অস্থির এই সময়ে কিছু স্বস্তির সুবাতাস ছড়াতে চাই, আমি ক্রমঃশ আপনারে বিলিয়ে যাই তুমি সুখী হবে বলে... সম্প্রতি আবেদ খান কালের কন্ঠ পত্রিকার সম্পাদক পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। আবেদ খান এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘নৈতিক ও পেশাগত কারণে আমি পদত্যাগ করেছি। পত্রিকায় প্রকাশিত অনেক প্রতিবেদনের জন্য সম্পাদক হিসেবে আমাকে হলুদ সাংবাদিকতার দায় নিতে হয়। এতে আমার দীর্ঘ পেশাগত জীবনের সুনাম নষ্ট হয়। আমি এই অসুস্থ কাজের দায়িত্ব নিতে চাই না।
’ একটু দেরীতে হলেও তিনি যে সাধের পদবিটির লোভ ছাড়তে পেরেছেন তাতেই আমি স্বস্তিবোধ করছি। আবেদ খান আমার শ্রদ্ধেয় ব্যাক্তি, আমি তাঁর লেখার গুণমুগ্ধ পাঠক, আশা করছি ভবিষ্যতে উনি আর এমন কোন কাজ করবেন না যার জন্য পরে নিজেই আবার হতাশা ব্যাক্ত করবেন।
‘তুমি আমার’ নামের একটা উপন্যাস পড়েছিলাম স্কুলে পড়াকালীন সময়। গ্রাম থেকে ঢাকায় বেড়াতে আসা মামাতো ভাইয়ের কাছে পেয়েছিলাম বইটি, কাভারে একটা মেয়ের ছবি আমাকে ব্যাপক আকৃষ্ট করেছিল সেসময়। যাহোক মায়ের চোখ এড়িয়ে বইটি পড়ে ফেললাম, সেটাই ছিল জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের কোন লেখা পাঠ করার প্রথম অভিজ্ঞতা।
তারপর অনেক দিন কেটে গেছে, মিলন সাহেব আরও অনেক জনপ্রিয় হয়েছেন, তাঁর অনেক উপন্যাস দুই বাংলায় ব্যাপক হৈ চৈ ফেলে দিয়েছে, কিন্তু কি এক বিস্ময়কর কারণে আমার আর তাঁর লেখা পড়া হয়নি। তবে তাঁর লেখা অনেক নাটক দেখেছি, মাঝখানে কোন এক পত্রিকায় একটা গল্প দেখে পড়েছিলাম। আমার কাছে বরাবরই মনে হয়েছে, গল্প বলার বিস্তারিত অংশের চেয়ে তাঁর সংলাপ লেখন অনেক বেশী প্রাণঞ্জল, অনেক বেশী স্বস্তিকর।
আবেদ খান সরে দাঁড়ানোর পর ইমদাদুল হক মিলন কালের কন্ঠ’র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন। আমি এই উপলক্ষে ইমদাদুল হক মিলন-কে অভিনন্দন জানাচ্ছি।
নতুন দায়িত্ব গ্রহণকালে তিনি বলেন, ‘অত্যন্ত স্বল্প সময়ে কালের কন্ঠ যে পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করেছে তার মূলে রয়েছে বস্তুনিষ্ঠ ও গঠনমূলক সংবাদ পরিবেশ ও গণমানুষের জীবন চিত্রায়ণ। ’ তিনি এ ধারা অব্যাহত রাখার স্বার্থে কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা দলের পত্রিকা হিসেবে নয় বরং এর মূল যে বৈশিষ্ট্য অর্থাৎ কালের কন্ঠকে গণমানুষের কন্ঠস্বর হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
পদ-পদবির মায়া বিরাট মায়া, মানুষ তার এক জীবনে কি চায়? পদ-পদবি, নাম-যশ, খ্যাতি-অর্থ... খুবই স্বাভাবিক ইমদাদুল হক মিলনও একজন রক্ত মাংসের মানুষ হিসেবে এসবের উর্দ্ধে নন, সুতরাং আবেদ খান কেন চলে গেলেন, কি বলে গেলেন, এসব তাঁর না ভাবলেও চলে। আসন খালি হয়েছে, সুতরাং বসে পড়াই যুক্তিযুক্ত ভাবা কোন অন্যায় নয়, তবু আমি এখন দেখার অপেক্ষায় আছি কবে ইমদাদুল হক মিলন আবেদ খানের পদাঙ্ক অনুসরণ করেন।
নাকি তিনি ভারপ্রাপ্ত থেকে পুরোপুরি পাকাপোক্ত হয়ে যান, সেটাও দেখার বিষয়।
অবশ্য কালের কন্ঠ পত্রিকার কে সম্পাদক হবেন কে চলে যাবেন সেটা বিষয় নয়, খুনি-ভূমিদস্যু-কর ফাঁকিবাজ মালিকের পত্রিকার কি হয় সেটা দেখার বিষয় নয়। প্রশ্ন হচ্ছে- আমরা কার কথা আমলে নেব? যিনি এত্তদিন সম্পাদক ছিলেন নাকি যিনি সদ্য দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন? প্রথমোক্ত জনের কথার সাথে আমরা একমত পোষণ করতে পারি, পত্রিকাটি ইতোমধ্যেই হলুদ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে নিজের দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে, কিন্তু মিলন সাহেব এটা কি বললেন? খুবই দুঃখজনক যে একজন জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক শুধু চাকরি বাঁচানোর জন্য এমনটা করবেন। তবে কি মিলন সাহেব আজকাল আর নিজের জনপ্রিয়তা নিয়ে ভাবেন না? মফস্বলের যে তরুণটি তাঁর বই পড়ছে, সে যে আগের মত তথ্যের সংকটে নেই হয়ত মিলন সাহেব একথা ভুলে গেছেন! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।