আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রোপা আমন ধানের জাত নির্বাচন, বীজতলা তৈরী এবং পরিচর্যা

স্ববিরোধিতা আমার পছন্দ নয়। সর্বদা স্রোতর পক্ষে চলা আমার স্বভাব নয়। সব পুরাতন বাতিল নয়। চলার পথে সহযাত্র্রীরা সম্পদ। পরামর্শের মত সাহায্য নেই।

সব চাইতে অসহায় সেই ব্যক্তি যার কোন ভ্রাতৃ-প্রতিম বন্ধু নেই। কিন্তু আরো অসহায় সেই ব্যক্তি যে এহেন বন্ধু পেয়ে হারায় রোপা আমন ধানের চাষের সময় প্রায় এসে গিয়েছে। এখনই জাত নির্বাচন করে অন্যান্য প্রস্ত্ততি নিতে হবে। কৃষি পরিবেশ অঞ্চল, জমির প্রকৃতি এবং জলবায়ুর পরিবর্তন এর কথা বিবেচনায় রেখে আমাদেরকে রোপা আমন ধানের জাত নির্বাচন করতে হবে। অনুকুল অবস্থায় চাষের উপযোগী জাত হলো  বিআর১১ অধিক ফলনশীল মাঝারী মোটা চালের জাত।

 ব্রি ধান৪৪ অলবনাক্ত জোয়ার ভাটা অঞ্চলের মোটা চালের জাত। আমন মৌসুমে রোপন যোগ্য আগাম জাত হলো  ব্রি ধান৩২  ব্রি ধান৩৩  ব্রি ধান৩৯  ব্রি ধান৪৯ } এ জাতগুলো আলোক সংবেদনশীল নয় বিধায় আগাম রোপন করে কার্তিকের প্রথম সপ্তাহে ফসল কেটে সময় মত রবি শস্য আবাদ করা যায়।  বিনাধান-৭ আগাম পাকে। জীবন কাল ১১০-১২০ দিন। ধান কাটার পর খুব সহজেই যে কোন রবি শস্য, গম বা আলু চাষ করা যায়।

নাবিতে রোপনযোগ্য আমনের জাতসমূহ  বিআর২২  বিআর২৩  ব্রি ধান৪৬ } এ জাতগুলোতে নাবিগুন থাকায় ৩০-৪০ দিনের চারা ৩১ ভাদ্র পর্যন্ত রোপন করে ভালো ফলন পাওয়া যায়। আমনে সল্প জীবনকাল ও খরা সহিষ্ণু জাতসমূহ  ব্রি ধান৫৬ এ জাতের জীবনকাল ১০৫-১১০ দিন।  ব্রি ধান৫৭ এ জাতের জীবনকাল ১০০-১০৫ দিন। আমনে সল্প জীবনকাল ও খরা এড়িয়ে যাবার মত জাত  ব্রি ধান৬২ গড় জীবনকাল ১০০ দিন। আমন কেটে অনায়াসে আগাম গোল আলু বা রবি শস্য লাগানো সম্ভব।

জীবনকাল সল্প হওয়ার কারণে সহজেই খরা এড়িয়ে যেতে পারে। সরু ও সুগন্ধী জাতসমূহ  ব্রি ধান৩৪  ব্রি ধান৩৭  ব্রি ধান৩৮ } এ জাতগুলোর চালে সুগন্ধ আছে এবং পোলাও ও বিরিয়ানির জন্য উপযোগী। লবন ও খরা সহিষ্ণৃ জাতসমূহ  ব্রি ধান৪০  ব্রি ধান৪১ } চারা ও থোড় অবস্থায় ৮-১০ ডিএস/মিটার লবন সহনশীল।  ব্রি ধান৫৩  ব্রি ধান৫৪ } ধানগাছের বর্ধনশীল এবং প্রজনন পর্যায়ে ৮-১০ ডিএস/মিটার লবন সহনশীল। জলমগ্নতা সহিষ্ণু জাতসমূহ  ব্রি ধান৫১  ব্রি ধান৫২ } বীজতলা কিংবা চারা রোপনের ১ সপ্তাহ পর ১০-১৬ দিন পানিতে ডুবে থাকলেও চারা মরে না।

আমরা এখন বীজতলার গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করবো। বীজতলায় যত্নসহকারে চারা তৈরী করা হলে সুস্থ ও সবল চারা পাওয়া যায়। এ ধরণের চারা জমিতে রোপন করা হলে চারার বাড়-বাড়তি ভালো হয়। বীজতলায় চারা তৈরীর মাধ্যমে ধানের আবাদ করা হলে বীজের পরিমান কম লাগে এবং একই জমিতে একাধিক ফসল করা যায়। বীজ বাছাই, ভেজানো ও জাগ দেওয়া  বীজকে ভালোভাবে ঝেড়ে নিয়ে অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা পরীক্ষা করতে হবে।

 শতকরা ৮০-৯০ ভাগ অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা সম্পন্ন ধানকে বীজ হিসাবে করতে হবে।  পরিমান মত বীজ ২৪ ঘন্টা পানিতে ডুবিয়ে রাখার পর চটের বস্তা অথবা মাটির পাত্রে ৪০-৪৮ ঘন্টা জাগ দিতে হবে।  অঙ্কুরিত বীজ বীজতলায় বপন করতে হবে। বীজতলা তৈরী  সেচ সুবিধাযুক্ত এবং প্রচুর আলো-বাতাস পায় এমন স্থানকে বীজতলার জন্য নির্বাচন করতে হবে।  ৪-৫টি চাষ ও মই দিয়ে জমি ভালোভাবে কাদাময় করে তৈরী করতে হবে।

 জমির এক পাশ থেকে ১.২৫ মিটার চওড়া করে লম্বা-লম্বিভাবে বীজতলা তৈরী করতে হবে। দুই বীজতলার মধ্যে ৫০ সেন্টিমিটার ফাঁকা রাখতে হবে এবং এই ফাঁকা জায়গা থেকে মাটি তুলে দুই পাশের বীজতলাকে উচু করতে হবে। এর ফলে যে ফাঁকা নালা তৈরী হবে পানি ব্যবস্থাপনার সুবিধা হবে।  বীজ বপনের আগে বীজতলাকে ভালোভাবে সমান করে নিতে হবে। বীজের পরিমান  প্রতি বর্গমিটার বীজতলায় ৮০-১০০ গ্রাম বীজ বুনতে হবে।

 প্রতি ৩৩ শতক বা এক বিঘা জমিতে রোপনের জন্য ৩-৪ কেজি বীজ বপন করাই যথেষ্ট।  এক একক পরিমান জমির বীজতলার চারা দিয়ে ২০ গুন পরিমান জমি রোপন করা যায়। বীজতলার পরিচর্যা  বীজ বপনের পর থেকে চারার শিকড় মাটিতে লেগে যাওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ ৫-৭ দিন সেচের পানি দিয়ে নালা ভরে রাখতে হবে। এর ফলে বীজতলায় মাটি নরম থাকে, গজানো বীজ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে না এবং বীজতলা শুকায় না।  বীজ বপনের ৫-৭ দিন পর বীজতলায় ছিপছিপে অর্থাৎ ২-৩ সেন্টিমিটার পানি রাখলে চরারা বাড়-বাড়তি ভালো হবে।

 চারা বৃদ্ধির সাথে তাল রেখে পরে পানির পরিমান ৩-৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বাড়ানো যায়। তবে এর চেয়ে বেশী পানি রাখলে চারা লম্বা ও দুর্বল হয়ে যায়।  কোন কারণে চারার বৃদ্ধি কম হলে এবং গাছ হলদে হয়ে গেলে প্রতি বর্গমিটারে ৭ গ্রাম ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।  পোকার আক্রমণ দেখা গেলে সঠিক কীটনাশক অনুমোদিত হারে ব্যবহার করতে হবে। বাস্তবে ধান চাষের সময়ে অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

তখন পরামর্শের প্রয়োজন হয়। কৃষক ভাইদেরকে তাদের সমস্যার জন্যে নিকটস্থ ফিয়াক বা উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হলো। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।