আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হাশিম ক্লার্ককেও সন্দেহ?

রফিকুল ইসলাম ( ১১/০৭/২০১১ )____ যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কংগ্রেসম্যান হানসেন হাশিম ক্লার্ক বলেছেন, যখন তিনি বিমানবন্দরে যান উপলব্ধি করেন, নির্বাচিত সদস্য হওয়ার পরও এখনো তাঁকে সন্দেহের চোখে দেখা হয়। এ সন্দেহের কারণ তাঁর পূর্বপুরুষ মুসলমান এবং তিনি একজন অভিবাসী আমেরিকান। তিনি বলেন, 'যদি আমি কয়েক দিন শেভ না করি এবং হুডি (এক ধরনের হুডওয়ালা উত্তরীয়) পরে চলাফেরা করি কিংবা জগিং করার পোশাক পরে বিমানবন্দরে যাই, সেখানকার কর্মীরা বিস্ফোরক তল্লাশির যাবতীয় পরীক্ষা চালায় আমার ওপরে। কংগ্রেস সদস্য হওয়ার পরও রেহাই দেয় না। যদিও এই বর্ণবাদী আচরণ সাধারণত অন্য আমেরিকানদের ওপরে করা হয় না।

' ডেট্রয়েট থেকে নির্বাচিত হানসেন ক্লার্ক মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে এই বর্ণবাদী আচরণ দূর করার লক্ষ্যে হোমল্যান্ড সিকিউরিটির হাউস কমিটির সদস্য হিসেবে এ বছরের জানুয়ারি থেকে কাজ করে যাচ্ছেন। ৫৪ বছর বয়স্ক হানসেন ক্লার্কের বাবা মোজাফফর আলী হাশিম ছিলেন বাঙালি। তাঁর মা আফ্রিকান আমেরিকান। আর তাঁর স্ত্রী কোরীয় বংশোদ্ভূত। পারিবারিক কারণেই তিনি খেয়াল করেছেন, কৃষ্ণাঙ্গরা বর্ণবৈষম্য দূর করাসহ সব কিছুতে সমতার দাবিতে আইন প্রণয়নের জন্য দীর্ঘদিন থেকে সে দেশে আন্দোলন করে আসছে।

তিনি বলেন, 'আমি জানি আমার দেশ সন্ত্রাসবাদের ঝুঁকির মধ্যে আছে। কিন্তু কাউকে চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে অনেক মনোযোগ দিয়ে বিষয়টা ভাবতে হবে এবং তথ্য-উপাত্ত ঘেঁটে দেখতে হবে যাকে টার্গেট করছেন তিনি সত্যিই আপনার জন্য হুমকি কি না? ক্লার্ক নিজেকে একজন দক্ষিণ এশীয় ও আফ্রিকান আমেরিকান হিসেবে পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তিনি তাঁর পদবি নিয়েছেন তাঁর মায়ের কাছ থেকে। তাঁর মা পেশায় গার্ড ছিলেন, যিনি স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের নিরাপদে রাস্তা পার করানোর কাজ করতেন। ক্লার্ক নিজেকে দক্ষিণ এশীয় ভাবার কারণ হিসেবে বলেন, একদা তাঁর বাবা মোজাফফর আলী হাশিম পূর্ববঙ্গের নাগরিক থাকলেও তখনো বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি।

তখন অবিভক্ত ভারতবর্ষ থাকায় তিনি মনে করেন, তাঁর বাবা ছিলেন একজন ভারতীয়। সে কারণে তিনিও নিজেকে দক্ষিণ এশীয় ভাবেন। সিলেটের বিয়ানীবাজার থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী মোজাফফর কাজ করতেন ডেট্রয়েটে ফোর্ড মোটর কম্পানির একজন সাধারণ কর্মী হিসেবে। স্মৃতিচারণা করে হাশিম জানান, যখন তার আট বছর বয়স, তখন ডেট্রয়েটে নানা ধরনের রাজনৈতিক সমস্যা তৈরি হলে পরিবারকে দেশে রেখে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাঁর বাবা। কিন্তু হঠাৎ করেই বাবার মৃত্যু হলে আর দেশে ফিরে যাওয়া হয়নি তাদের।

এরপর মায়ের অনুসরণেই একজন আফ্রো-আমেরিকান হিসেবে নিজেকে তৈরি করেন তিনি। হাশিম ক্লার্ক বলেন, 'বাবার আদর্শ লালন করার কারণে ছোটবেলায় ভেবেছিলেন ধর্মযাজক হবেন। কিন্তু সেটা সম্ভব না হলেও মানবাধিকার নিয়েই কাজ করছেন তিনি। তিনি একজন সুবিদিত চিত্রশিল্পীও বটে। বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে পড়াশোনাও করেছেন তিনি।

রাজনীতিতে আসার আগে তাঁর একাধিক প্রদর্শনীও অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়া মিশিগান স্টেট সিনেটেও আট বছর পার করেছেন তিনি। ক্লার্ক আশা প্রকাশ করেন, তাঁর এলাকার জনগণকে তিনি সেই সুবিধাই দিতে চান, যা একজন কংগ্রেসম্যান হিসেবে তিনি ভোগ করছেন। তিনি এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়নের ব্যাপারটিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেন। আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে সেই টাকায় দেশে উন্নয়ন করা উচিত বলেও মত প্রকাশ করেন তিনি।

ক্লার্ক জানান, তিনি কখনো বাংলাদেশে আসেননি, তবে বিয়ানীবাজার এলাকার হাজারখানেক বাসিন্দার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ আছে। তাঁর বাবার আর কোনো ভাইবোন না থাকায় এ দেশেও তাঁর কোনো আত্মীয় আছে কি না জানেন না ক্লার্ক। সূত্র : এএফপি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।