আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রুমানার অন্ধত্ব হয়ত আর ঘুচবে না, কিন্তু যারা অন্ধ নন তারা দেখতে শিখবেন কবে?

প্রশ্ন করেই যাব অবিরত সামুতে যখন কোনো পোস্ট স্টিকি হয় তখন তা সবার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। কোনো পোস্ট স্টিকি হওয়ার মানে হল এ পোস্ট কোনো একটি বিশেষ কারণে গুরুত্বপূর্ণ বা অতি গুরুত্বপূর্ণ। একটি মেয়ে নৃশংসভাবে তার স্বামী কর্তৃক নির্যাতিত হয়ে দুটি চোখই হারিয়ে বসেছে, যেকোনো মানব দরদী তাতে বিচলিত না হয়ে পারেন না। কিন্তু একজন পোস্ট দিয়েছেন- “চোখ হারানো রুমানা কি পারবে আমাদের সবার অন্ধত্ব ঘোচাতে? রুমানাকে নিয়ে তন্ত্র ব্যবসা বন্ধ হোক” আর এটা স্টিকি করা হয়েছে। কী গুরুত্ব-পূর্ণ পোস্ট না এটা! শিরোনামটাই আপত্তিকর।

কেন, রুমানাকে কেন সবার অন্ধত্ব ঘুচাতে হবে বরং সবার কি উচিত নয় একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রুমানার অন্ধত্ব ঘুচিয়ে দেয়া? বিশেষ করে যেসব সুশীল রুমানার নির্যাতনকারী স্বামীর প্রতি বিভিন্ন কৌশলে সহানুভুতি প্রকাশ করছেন তারা কি কোনোভাবে পারবেন রুমানার অন্ধত্ব ঘুচাতে? আর রুমানাকে নিয়ে তন্ত্র ব্যবসা আবার করছে কে? আমরা সবাই মেয়েটির প্রতি সহানুভুতি দেখাচ্ছি যা মানুষ হিসাবে আমাদের দায়িত্ব তা-ই হয়ে গেল তন্ত্র ব্যবসা? কোনো নারী নির্যাতিত হলেই আমাদের সমাজে নারীর চরিত্র হননের ধুম পড়ে যায়। রুমানার কোথাকার কোন পুরুষের সাথে সম্পর্ক থাকার কথা নরপশু সাইদ বলেছে আর অমনিতেই তা আপ্তবাক্যে পরিণত হল। আমি ভাবছি, এমনকি রুমানাকে যদি পুরোপুরি সুস্থ করা যেত তারপরেও তিনি আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারতেন না তার উপর নানাবিধ উদ্ভট অপবাদের দরুন। আরেকজন পোস্ট দিয়েছেন, “সাঈদকে শয়তান আর রুমানাকে দেবী ভাবা ঠিক হবে না” । আমি বুঝি না, এরকম জঘন্য অপরাধের পরও সাইদকে ‘শয়তান’ ভাবা কেন ঠিক হবে না।

আর রুমানাকে দেবী ভাবছে কে? এইসব আবলামি কথাবার্তা শোনলে একদম জায়গামত কইস্যা লাথি লাগাতে ইচ্ছে করে। বাইরের কোনো একটা পুরুষের সাথে সম্পর্ক থাকলেই তা হয়ে যায় পরকীয়া, হায় সেলুকাস!! এখন কথা হল, নারীর প্রতি এ ধরণের নির্যাতনের সাথে পুরুষতন্ত্রের যোগ কি? আমাদের সমাজ পুরুষতান্ত্রিক, এখানে আমাদেরকে একদম ছোটবেলা থেকে শেখানো হয় পুরুষরাই শ্রেষ্ট, পুরুষরা নারীর উপর কর্তৃত্ব করতে পারে ইত্যাদি। আমরা পরিচিত হই বাবার পরিচয়ে। একজন নারী উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে তার ভাইয়ের অর্ধেক পেয়ে থাকেন আর তা করা হয় ধর্মের দোহাই দিয়ে। আর কোনো ক্ষেত্রে ধর্মকে মানেন আর না মানেন বিয়ের ক্ষেত্রে, উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে ধর্ম আসবে কারণ এটা দিয়েই অতি উত্তম রুপে নারীদের দমিয়ে রাখা যায়।

স্বভাবতই একটি পুরুষতান্ত্রিক সমাজে একজন পুরুষ চায় তার স্ত্রী চলবে তার কথামত, তার কথায় উঠবে আর তার কথায় বসবে, স্ত্রীর বাইরের কোনো পুরুষের সাথে কোনোরুপ সম্পর্ক থাকবে না। যে মেয়ে তা মানবে না তাকে উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। ‘নারী নির্যাতন’ কথাটাই একটু ভাবুন। এ কথাটির এত প্রয়োজন কেন? কারণ নারী-ই মূলত নির্যাতিত হয় একটি পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এবং প্রায়ই তা হয় বিভৎস। সমাজকে সুস্থ রাখার জন্য তাই মানবতাবাদীরা নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার।

এখন ‘নারী নির্যাতন’ কে যদি পুরুষতান্ত্রিক সমাজের অনাচার বলে না ধরা যায় তবে কালোদের উপর সাদাদের অত্যাচারকে কেন বর্ণবাদী আচরণ বলা হবে? ভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকদের উপর নিপীড়নকে, তাদের প্রতি খারাপ দৃষ্টিভঙ্গি পোষণকে সাম্প্রদায়িকতা বলা হয় কেন? অপরাধ শুধু অপরাধ নয়। এর পেছনে কারণ থাকতে বাধ্য। আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারীদের বিষয়ে খুব একটা সচেতন কোনোদিনও ছিল বলে মনে হয় না। যদি বাইরের জগতের চাপ ও সহযোগিতা আমাদের উপর না থাকত তবে এখন আমাদের নারীসমাজের যে রুপ দেখতাম তা কল্পনারও অতীত। অত্যন্ত অবোধগম্য ব্যাপার হল, একটি সমাজের অর্ধেককে ঘরে বন্দি রেখে সমাজের যে উন্নয়ন সম্ভব নয় তা বুঝতে পুরুষতান্ত্রিক সমাজগুলো এত বেশি সময় কেন নিচ্ছে? রুমানা একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।

হ্যা, তার কাজ ছিল মানুষকে আলোকিত করা, মানুষের অজ্ঞানতাজনিত অন্ধত্ব ঘোচানো। তিনি দৃষ্টিসম্পন্ন থাকলে এ কাজ চালিয়ে যেতে পারতেন নির্দ্বিধায় এবং কেউ এ ধরণের গুপ্তকেশ পোড়ানি সুশীলতা দেখিয়ে কোনো পোস্ট দিতে পারতেন না যার শিরোনাম “চোখ হারানো রুমানা কি পারবে আমাদের সবার অন্ধত্ব ঘোচাতে? রুমানাকে নিয়ে তন্ত্র ব্যবসা বন্ধ হোক” আর তা স্টিকিও হত না সামুর মত একটি ব্লগে। টিউটোরিয়াল :: কিভাবে লিখবেন একটি পুরুষবাদী পোস্ট! এ কাদের কবলে আমাদের প্রিয় সামহোয়ারইন ব্লগ!  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.