লিবিয়ায স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসুক। গেল বছরও মা দিবসে বেশ কয়েকবার মাকে ফোন দিয়েছিলাম। এমনিতেই আমার অভ্যাস ছিল প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে আমার দিনটা শুরু করা মাকে ফোন দিয়ে। আর আমার মা ও প্রতিদিন অপেক্ষা করতেন আমার ফোনের জন্য। আমার পরিবারে আমি ছিলাম লেট কামার,ছোট ভাইয়ারও আট বছরের ছোট আমি শুনেছি আমার বড়প্পা (বড় বোন) তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ।
তিনি লজ্জায় কাউকে বলতন না যে তার একটা বোন হয়েছে । হা ,হা ,হা । সেই বড়প্পা এখন আমাকে যক্ষের ধনের মত আগলে রাখেন। আর আমার ছোটপা আমাকে মায়ের স্নেহে বড় করতে থাকেন। আমি কিন্তু বরাবরই মা ন্যাওটা,মাস্টার্স পাশ করে চাকুরী করার পরও মার সঙ্গে ঘুমাতাম।
মাও আমাকে সব বিষয়ে বাড়তি ছাড় দিতেন। এইচ এস সি পর্যন্ত গ্রামে পড়লেও আমি এখনও গ্রামের অনেক কিছু বুঝতে পারিনা,কারন মা এসবের ছোঁয়া গায়ে লাগতে দেননি এছাড়া পড়ালেখায় বরাবরই ভাল করতাম বলে আমার মা তার ছোট এই মেয়েটিকে যত্মও করতেন বেশি। ঢাকায় আসার পর আমি নিজের জন্য নিজেই একটি আইন তৈরি করি তা হল মায়ের সঙ্গে কখনও মিথ্যা বলবনা । যাতে অন্যায় করতে গেলও মাকে সত্যি বলার ভয়ে তা থেকে বিরত থাকি। প্রতি ঈদে বড় বোনরা চাইতেন তাদের সঙ্গে ঈদ করি আর তা শুনে আমার সেকি কান্না ।
কারন আমাকে মায়ের কাছে যেতে হবে। যখন চাকুরী শুরু করি মাকে বললাম তোমাকে কিছু দিতে চাই। ম বলল,তোমার টাকা খাবার মত দুঃসময় আমার এখনও হয়নি ,এই হল আমার মা। মা দিবসে প্রতি বছর মাকে বেশ কয়েকবার ফোন দিতাম। প্রতিদিনের চেয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি।
প্রথমেই তাকে জানতাম আজ বিশ্ব মা দিবস। মা হাসত আর বুঝত তার পাগলী মেয়েটা তাকে আজ অসংখ্যবার ফোন দিবে। আজ আমার মা নেই,২০১১ এর ১৬ নভেম্বর আমি তাকে হারিয়েছি,না, মাকে চিকিৎসা করাতে পারিনি। ডাক্তারবাড়ি নেয়ার পথেই মা শেষ। মা ছাড়া পৃথিবী আমি ভাবতে পারতাম না কিন্তু তাকে ছেড়েইতো কতদিন ধরে বেঁচে আছি ! মাকে হারানোর পরে আর গ্রামে যাইনি ঐ বাস্তব সত্যটি দেখতে চাইনা বলে।
ভাবি মা বেঁচে আছে। মার ফোন নাম্বারটা এখনও সেভ করা আছে ভাবি যদি অলৌকিক কিছু ঘটে যায়। আজ বিশ্ব মা দিবসে আমার সেই মাকে ভূলে কীভাবে থাকি ? চিৎকার দিয়ে কখনও কখনও মাকে খুব ডাকতে ইচ্ছে করে,আমি পারিনা। এখন আমার নতুন একটি পরিবার আছে। সেখানে বাবা মা আছেন।
প্রতিদিন সকাল আটটার মধ্যে তাদের ফোন না দিলে তারা অস্থির হয়ে ওঠেন। স্কুলে যেমন হাজিরা দিতে হয় তেমনি প্রতিদিন তাদের কাছে হাজিরা দেয়া আমার একপ্রকার রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন সকালের আমার মাকে দেয়া ফোনটা তাদের দেই। মা দিবসের ফোনটা হয়তঃ শাশুড়ী মাকে দিব। বলব,হ্যাপি মাদারস ডে টু ইউ।
কারন এসব আধুনিক শিষ্ঠাচার আমি খুবই পছন্দ করি। সবাইকে বলি সম্পদ থাকতে তার গুরুত্ব দিন। বিশেষ করে ছেলেরা । একবার মা নামক সম্পদটি হারিয়ে গেলে মা ডাকতে না পারার যন্ত্রনা আপনাকে ভাল থাকতে দিবেনা। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।