মিলে মিশে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ! দুইদিন আগে জেরীর পোস্টে মন্তব্য করার সময়ও মনে পড়েনি। আজ দাঁড়িপাল্লার পোস্টে কমেন্ট করতে গিয়েই হঠাৎ মনে পড়লো স্কুল আর কলেজ জীবনের দুটো ঘটনা। সেগুলোই শেয়ার করছি,
ঘটনা ১:
আমাদের স্কুলে ম্যাথের এক সিনিয়র শিক্ষক ছিলেন, উনার মেয়েও একই স্কুলে পড়তো, আমাদের এক ব্যাচ কি দুই ব্যাচ সিনিয়র ছিলেন, ঠিক মনে নেই। স্কুলে কেবল মাত্র দুই হুজুরের হাতেই বেত থাকতো, অন্য কোন স্যার-ম্যাডামরা আমাদের বেত দিয়ে মারতেন না। স্যারেরা সাধারণত: মারতেন না, কদাচিৎ হয়তো ডাস্টার দিয়ে বাহুতে এক ঘা দুই ঘা দিতেন।
এক হুজুরী আপা ছিলেন মেয়েদের সামনের দিকে চুল কাটা দেখলেই (আমরা বলতাম বব কাটিং) চুল টেনে দিতেন এক থাপ্পড়। বেশির ভাগ শাস্তি ছিল সাধারণ দাঁড়িয়ে থাকা, বেন্চের উপর দাঁড়িয়ে থাকা, কখনও কান ধরে, কখনো কেবল এমনি। সবচেয়ে লজ্জাজনক শাস্তি ছিল ক্লাস ছুটির পরেও কিছুক্ষণ কান ধরে বেন্চের উপর দাঁড়িয়ে থাকা, দরজা হাট করে খোলা থাকতো, অন্য ক্লাসের মেয়েরা যেন বারান্দায় বের হলেই দেখতে পায়। অথবা কান ধরে বারান্দাতেই দাঁড় করিয়ে রাখা, উদ্দেশ্য একই সহপাঠী ভিন্ন অন্যরা যেন দেখতে পায়। কারণ, বান্ধবীদের সামনে শাস্তি পেতে তেমন কেউ লজ্জা পেত না তো... সংশোধনও হতো না কেউ কেউ।
কিন্তু ঐ অংক স্যারের শাস্তি ছিল অভিনব! ক্লাসে কোন মেয়ে অংক বাড়ির কাজ না আনলে উনি কখনো কখনো ডাস্টার দিয়ে বাহুতে দুই-তিন বাড়ি মারতেন, কখনো কখনো উনার হাত দিয়েই বাহুতে ধরে জোরে চাপ দিতেন। আবার চাপ কমিয়ে বাহুর মাংসপেশী নাড়াচাড়া করতেন। যেসব মেয়েরা এই শাস্তি পেত তারা অস্বস্তি বোধ করতো, কিন্তু অপরাধ যেহেতু আছে, পড়া রেডি করেনি, তাই আর উচ্চবাচ্য করতো না বা লজ্জা পেত।
কিন্তু একদিন ঘটনাটা ঘটলো এক রাগী আপুর সাথে। উনি আমাদের এক ব্যাচ সিনিয়র ছিলেন, তখন মনে হয় ক্লাস টেনে।
যথারীতি অংক না পারার কারণে উনার বাহুতে একই শাস্তি দিলেন। সেই আপু বাসায় গিয়েই উনার মায়ের কাছে বললেন, ঐ আন্টি ছিলেন আবার আওয়ামী লীগের নারীনেত্রী। পরদিন আপু আর আন্টি এসে লিখিত অভিযোগ জানালেন প্রধান শিক্ষিকার কাছে, আন্টি যা মুখে আসলো তাই বলেই বকাঝকা করলেন বড়আপার সামনে। বড়আপা স্যারকে ডেকে জিগ্যেস করলেন, এরপর নাইন-টেনের অন্যান্য মেয়েদের জিগ্যেস করে যখন নিশ্চিত হলেন এরকম ঘটনা মাঝে মাঝেই ঘটেছে, কয়েকদিনের মধ্যেই স্যারকে জিলা স্কুলে বদলির ব্যবস্থা করলেন।
ঘটনা ২:
নাহ, এটা কোন কুরুচিশীল কাজের ঘটনা নয়।
কলেজে এক পদার্থবিজ্ঞানের ক্লাস নিতেন চারজন শিক্ষক বিভিন্ন চ্যাপ্টার ভাগ করে করে। অন্যান্য সাবজেক্টের বেলায়ও একই নিয়ম ছিল। ফার্স্ট ইয়ারে যখন পড়তাম পদার্থবিজ্ঞানের এক স্যার প্রথম দিন থেকেই ক্লাসে আসলেই কেবল পৃথিবীর ব্যাসার্ধ বের করার অংক করাতেন। আর তিনি যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে ফার্স্ট ক্লাস সেকেন্ড হয়ে পাশ করেছিলেন সেই গল্প শোনাতেন। প্রথম এক সপ্তাহ তেমন গায়ে মাখিনি, ক্লাস সবে শুরু...ওমা! মাস চলে যায়, প্রতিদিন উনার একই কেচ্ছা-কাহিনী, একই অংক।
অথচ এটা সিলেবাস বহির্ভূত ছিল। শখের বসে দুই তিন ক্লাস এমন করা যায়, কিন্তু নিত্য...
এরই মাঝে একদিন ক্লাসে উনার গল্পের ফাঁকে এক ছেলে কেন জানি হেসে ফেলেছিল, কিছু বুঝে উঠার আগেই দেখি স্যার এসে ঠাস করে এক চড় মারলেন ঐ ছেলেকে। এবার আমরা সবাই ক্ষিপ্ত, কলেজে পড়ুয়া ছাত্রের গায়ে হাত তুললো! বকে দিলেই তো হতো। মনে মনে উপায় খুঁজছি স্যারের গপ্পের হাত থেকে কিভাবে রেহাই পাওয়া যায়। একদিন হঠাৎ স্যার ক্লাসে আসবার আগে আমরা মেয়েরা প্ল্যান করলাম স্যারের ক্লাস করবো না, যেই ভাবা অমনি প্রায় ১৫জন মেয়ে ব্যাগ নিয়ে ক্লাস থেকে বেরিয়ে কমনরুমে এসে বসে রইলাম।
ছেলেদেরকেও মনে হয় আমরা বলেছিলাম, ওরা তেমন পাত্তা দিল না। এদিকে স্যার ক্লাসে এসে যখন দেখে মেয়েরা নেই, এক ছেলেকে পাঠায় আমাদের ডেকে নেয়ার জন্য। আমরা তাকে বলে দেই তোমাদের মন চাইলে তোমরা করো গিয়ে ক্লাস, আমরা আর করবো না, ডেইলি ডেইলি ঐ এক অংক, ঐটা মুখস্ত হয়ে গেছে। ছেলেটা ফিরে গেল। এদিকে আমরা চিন্তা করলাম স্যার নিশ্চয়ই ক্ষেপেছে আমাদের উপরে।
আমরা কমনরুমে বসে থাকলে পরে স্যার ক্লাস শেষে গিয়ে যদি চেয়ারম্যান স্যারের কাছে নালিশ দেয়, তাহলে উনি আমাদের ভুল বুঝবেন, বকা তো খাবই, আসল সমস্যা স্যারকে বলারই সুযোগ পাব না। তাই আমরাই আগে গিয়ে অভিযোগ দেই। যেই ভাবা সেই কাজ, সাথে সাথে সবাই মিলে গিয়ে লেকচার খাতা খুলে দেখিয়ে চেয়ারম্যান স্যারের কাছে ঐ স্যারের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানালাম, স্যার আমাদের একজনের খাতা রেখে দিলেন। এরপর সেই খাতাসহ প্রিন্সিপাল স্যারের কাছে অভিযোগ জানালেন। প্রিন্সিপাল স্যার কলেজের নানা ফান্ড থেকে টাকা আত্মসাত করতেন ঠিকই, কিন্তু কলেজের লেখাপড়ার মানের দিকে ছিল তীক্ষ্ন নজর।
একমাসের মধ্যে ঐ স্যারকে অন্য কলেজে বদলি করিয়ে দিলেন, এরপর তিনজন শিক্ষকই আমাদের ক্লাস নিতেন, তবুও ভাল।
আমাদের ভাগ্য ভাল, একবারের অভিযোগেই আশানুরূপ ফল পেয়েছি, ভিকিরা তোমরা সাহস হারাবে না। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।