আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কাপ্তাইয়ে পৃথিবীর দীর্ঘতম সাপ

কাপ্তাই উপজেলায় পৃথিবীর দীর্ঘতম বিরল প্রজাতির সাপ ধরা পড়েছে। গত ৮ জুন রাত প্রায় ১২টার সময় উপজেলার শীলছড়ি নামক এলাকার স্থানীয় আব্দুর রহমানের মুরগির খোয়াড়ে ঢুকে সাপটি পরপর দুটি হাস খেয়ে ফেলে, দুটিকে মেরে ফেলে এবং আরেকটি হাস খাবার জন্য মুখে নেয়। এ সময় অন্য হাঁস মুরগির চিৎকারে আব্দুর রহমান ঘুম থেকে জেগে খোয়াড়ের সামনে গিয়ে দেখেন বিশাল এক অজগর। আব্দুর রহমানের স্ত্রী বিবি হাজেরা জানান তার খোয়াড়ে বিশাল অজগর দেখে তিনি প্রথমে ভয় পেয়ে যান। পরে চিৎকার দিলে স্থানীয় রয়েলে ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার হোসেন, শামীম হোসেন, রাশেদ আলমসহ অনেকে ছুটে আসেন।

উপস্থিত লোকজনের সহযোগিতায় সাপটিকে বস্তায় ভরে রাখেন বলে আব্দুর রহমানের স্ত্রী বিবি হাজেরা আজাদীকে বলেন। তবে তাদের ধরা এই সাপটি যে পৃথিবীর মধ্যে সব চেয়ে দীর্ঘ এবং বিরল প্রজাতির তা জানার পর থেকে তাদের নিজেদের প্রতি অন্য রকম অনুভূতি লাগছিল বলে ঐ দম্পতি জানান। বিরল প্রজাতির অজগর ধরারপড়ার খবর পেয়ে শীলছড়িতে অবস্থিত রামপাহাড় বিট কর্মকর্তা মোঃ নাসির উদ্দিন দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন বলে আমাদের প্রতিনিধি কাজী মোশাররফ হোসেনকে জানান। অবশ্য তিনিও সাপটি দেখে তাৎক্ষনিক বুঝতে পারেননি যে এটি দুর্লভ প্রজাতির অজগর সাপ। তবে সাপটিকে যাতে কেউ পিটিয়ে মেরে না ফেলে সেজন্য তিনি সবাইকে অনুরোধ করেন।

সাপটির বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের সহকারি বন সংরক্ষক (এসিএফ) জাহেদুর রহমান মিয়া জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামের বনাঞ্চলে প্রায় সময় অজগর ধরা পড়ে। কিন্তু শীলছড়ি থেকে আটক অজগরটি ছিল বিরল প্রজাতির। এটি অজগর ‘গোল বাহার’ প্রজাতির সাপ বলে তিনি জানান। দেখতে অজগরেরমত মনে হলেও সাপের সারা গায়ে হলুদ রঙের আবরণ ছিল। মাথাটি সম্পূর্ণ হলুদ।

প্রায় ৯ ফুট লম্বা গোল বাহার প্রজাতির সাপটি পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্য কোথায় এর আগে দেখা না গেলেও এটি পার্বত্য চট্টগ্রামের গভীর বনাঞ্চলে রয়েছে বলে এসিএফ জাহেদুর রহমান মিয়া জানান। তবে সাপটি ‘অতি বিপন্ন’ বলে তিনি মন্তব্য করেন। এ জাতের সাপ সর্বোচ্চ ৩২ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। আর সর্বোচ্চ লম্বা হলে এই সাপটির আকার হয় পৃথিবীতে যত প্রকারের সাপ আছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড়। অর্থাৎ শিলছড়িতে যে সাপটি স্থানীয় লোকজন ধরেছে সেটি পৃথিবীর দীর্ঘতম বিরল প্রজাতির ‘গোল বাহার’ অজগর সাপ বলে এসিএফ জানান।

এটি নিশাচর সরিসৃপ প্রাণী। খাদ্যের জন্য রাতে বিচরণ করে এবং একবার পেট ভরে খেয়ে টানা কয়েকদিন ঘুমায়। এটি বিষাক্ত নয়। সাধারণ অজগরের মত গোল বাহার মোটা হয়না তবে ক্ষীপ্র গতিতে দৌড়াতে পারে। এটি সাধারণত ২০ বছর বাঁচে।

আটক সাপটির বয়স ২ বছর হতে পারে বলে জাহিদুর রহমান জানান। সাপটি জঙ্গলে এবং পানিতে সমানভাবে বসবাস করতে পারে। গাছের অনেক উপরেও এটি উঠতে পারে। ‘বাংলাদেশের বিপন্ন বন্য প্রাণী’ গ্রন্থের তথ্য অনুযায়ী গোল বাহার সাপটি ক্রমেই বিলীন হয়ে যাচ্ছে বলে এসিএফ জানান। তবে শীলছড়িতে গোলবাহার আরো থাকতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোঃ সুবেদার ইসলাম আজাদীর কাপ্তাই প্রতিনিধি কাজী মোশাররফ হোসেনকে জানান, বিরল প্রজাতির সাপ ধরার খবর পাবার পর থেকে তিনি সার্বক্ষনিক এর খোঁজ রাখেন। সাপটির গায়ে যাতে কোন প্রকার আঘাত না লাগে সে জন্য তিনি স্থানীয় বন কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন। এ ধরনের সাপ ‘মহা বিপন্ন’ হবার তালিকায় রয়েছে বলেও তিনি জানান। সাপটিকে গভীর জঙ্গলে ছেড়ে দেয়ার জন্য তিনি নির্দেশ দেন। ছাড়ার পর যাতে অন্য কোন ব্যক্তি গোল বাহারকে আবার ধরে ফেলতে না পারে সে জন্য বন কর্মকর্তাদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন বলেও ডিএফও জানান।

ডিএফও সুবেদার ইসলামের নির্দেশে পরদিন ৯ জুন দুপুর ১২টার সময় অজগর গোল বাহারকে কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী সীতা পাহাড়ের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অবমুক্ত করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় বলে এসিএফ জাহিদুর রহমান মিয়া জানান। এ সময় সাংবাদিক কাজী মোশাররফ হোসেনসহ অন্যান্যরা সাপটির ছবি তোলার জন্য প্রস্তুত থাকেন। ধারণা ছিল অজগর সাপ হেলে দুলে আস্তে ধীরে জঙ্গলের দিকে যাবে। তখন সাপের গতিবিধির ছবি তোলা হবে। সে হিসেবে সবাই ক্যামেরা নিয়ে প্রস্তুত ছিলেন।

কিন্তু বস্তার মুখ খোলার সাথে সাথে সাপটি দ্রুতবেগে বস্তা থেকে বের হয়। সবাইকে অবাক করে দিয়ে জঙ্গলের দিকে না যেয়ে সাপটি দ্রুতবেগে কর্ণফুলী নদীর দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এত দ্রুততার সাথে সাপটি নদীর পানিতে নেমে গেল যে সাংবাদিক কাজী মোশাররফ হোসেন ছাড়া অপর কেউ সাপটির ছবি তুলতে পারলেননা। সাপের আচরণে অনেকটা হতবিহবল হয়ে পড়েন এসিএফ জাহিদুর রহমান মিয়া ও রাম পাহাড় বিট কর্মকর্তা মোঃ নাছির উদ্দিন। এসিএফ বলেন ভেবেছিলাম পেটের ভেতর আস্ত দুটি হাস, তার উপর সারা রাত বস্তায় বন্ধী ছিল।

বস্তা থেকে বের হয়ে সাপটি আস্তে আস্তেই জঙ্গলের দিকে যাবে। কিন্তু সাপের ক্ষীপ্র গতিদেখে তিনি নিজেও অবাক হন বলে জানান। অবশ্য সাপটি যে সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছে তার দ্রুত গতি সেটাই প্রমাণ করে। তিনি বলেন আমাদের দেশ থেকে অনেক বণ্য প্রাণী পশু পাখি সরিসৃপ হারিয়ে যাচ্ছে। আটক অজগরটিও নিশ্চিহ্ন হবার তালিকায় রয়েছে।

এখন পর্যন্ত যে গোলবাহার টিকে আছে এবং তা কাপ্তাইয়ের বনাঞ্চলে রয়েছে এটা ভেবেও আমাদের ভালো লাগছে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।