যান্ত্রিকতার স্বরচিত কারাগারে আমি এক অযান্ত্রিক মানুষ ১.
প্রচন্ড মন খারাপ করা সময় কাটাচ্ছি আমরা । আমরা বাঙ্গালিরা । জাতি হিসেবে । মানুষ হিসেবেও । মানুষের সঙ্খ্যাটা নেহাত কম ছিলো না , হয়ত আজো নেই ।
কিন্তু অমানুষের সঙ্খ্যাটা হঠাত বেড়ে গেছে বহুগুণে । তাই মাঝে মাঝে চমকে উঠে ভাবি “আমি ঠিক আছি তো ?” । কে জানে কখন মানবিক মনুষ্য সমাজের আরাধ্য সিড়ি থেকে আমারো ঘটতে পারে পদস্খলন !! চাপা দীর্ঘশ্বাস বুকে চেপে হতাশ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি মানুষ-অ্মানুষের সীমারেখার প্রান্তে ।
একজন মাকে আমরা লাঞ্ছিত করছি । জাতির এক শ্রদ্ধেয়া শিক্ষিকাকে জর্জরিত করেছি ।
একজন মানবিক মানুষকে আমরা রক্তাক্ত করেছি । হাসান সায়্যিদের মত নরপশু সমাজে হাতেগোনা নয় । দিন কে দিন এদের সঙ্খ্যা বেড়েই চলেছে । আশঙ্কার জায়গা এখানে যে, এতদিন এরা বনে জঙ্গলে লুকিয়ে থাকত । মাঝে মাঝে শহুরে মানুষদের আক্রান্ত করে আবার পালিয়ে যেত , অথচ এখন এরা নিশ্চিন্তে ঘুমোয় একেবারে মানব সমাজের হৃতপিন্ডের মাঝে ।
শঙ্কাটা এখানেই । তবে কি মানুষ আর অমানুষের ব্যবধান কমে আসছে ? নাকি আমরা অন্ধ হয়ে যাচ্ছি ক্রমাগত ? কে জানে ??
রুমানা ম্যামের কাছে ক্ষমা চাইবার ভাষা হয়ত প্রস্তুত আছে আমাদের সমাজের তথাকথিত ন্যায়পালদের অভিধানে । কিন্তু শতভাগ নিশ্চিত করে বলতে পারি ছোট্ট আনুশার কাছে ক্ষমা চাইবার ভাষা আজো এই পৃথিবীতে সৃষ্টি হয় নাই ।
আর ওই শকুনের বিচার ?? আমরা কি চিরকাল বোকা থেকে যাবো ? কার কাছে বিচার চাচ্ছি আমরা ??? কেউ কোনকালে কারো বিচার হতে দেখেছে এই মাটিতে ??? আমাদের রাষ্ট্রের কাছে বিচার চাওয়া কেবল অর্থহীন তাই নয় । বরং নির্বুদ্ধিতারও পরিচায়ক ।
আসুন আমরা বরং আনুশার কাছে বিচার চাই । শিশূদের প্রার্থনা নাকি আমাদের ঈশ্বর ফেরান না । তাই আনুশার কাছে বিচার চাইলে যদি উপর থেকে তিনি কিছু একটা করেন …।
হ্যা আনুশা, তোমাকেই বলছি , আমদের একটু উপকার করতে পারো তুমি ?? খুব বেশি কিছু না । আমাদের খুব করে অভিশাপ দিও please. তুমিই পারো কিছু একটা করতে ।
আর কেউ কিছু করবে না । রাষ্ট্র ? সরকার ?? বিরোধীদল ??? মানবাধিকার কমিশন ? কিংবা এমন কি এই আমরাও ? নাহ সবাই তাদের নিজ নিজ শোখিন বিলাসী শোবার ঘরে শহরের শ্রেষ্ঠ নর্তকীদের নিয়ে ব্যস্ত । আনুশা সোনা , তুমি দেখোনা please , কিছু করতে পারো কিনা !!!!
২.
জাতি হিসেবে আমরা ব্যাধি গ্রস্থ । আমরা সু্যোগ পেলেই কাউকে কষে গালি দিলে বড় শান্তি পাই । নিজের মধ্যে একটা বড়ত্ব এসে যায় ।
হরিণ শাবক পানি ঘোলা করে নি তো কি হয়েছে ? কোন এক কালে এর বাবা দাদারা নিশ্চয় ই করেছিল । তাই ওদের জাতটাই খারাপ ।
“পশু হাসান BUET এর student ছিল । সে যেহেতু এমন অমানুষি করেছে , সুতরাং নির্দ্বিধায় বলা যায় , buetian মাত্রই আমানুষ !!!” – গত কয়েকদিনের ব্লগ গুলোর অসংখ্য লেখা লেখির মধ্যে এই মতামতটা ছিল অন্যতম । আমি অবাক হই ।
মনের ঈর্ষার বহ্নিজালার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে আমরা এতটাই ব্যস্ত যে , সুযোগ পেলে হাতছারা করতে চাই না । তা সে মুমুর্ষু রোগির শিওরে বসেই হোক আর প্রচন্ড মানবিক বিপর্যয়ের ধ্বংসস্তুপের উপর দাড়িয়েই হোক ।
এই বাংলাদেশের মাটি যেমন একজন শেখ মুজিব কে জন্ম দিয়েছে ,সহস্র আলবদর-রাজাকারের প্রসব বেদনাও সেই মাটিই সহ্য করেছে । তাহলে কি এই রাজাকারদের জন্ম দেয়ার জন্য আমরা এই মাকে কলঙ্কিনি বলব ?
প্রতিবছর প্রায় এক হাজার প্রকৌশলি বের হয় এই buet থেকে । তাদের নৈতিক শিক্ষা দেয়ার দায়িত্ব কি শুধু তার উপর ই বর্তায় ??? কিংবা আদৌ কি বর্তায় ???? কত কত খ্যাতনামা প্রকৌশলি গড়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয় ।
তার হিসাব কি কেউ রাখে ??? দেশের প্রযুক্তির ও প্রযুক্তি শিক্ষার সে কান্ডারি । শুধু জ্ঞান বিতরণেরই নয় , জ্ঞান সৃষ্টিতেও BUET খ্যাত । তবে কেন এই এক হাসান নামক কুলাঙ্গারের দায় তাকে নিতে হবে যে কিনা তার পড়াশুনাটাও শেষ করতে পারে নি ??
সে গড়ে উঠেছে ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজে-যখন তার বেড়ে উঠবার প্রকৃত সময়, মনন গড়বার , মানুষ হবার শিক্ষা নেবার সময় । আমরা তাই বলে ক্যাডেট কলেজকে কষে চড় হাকাতে পারি না । তা তো আমাদের চিন্তনের সামর্থ আর মানসিক সুস্থতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে ।
হাসান তো বাংলাদেশে জন্মেছে । তবে কি বাংলাদেশে জন্মানো সব মানুষই পিশাচ ???????
ব্যাক্তিকে মানুষ করবার দায় হয়তো অনেকটাই সমাজের , কিন্তু তার অমানুষ হবার কারণটা তার চেয়েও বেশি তার নিজের এবং তার জৈবিক ধারাক্রমের । ।
কিন্তু যারা সুযোগ পেয়ে আমাদের সবাইকে অমানুষ পিশাচ বলতে পেছপা হচ্ছে না , তারা একবারো
ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ কে লক্ষ্য করে কিছু বলে না । যার অর্থ দাঁড়ায় , কেবল মানসিক বিকার গ্রস্থ চিন্তা থেকে নয় , হয়ত বিশেষ অন্তর্জালা থেকেই তাদের এই মতামত ।
সহজ ভাবে ভাবুন । সঠিক ভাবে ভাবুন । কেন এমন মানবিক বিপর্যয়ের মুহুর্তে বিভেদ তৈরি হবে ?? BUETian রা এই দেশের সাধারণ মানুষেরই সন্তান । হয়তো তাদের সঙ্খ্যাটা হাতে গোনা । কিন্তু তারাও আর সবার মতই ।
যারা স্বপ্ন দেখে নতুন কিছু গড়বার । জীবনের নতুন অর্থ উদ্বোধনের । একটি – দুটি কুলাঙ্গার কখনোই একটি গোষ্ঠির বা সমাজের বা দেশের দর্পণ হতে পারে না। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।