ভাইয়ের জন্য ছোট্ট বোনের এই কান্না কে থামাবে?
ঢাকা মেডিকেলে উত্তেজনাঃ সাভারের আমিনবাজারে গণপিটুনিতে নিহত ৬ ছাত্রের লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে গ্রহণ করতে ও যারা দেখতে এসেছেন তারা সবাই ক্ষোভে ফেটে পড়েন। শুধু পরিবারের সদস্যদেরই কান্না ও আহাজারি নয়; তাদের সহপাঠীদের চোখও অশ্রু সজল হয়ে ওঠে। কেউ কেউ ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাদের দাবি, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। এনিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গের সামনে বেশ উত্তেজনা দেখা দেয়।
অবরোধকারীদের সাথে মিরপুরের এমপি: এই ঘটনার প্রতিবাদে দারুস সালাম এলাকার বাসিন্দা ও বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থীরা রাজধানীর টেকলিক্যাল এলাকায় সড়ক অবরোধ করেছে। হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসায় গাবতলীর সঙ্গে মিরপুর ও শ্যামলীর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। স্থানীয় সাংসদ আসলামুল হক ওই এলাকায় গিয়ে অবরোধকারীদের সরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু অবরোধকারীরা এই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতি দাবি করেন।
মিরপুরে বিক্ষোভ
এমন ঘটনা রাষ্ট্রের মানুষ যখন চরম নিরাপ্ততাহীনতায় থাকে তখনই কেবল ঘটে।
মানুষ যখন দেশের প্রচলিত আইন আদালত আর নিরাপত্তাবাহিনীর উপর তাদের আস্থা সম্পুর্ন হারিয়ে ফেলে তখনি কেবল এমন নিষ্ঠুর রূপ ধারণ করে। আর এমন নিষ্টুরতার শিকার হয় সাধারণ আম জনতা। তেমনি এক ভয়ংকর নিষ্টুরতার শিকার হয়ে পরপারে চলে গেল টগবগে ছয় তরুণ।
আজকে সকালে টিভিতে খবর শুনছিলাম। খবরের শিরোনাম হল সাভারে ডাকাত সন্দেহ গণপিটুনিতে ৬ ডাকাত নিহত, একজন গুরতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি।
তার ঠিক পরে দেখলাম ঘটনাস্থলে আসা পুলিশ অফিসার বলছে, "এরা ডাকাত মনে হচ্ছে, অনেকদিন থেকে এখানে ডাকাতির ঘটনা ঘটচে, আমরা এসে একজনকে উদ্ধার করেছি আর ছয়টা লাশ পেয়েছি। " (এটিন নিউজ, সকাল ১১টার নিউজ)
তারপর আরেক সাধারণ জনতা যদিও তিনি হলেন আমিন বাজার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওকিল উদ্দিন, তিনি জানান, "ওই গ্রামে কয়েক দিন আগে একটি ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে এলাকাবাসী গ্রাম পাহারা দেয়া শুরু করে। তিনি বলেন, ওই যুবকরা ডাকাতি করার জন্য বালুর মাঠে মিটিং করছিল ভেবে এলাকাবাসী তাদের ঘেরাও করে গণপিটুনি দেয়। এতে ঘটনাস্থলে ৬ যুবক নিহত এবং আহত হয় অপর এক যুবক।
" (সুত্র-শীর্ষ নিউজ ডটকম)
আল আমিনঃ একমাত্র বেঁচে যাওয়া
দেখুন একটি রাস্ট্রের দায়িত্বরত নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়েই বলে ডিল তারা ডাকাত আর অন্যদিকে রাষ্ট্রের দায়িত্বে থাকা দলের একজন স্থানীয় নেতাও বলে দিলেন তারা ডাকাত। কি চমৎকার রাষ্ট্র আর কি চমৎকার তার নিরাপত্তা বাহিনী!!!
নিহত শামামের বাবা জানায়, "তার সন্তান অন্যন্য তরুণের মত শবে বরাতের নামাজ আদায় করতে রাতে ঘর থেকে বের হয়। রাতে দেরি হওয়ায় তারা ভাবছিল সে সকালে ফজ্রের নামাজ পরে একসাথে ঘরে ফিরে আসবে। কিন্তু সে আর আসেনি। এলো তার মৃত্যুর খবর।
আর সেটাও ডাকাত কলংক মাথায় নিয়ে। যেদেশ আমার সন্তান কেরে নিয়েছে, যেদেশ আমার সন্তানের অপবাদের মৃত্যু দিয়েছে তার থেকে আমি বিচার চাইনা। "
পঙ্গু সুরুজ্জামানের স্বপ্ন আর পুরন হলোনা
কান্তুর বাবা সুরুজ্জামান বলেন, ‘রোববার পবিত্র শবে বরাতে আমি ও কান্তু একসঙ্গে নামাজ আদায় করেছি। আমি আর কোনোদিন ছেলের সঙ্গে নামাজ পড়তে পারবো না। ’ এ বলেই তিনি কান্নায় লুটিয়ে পড়েন।
তিনি জানান, ‘গত শনিবার কান্তু মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হয়েছে। আমি অশিক্ষিত মানুষ। দুই বছর আগে গাড়ি চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়েছি। আমার স্বপ্ন ছিল ছেলেকে শিক্ষিত করবো। আমার সে স্বপ্ন যারা ভেঙে গেল।
’ পরিবারের বড় ছেলে কান্তু। তার ছোট দুই ভাইবোন রয়েছে।
আবু তাহের বলেন, "অনেক কষ্ট করে ছেলের কলেজের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। গতকাল রাত ১২টার দিকে পাঞ্জাবি-পায়জামা পরে নামাজের জন্য বের হয়। আর আজ ফিরলো লাশ হয়ে...।
"
সহপাঠীর লাশ দেখে ঢাকা মেডিকেলে এক ছাত্র কান্নায় ভেঙ্গে পরে
ঘটনায় একমাত্র জীবিত অবস্থায় ফিরে আসা সাভার উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন আল-আমীন জানান, তারা ৭ বন্ধু মিরপুরের দারুস সালাম ও শ্যামলীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। শবে বরাতের নামাজ শেষ তারা গাবতলীর পর্বত সিনেমা হলের সামনে রিকশা থেকে নেমে পায়ে হেঁটে আমিন বাজারের ট্রাক স্ট্যান্ডের পেছনে কোলার চর বালুর মাঠে বসে আড্ডা দিচ্ছিল। এ সময় এলাকাবাসী তাদের ডাকাত বরে সন্দেহ করে প্রথমে তীর ছুড়ে আহত করে এবং পরে বেধড়ক পিটুনি দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় তার ৬ বন্ধু।
প্রতিবাদে মিরপুরে অবরোধ
ঘটনায় আমি কোনভাবেই একতরফা ভাবে সাভারের মানুষের পৈশাচিকতাকে দায়ী করবোনা।
কারন রাষ্ট্র সাভারবাসীর জান মালের নিরাপত্তা দিতে পারেনি বলেই তারা আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছে, সরকারের কর্তাব্যক্তিরা একেরপর এক করা তাদের কথায় "আইনশৃংক্ষলা পরিস্থিতি অতীতের আগের যে কোন সময়ের তুলনায় ভাল" এমন মন্তব্য করতে থাকায় ক্ষুদ্ধ জনগণ এমন কাজ করতে বাধ্য হয়েছে। আর যার করুন পরিনিতি হল আজকের এই মর্মান্তিক ঘটনা।
পিতা হয়ে সন্তানের লাশ বহন নাকি পৃথিবীর সবথেকে কঠিন কাজ
বিষয়টি সার্বিকভাবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির। যারা ডাকাতির শিকার তারা জানেন সেটা কি জিনিষ। বিষয়সম্পত্তি-জীবন সবই হারাতে হয়, প্রশাসন ব্যবস্থা নেয় না, ডাকাতি বন্ধ হয় না।
তারা সাথে সাথে গাজা-মদপান- অস্ত্র বিষয়টিও খুব সুখবর না। সমাজের বহু ধরনের ঘটনা এজন্য দায়ী। যদি সমাধান খুজতে হয় তাহলে সবকিছুই বিবেচনায় আনা প্রয়োজন। এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত, অবিলম্বে দেশের অরাজকতা এবং আইনশৃংক্ষলা পরিস্থিতি চরম অবনতির জন্য স্বরাস্ট্রমন্ত্রি-প্রতিমন্ত্রির অবিলম্বে পদত্যাগ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
নিহতরা হলেন মিরপুর বাঙলা কলেজের ছাত্র ইব্রাহিম খলিল (২৪), তৌহিদুল ইসলাম পলাশ (২২), কান্ত (২৪), বাংলাদেশ ইউনির্ভানিটি অব বিসনেস এন্ড টেকনোলজির ছাত্র মনিব হোসেন (২৩), ম্যাপল লিফের ছাত্র শামস রহিম শামাম (২৩) এবং তেজগাঁও কলেজের ছাত্র টিপু সুলতান (২৫)।
লেখাটির ছবি এবং তথ্য বাংলানিউজ ২৪ এবং শীর্ষ নিউজ থেকে নেয়া হয়েছে
ছবি- নাজমুল, বাংলানিউজ ২৪ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।