জোয়ার-জলোচ্ছাস আর অতিবর্ষনে নোয়াখালীতে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে চার লক্ষাধিক মানুষ। জোয়ারের তোড়ে ভেসে গেছে ২৫ হাজারেরও বেশি গরু ও মহিষ। বিধ্বস্থ হয়েছে ২০ কিলোমিটার বেঁড়ি বাধ ও ২০ হাজার ঘরবাড়ি। সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে প্রায় অর্ধলক্ষ পরিবার। পানিতে তলিয়ে গেছে লক্ষাধিক একরের রোপা আমন।
এ পরিস্থিতিতে গোটা উপকূলীয় এলাকায় আতংক বিরাজ করছে মানুষজনের মাঝে।
সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায়। এখানকার সাড়ে চার লক্ষ মানুষই আতংকের মধ্যে রয়েছে। সম্পূর্ণ প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে নিঝুম দ্বীপসহ এ উপজেলার বিচ্ছিন চরগুলোতে কোনভাবে ত্রাণ সামগ্রীও পৌঁছানো যাচ্ছে না।
হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ জানান, গত দুই দিনের টানা বর্ষণ, বর্ষন প্রবল জোয়ার এবং একই সাথে ৩/৪ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে ইতোমধ্যে হাতিয়ার বেশিরভাগ এলাকাই পানিতে তলিয়ে গেছে।
জোয়ারের তোড়ে ১৫ কিলোমিটারেরও বেশি বেঁড়ি বাধ ভেঙ্গে পানি প্রবেশ করেছে হাতিয়ার মূল ভুখন্ডে। এখানকার সাড়ে চার লক্ষ লোকের মধ্যে প্রায় ৮০ ভাগই এখন পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। একই সাথে নিঝুম দ্বীপ, নলেরচর, কেরিংচর, নঙ্গলিয়ার চর, মৌলভীর চর, ঢাল চরসহ বিচ্ছিন্ন চরগুলো এখন সম্পূর্ণ পানির নিচে। ইতোমধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে ২৫ হাজার একরের রোপা আমন। সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ১০ হাজার ঘরবাড়ি এবং ৩০ হাজার পরিবার।
মৌলভীর চর, জাগলার চর, ঢালচর ও নিঝুম দ্বীপ থেকে জোয়ারে অন্তত ২০/২২ হাজার গরু মহিষ ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। দুই শতাধিক বৃহৎ মাছের খামার ভেসে গেছে জোয়ারের পানিতে। এছাড়া আবহাওয়া এতই দূর্যোগপূর্ণ যে নিঝুম দ্বীপের বাসিন্দাদের জন্য ত্রাণ সামগ্রী প্রেরণ করা হলেও সেখানে পৌঁছানো যায়নি।
কোম্পাীনগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, কোম্পানীঞ্জ উপকূলে তীব্র জোয়ারে ৩ কিলোমিটার বেঁড়ি বাঁধ সম্পূর্ণ এবং ৮ কিলোমিটার বেড়ি বাঁধ আংশ ভেঙ্গে পানি প্রবেশ করে অর্ধলক্ষাধিক লোক পানিবন্দ হয়ে পড়েছে। উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫টি ইউনিয়নে ৫’শ ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ এবং দুই হাজারেরও বেশি ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার। ১৭ হাজার একর জমির রোপা আমন সম্পূর্ণ পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিতে ডুবে গেছে ৭’শ একরের মাছের খামার।
এখানকার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা হচ্ছে চর বালুয়া, চর লেংটা, মুছাপুর, চরএলাহী, চর ফকিরা, চর কচ্ছপিয়া, দিয়ারা বালুয়া গুচ্ছগ্রামসহ আশপাশের এলাকা। দিয়ারা বালুয়া গুচ্ছগ্রামের অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প ডুবে যাওয়ায় মুছাপুর ইউনিয়নের বাগদারা বাজারে স্থানান্তর করা হয়।
কোম্পানীগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন জানান, তিনি নিজে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শণ করেছেন। প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি নিরূপনের কাজ চলছে তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে বেড়ি বাঁধ এবং রোপা আমনের। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ ২ হাজার পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
এদিকে টানা বৃষ্টিতে কৃত্রিম বন্যা দেখা দিয়েছে জেলা শহর মাইজদীতে। প্রধান সড়ক, জেলা জামে মসজিদ সড়ক, জেলা কালেক্টরেট ভবন সড়ক, জজ কোর্ট সড়ক, সরকারি আবাসিক এলাকা, খন্দকার পাড়া, গুপ্তাংক, লক্ষ্মীনারায়ণ পুর, কৃষ্ণরামপুরসহ গোটা জেলা শহরে ১ থেকে ৩ ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট।
ফলে শহরের মানুষ ঘর থেকে বের হওয়াও কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
ল জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোঃ সিরাজুল ইসলাম জানান, প্রাথমিক হিসাবে জেলার ৪টি উপজেলার ৩৩টি গ্রামের দুই লক্ষাধিক লোক পানি বন্দি রয়েছে। প্রায় ৩৫ হাজার একরের রোপা আমন পানিতে তলিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ২০ হাজার পারিবার। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায়।
এ পর্যন্ত ত্রান হিসাবে নগদ ৪৫ হাজার টাকা ও ২১ মেট্রিক টন খাদ্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আরো বরাদ্দ চেয়ে ঢাকায় চিঠি লিখা হয়েছে।
#
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।