আমারা অনেকেই জানি না ব্রেইল(Braille) কি ? ব্রেইল(Braille) হচ্ছে যে পদ্ধতিতে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা লেখা পড়তে পারে। এই পদ্ধতিতে এক বিশেষ অক্ষর বা সংকেত ব্যবহার করা হয়। যা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা হাত দিয়ে স্পর্শ করে বুঝতে পারে। এই অক্ষর বা সংকেত কে বলা হয় ব্রেইল অক্ষর। ছয়টি ডট বা ফুটো দিয়ে তৈরি হয় ব্রেইল অক্ষর।
এই ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়ার জন্য প্রশিক্ষণ নিতে হয় তবেই একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্রেইল অক্ষর দিয়ে লেখা কাগজ বা বই পড়তে পারবে।
ব্রেইল- এর উৎপত্তি
উনিশ শতকের শুরুর দিকে এ পদ্ধতির প্রবর্তন করেন ফ্রান্সের লুই ব্রেইল। ১৮০৯ সালের ৪ জানুয়ারি প্যারিসের কোওপরায় ব্রেইলের জন্ম। চার বছর বয়সে দৃষ্টিশক্তি হারান। ১৮২১ সালে চলছিল জার্মানি ও ফ্রান্সের যুদ্ধ।
তখন জার্মান সামরিক কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন চার্লস বারবিয়ার কাছ থেকে বিশেষ একটি কোড সম্পর্কে জানতে পারেন কিশোর ব্রেইল। এই কোড সেনাবাহিনীরা তাদের অভ্যন্তরীণ তথ্য বা খবর আদান-প্রদানে ব্যবহার করতো। এই কোডে ১২ ডটবিশিষ্ট সাংকেতিক বর্ণমালা ব্যবহার করা হতো। তাদের কাছ থেকে প্রাথমিক ধারণা লাভের পর লুই ব্রেইল অনুভব করল ১২ ডটবিশিষ্ট সাংকেতিক বর্ণমালা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের পড়তে ও আয়ত্ত করতে খুব কষ্টকর হবে। তাই তিনি প্রায় ১৮২৫ সালের দিকে ছয় ডটবিশিষ্ট সাংকেতিক বর্ণমালার প্রবর্তন করেন।
পরে ১৮২৭ সালে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য প্রথম ছয় ডটবিশিষ্ট ব্রেইল বই প্রকাশিত হয়।
বাংলাদেশে ব্রেইল
বাংলাদেশে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের প্রথম স্কুল চালু হয় ১৯৫৭ সালের ২ এপ্রিল। ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় দুজন শিক্ষক নিয়ে রোটারি স্কুল ফর ব্লাইন্ড নামের স্কুলটি চালু করে রোটারি ক্লাব অব ঢাকা। ১৯৫৮ সালে ঢাকা ইসলামিয়া হাসপাতালের এক প্রতিষ্ঠাতা ঢাকার মণিপুরিপাড়ায় আরেকটি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের স্কুল স্থাপন করেন। এখানে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের বাংলায় ব্রেইল কোড এর শিক্ষা দেওয়া হতো।
বাংলায় ব্রেইল কোড সর্বপ্রথম কলকাতার একটি স্কুলে চালু করা হয়। এরপর বাংলাদেশেও ব্যবহার করা হয়।
ব্রেইল অক্ষর
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের ব্যবহিত ইংলিশ ব্রেইল অক্ষর গুলো দেওয়া হল –
ব্রেইল- এর যন্ত্রপাতি
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার জন্য বেশ কিছু যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে ব্রেইল ফ্রেম, স্টাইলাম, ব্রেইল টাইপরাইটার, ব্রেইলার ফ্রেম, অ্যাবাকাস (হিসাবের যন্ত্র), টকিং ক্যালকুলেটর ইত্যাদি। আগে ব্রেইল ফ্রেম ও স্টালাসের মাধ্যমে একটি একটি করে বর্ণ লিখে তৈরি হতো পূর্ণাঙ্গ রচনা।
একটি পৃষ্ঠা লিখতে লাগত তিন-চার ঘণ্টা। টাইপরাইটার আবিষ্কারের পর কাজটা আরো সহজ হয়ে গেলো। এখন আরও আধুনিক যন্ত্রপাতির ফলে আরও সহজে ব্রেইল লেখা যায়। আর এখন তো স্ক্রিন রিডিং সফটওয়্যার ব্যবহার করে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা কম্পিউটারও ব্যবহার করছে। কম্পিউটারে বাংলায় কিংবা ইংরেজিতে ব্রেইল লেখার পর অ্যাম্বুস (কাগজে খোদাই করা) প্রিন্ট করতে ব্যবহার করা হয় উইন ব্রেইল সফটওয়্যার।
এতে অনেক ভাষা ব্যবহারের সুবিধা থাকলেও বাংলায় সরাসরি কাজ করে না। এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশের “বিজয় ব্রেইল” সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হয়। সফটওয়্যারে একবার ফাইল তৈরির পর তা ইচ্ছেমতো অ্যাম্বুস প্রিন্ট করা সম্ভব।
এই ছিল আমার জানা ব্রেইল সম্পর্কে কিছু তথ্য।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।