জানার আগ্রহ মানুষের চিরন্তন, বই হলো তার বাহন, আইনের মৃত্যু আছে কিন্তু বইয়ের মৃত্যু নেই।
চট্টগ্রাম, ০৯ অক্টোবর: কাপ্তাইয়ের চিৎমরম উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন ক্রীড়া শিক্ষক কর্তৃক একই বিদ্যালয়ের লাইব্রেরীয়ান উপজাতীয় তরুনীর শ্লীলতাহানির চেষ্ঠার ঘটনায় তদন্ত করতে গিয়ে “কেঁচো কুঁড়তে গিয়ে সাপ” বের হয়ে আসছে।
একই স্কুলের ৭ম শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণীতে অধ্যায়নরত অর্ধ শতাধিক ছাত্রীকে যৌন নিপিড়নের অভিযোগ উঠেছে শিক্ষক আবদুল কাদের’র বিরুদ্ধে।
কাপ্তাইয়ে এ যেন আর এক পরিমল মাষ্টার। স্কুল ছাত্রীদের এই যৌন নিপীড়নের ঘটনা দীর্ঘদিন চাপা থাকলেও গত ২ অক্টোবর বিদ্যালয়ের খন্ডকালিন লাইব্রেরীয়ান উপজাতীয় তরুনী ম্যামাচিং মারমাকে শ্লীলতাহানির চেষ্ঠার পর ঘটনা জানাজানি হয়।
বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে স্কুল ক্যাম্পাস।
স্কুলের শত শত ছাত্রছাত্রী, সাধারন তরুন সমাজ মানবন্ধন বিক্ষোভ সমাবেশ করলেও এই পাষন্ড শিক্ষককে এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি জরুরী বৈঠক ডেকে উক্ত শিক্ষককে পাঠদানে বিরত রেখে শো-কজ করে তাদের দায়িত্ব শেষ করেছেন। এই ঘটনায় তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে এলাকায়।
চিৎমরম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয়সীম বড়ুয়া জানান, বিদ্যালয়ের ক্রিড়া শিক্ষক আবদুল কাদের দীর্ঘদিন ধরে একই বিদ্যালয়ের খন্ড-কালিন লাইব্রেরীয়ান উপজাতীয় তরুনী ম্যামাচিং মারমা (২২) কে নানাভাবে উত্তেক্ত করে আসছিল।
কথিত শিক্ষক আবদুল কাদের এই উপজাতীয় তরুণীকে মোবাইল ফোনে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে উত্তেক্ত করার পাশাপাশি একাধিকবার সরাসরি কু-প্রস্তাব দেয়।
শিক্ষকের এমন কু-প্রস্তাবে সাড়া না দেয়ায় গত ২ অক্টোবর বিদ্যালয় ছুটির পর ছাত্র-শিক্ষকরা স্কুল ত্যাগ করলে শিক আবদুল কাদের লাইব্রেরীয়ান ম্যামাচিং মারমাকে স্কুলে একা পেয়ে শ্লীলতাহানীর চেষ্ঠা করে। এই সময় ম্যামাচিং মারমা কৌশলে আবদুল কাদেরের পাশবিকতা থেকে নিজেকে রক্ষা করে প্রথমে তার পরিবারকে ঘটনা জানায় এবং পরে লিখিত আকারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের বিভিন্নস্তরে ঘটনাটি জানিয়ে দেয়।
মুলতঃ এর পর থেকেই কাদের মাষ্টারের চাঞ্চল্যকর যৌন নিপীড়নের নানা কাহিনী ফাঁস হতে শুরু করে। কাদের মাষ্টারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গত রোববার বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি জরুরী বৈঠক আহ্বান করে বিদ্যালয়ের ভিতরেই।
বৈঠক প্রসঙ্গে পরিচালনা কমিটির সভাপতি এবং কাপ্তাই উপজেলা চেয়ারম্যান অংশুইছাইন চৌধুরী জানান, বিদ্যালয়ের খন্ডকালীন লাইব্রেরীয়ান ম্যামাচিং মারমা’র শ্লীলতাহানি চেষ্ঠার ঘটনা তদন্ত করতে পরিচালনা কমিটির জরুরী বৈঠক ডাকা হলে বিদ্যালয়ের অসংখ্য ছাত্রী শিক্ষক আবদুল কাদেরের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের দীর্ঘদিন ধরে যৌন নিপীড়ন করছে বলে অভিযোগ এনেছে।
চিৎমরম উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণী ও ১০ম শ্রেণীর কয়েকজন ছাত্রী (সংগত কারনে নাম প্রকাশ করা হলো না) এই প্রতিবেদককে জানান, ক্রীড়া শিক্ষক আবদুল কাদের বিভিন্ন সময়ে তাদের গায়ে হাত দিয়ে কথা বলতো। কাস রুমের ভিতরেই নানা ধরনের অশ্লীল কথা বলতো ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে।
ছাত্রীরা জানান, উক্ত শিক্ষক তার স্ত্রীর সাথে গভীর রাতে কী করে এসব কথাও ছাত্রীদের বলতো। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের কথা বলে শরীর স্পর্শ করতো, মোবাইল ফোনে অশ্লীল ভিডিও ছাত্রীদের জোড়পূর্বক দেখতে বাধ্য করতো এবং ছাত্রীদের কু-প্রস্তাব দিত।
সম্প্রতি বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর এক ছাত্রী কথিত এই শিক্ষকের কু-লালসার শিকার হয়ে গর্ভবতী হয়ে পড়লে ঘটনাটি গোপনে সমঝোতা করে ঐ কাদের মাষ্টার।
বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা জানান, চিৎমরম উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম থেকে ১০ম শ্রেণীর কমপক্ষে অর্ধশত ছাত্রী কাদের মাষ্টারের যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে।
এ ব্যাপারে কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম নজরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘চিৎমরম উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্রিড়া শিক্ষক আবদুল কাদেরের বিরুদ্ধে লাইব্রেরীয়ানের শ্লীলতাহানীর চেষ্ঠাসহ একাধিক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনা মৌখিকভাবে জেনেছি।
ঘটনা জানার পর শ্লীলতাহানীর শিকার লাইব্রেরীয়ান ম্যামাচিং মারমার সাথেও আমি কথা বলেছি। তবে লিখিত কোন অভিযোগ না আসায় এবং ম্যমাচিং মামলা করতে আগ্রহী না হওয়ায় প্রশাসনিকভাবে এখনো উক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
’
তবে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি উক্ত শিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করছে এবং উপজেলা প্রশাসন থেকে বিষয়টি মনিটরিং করা হচ্ছে বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম নজরুল ইসলাম নিশ্চিত করেন।
চিৎমরম উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কাপ্তাই উপজেলা চেয়ারম্যান অংশুছাইন চৌধুরী জানান, শিক্ষক কাদের মাষ্টারের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
বিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী তাকে শো-কজ করা হয়েছে এবং বাধ্যতামুলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। শো-কজের জবাব পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
চিৎমরম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী থোয়াইচিং মারমা জানান, চিৎমরম উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবদুল কাদের কর্তৃক বিদ্যালয়ের লাইব্রেরীয়ান ম্যামাচিং মারমার শ্লীলতাহানীসহ অর্ধশতাধিক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় এলাকায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
ইতিমধ্যে ছাত্রছাত্রীরা বিক্ষোভ মিছিল ও মানবন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে।
এই ধরনের পাশবিক ঘটনার জন্য দায়ী কথিত এই শিককের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান ইউপি চেয়ারম্যান।
কাপ্তাই উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দ মাহমুদ হাসান জানান, চিৎমরম উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবদুল কাদেরের বিরুদ্ধে অনেক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ পাওয়া গেছে মৌখিকভাবে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকও ঘটনাটি মৌখিকভাবে জানিয়েছেন।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহন করছে বলে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নিশ্চিত করে।
এদিকে কাপ্তাইয়ের সাধারণ ছাত্রছাত্রীসহ সাধারণ মানুষ এই সিরিয়াল যৌন নিপীড়ক শিক্ষক আবদুল কাদেরকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন।
সুত্রঃ
http://ctgtimes.com/archives/636
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।