যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে. যদি কেড়ে নিতে বলে
কবিতা ঠেসা খাতা
জেনো, কেড়ে নিতে দেব না।
যদি ছেড়ে যেতে বলে
শহুর কথকতা
জেনো আমি ছাড়তে দেবো না।
অহনা আমার কাছে যেদিন প্রথম এসেছিল সেদিন তাকে খুব একটা ভালভাবে দেখা হয়ে উঠেনি। যদিও তাকে ছোটবেলা থেকে চিনি আমি। সে আমার পাশের বাসায় থাকে।
সে কারণে বলা যায় প্রতিবেশী। কিন্তু তারপরও কখনও সেভাবে তার সাথে কথা বা দেখা হয়ে উঠেনি। ছোটবেলা থেকে আত্মকেন্দ্রিক ছিলাম বলেই নিজেকে নিয়ে আর নিজের পরিবারকে নিয়ে সদা ব্যস্ততায় কেটে গিয়েছে সময়।
যদিও অহনা আমার বাসায় বিভিন্ন ছুতায় বার বার আসতো। আমি দেখেও না দেখার ভান করতাম।
তখন তার মনে আমাকে নিয়ে কি খেলা চলতো আমি কখনও তা ভেবেও দেখিনি। এদিকে লোকমুখে শুনেছিলাম সেই কলেজ জীবন থেকে অহনা কাকে যেন ভালবাসে। তার থেকেও বড় কথা ও বেশ চঞ্চল স্বভাবের মেয়ে।
একদিনের কথা খুব মনে পরে। সেদিন সকালে ঘুমে ছিলাম।
যেহেতু অনেক রাত করে বাসায় এসেছিলাম তাই রাতে ঘুমাতে দেরি হয়েছিল। এ জন্য ভেবেছিলাম সকাল সকাল না উঠে একটু বেলা করে উঠবো। কিন্তু যা ভাবি তা কি আর হয়!! সকাল তখন ৯ টা বাজে হয়ত, অহনা আমার রুমে এসে জোরে একটা চিৎকার মারলো। হুট করে ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ায় তরফর করে উঠে দেখি আমার সামনে অহনা দাঁড়ানো। চিৎকার দেয়ার কারণ জিজ্ঞেস করতেই একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো যে ইচ্ছে করে দিয়েছে।
তার এমন পাগলামী দেখে আমার মেজাজ খারাপ হতে যেয়েও হল না। কারণ অহনার সেই মিষ্টি হাসি। ওর চোখ কি যেন বলতে চাইছিল বার বার। মনে হচ্ছিল ওর মুখ থেকে কথা বের না হয়ে চোখের ইশারায় বের হচ্ছে। বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকাটা শোভন না দেখে চোখ নামিয়ে ফেললাম।
অহনা তখন ও আমার দিকে অপলক তাকিয়ে ছিল। পরে অবশ্য সে কিছু না বলে রুম থেকে চলে গিয়েছিল।
তার চোখের ভাষা, না বলা কথা আমি কখন ও পড়তে পারিনি। যেহেতু আমার তার প্রতি খুব একটা আগ্রহ ছিল না। সেদিন পাড়াতো এক ছোট ভাই এসে আমার সাথে গল্প জুড়ে দিল।
কথায় কথায় অহনার কথাও উঠলো। সে জানালো অহনা নাকি খুব জেদী মেয়ে। মনের কথা কাউকে বলতে চায় না। তবে সে নাকি একজনকে খুব বেশি ভালবাসে। আর এই কথা তার পরিবারে নাকি একমাত্র ওর মা ছাড়া কেউ জানেন না।
একদিন সন্ধ্যায় তার বাসায় গিয়েছিলাম একটা জরুরি কাজে। তার বাবার সাথে কথা বলছিলাম। সেই সময় আড়াল থেকে বার বার অহনা আমাকে ইশারা করছিল যেন যাওয়ার আগে তার সাথে কথা বলে যাই। কিন্তু তার এই ইশারা দেখেও না দেখার ভান করে গিয়েছি। এ সময় হঠাৎই চোখ পড়ে যায় আন্টির দিকে।
উনি খুব মলিন আর হতাশ মুখে বসে আছেন আর আমাদের কথা শুনছেন। আমি তাঁর এমন চেহারা দেখে সেদিন কিছুই জিজ্ঞেস করতে পারি নি। তবে সেই রাতে আমার ঘুম আসে নি।
এই ঘটনার প্রায় ১ মাস পর অহনার বিয়ের নিমন্ত্রণ পত্র নিয়ে আন্টি আর অহনার ছোট ভাই এসেছিল। তাঁদের চেহারা দেখে মনে হয়েছিল তারা এই বিয়েতে রাজি নয়।
কিন্তু মেয়েকে বিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন বয়স হয়ে গিয়েছে এবং ভাল পাত্র পেয়েছেন বলে। বিয়ের দিন আমি অবশ্য সকাল থেকেই বিয়ে বাড়িতে ছিলাম কাজ দেখাশোনা এমন কি নানারকম কাজে সাহায্য করার জন্য। এতে আন্টি খুব খুশি হয়েছিলেন। তবে উনার মনে যে একটা চাপা কষ্ট ছিল সেটা বুঝতে আমার কোন সমস্যাই হয় নি।
পুরো পরিবার আজ বিয়ের দিনেও কেমন একটা মলিন চেহারা নিয়ে আছে।
অনেকে আবার আড়ালে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে যা আমার দৃষ্টি এড়ায় নি। অহনার ছোট ভাই আমাকে কিছু বলবে বলেছে কিন্তু কি একটা শংকায় সে বলে নি। বার বার জিজ্ঞেস করলেও কোন উত্তর না দিয়ে চলে গিয়েছে। বিয়ে বাড়িতে অহনার সাথেও বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছে কিন্তু তেমন উচ্ছাস তার মাঝে দেখি নি। বরং আমাকে দেখে দৌড়ে পালিয়েছে।
আমার মনের মধ্যে রীতিমত ঝড় বয়ে যাচ্ছে তাদের এহেনো আচরণে। অহনাকে বিদায় দেয়ার আগ মুহুর্তে তার গাড়ির কাছেই ছিলাম শেষ বিদায় দেয়ার জন্য। তখন কেন জানি নিজের অজান্তেই চোখের কোণে পানি এসে গেল। আমি নিজেই এতে অবাক হলাম। মনে হচ্ছিল কি জানি আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে ক্রমাগত।
মনে হচ্ছিল আর কোনদিন সেই দিনগুলো আর ফিরে আসবে না। এত কাছে থাকা সত্তেও আমি কি জানি হারালাম। নিজের মনকেই তখন সামলাতে পারছিলাম না। আর তাই একটি কথাই মনে হচ্ছিল বার বার -
এত কাছে তুমি তবু হায়
কত যে দূরে!!
কেন যে ভালবাসি নি তোমাকে?
তাহলে অহনাও কি আমাকে ............। ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।