অফিসে কাজের ফাঁকে যখনই মোবাইলটা বেজে ওঠে , দৌড়ে গিয়ে ধরি মনে হয় কানে ঠেকালেই শুনতে পাব আম্মা বলছনে - ‘রিজু তুই কি অফিসে পারলে সময় করে একটু বাসায় আসিস। জরুরী কথা আছ। ’কিন্তু আমিতো সেই কন্ঠ আর কখনো শুনতে পাবনা। পৃথিবীর কোথাও গেলে খুঁজে পাবোনা সেই প্রিয় মুখখানি।
৩০শে জানুয়ারী ২০০৭(১০ ই মহররম) রাত ৪টায় যখন মোবাইল ফোনটা বেজে ওঠল , অজানা আশংকায় মনটা কেঁপেওঠল।
ফোন ডিসেপ্লেতে লেখা “আম্মা ” কিন্ত কন্ঠ শুনতে পলোম অন্য কারো। তাড়াহুড়ো করে আম্মার বাসায় গিয়ে দেখি সেই ডান কাত হয়ে গালের নীচে হাত দিয়ে সেই চির পরিচিত ভঙ্গিতে পরম নিশ্চিন্তে ঘুমুচ্ছেন আমার প্রানপ্রিয় মা। আর আব্বা হতবহিবল হয়ে বসে আছনে আম্মার পায়ের কাছে । আম্মার কপালে হাত ছোঁয়ালাম,অনুভব করলাম হীমশীতল ঠান্ডা । বুঝলাম মৃত্যুর একরাশ শীতলতা আম্মাকে ঢেকে রেখেছে ।
যে মুর্হুতে মনে হল আম্মা ক্ষনিকের এই পৃথিবী ছেড়ে পাড়ি জময়িছেনে অনেক দূরের অচেনা এক জগত যে জগৎ থেকে কখনই আর কেউ ফিরে আসেনা । সে মুর্হূতে পরচিতি জগৎটা আমার কাছে অপরচিতি মনে হতে লাগল। মুর্হূতেই যেন নিভে গেল জগতের সমস্ত আলো। পরিচিত সকল শব্দ নিস্প্রান¯ বোবা মনে হতে লাগল আমার কাছে। মনে হতে লাগল আমি বোধহয় কোন দুঃস্বপ্ন দেখছি।
এই যে এত মানুষজনের আনাগোনা,আহাজারি সবকিছুই মিথ্যা । নি:সীম এক শুন্যতা আমাকে গ্রাস করল ।
খুব সাদাসিধা ,সহজ - সরল একজন মহিলা ছিলেন আমার মা । শৈশবেই মা’র মুখে শুনেছি হারানো দিনের গান ,র্ধমীয় সব গল্প-গাঁথা। আরো শুনেছি রামায়ন - – মহাভারত সহ পৌরানকি নানা কাহিনী।
যা পরবর্তিতে আমাকে আরো বেশীআগ্রহী করে তুলছে সেসব কাহিনী সর্ম্পকে বিশদ ভাবে জানতে । অত্যন্ত র্ধমপ্রান আমার আম্মার সুমধুর কোরআন তেলাওয়াত শুনে কতদিন যে ,আমাদের ঘুম ভেঙ্গেছে তার কোন হিসেব নেই। আমাদের ভাই - বোনদের পরীক্ষায় ভাল ফলাফলের জন্য নফল রোজা
রাখতনে । সন্তানের মঙ্গল কামনায় অস্থির সেই আম্মাকে আর কোথাও খুঁজে
পাবোনা ,ভাবলেই বুকের ভেতরটা কেমন যেন করে ! কষ্টে দুমেড়ে মুচড়ে যায়। দু’ চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে বাধঁ না মানা পানি ।
কিন্তু যতদিন নাগালের মধ্যে ছিলেন ,হাত বাড়ালেই ধরা যায় এমন ছিলেন তখন বুঝতে পারিনি তাকে কতটা ভালবাসি ,আর তাইতো তার গলা জড়িয়ে ধরে কোনদিনও বলা হয়নি - “ আম্মা আমি আপনাকে অনেক ভালবাসি । আপনার মুখের হাসির জন্য সবকিছু করতে প্রস্তত আছ।
আমরা সন্তানেরা এই অপূরণীয় ভূলটা অনেক সময়ই করে থাকি । আমাদের মনের গভীরের ভালবাসা বা শ্রদ্ধা বোধটা সময়মত প্রকাশ করতে র্ব্যথ হই। যখন আমরা ভুলটা বুঝতে পারি তখন সেই প্রিয় মানুষ চলে যায় অনেক দূরে ,কল্পলোকের অচীনপূরে ।
ঠাঁই পায় অসীম আকাশরে নী:সিম নীলিমায় ।
আর আমরা যারা পৃথিবীতে থাকি তারা বেঁচে থাকি একরাশ শুন্যতা বুকে নিয়ে । বয়ে বেড়াই পাহাড় সমান কষ্টের বোঝা । কেবলই মনে হয় -
জানলা থেকে তাকাই দূরে
নীল আকাশের দিকে ,
মনে হয় মা আমার পানে
চাইছে অনিমিখে ।
রেজিনা আলম
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।