স্ববিরোধিতা আমার পছন্দ নয়। সর্বদা স্রোতর পক্ষে চলা আমার স্বভাব নয়। সব পুরাতন বাতিল নয়। চলার পথে সহযাত্র্রীরা সম্পদ। পরামর্শের মত সাহায্য নেই।
সব চাইতে অসহায় সেই ব্যক্তি যার কোন ভ্রাতৃ-প্রতিম বন্ধু নেই। কিন্তু আরো অসহায় সেই ব্যক্তি যে এহেন বন্ধু পেয়ে হারায় গুটি ইউরিয়া হলো নাইট্রোজেন সংবলিত একটি রাসায়নিক সার। দেখতে ন্যাপথলিনের মত। গুড়া বা দানাদার ইউরিয়া থেকে ব্রিকোয়েট মেশিনের সাহায্যে গুটি ইউরিয়া তৈরী করা হয়।
গুড়া ইউরিয়া ব্যবহার না করে গুটি ইউরিয়া ব্যবহার করা অবশ্যই ভালো।
গুড়া ইউরিয়া ব্যবহারে কিছু অসুবিধা রয়েছে। সেগুলি হলোঃ
* গুড়া বা দানাদার ইউরিয়া ব্যবহারে নাইট্রোজেন দ্রম্নত গ্যাস আকারে বাতাসে উড়ে যায়।
* গুড়া ইউরিয়া পানিতে দ্রম্নত দ্রবীভূত হয় এবং চুইয়ে মাটির নীচে গভীরে চলে যায়।
* বৃষ্টি বা সেচের পানির সাথে গুড়া ইউরিয়া ধুয়ে সহজেই ড়্গেত থেকে বের হয়ে যায়।
* গুড়া বা দানাদার ইউরিয়া অনেক ড়্গেত্রেই ফসলের কাজে না লেগে আগাছা বিসত্মারে সহায়ক হয়।
* গুড়া ইউরিয়া ব্যবহারে নাইট্রোজেন বাতাসে মিশে পরিবেশ দূষণ করে।
* গুড়া বা দানাদার ইউরিয়া এক মৌসুমে দু তিন বার ব্যবহার করতে হয়, খরচ বেশী পড়ে। পাশাপাশি অপচয় বেশী হয়।
গুটি ইউরিয়া ব্যবহারে আমরা যে সব সুবিধা পাই সেগুলি হলোঃ
* এক মৌসুমে মাত্র একবার ব্যবহার করতে হয়।
* গুটি ইউরিয়া ব্যবহারে নাইট্রোজেনের উড়ে যাওয়া, ধুয়ে যাওয়া বা মাটির গভীরে যাওয়া কমে যায়।
ফলে গুড়া ইউরিয়া সারের তুলনায় গুটি ইউরিয়ার পরিমান শতকরা ২৫ থেকে ৩০ ভাগ কম লাগে। অর্থাৎ এক বিঘা উচ্চ ফলনশীল আমন চাষের জন্য যেখানে তিন বারে ৩০ কেজি গুড়া ইউরিয়ার প্রয়োজন হয় সেখানে এক বারে ২২ কেজি গুটি ইউরিয়ার ব্যবহারই যথেষ্ট। ফলে ইউরিয়ার আমদানী কমে যাবে। বৈদেশিক মূদ্রার সাশ্রয় হবে। এ জন্যে সবচেয়ে বড় কথা হলো গুড়া বা গুটি ব্যবহারে খরচ একই রকম হলেও গুটি ইউরিয়া ব্যবহার করতে হবে।
কারণ বর্তমানে গুড়া ইউরিয়ার প্রতি কেজিতে সরকারকে প্রায় ৪০ টাকা ভর্তুকী দিতে হয়। এক বিঘায় ৮ কেজি সার কম লাগায় সরকারের ৩২০ টাকার সাশ্রয় হবে যার ফলে জাতীয়ভাবে সরকারের কোটি কোটি টাকার সাশ্যয় হবে।
* গুটি ইউরয়িা সব সময় গাছের প্রয়োজন অনুযায়ী নাইট্রোজেন সরবরাহে সড়্গম বিধায় গাছের সুপ্ত ড়্গুধা থাকে না।
* গুটি ইউরিয়া প্রয়োগে গাছের বৃদ্ধি ভালো হয়। ফলে ধান গাছ অপেড়্গাকৃত লম্বা শিকড় দ্বারা মাটির গভীর হতে রস গ্রহনে সড়্গম হয়।
তাই গুটি ইউরিয়া প্রয়োগে ধানগাছের খরা সহ্য ড়্গমতা বৃদ্ধি পায়।
* ড়্গেতে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগে ধানের ফলন শতকরা ১৫ থেকে ২০ ভাগ বেড়ে যায়।
গুটি ইউরিয়ার আকার তিন ধরণের হয়ে থাকে। এগুলি হলো ০.৯ গ্রাম আকারের, ১.৮ গ্রাম আকারের এবং ২.৭ গ্রাম আকারের। ১.৮ গ্রাম আকারের বা ২.৭ গ্রাম আকারের গুটি ইউরিয়াকে মেগা গুটি ইউরিয়া বলে।
উচ্চ ফলনশীল আমন ধানের জন্য চার গোছার মাঝখানে ০.৯ গ্রাম আকারের গুটি ইউরিয়ার ২টি গুটি বা ১.৮ গ্রাম আকারের মেগাগুটির ১টি গুটি প্রয়োগ করতে হয়।
গুটি ইউরিয়া প্রয়োগের পদ্ধতি হলো প্রথম দু সারির প্রথম চার গোছার মাঝখানে ৭ থেকে ১০ সেন্টিমিটার বা ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি গভীরে গুটি পুততে হয়। তারপর সামনে এগিয়ে পরের চার গোছা বাদ দিয়ে তারপরের চার গোছার মাঝখানে গুটি পুততে হবে। এ দু সারিতে গুটি ইউরিয়া পোতা শেষ হলে ৩য় ও ৪র্থ সারির প্রথম চার গোছার মাঝখানে গুটি পুততে হবে। এ দু সারিতেও আগের মত চার গোছা বাদ দিয়ে তার পরের চার গোছার মাঝখানে গুটি পুততে হবে।
অর্থাৎ চার গোছার মাঝখানে এভাবে গুটি পুততে হবে যে ধান গাছের প্রতিটি গোছাই মাত্র একবার করে গুটির স্পর্শ পাবে। ধান গাছের কোন গোছাই দুদিক দিয়ে কখনো গুটি ইউরিয়ার স্পর্শ পাবে না।
গুটি ইউরিয়া ব্যবহারে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। সেগুলো হলোঃ
সারিতে ধান রোপন করতে হবে।
চারা রোপনের ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে জমিতে গুটি প্রয়োগ করতে হবে।
গুটি প্রয়োগের সময়ে জমিতে ২ থেকে ৩ সেন্টিমিটার পানি থাকা আবশ্যক।
কোন কারণে অপেড়্গাকৃত শক্ত জমিতে গুটি প্রয়োগ করতে হলে তা অবশ্যই কাদা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
গুটি প্রয়োগের সময় এত পরিমান গুটি সঙ্গে নিতে হবে যাতে সারির মাঝখান থেকে গুটি নেবার জন্র ফিরে আসতে না হয়।
গুটি প্রয়োগের স'ানে কোনক্রমেই পা দেয়া যাবে না।
গুটি প্রয়োগের ৩০ দিনের মধ্যে ড়্গেতে নামা যাবে না।
যদি কোন কারণে নামতেই হয় তা হলে খেয়াল রাখতে হবে যেন গুটি প্রয়োগের স'ানে পা না পড়ে।
গুটি প্রয়োগের পর জমিতে এমন ভাবে পানি ব্যবস'াপনা করতে হবে যেন ককনোই মাটি ফেটে না যায়।
বেলে মাটিতে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ করা যাবে না।
কৃষক ভাইয়েরা মাঠে কাজ করার সময়ে নানারূপ সমস্যার সম্মূখীন হয়ে থাকেন। গুটি ইউরিয়া ব্যবহারের বিষয়ে বা আরও কোন বিষয়ে জানার জন্যে নিকটস' ফিয়াকে উপ-সহকারী কৃষি অফিসারের সাথে বা উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।