দেশ নিয়ে পুরাই হতাশ,,,, তাও ভালবাসি দেশকে। ঢাকা, জুলাই ১৮ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)-
নারী কেলেঙ্কারি, স্কলারশিপ দিতে ঘুষ, অন্য দেশের পতাকা নিয়ে গাড়িতে ভ্রমণের মতো ঘটনার জন্ম দিয়েও নেপালের রাষ্ট্রদূতের পদে বহাল রয়েছেন নিমচন্দ্র ভৌমিক।
নিমচন্দ্রের এ ধরনের ভূমিকা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করলেও মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত তাকে সরায়নি, যদিও তার বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগের তদন্ত হয়েছে।
গত মে মাসে দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এর কাছে এসেছে। তাতে অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে বলেও দেখা যায়।
কিন্তু দুই মাসেও কোনো ব্যবস্থা দেখা যায়নি।
নিমচন্দ্রের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের বিষয়টি পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনিও স্বীকার করেছেন। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেবো। "
কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাওয়া হলে পররাষ্ট্রসচিব মোহাম্মদ মিজারুল কায়েস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমরা জানি, আমাদের কী করতে হবে। "
তবে নিমচন্দ্র তার বিরুদ্ধে ওঠা এ সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থ বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক নিমচন্দ্র বর্তমান সরকার ক্ষমতায় যাওয়ার পর ২০০৯ সালে নেপালের রাষ্ট্রদূত পদে নিয়োগ পান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থক নীল দলের শিক্ষক হিসেবে তিনি পরিচিত ছিলেন। আওয়ামী লীগের গত সরকার আমলে টাঙ্গাইলের মওলানা ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন তিনি। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ছাত্র বিক্ষোভের সময় তিন জন শিক্ষকের সঙ্গে নিমচন্দ্রও গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।
গাড়িতে ভারতের পতাকা তোলা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিমচন্দ্র ভৌমিকের কূটনৈতিক হিসেবে অপেশাদার আচরণ দেশে নেপালে দেশের ভাবমূর্তি বেশ ক্ষুণœ করেছে।
কাঠমান্ডুতে ভারতের অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল জ্যাকবের সঙ্গে কয়েকটি বৈঠকে নিমচন্দ্র তার গাড়িতে ভারতের পতাকা তোলেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
২০১০ সালের ১৭ মার্চ কাঠমান্ডুর ইয়াক অ্যান্ড ইয়েতি হোটেলে মুজিবনগর দিবসের অনুষ্ঠানে নিমচন্দ্রের নির্দেশে বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত ও নেপালের জাতীয় সঙ্গীতও বাজানো হয়।
নারী কেলেঙ্কারি
নিমচন্দ্র ভৌমিকের অসংখ্য নারী কেলেঙ্কারির মধ্যে বলিউড তারকা মনীষা কৈরালার সঙ্গে দেখা করতে অকূটনীতিকসুলভ আচরণের কথাও তদন্ত প্রতিবেদনে এসেছে।
কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশি পাঁচ তরুণের একটি চিত্র প্রদর্শনী উদ্বোধন করেছিলেন নেপালের প্রভাবশালী কৈরালা পরিবারের সদস্য মনীষা। অনুষ্ঠান উদ্বোধনের পর সন্ধ্যায় মনীষা দেখা পেতে তার বাড়িতেও ধরনা দিয়েছিলেন নিমচন্দ্র।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তদন্ত করে জেনেছে, মনীষার বাড়িতে ঢুকতে আধা ঘণ্টা ধরে ফটকে দাঁড়িয়ে দেনদরবার চালিয়েছিলেন নিমচন্দ্র। তবে ফটক খোলেনি।
২০০৯ সালে নিয়োগ পাওয়ার পর কাঠমান্ডুর ভারতীয় দূতাবাসের মুখপাত্র অপূর্ব শ্রীবাস্তবকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করেছিলেন বলেও তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। এছাড়া বাংলাদেশি দূতাবাসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে নেপালের বেশ কয়েকজন নারীও রাষ্ট্রদূতের কাছে হয়রানির স্বীকার হয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় বেশ কয়েকজন নারীকে দূতাবাসেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় দিচ্ছেন নিমচন্দ্র।
রাষ্ট্রদূতের আচরণের মধ্য দিয়ে আত্মমর্যাদা বোধ বিসর্জন ও দায়িত্বনিষ্ঠার অভাব প্রকাশ পেয়েছে।
নিমচন্দ্রের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারির সরাসরি অভিযোগ গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তোলেন কাঠমান্ডু দূতাবাসের সাবেক ফার্স্ট সেক্রেটারি নাসরিন জাহান লিপি। ওই মাসেরই মধ্যভাগে চার বাংলাদেশি তরুণীকে জড়িয়ে দূতাবাসে নিমচন্দ্রের কেলেঙ্কারির তিনি প্রত্যক্ষ সাক্ষী বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
বৃত্তির জন্য ঘুষ
২০০৯ ও ২০১০ সালে নেপালি শিক্ষার্থীদের দেওয়া বাংলাদেশি বৃত্তির ক্ষেত্রে 'নয়-ছয়' হয়েছে অভিযোগ উঠেছে। ঘুষের বিনিময়ে শিক্ষাভিসা দেওয়ার নজিরও খুঁজে পেয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত দল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃত্তির ক্ষেত্রে নেপালের গুরুত্বপূর্ণ অনেক ব্যক্তি এমনকি সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুপারিশও উপেক্ষা করেছেন নিমচন্দ্র।
নেপালের যে সব শিক্ষার্থী সরাসরি শিক্ষা ভিসার আবেদন করে, নানা টালবাহানা করে তাদের আটকে পরে 'জটিলতার' অবসানের জন্য বিভিন্ন পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা তাদের ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছিলো, যে সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দূতাবাস তথা নিমচন্দ্রের সম্পর্ক ছিলো বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
তদন্ত দল জানতে পেরেছে, অন্তত ছয়টি সরকারি বৃত্তি নিয়ে 'ঘুষবাণিজ্য' করেছেন নিমচন্দ্র, যার প্রতিটি ৩৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার ডলারের।
শিক্ষাবৃত্তির এ ধরনের অপব্যবহারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি হিমালয়ের পাদদেশের দেশটিতে বেশ নাজুক হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
নেপালের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানো
নেপালের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়ে বিশেষ করে মাওবাদীদের বিষয়ে সরাসরি বক্তব্য রেখে কূটনৈতিক শিষ্টাচার ভঙ্গ করার অভিযোগও উঠেছে নিমচন্দ্রের বিরুদ্ধে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন প্রকাশ্য সভায়ও নেপালের এখনকার বিরোধী দল মাওবাদীদের সমালোচনা করে বক্তব্য দিয়েছেন রাষ্ট্রদূত। মাওবাদীদের কীভাবে ঠেকাতে হবে সে পরামর্শও তাকে দিতে দেখা গেছে।
নেপালের সরকারি মহলে নিমচন্দ্র গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছেন বলে তদন্ত দল প্রমাণ পেয়েছে। তার ব্যবহার ও অকূটনৈতিকসুলভ আচরণই এর জন্য দায়ী। কাঠমান্ডুর কূটনৈতিক মহলেও তার অবস্থান খুব নাজুক।
নিমচন্দ্রকে সরিয়ে একজন পেশাদার কূটনীতিককে রাষ্ট্রদূতের পদে নিয়োগ দিতে নেপালের পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশের সচিবকে অনুরোধের কথাও প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।
নিমচন্দ্রের বক্তব্য
বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে নিমচন্দ্র ভৌমিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সোমবার টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার তার ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করতে উঠেপড়ে লেগেছে।
নেপাল সরকার তথা দেশটির প্রধানমন্ত্রী ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, তার সময়ে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানসহ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হয়েছে।
ঢাকা-কাঠমান্ডু ফ্লাইট এক বছর আগে সপ্তাহে সাত থেকে আটটি হলেও এখন তা ১৮টিতে উন্নীত হয়েছে জানিয়ে এতে নিজের সক্রিয়তার কথাও তুলে ধরেন নিমচন্দ্র।
ঢাকা, জুলাই ১৮ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।