেয়েদের সময় মত বিয়ে না দিলে শরীর নাকি ভেংয়ে যায় ) কথা আবার পরিবারের লোকদের সাফ জানিয়ে দিয়েছে ওর বিয়ে নিয়ে যাতে না ভাবা হয়।
ওদের পরিবার আবার গ্রামের অন্যান্য পরিবার থেকে একটু আলাদা আধুনিকতার ছোঁয়ায় ভরা।
হঠাত পয়সা হয়েছে।
কথা মাঝে মধ্যে বাড়ী এলে গ্রামের অন্যমেয়েদের সহিত মিশেও না কথাও তেমন বলা হয় না। ভাবধরা টাইপের কেমন জানি ভাব নিয়ে থাকে, সব সময় মোবাইলে কথা নিয়ে ব্যস্ত এই আর কি।
গ্রামীন পরিবেশে অভ্যস্থ মেয়েদের সহিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে যুগলবন্দি কপোত কপোতিদের বেমানান বৈকি!
ইদানীং কথা আর আগের মত নেই, মুখখানি বরণ দিয়ে ঠাসা, গাল খানি কেন জানি বাংলা পাঁচ হয়ে গেছে ,পোয়া খানেক চাল ধুকালেও পূর্ব অবস্থান ফিরে পাবে কিনা সন্দেহ। এখন আর বিয়ের কথা হলে তেমন আর আগের মত স্রোতস্বিনী অগ্নী মূর্র্তি ধারন করেন না ,ইউরোপীয়ান পাত্রের কথা শুনে কি এক অদৃশ্য শক্তির ইশারায় রাজি হয়ে গেলেন।
বিয়ে বিমুখ কথা হঠাত সংসারী হয়ে বিয়ের পিড়ীতে বসার অন্তর্নিহিত অধ্যায় কি হতে পারে?
হতে পারে বান্ধবীদের সহিত বিউটি পার্লার ঘুরতে গিয়ে ভুলক্রমে ম্যাসেজ পার্লারে ঢুকে কোন এক অভিজ্ঞতার ঝুলিতে গ্রাম ধন্য করবেন।
গ্রামের লোক, মুখে কলুপ এটেছে ভবিষ্যতে সমাজ সেবিকা ডাক্তার হয়ে রোগ সারাবেন, সে কিনা ইউরোপীয়ান পাত্রের স্ত্রী হয়ে বিয়ের পিড়ীতে বসে গ্রামের মান রেখেছেন, অন্য সব মেয়েদের কাতারে নিজেকে মিশিয়ে সমাজ স্রোতে গা ভাসিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন মহিয়সী রুপে।
ইউরোপীয়ান পাত্রের পেশা বড় চমতকার (স্পেশাল মেসেঞ্জার) কত রংয়িন স্বপ্ন কিছু দিনের মধ্যেই ইউরোপ চলে যাবে।
ঘর মুছতে হবে না, কাপড় ধুতে হবে না, শশুর শাশুরীর খেদমত , ’’ধুর ছাই” ছক্কা দিয়ে ইউরোপ, কোথায় পাবে আমায়।
ওদিকে ইউরোপীয়ান জামাই খুশীতে মা বাবার ঘুম নেই , সোনার খনি এই এল বুঝি, বিনা পুজিতে ব্যবসা ,না চাহিতে চাঁদ হাতে পাওয়া।
জামাই খেকো রাক্ষুসী মা বাবার প্রশংসার আর সীমা নেই ,
(আমাদের কথার পোয়াবারো ও যেন চাঁদ কপালী। )
ইদানীং ড্রামে করে ইউরোপ গিয়ে প্লেনে করে দেশে ফিরেছেন এমন পাত্রের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে ,
ইউরোপ থেকে এসেছেন চারটি খানি কথা, যেখানে সেখানে বিয়ে কল্পনাই করা যায় না, কথা মার্কা পরিবারে হলে তো সোনায় সোহাগা।
ইউরোপ থেকে এসেছেন কিনা!
বয়স এখানে ব্যাপারই না।
দুপক্ষের কথা চালাচালীতে বিয়ের দিনক্ষন পাকা, বিশাল আয়োজন , বর আসবে দুপুর একটার দিকে এর পরই বিয়ে ।
কোলাহলপুর্ণ বিয়ে বাড়ীতে হঠাত রব উঠেছে কথাকে পাওয়া যাচ্ছেনা , খোজাখুজি , কান্নাকাটি, কেউ বলছেন পালিয়েছে, কেউ বলছেন পুকুরে পড়ল কিনা, মা বলছেন বান্ধবীর বাড়ী, বাবার আবার পায়চারী,
বিয়ে বাড়ী যেন ভুতুরে বাড়ী,
চারি দিকে নানা কথা, মান যায় যায় অবস্থা ,
ওদিকে বরের বাড়ীর লোকজনের কাছে হতে হয় হেনস্থা।
আমি দাওয়াতী মেহমান হিসেবে কথাদের বাড়ীর দিকেই যাচ্ছিলাম হঠাত লাল শাড়ীতে মহিলা সাদৃশ্য কি যেন মনে হল।
পথের দুরত্ব যেমন কমছে লাল ওয়ালী যেন আমার সামনাসামনি হচ্ছে , ভূতের মত মনে হল ।
যেই না আমার সামনে এল, কি দেখলাম আমি ভয়ে বুকে থুথু দিয়ে তাড়াতাড়ী বড় খতমের দোয়া পড়ে ভয়ে কচুরী পানার খাদে পড়ার উপক্রম তো, চোঁখ বন্ধ করে ফেললাম।
ভয়ে আমার জীবন যায় যায়, এ কি দেখলাম দেখলাম...
মুখখানী আটা ময়দা দিয়ে ঠাসা , চুল গুলো ফুলিয়ে মাথা যেন দুটো, দশ বার কেজি ওজনের লাল শাড়ী ধুলো বালির ভয়ে দুহাতে দেবীর মত উচিয়ে রেখেছেন।
মনে হল আমাকে ক্রস করে ভূত সরে গেছে তাড়াতাড়ী নিজের গায়ে চিমটি কেটে সম্বিত ফিরে পেলাম , ধুর ছাই ভূত এই দিনে দুপুরে কোথা থেকে আসবে।
পিছন পানে চাহিতেই ষোড়গল, কি যেন গোন্ডগোল আমি ও পাশে গিয়ে দাড়ালাম।
ইতোমধ্যে কথাদের বাড়ীর লোক জন মা, খালা, চাচীরা লাল ওয়ালীকে ঘিরে ফেলেছেন , কেউ বলছে এই কোথায় গিয়েছিস আমাদের না জানিয়ে, কেউ বলল বেয়াদপ মেয়ে , গ্রামে অন্য সব মেয়েরা কাপড় মুখে গুচিয়ে হাসছে।
ও বলল বিউটি পার্লারে গিয়েছি ।
চোঁখ মুছছে আর কেঁদ কেঁদ গলায় বলছে কিছুইতো করতে দিলে না, একটু বিউটি পার্লারে গিয়ে সাজবো তাও তোমাদের সহ্য হল না ।
ওর বাবা শ্রদ্ধেয় চাচা আমায় আবেগের সুরে বলছে কি দেখছিস বাবা, কি জামানা এল, শহরে গিয়ে কি কি দেখেছে, কি কি শিখেছে আজ আমাকে লজ্জায় ডুবিয়ে বিউটি পার্লার সাজতে গিয়েছে ।
এই নিয়ে চল ।
আমি বললাম কথা, ভাইয়া তুইতো দেখতে ভাল, আজ এই মুহুর্তে কি দরকার ছিল এত দুরে একা একা বিউটি পার্লার যেতে। গ্রামের মেয়েরাই তো তোকে সাজাতে পারতো।
আমায় মৃদু ধমকের সুরে বলল আপনারা এখনো সেকেলেই রয়ে গেলেন আধুনিকতা চিনলেন না ।
আমি ওর মুখপানে ভাল করে চেয়ে ভাবলাম সত্যিইতো আমিতো সেকেলে গেঁও ভূত...
আমার মনে পড়ল একজন বাংয়ালী মেয়ের কথা
মনে পড়ল বাংয়ালী নায়ীকা সুচিত্রা সেনের কথা
মনে পড়ল একহাজার বিউটি এক্সপার্ট এক করলে কি একজন নরমাল সুচিত্রা সেন সাজানো যাবে কিনা..
গ্রামে গঞ্জে শহরে হাজারো সুরুচিতা সেন পড়ে আছে যাদের আটা ময়দা দিয়ে সাজাতে হয় না ..
কাঠাল পাকাতে সিক ঢুকাতে হয় , কাঠাল সাজতে যদি তরমুজে সিক ঢুকানো হয় তাহলে কি হবে সেটাই প্রশ্ন?
আসলেই আমিতো ভূত...
কৃত্রিম রং দিয়ে ত্বকের উজ্জলতা বাড়ানো যায় ,শরীরের লাবন্যতা ফিরিয়ে আনা যায় না,
ধপধপে সাদা আর টুকটুকে লাল সৌন্দর্যের মান বহন করে না।
গালখানী বাংলা পাঁচ হলে আটা ময়দা ঢুকিয়ে ফজলী আম বানানো যায় না।
ধপধপে সাদা আর টুকটুকে লালের মাঝে যদি দাঁত দুটো কোদালের মত বেরিয়ে থাকে মুখপানে তাকানো যায় না।
লাখ টাকা দামের শাড়ী নামক বস্তায় ঢুকালেই হালকা পাড়ের বেনারসী বধু সাজা যায় না।
আধুনিক যুগের বিউটি পার্লারে গিয়ে ক্ষনিকের রং মেখে চকচকা হলেই রুপসী হওয়া যায় না।
খোদার দেয়া শরীরটাকে যেমন খুশী তেমন সাজে পুরষ্কার পাওয়া যায় মৌলিকত্ব বদলানো যায় না।
সুন্দরী গো ধন্য হউক রংয়িন সাজের আধুনিকতা,
আমি গায়ের বধু বাসন্তী রং শুভ্র সাজে শ্যামল বরণ শধুই সুচরিতা।
খোদার দেয়া শরীর খানী খোদার নেয়ামত,
যেমন ছিল তেমন রাখুন, সামনে কেয়ামত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।