Every emotion have a feelings. But every feelings have no emotion. ভিকারুননিসা নূন স্কুল একটি নাম,একটি ইতিহাস। বাংলাদেশের যে কয়টি গর্ব করার মত শিক্ষা প্রতিষ্টান আছে সবার একেবারে উপরের দিকেই অবস্থান ভিকারুননিসা নূন স্কুল & কলেজের। প্রতিবছর অসংখ্য মেধাবী এই প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করে ঈর্ষনীয় সাফল্যের সাথে। অনেক রাজনৈতিক নেতা এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধি অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সাফল্য অর্জনের জন্য ভিকারুননিসা নূন স্কুলকে ফলো করতে বলেন। কিন্তু সেই গৌরবের আর অহংকারের ভিকারুননিসা নূন স্কুলের উপর শকুনির ছায়া এসে পড়েছে।
নানা অনিয়ম-দুর্নীতি আর স্বজনপ্রীতি যেখানে এতদিন ভিকারুননিসা নূন স্কুলের জন্য কলংক ছিল সেখানে আজ কফিনের বুকে শেষ পেরেক ঠোকার মত এক মহাকলংক এসে পড়েছে। আর সেটা হল দেশের এই স্বানামধন্য প্রতিষ্ঠানের একশ্রেণীর শিক্ষক নামের পশু কতৃক ছাত্রীর উপর পাশবিক নির্যাতন এবং তা মোবাইলে ধারন করে বাজারজাতকরনের মত অমানবিক হুমকি।
যেভাবে ঘটনার সুত্রপাতঃ
ঘটনার সুত্রপাত গত মে মাসে। যখন ভিকারুননিসা নূন স্কুলের বসুন্ধরা শাখার দশম শ্রেণীর এক ছাত্রী তার সোনালি ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে পরিমল নামে শিক্ষকরুপি এক জানোয়ারের কাছে পড়তে গিয়ে পৈশাচিক আক্রমনের শিকার হয় । মেয়েটি স্কুলের বাইরেও কোচিংয়ে ওই স্কুলেরই বাংলা বিভাগের শিক্ষক পরিমল জয়ধরের বাসায় গিয়েও নিয়মিত পড়ত।
আর সেটাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিন একাকীত্বের সুযোগে মেয়েটির হাত-পা ও মুখ বেঁধে ফেলে শিক্ষক নামের পশুটি। নগ্ন করে ওই ছাত্রীর ছবি তোলে এবং ভিডিও করে পরিমল। এরপর শুরু হয় ছাত্রীর ওপর নির্যাতন। হতবিহ্বল হয়ে যায় মেয়েটি।
নির্যাতন একসময় শেষ হয়। এরপর শুরু হয় হুমকি-ধমকি, যদি এই তথ্য সে কাউকে জানায় তাহলে নগ্ন ছবি ও ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়া হবে। এ রকম ভয় দেখিয়ে এর পরও চলতে থাকে মেয়েটির ওপর পাশবিক অত্যাচার।
অবশেষে একদিন মেয়েটি তার বন্ধুদের ঘটনাটি জানায়। বন্ধুদের পরামর্শে মেয়েটি স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. লুৎফর রহমানের কাছে অভিযোগ করলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মেয়েটিকে সুবিচারের আশ্বাস দেন।
তবে আশ্বাসেই বাকি সময় অতিবাহিত হয় কিন্তু বিচার আর হয়নি। এরপর সহপাঠী শিক্ষার্থীরা মিলে অভিযুক্ত পরিমল জয়ধরের বিরুদ্ধে একটি লিখিত আবেদন জমা দেয় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের কাছে গত ২৮ জুন। এর পরও বিচার বা তদন্তের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এতে খেপে যান অভিভাবকরা। প্রধান শিক্ষক হোসনে আরার গত ৩ জুলাই ভিকারুননিসা নূন স্কুলের বসুন্ধরা শাখায় যাওয়ার কথা ছিল বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার জন্য।
তবে শেষপর্যন্ত তিনি না যাওয়ায় অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। আর এ থেকেই আস্তে আস্তে সৃষ্ট হয় গনবিস্ফোরন। অভিভাবকরা নেমে আসেন রাস্তায়, জানান প্রতিবাদ। উল্লেখ্য পরিমল এর আগে রাজউক মডেল স্কুলে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত থাকার সময় ঐ স্কুলেও যৌন নির্যাতনের অভিযোগে তার চাকরি চলে যায়।
শুধু পরিমল একা নইঃ
শুধু এক পরিমলই নয়, ওই স্কুলের আরো পাঁচ শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ এনেছেন অভিভাবকরা।
সম্প্রতি নিয়োগ পাওয়া ওই শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন বরুণ চন্দ্র বর্মণ, বিষ্ণুপদ বড়াই, বাবুল ও অভিজিৎ। অভিযুক্ত শিক্ষকদের মধ্যে বরুণ চন্দ্র বর্মণের বিরুদ্ধে বাণিজ্য বিভাগের দশম শ্রেণীর ছাত্রীরা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে গত ২৭ জুন। ওই লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, 'বরুণ চন্দ্র বর্মণ ক্লাসে অশ্লীল-কুরুচিপূর্ণ শব্দ ব্যবহার ও বাজে ধরনের ইঙ্গিত দেন ছাত্রীদের। ' তবে স্কুল কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত বরুণ চন্দ্র বর্মণের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আরো অভিযোগ রয়েছে একটি বিশেষ এলাকার লোক হওয়ায় এবং প্রভাবশালীদের সুপারিশে এরা শিক্ষক হওয়ায় এরা বরাবর থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাহিরে।
উল্টো যারা এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতো তাদেরকেই শায়েস্তা করা হত। উল্লেখ্য অভিযুক্ত ছয় শিক্ষকেরই বাড়ি গোপালগঞ্জ এবং এই কারনে পুলিশ কোনো তৎপরতা দেখাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন অভিভাবকরা।
শুধু পরিমল একা নয়, তার সহযোগী এবং সহায়তাকারিদের বিচার ও এদের শাস্তি নিশ্চিত করা এবং শিক্ষাঙ্গনে নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তোলার দাবীতে আগামী ১২ জুলাই মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ডাক দিয়েছে এক গন-মানববন্ধনের। আর এতে উপস্থিত থাকার জন্য ইতিমধ্য বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের সম্মতি জানিয়েছে। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উপস্থিত থাকা নিশ্চিত করেছে তাদের মধ্য উল্লেখযোগ্য হল- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা কলেজ, নটরডেম কলেজ, জগ্ননাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন কলেজ, মাইলস্টোন কলেজ, সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ, ঢাকা সিটি কলেজ, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্কুল ও কলেজ সহ আরও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ।
আসুন একজন পরিমল ও তার সহযোগীদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক সাজা নিশ্চিত করে আমাদের বোন-ভাগ্নিদের জন্য সুন্দর ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করি।
আর সবসময় এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই, যেন আর কোন পরিমল কারো শরীরে তার নগ্ন থাবা বসাতে সাহস না পায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।