কথা কম বলতে ভালবাসি। প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলন ও অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিকভাবে এক প্রশ্নবিদ্ধ নাম-
‘কনোকোফিলিপস’
গত ১৬ জুন বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রে ১০-১১ নম্বর গ্যাস ব্লকের গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন বিষয়ক এক অতি গুরূত্বপূর্ণ চুক্তি সম্পাদিত হয়। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণকারী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলা ও মার্কিন প্রতিষ্ঠান কনোকোফিলিপসের মধ্যে। মডেল পিএসসি ২০০৮ এর আলোকে চুক্তিটি সম্পাদিত হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আলোচনায় উঠে আসে মার্কিন প্রতিষ্ঠান কনোকোফলিপস।
কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠান ‘নাইকো’ ও মার্কিন ‘অক্সিডেন্টাল’ দ্বারা দুটি ভয়াবহ দূর্ঘটনার পরে প্রশ্ন ওঠে বিদেশী প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা ও আন্তরিকতা নিয়ে। প্রাসঙ্গিকভাবেই সে প্রশ্নের আলোকে কনোকোফিলিপ্সের হাতে আমাদের সমুদ্রের গ্যাস ব্লকের নিরাপত্তা কতখানি তার সুরাহা করা দরকার। কনোকোফিলিপসের নামক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানটির বিগতদিনের কিছু ঘটনাচিত্র তুলে ধরা হল।
২০০২ সালে কনোকো ইনকর্পোরেটেড ও ফিলিপস পেট্রোলিয়াম কোম্পানী একত্রিত হয়ে গঠন করে কনোকোফিলিপস কোম্পানী। এর সদর দপ্তর অবস্থিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে।
এই প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে পৃথিবীর ৩০টির বেশি দেশে প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ করছে। নিজেদের ওয়েবসাইটে তারা দাবি করছে ,এই মূহূর্তে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় বৃহত্তম পেট্রোলিয়াম আহরণ ও পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠান।
তাদের ওয়েবসাইটে বিপুল দক্ষতা অভিজ্ঞতার বিবরণ থাকলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ বিষয়ক কতৃপক্ষ বলছে ভিন্ন কথা। ২০০৭ সালের মাঝামাঝি থেকে ২০১০ এর শুরু পর্যন্ত সময়টুকুতে যুক্তরাষ্ট্রের অকুপেশনাল সেফটি এন্ড হেলথ এডমিনিষ্ট্রেশান (ওএসএইচএ ) কর্তৃক ১১৮ বার পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা ভঙ্গ করার অভিযোগের নোটিশ পায় কনোকো ফিলিপস। এছাড়াও ছোট বড় বিভিন্ন মাপের বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য দূর্ঘটনা ঘটেছে কনোকোফিলিপসের গাফিলতিতে।
২০১১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারী
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের বেলিংহামে ভয়ঙ্কর বিষাক্ত গ্যাস নির্গমন
javascript:void(1);
javascript:void(1);
বেলিং হাম শহরে মোট এক লক্ষ সত্তুর হাজার মানুষের বাস। ফেব্রুয়ারির ২৪ তারিখ সেখানকার বাসিন্দারা হঠাত আবিষ্কার করলেন তাদের শহরের মাঝে অবস্থিত কনোকোফিলিপসের তেল শোধনাগার থেকে নির্গত হচ্ছে ঘন ধোঁয়া। কিছুক্ষনের মাঝে শুরু হল শ্বাসকষ্ট ও বুক জ্বালাপোড়া। ১০ মিনিটের মাঝে আকাশে ছড়িয়ে পড়ে ১,১০,০০০ পাউন্ড হাইড্রোফ্লুরিক এসিড। হাইড্রোক্লোরিক এসিড এমন এক বিপজ্জনক কেমিকেল যা সরাসরি মানুষের স্বাসযন্ত্রে আক্রমন করে এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে এর ফলে।
দেখা গেল, বাতাসের গতিমুখে এই গ্যাস ধাবিত হয়ে ১৪ কিলোমিটার দূরের এলাকায় পর্যন্ত ক্ষতিসাধন করে। ওয়াশিংটনে শুধু কনোকোফিলিপসের শোধনাগারেই এই গ্যাস ব্যবহার হয়। ওয়াশিংটনের পরিবেশকর্মীদের মতে হাইড্রোফ্লুরিক এসিড হল এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে বিষাক্ত রাসায়নিক যা শোধনাগারে ব্যবহার হচ্ছে। অত্যাধিক মুনাফার লোভে কনোকোফিলিপস এই রাসায়নিক আজো ব্যবহার করে চলেছে।
২০০৮ সালের ১১ নভেম্বর
কানাডার ডসন ক্রিকে পুড়িয়ে ফেলে গ্যাস কূপ
ডসন ক্রিক থেকে ৪৫ কিলোমিটার পশ্চিমে প্রাকৃতিক গ্যাসের একটি কূপে কনোকোফিলিপ্স গ্যাস উত্তোলন করছিল।
১১ নভেম্বর ভোর হবার একটু আগে ৩টা ৫৫মিনিটে কূপে আগুন ধরে যায়। দূর্বল কূপটি গ্যাসের চাপ সহ্য করতে না পেরে একটু পরে পুরোপুরি বিস্ফোরিত হয়। টানা ১৩ দিন ধরে কূপটি দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে ঐ ঘটনার সময় বাতাসে প্রায় ২০০ রকমের রাসায়নিক পদার্থ ছড়িয়ে পড়ে যার অধিকাংশই স্বাহ্যের জন্য ক্ষতিকর।
কনোকো ফিলিপসের ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বীকার করেন, ড্রিলিং এর সময় অতিরিক্ত তাপ উৎপন্ন হওয়ার ফলে এই দূর্ঘটনা ঘটে যা সহজেই এড়ানো যেত।
তারা এটাও স্বীকার করে যে, তাদের প্রতিক্রিয়া ছিল অত্যন্ত ধীর।
২০০৮ সালের ২৫ ডিসেম্বর
আলাস্কার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় তেল ছিটিয়ে পড়ার ঘটনা
javascript:void(1);
javascript:void(1);
ক্রিসমাসের দিন, আলাস্কার অন্যতম বৃহৎ তেলক্ষেত্রে কুপারুকে ঘটে গেল বিপর্যয়। জীর্ণ এবং ক্ষয় হয়ে যাওয়া পাইপলাইন ভেঙ্গে ৯৪ হাজার ৯২০ গ্যালন তেল ছড়িয়ে পড়ল সমুদ্রে। সমদ্রের পানিতে তেল মিশে যাওয়ার ফলে ভয়াবহ ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় আলাস্কার জীববৈচিত্র। পাইপলাইন সময়মতো মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে এই ঘটনা ঘটে।
২০০৭ সালের ৭ জুলাই
প্লাইমাউথের মেফ্লাওয়ার টার্মিনালে ট্যাঙ্ক ফেটে তেল ছিটিয়ে পড়লো
javascript:void(1);
যুক্তরাজ্যের প্লাইমাউথ অঞ্চলের তেলের ভূগর্ভস্থ ট্যাঙ্কারে ফাটল থেকে ছড়িয়ে পড়ে ৮০ হাজারেরও বেশি লিটার পেট্রোল। পরিবেশে আদালতে এই ঘটনার ফলে কনোকোফলিপস জরিমানা দিতে বাধ্য হয় ৫০ লক্ষ টাকার বেশি মূল্যে। এই তেল মাটির নিচে ছড়িয়ে পড়ে ভূগর্ভস্থ পানির স্তরে। ঐ এলাকায় পানি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে।
পরিবেশকর্মী সারাহ টেইলর দাবি করেন, ‘এই দূর্ঘটনা এড়ানো খুবই সম্ভব ছিল।
খরচ বাঁচানোর জন্য তারা ট্যাঙ্কগুলো নিয়মিত পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে পরীক্ষা করে না। সঠিক রক্ষনাবেক্ষনের মাধ্যমে সহযেই এই দূর্ঘটনা এড়ানো যায়। ‘
২০০৬ সালের ৩ মে
কানাডার এডসনের নিকটে গ্যাস কূপে বিস্ফোরণ
javascript:void(1);
javascript:void(1);
এই কূপের গ্যাসে অধিক পরিমানে হাইড্রোজেন সালফাইডের উপস্থিতি ছিল যা বিষাক্ত। এই বিষয়ে জানা থাকা সত্ত্বেও এই কূপে বিস্ফোরণ ঘটে এবং প্রায় দুই দিন ধরে আগুন জ্বলার পর তা নিয়ন্ত্রণে আসে।
২০০৪ সালের ১৩ অক্টোবর
যুক্তরাষ্ট্রের ডালকো প্যাসেজে তেল ছড়িয়ে পড়লো
javascript:void(1);
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডালকো প্যাসেজে ১০০০ গ্যালন তেল ছিটিয়ে পড়ায় ৫ লক্ষ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার জরিমানা গুনতে হয় কনোকো ফিলিপসকে।
javascript:void(1);
javascript:void(1);
এছাড়াও ২০০১ সালে কনোকো কম্পানী যুক্তরাজ্যের হাম্বার শোধনাগারে দূর্ঘটনা ঘটায়। ১৬ এপ্রিলের এই ঘটনার ফলশ্রুতিতে এক মিলিয়নের অধিক পাউন্ড জরিমানা দেয় প্রতিষ্ঠানটি।
২০০০ সালে ফিলিপস কর্পোরেশনের প্যাসাডেনায় রেজিনের ট্যাঙ্কে আগুন লেগে চার জন গুরুতর আহত হওয়া সহ মোট ৬৫ জন কর্মী আহত হয়। কৃচ্ছতাসাধন করতে গিয়ে এই শোধনাগারেই তারা ১১ বছরে তিনটি দূর্ঘটনা ঘটায়।
এরকম বহু ঘটনাই আমাদের চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
গভীর বিশ্বাসে বিদেশী কোম্পানীর হাতে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ছেড়ে দেয়া কতটুকূ বিবেচনার পরিচয় দেয়, তা গভীর পর্যালোচনার দাবি রাখে। বিদেশী কোম্পানী, বড় কোম্পানীগুলোকে যদি কেঊ ধোয়া তুলসীপাতা মনে করে থাকেন তাহলে আমাদের দেশ পড়তে পারে এক গভীর সংকটে।
১। মডেল পিএসসি ২০০৮ Click This Link
২। Click This Link
৩।
Click This Link
৪। Toxic acid puts millions at risk
By Robert McClure and Will Graff-02/24/2011
invw.org/content/toxic-acid-puts-millions-at-risk
৫। Conoco Phillips fined for oil spill
3 December 2009
Click This Link
৬। CONOCO PHILLIPS BLOWOUT NEAR EDSON
Click This Link
৭। ConocoPhillips to pay $540,000 fine for 2004 Dalco Passage oil spill
Click This Link
৮।
ConocoPhillips caught fire west of Dawson Creek
Click This Link
৯। Conoco reports big oily water spill at Alaska field
Click This Link
১০। http://en.wikipedia.org/wiki/Humber_Refinery
১১। দুর্ঘটনার রাজা কনোকোফিলিপস ও বঙ্গোপসাগরের আসন্ন বিপদ:যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক বিপি-ব্লোআউটের আলোকে (21)-কল্লোল মোস্তফা
Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।