আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছোটবেলায় আমার কাছের মানুষগুলোর উপর করা আমার কিছু নির্মম অত্যাচার!

আপনি আমাকে পছন্দ করেন কি করেন না তাতে আমার কিছু যায় আসে না, আপনাকে খুশি করার জন্য আমি এ পৃথিবীতে আসিনি। আমার মেজ আন্টি একটা এনজিওতে চাকরি করেন আর আঙ্কেল একটা কলেজে পড়ান। চাকরির প্রয়োজনে তারা দুইজনেই গ্রামে থাকেন। মাঝে মাঝে ঢাকায় নানু বাসায় বেড়াতে আসলে দেখা হয়। ছোট ছোট ভাই বোনগুলোকে নিয়ে তখন আমাদের খুব মজা হয়।

দুপুরে আমি নানু বাসায় ঘুমানোর চেষ্টা করছি আর তখন আমার পিচ্চি খালাত ভাই আমাকে নানান ভাবে জ্বালাতনে ব্যাস্ত। জ্বালাতন বলে তো সে একটু পর পর এসে আমার কানে ফু দেয়, আমার গায়ের উপর লাফ দেয়। বললাম ভাইয়া একটু ঘুমাও, পিচ্চি উলটা আমাকে বলে না এখন ঘুম আসছে না, তুমি ঘুমাচ্ছ কেন? কি আর করব, ঘুমের চিন্তা বাদ দিয়ে তার সাথে গল্প করতে বসলাম। আমার আন্টি ফ্লোরে বসে আমাদের জন্য একটা খাবার বানাচ্ছিলেন, তিনি এসব দেখে বললেন, আব্বা তুমি কিন্তু এর থেকে বেশি দুষ্ট ছিলা! আন্টি এরপরে যা বলল শুনে আমি বেশ মজা পেলাম। আমি যখন ছোট ছিলাম তখন কিন্তু কেবল লাইন তেমন সহজলভ্য ছিল না শুধু বিটিভি ছিল।

তবে বিটিভিতে তখন ভাল কিছু প্রোগ্রাম দেখানো হত। বেশির ভাগ প্রোগ্রাম হত রাত ৮ টার বাংলা সংবাদের পরে। আন্টি, মামারা সারাক্ষণ পড়ালেখা করে অপেক্ষা করত এই সময়টার জন্য- টিভি দেখবে বলে। আর আমি নাকি এই সময়েই কান্নাকাটি শুরু করতাম, বাইরে যাব! কি আজব কাহিনী! আমাকে অসম্ভব আদর করত বলে তারা কিছু বলতেও পারতনা। এক একজন এক একদিন আমাকে নিয়ে ঘুরিয়ে আনত সেই সময়।

ছোট বেলায় আমাদের বাসা আর নানু বাসা কাছাকাছি ছিল। প্রতিদিন সকালে উঠে আরবি পড়তাম হুজুরের কাছে, পড়া শেষ হবার আগেই দেখতাম ছোট মামা এসে হাজির। স্কুলে ভর্তি হবার আগে প্রতিদিনের এটা একটা রুটিন হয়ে গিয়েছিল যে আমি নানুবাসায় যাব সারাদিন থাকব, রাতে আব্বু, আম্মু অথবা নানুবাসার কেউ আমাকে বাসায় দিয়ে আসবে। একদিন কি যেন খেয়াল হল আমার, আমি বললাম, আমি আজকে নানুবাসায় থাকব! ঠিক আছে, ওইদিন আমার নানুবাসায় থাকার ব্যাবস্থা করা হল। মোটামুটি সারাক্ষণ ভালই ছিলাম কিন্তু গভীর রাতে চিৎকার শুরু করলাম বাসায় যাব! এত রাতে বাসায় কিভাবে যাবা- এই ধরণের কথা শুনার জন্য আমি মোটেও তৈরি না! অবশেষে গভীর রাতে আমাকে বাসায় পৌঁছে দেয়া হল! আমার ছোট বেলার অনেকটা সময় কেটেছে আমার ছোট মামার সাথে।

মামার সাথে রেললাইন ধরে হেটে হেটে যেতাম অনেকদূর, আবার সন্ধার পরে ফিরে আসতাম। মামার সাথে রাস্তায় ক্রিকেট খেলতে নামতাম, অনেক ছোট ছিলাম বলে আমাকে খেলায় নেয়া হত না, আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতাম, মাঝে মাঝে ব্যাট ধরে দেখতে দেয়া হত আমাকে কিন্তু এত ওজন আমি তুলতে পারতাম না! মামার আর আমার একটা মজার খেলা ছিল সিড়ি দিয়ে কে আগে উঠতে পারে। আমি ছোট বলে আমার জেতার কোন চান্স থাকার কথা না কিন্তু মামা আমার কাছে ইচ্ছে করে হেরে যেত। একদিন মামা কেন যেন জিতে গেল। আর আমার সেকি রাগ! আমার রাগ কমাতে তখন তাকে আবার নিচে নামতে হয়েছিল, আমরা আবার দৌড় শুরু করলাম, স্বভাবতই এবার আমি জিতলাম! নানুর বাড়ির কথা তো অনেক বললাম, এবার দাদুর বাড়ির কথা কিছু বলি।

আমার দাদু একবার আমাকে নিয়ে পুরান বাড়িতে (আমরা তাই বলি) বেড়াতে গেলেন। আসার সময় অতিরিক্ত তাড়াতাড়ি করতে গিয়ে দাদু আমাকে কোলে করে বাড়িতে নিয়ে এলেন। আমি মৃদু প্রতিবাদ জানালাম কিন্তু দাদু সেটা তেমন পাত্তা দিল না। বাড়ি আসার পরে আমি তো অনেক কান্নাকাটি শুরু করলাম যে কেন আমাকে কোলে করে আনা হল? আমি কি হাটতে পারি না? হাটতে পারার পরেও কোলে করে আনার ব্যাপারটা ছোটবেলায় আমার খুব অপমানজনক বলে মনে হয়েছিল! যাইহোক আদরের নাতিকে আবার পুরান বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হল, আমি খুশি মনে পুরো পথ হেটে আসলাম। আমি পৃথিবীর গুটিকয়েক সৌভাগ্যবান মানুষের মধ্যে একজন যার দাদা, দাদু, নানা, নানু সবাই বেঁচে আছে যদিও তারা সবাই এখন কোন না কোন অসুখে ভুগছেন।

তাদের কাছে যে আদর পেয়েছি তা কখনো ভুলতে পারব না। তারা যাতে ভাল থাকে দোয়া করবেন। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.