শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্রীর সঙ্গে শিক্ষকের যে ঘটনা ঘটেছে তা জঘন্য। আটককৃত শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। দেশের নামকরা একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন।
অধ্যক্ষ হোসনে আরা বেগমের অপসারণ নিয়ে বুধবার দিনভর নানা নাটকীয়তার পর অবশেষে সন্ধ্যায় ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বর্তমান পরিচালনা পরিষদ বাতিল করেছে সরকার। ঢাকা জেলা প্রশাসক মহিবুল হকের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের একটি অ্যাডহক কমিটিকে পরিচালনা পরিষদের নতুন দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন বলেন, ভিকারুননিসায় স্থিতিশীল অবস্থা ফেরাতে আমরা আমাদের কার্যপরিধির মধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছি। এ সিদ্ধান্তের ফলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে তিনি মনে করেন। স্কুলের অধ্যক্ষ নিয়ে বর্তমানে সৃষ্ট জটিলতা প্রসঙ্গে চেয়ারম্যান বলেন, অধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়ার দায়িত্ব আমাদের দেয়া হয়নি। তাছাড়া অধ্যক্ষ নিয়োগের ব্যাপারে কোনো ধরনের বিভ্রান্তিরও অবকাশ নেই। স্কুলের শিক্ষার্থীদের সেন্টিমেন্টের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এর আগে সকালে স্কুলের পরিচালনা পরিষদের ৫ সদস্য বেইলি রোডে স্কুলের মূল ক্যাম্পাসে সভা করে অধ্যক্ষ হোসনে আরা বেগমকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয়। পাশাপাশি অধ্যক্ষ পদে স্কুলের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক আম্বিয়া খাতুনকে নিয়োগ দেয়া হয়। এ সিদ্ধান্তের খবর মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অপসারিত অধ্যক্ষকে জানিয়েও দেয়া হয়। এরপর অধ্যক্ষের চেয়ারে বসেন আম্বিয়া খাতুন। তাৎক্ষণিক উপস্থিত শিক্ষার্থীরা নতুন অধ্যক্ষকে ফুল ও মিষ্টি দিয়ে বরণ করে নেয়।
পরে স্কুলের পরিচালনা পরিষদের সভাপতির অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. দিলীপ রায় অধ্যক্ষের অপসারণের প্রক্রিয়াকে অবৈধ বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, সভাপতি দেশের বাইরে থাকায় আমি ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। আমাদের কাউকে না জানিয়ে অধ্যক্ষের অপসারণের এ সিদ্ধান্ত অবৈধ।
ভারপ্রাপ্ত সভাপতির মন্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন অপসারিত অধ্যক্ষ হোসনে আরা বেগম, যিনি পদাধিকারবলে স্কুলের পরিচালনা পরিষদেরও সদস্য সচিব। হোসনে আরা বেগম বলেন, সভাপতির অনুমতিক্রমে পরিচালনা পরিষদের সভা আহ্বান করার এখতিয়ার কেবল সদস্য সচিবের।
অথচ এ নিয়ম না মেনে পরিষদরে কয়েকজন সদস্য সভা করে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই এটা বৈধ হতে পারে না।
এর আগে দুপুরে অধ্যক্ষের অপসারণের বিষয়ে মন্ত্রণালয় কিছুই জানে না বলে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যে নাটকীয়তা চরমে ওঠে। মন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, অধ্যক্ষ অপসারণের বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে কিছুই জানানো হয়নি। তবে এটা নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে সে বিষয়ে মন্ত্রী মত ব্যক্ত করেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্রীর সঙ্গে শিক্ষকের যে ঘটনা ঘটেছে তা জঘন্য। আটককৃত শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। দেশের নামকরা একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের মঙ্গলবারের মধ্যেই এ সমস্যা সমাধানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে মন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান।
এদিকে উদ্ভূত সমস্যার বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য গতকাল বিকালে পরিচালনা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি পরিষদের দুই সদস্য আতাউর রহমান ও নাঈমুল আজমকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে সব বিষয় অবহিত করেন।
মন্ত্রণালয়ের সচিব, শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পরামর্শ করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে মন্ত্রী ভারপ্রাপ্ত সভাপতিকে জানান। এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বলেন, পরিচালনা পরিষদের সভাপতির অনুপস্থিতিতে এভাবে সভা করে অধ্যক্ষকে অপসারণ করা বৈধ নয় বলে মন্ত্রী আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছেন।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বসুন্ধরা শাখার বাংলার শিক্ষক পরিমল জয়ধরের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। পরে পরিমলকে গ্রেফতার করা হয়। ইতিমধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে পরিমল।
এ বিষয়ে অধ্যক্ষ হোসনে আরা বেগম তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় পরিমলের পাশাপাশি তার বিরুদ্ধেও আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। অবশেষে গতকাল স্কুল পরিচালনা পরিষদের একাংশের সিদ্ধান্তে হোসনে আরা বেগমকে তার পদ থেকে অপসারণ করা হয়। তারপরই নতুন করে নাটকীয়তা দেখা দেয়। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।