আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সূর্যাস্ত মানেই নতুন সূর্যোদয়

ফাঁসির মঞ্চ থেকে আমাদের যাত্রা শুরু কড়া রোদ ঝরছে পিঠের উপর। ঘাড়ের কাছে চুলগুলো ঘামে ভিজে লেপ্টে গেছে। খুব বেশি অস্বস্তি লাগছেনা কার্তিকের কারণ সামনে থেকে বেশ ভালোরকম একটা বাতাস বইছে। কার্তিক বেশ ঢোলা কালো রঙের জিন্স প্যান্ট আর ফ্যাকাসে কলাপাতা রঙের একটা ফতুয়া পরেছে। পায়ে স্যান্ডেল।

রেল লাইন ধরে হাটছে সে। স্থানীয় ভাবে এ জায়গাটার নাম শান্তিনিকেতন। কার্তিকের সেলফোনে রিং হল... লতাঃ হ্যালো... কার্তিকঃ হুঁ লতাঃ হুঁ মানে! কই তুই? কার্তিকঃ এইতো হাঁটছি লতাঃ বাসায় আয় কার্তিকঃ কি কাজ? লতাঃ কোন কাজ না, মা তোকে দাওয়াত করে খাওয়াতে চাইছে। কার্তিকঃ টাকা নাই, আসতে পারবোনা লতাঃ আমি দিচ্ছি টাকা। আয় তুই।

কার্তিকঃ টাকা আছে তোর কাছে? লতাঃ আছেতো কার্তিকঃ আমাকে কিছু টাকা দিস, শহর ছাড়বো। লতাঃ শহর ছাড়বি মানে? কোথায় যাবি? কার্তিকঃ আপাতত উদ্দেশ্য ঢাকা হাসি পেল লতার, কার্তিক কাজ খুঁজতে ঢাকা যাবে! লতাঃ হাহা, গাধার মতো কথা বলিসনা। বাবা রাতে তোর কথা বলছিলো। কার্তিকঃ কেন? লতাঃ তোকে কাজ দেবেন বললো। আমি না করলাম।

কার্তিকঃ ভালো করেছিস। একজন কর্পোরেট লোকের কাজ বা তোর বাপের কাজ আমি এমনিতেও করতেম না। লতা খুব আঘাত পেল কার্তিকের কথা শুনে। কারণ রাতে বাবাকে অনেক বলে কাজ জুগিয়ে দিচ্ছিলো সে কার্তিককে। লতাঃ ঢাকা কেন যাবি? কার্তিকঃ খুন করার জন্য লতার মেজাজ খারাপ হতে থাকে... লতাঃ ফ্যান্টাসীতে থাকতে খুব ভাল লাগে তোর? কার্তিকঃ শুধু বাসের ভাড়াটা দিলেই চলবে লতাঃ আমি তোর কে? আমার কাছেই ক্যান চাস? লতা নিজেকে শান্ত করে নেয়।

লতাঃ বাসায় আয়। কার্তিকঃ বাসায় না আসি, তুই দিয়ে যা। লতা জানে কার্তিক তার বাসায় আসতে চায় না। লতার মা কার্তিককে নিজের ছেলের মতই দেখেন, অনেক আদর করেন। কার্তিক যেতে চায় না কারণ কার্তিক নিজেকে নিয়ে ভয় পায়।

কার্তিকের মা নেই, ওখানে মা পেয়ে আর ফিরে আসতে ইচ্ছে হয়না। তাছাড়া লতার বাবা কার্তিককে খুব একটা বিশেষ পছন্দ করেন না। লতাঃ কেন আসবিনা তুই? আর ঢাকা যাচ্ছিস কেন? কার্তিকঃ খুন করার আগে মায়ের মুখ দেখতে হয়না। লতাঃ কি সব আবোল তাবোল বলছিস? কার্তিকঃ (দৃঢ় কণ্ঠে) একবিন্দু আবোল তাবোল কথা না। লতা কার্তিককে নিয়ে বেশ ভয় পেয়ে যায়, সে বুঝতে পারে কার্তিক ভয়ানক কিছু একটা করতে যাচ্ছে।

লতাঃ তুই কোথায় আছিস এখন? কার্তিকঃ আমার জায়গায় লতাঃ থাক্‌। আমি আসছি। কার্তিক ব্রীজের পাশে বসে থাকে। আশেপাশে প্রচুর গাছ, অনেক ফসলী জমি, অনেক সবুজ। এই সবুজের বুকচিরে অনেক পায়ে হাঁটা পথ।

ক্ষেতের ভেতর উড়ছে অনেক পতঙ্গখেকো রং বেরং এর পাখি। অনেক দূরে কালচে সবুজ রঙের পাহাড়। ব্রীজের নীচে পানির স্রোতের চমৎকার শব্দ। কার্তিক ভাবছে এগুলোর কিছুই থাকবেনা। থাকবেনা কারণ কিছু মানুষের লোভ।

এই লোভ ধংস করে দেবে সব সবুজ। আমাদের প্রায় সব কিছুই জ্বালানী নির্ভর। গাড়ী থেকে কলকারখানা পর্যিন্ত সবই জ্বালানী নির্ভর। বিদ্যুৎ এর একটা বড় অংশ আসে জ্বালানী থেকে। জ্বালানীর বিকল্প কোন প্রযুক্তি আয়ত্ব করতে পারেনি বাংলাদেশ।

এভাবে চলতে থাকলে কখনো আয়ত্ব করতে পারবে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ আছে প্রচুর। এখানে সরকার বলতে বোঝায় বিনা দলিলে পুরো দেশের মালিকানা। কিছুদিন আগে নিজের দাদার জমিদারীর সম্পত্তির মতই দুটো গ্যাস ব্লকের সব গ্যাস বিকিয়ে দেয়ার চুক্তি করলো এই সরকার। এই গ্যাসের মালিক কি সরকার? নাকি দেশের জনগণ? তাদের মাথায় গোবর থাকলেও বুঝতে পারতো যে গ্যাস অনবায়নযোগ্য সম্পদ। পাট বা চিংড়ির মতো বছরের পর বছর তা উৎপাদিত হয়না।

তাদের অবশ্য কোন ক্ষতি নেই। দেশের বারোটা বাজলেই পুটলি নিয়ে দেশ পালাবে। টিকিটিও খুঁজে পাওয়া যাবেনা তখন। আর অরাজকতা শুরু হয়ে গেলে নির্মুলের নামে কোন ক্ষমতাধর রাষ্ট্র দখল করবে এই দেশ। মানুষ তখন পরাধীনতার শিকল পরবে গলায়।

আফ্রিকার মত কোন এক দেশ হয়ে যাবে এই বাংলা। কার্তিক কখনোই নিজেকে পরাধীন ভাবতে পারেনা। কোন মানুষ পরাধীন হোক এটাও সে চায়না। কিন্তু কার্তিক পরাধীনতার ভবিষ্যত দেখছে। এই কুঁরে খাওয়া অনুভূতি শুধু তাকেই গ্রাস করেনি অনেককেই করেছে।

তাদের একটা বড় অংশ আজ ঢাকার রাজপথে আছে। তারা আন্দোলন করছে, স্লোগান দিচ্ছে, সরকার পক্ষের মার খাচ্ছে। কার্তিক তাদের সাথে যেতে চায় স্বাধীনতার দিকে। শুধু ঢাকায় নয় দেশের অনেক অঞ্চলে অনেক মানুষের আজ এই অবস্থা। তারা ধরতে পেরেছে পরাধীনতার চাল চালেছে সরকার।

প্রতিবাদ করতে গিয়ে মার খাচ্ছে প্রতিনীয়ত। এখনকার একটি দিনের ভুলের মাশুল কার্তিকদের দিতে হবে হাজার বছর ধরে। আগুনের মৃদু একটা হল্কা বয়ে যায় কার্তিকের রক্তে। এই আগুন তেজ ধারণ করতে থাকে কারণ কার্তিক সেই পূর্বপুরুষদের সন্তান যারা জীবন দিয়ে গেছে স্বাধীনতার জন্য। রাগে কার্তিক কাঁপতে থাকে।

কল্পনায় সে কারো গলা টিপে ধরে। লতা তার পাশে এসে দাঁড়ালো। কাঁধে হাত রেখে... লতাঃ কি হয়েছে তোর? কার্তিকঃ আমি, আমার মা পরাধীন হয়ে যাচ্ছি। যুদ্ধে যাবো। লতা কোন কথা বলেনা আর।

কার্তিকের চোখে সে আজ অন্য কিছু দেখছে। আগুনের গোলা দেখছে। আগুনের পরশ পাচ্ছে লতা। লতা কার্তিকের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। কার্তিক সূর্যাস্ত দেখছে আর লতা দেখছে এক দীপ্তিময় সূর্যোদয়।

(স্টেশানের দিকে যেতে যেতে লতাকে সব বলে কার্তিক। লতা প্রথমে যেতে দিতে চায়না কার্তিককে। কিন্তু লতা জানে কার্তিকদের ধরে রাখা যায়না। লতাও তাই যেতে চায়। কার্তিক লতাকে তার এলাকায় জনমত গড়ে তুলতে বলে।

আন্দোলন শুরু করতে বলে। ট্রেন ছেড়ে যায়, লতা কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে। কান্না পাচ্ছে তার। আজ কার্তিকের জন্মদিন ছিল। ঘুরপথে সেও রওনা দিল।

চোখ জ্বলজ্বল করছে। এখন অনেক কাজ বাকি। ) From My Facebook ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।