আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অতীতের রহস্যময় নৌকা !!! সম্প্রতি কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের ঝাউবনসংলগ্ন এলাকার বালুর ভেতর থেকে ভেসে ওঠে প্রাচীন সমুদ্রগামী এক পালতোলা নৌকা

বছরের প্রথম ছাতা মাথায় রাস্তায় নামা , বছরের প্রথম ছাতায় বৃষ্টির টিপ টিপ শব্দ শোনা ;পুনশ্চ - পলিটিকাল ব্যাপার নিয়ে আর ব্লগ দিবনা, সবাই আমার ভাই , সত্যি কথা বললে কোন পক্ষের কোন ভাইকে কষ্ট পাবে সেটা দিতে চাইনা :) নৌকা ভাসবে পানির ওপর, এটাই নিয়ম। এই নৌকাটাও সুদূর অতীতে ভেসেছিল পানির ওপর। একসময়এসে আর পারেনি। জলের সঙ্গে যুদ্ধে হেরে গিয়ে ডুবে যায়। তাও শুধু পানিতে ডুবে না হয় হতো, নৌকাটি ডুবতে ডুবতে ডুবে যায় একেবারে বালুর নিচে।

গত বছর জুলাইয়ের প্রথম দিকে সমুদ্রের ফুঁসে ওঠা জোয়ারে কুয়াকাটা সৈকতের ঝাউবনসংলগ্ন এলাকার বালু যখন ধুয়ে যায়, তখন আর নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পারেনি নৌকাটি। কঙ্কালকাঠামো নিয়ে জানান দেয় নিজের উপস্থিতি। নজরে পড়ে স্থানীয় লোকজনের। খবর পৌঁছায় প্রত্নতত্ত্ববিদদের কানে। ছুটে আসেন তাঁরা।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় ও খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে ২৪ জানুয়ারি শেষ হয় এর উদ্ধারকাজ। নৌকা না জাহাজ? নৌকাটি তোলার পর প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞরা এটিকে নৌকা বলতে রাজি নন। তাঁরা জানান, এটি একটি স্ক্রুনার জাহাজ (সমুদ্রগামী ছোট পালতোলা জাহাজ)। এর ওপরের অংশ আগেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এর দৈর্ঘ্য ৭২ ফুট, প্রস্থ ২৪ ফুট এবং উচ্চতা সাড়ে ১০ ফুট।

এর আদল বহু পুরোনো। এর উদ্ধার প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত প্রত্যক্ষদর্শীর মতে, এটি নির্মাণে ব্যবহূত হয়েছে গর্জন অথবা শালকাঠ। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফরাসি নৌকাবিশেষজ্ঞ ইভ মারের মতে, ওকগাছের কাঠ দিয়ে এই নৌকাটি নির্মিত। দীর্ঘদিন মাটির নিচে আটকে থাকলেও এর কাঠগুলো ভালো রয়েছে। পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, নৌকাটির প্রতিটি কাঠ আড়াই থেকে তিন ফুট পুরু এবং কাঠগুলো একটির সঙ্গে আরেকটি জোড়া লাগানো হয়েছে দুই থেকে তিন সেন্টিমিটার পুরু পিতলের পাত দিয়ে।

এতে নিদর্শন পাওয়া গেছে দুটি মাস্তুলেরও। কী ছিল নৌকার ভেতর? প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শিরিন আখতারের নেতৃত্বে পরিচালিত খননকাজ শেষ করার পর নৌকাটির ভেতর থেকে পাওয়া গেছে লোহা ও তামার তৈরি ছোট-বড় পেরেক, নারকেলের মালা, নারকেলের ছোবড়ার তৈরি রশি, ভাঙা মৃৎপাত্রের টুকরা, লোহা আর দস্তার তৈরি ব্যালাস্ট, ধানের চিটা, পাটের তৈরি ছালার (চট) নিদর্শন, পাটকাঠি, মাদুরের অবশেষ, লোহার শিকল ও তামার পাত। নানা মুনির নানা মত প্রাথমিকভাবে নৌকাটি রাখাইনদের তৈরি ও তাদের ব্যবহূত নিদর্শন মনে করা হলেও খনন দলের সদস্যরা এ সম্পর্কে বিভিন্ন ধারণা পেয়েছেন। তা ছাড়া স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে আলাপ করেও এ নিয়ে নানা ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে। কুয়াকাটার প্রবীণ বাসিন্দা আবদুল আজিজ মুসুল্লির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বহু বছর আগে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য থেকে বিতাড়িত হয়ে ২৫০টি রাখাইন পরিবার ১৫০টি নৌকা নিয়ে ভাসতে ভাসতে কুয়াকাটায় এসে পাড়ি জমায়।

এ নৌকাটি ওই সময়ের হতে পারে। আবার স্থানীয় লোকজন একে ‘সোনার নৌকা’ও বলছে। এ ক্ষেত্রে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ধারণা, এর বহিরাবরণ তামার পাতে মোড়ানো বিধায় স্থানীয় লোকজন এমন নামকরণ করেছে। এ ছাড়া স্থানীয় লোকজনের কারও কারও মতে, সাধু সওদাগর নামের এক ব্যক্তি প্রাচীন আমলে এই এলাকায় ধান-চালের ব্যবসা করতেন। এটি ওই সওদাগরের ব্যবহূত নৌকা হতে পারে।

আবার কেউ কেউ মন্তব্য করেন, এটি পর্তুগিজদের ব্যবহূত নৌকাও। তবে খনন-প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত সদস্যরা খননকাজের শেষ পর্যায়ে পাওয়া আকৃতি থেকে এই প্রাচীন নৌকাটিকে নৌকা না বলে স্ক্রুনার জাহাজ বলার পক্ষে মতামত দেন। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নৌকাবিশেষজ্ঞ ও এর উদ্ধারকাজের কারিগরি কমিটির অন্যতম সদস্য ইভ মারে বলেন, নৌকাটি এমন অবস্থায় পড়ে থাকার কারণ দেখে মনে হচ্ছে, সমুদ্রে এটি বাতাসের তীব্রতার কবলে পড়ে যায়। ফলে এর ক্যাপ্টেন বা মাঝি গতিপথ হারিয়ে ফেলেন। হয়তো একপর্যায়ে বাতাসের চাপে পড়ে এটি নিমজ্জিত হয়।

তিনি নৌকার মধ্যে থাকা দস্তার কারুকাজ দেখে মনে করেন, নৌকাটি ১৮৬০ সালের দিকের। তার মানে এটির বয়স দেড় শ বছরের বেশি। এই নৌকার ভবিষ্যৎ কী? আনুমানিক ৯০ টন ওজনের এ পালতোলা নৌকাটিকে কুয়াকাটাতেই সংরক্ষণ করে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে এ জন্য দুই বিঘা জমি বরাদ্দ করা হয়েছে। কুয়াকাটার বন্যানিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের ভেতর কুয়াকাটা মাস্টার প্ল্যানের নির্ধারিত স্থানের ওই জমিতে একটি মেরিন মিউজিয়াম তৈরি করে নৌকাটিকে সেখানে রাখা হবে।

বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উৎকীর্ণলিপি ও মুদ্রা শাখার সহকারী পরিচালক আফরোজা খান মিতা বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত, কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে জেগে ওঠা প্রাচীন পালতোলা নৌকাটি বাংলাদেশে পাওয়া প্রথম প্রাচীন নৌকা। আনুমানিক ১৫০ থেকে ২৫০ বছর আগের অর্থাৎ ব্রিটিশ আমলের এটি একটি অনন্য নিদর্শন। ইতিহাসের এক অমূল্য প্রমাণ হিসেবে এটি সংরক্ষণ করার পরবর্তী পদক্ষেপ শিগগিরই শুরু করা হবে। ’ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মো. মোজাম্মেল হক বলেন, ‘গত ৫০ বছরের মধ্যে যেসব নৌকা আমরা দেখেছি, তার সঙ্গে এ নৌকাটি আসলে মেলে না। এর আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, পাল তুলে পানির অনুকূলে দ্রুত চলার মতো নৌকা এটি।

এটি দেখে আরও মনে হয়েছে, এর তলদেশ পানির নিচে খুব বেশি ডুবে থাকে না। অর্থাৎ এটি পানির ওপরে থেকে চলতে পারে—এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে। ’ তিনি জানান, সময়কাল নির্ধারণ করার মতো যেসব তথ্য-উপাত্ত থাকা দরকার, সে রকম পাওয়া যায়নি। তার পরও রেডিও কার্বন ব্যবহার করে তারিখ নির্ণয়ের জন্য ধানের যে কয়লা পাওয়া গেছে, তা পরীক্ষা করে দেখা যেতে পারে। তখন হয়তো পরিপূর্ণ সময়কাল পাওয়া যাবে।

বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সাবেক প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল এ তাহের বলেন, ‘আমরা নৌকাটি দেখতে গিয়ে বুঝলাম, এর প্রত্নতাত্ত্বিক মূল্য আছে। এটা উত্তোলন করাটাও খুব কঠিন ছিল। তার পরও বহু কষ্ট করে সতর্কতার সঙ্গে এটি তোলা হলো। সমুদ্রে বিধ্বস্ত হয়ে নৌকাটি যে এভাবে ছিল, তা আমরা মনে করি না। আমাদের ধারণা, ব্যবসার জন্য এই অঞ্চলে আসা পর্তুগিজ অথবা আরবীয় ব্যবসায়ীদের নৌকা হতে পারে।

’ তিনি আরও বলেন, নৌকার সময়কাল নির্ধারণের জন্য ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে দেখতে হবে, তবে সেটা আমাদের দেশে সম্ভব নয়। নৌকাবিশেষজ্ঞ ইভ মার নিজ উদ্যোগে ফ্রান্সের একটি ল্যাবরেটরিতে তা পরীক্ষা করার চিন্তা করেছেন। Click This Link  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।