পরনে রং-বেরঙের স্কুল পোশাকে আবৃত বাবা-মায়ের হাত ধরে শিশুটি স্কুলে যাছে কিম্বা বিনোদনে মেতে আছে ভাই বোনের সাথে,একটি শিশুর কথা আমরা এভাবে এ ভাবি।
আজকের শিশু আগামীর কর্ণধার।
দারিদ্রের কষাঘাতে সেই শিশুটি পৃথিবীর রং,রূপ আর মায়ের কোলের ভুবন ভোলানো শান্তি পাবার আগে ছিটকে পড়ে চরম বাস্তবতায়,ক্ষুধা,দারিদ্র,আর সংসারের অনটনের দায়ভার শিশুটির কাঁধে চেপে বসে কিছু বুঝে উঠবার আগেই।
বাংলাদেশ সরকারের শিশু আইনের প্রতি তাই তাদের বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন,ভেঙ্গে পড়া জাতীয় অর্থনীতি,বেকারত্ব আর ঋণের ভারে জর্জরিত শিশুটি জানার প্রয়োজন অনুভব করেনা যে, "বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় শিশু নীতি অনুযায়ী ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের সার্বক্ষণিক শিশুশ্রমে নিয়োগ করা ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে শিশুদের ব্যবহার নিষিদ্ধ। ১৮ বছরের নিচে প্রত্যেককে শিশু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
পাশাপাশি ১৪ বছরের নিচে কাউকে কোনও সার্বক্ষণিক কাজে নিয়োগ না করার বিধান করা হয়েছে। "
পেটের তাড়নায় শিশুটি ছিটকে বেরিয়ে আসে তার অপরিণত জীবন থেকে,বাঁচবার প্রয়োজনে তাকে কাজের সন্ধানে বেরুতে হয়।
আমাদের চার পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সব ধরনের প্রতিষ্ঠানে শিশু শ্রমিকেরা কাজ করছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, দেশের ৩৫ লাখ শিশু শ্রমিক রয়েছে যার মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত রয়েছে ১৩ লাখ শিশু, যা মোট শিশু শ্রমিকের ৪১ শতাংশ। এটাও প্রকৃত পরিসংখ্যান নয় বাস্তব চিত্র আরও ভয়াবহ।
প্রতিটি বিপনী কেন্দ্রে/দোকানে অন্তত: একজন করে শিশু শ্রমিক রয়েছে।
রাজধানীর মিরপুর,আমিন বাজার,সাভার,জয়দেবপুর,টঙ্গী,সমগ্র পুরনো ঢাকা,বুড়িগঙ্গার ওপাড়ের কালীগঞ্জ,জিঞ্জিরা,মোহাম্মদপুর,বসিলা,এবং বুড়িগঙ্গা তীরবর্তী কয়েক হাজার কল-কারখানা,(ছোট,মাঝারি)রয়েছে যেগুলোতে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা-ই বেশি,এসব কারখানার মধ্যে রয়েছে পুরনো ব্যাটারি ভাঙ্গা,সীসা গলানো,সল্যুশন বা আঠা তৈরির কারখানা, আতসবাজি বানানোর কারখানা,
লেদ মেশিন, জুতার কারখানা, সাবান ও কস্টিক সোডা প্রস্তুতের কারখানা, প্লাস্টিক গলানো, প্লাস্টিক এর কারখানা, চুড়ি,কসমেটিক, বিড়ির কারখানা, গাড়ির গ্যারেজ, ওয়েল্ডিং এর কারখানা, ফার্নিচারের কারখানা, রং ,পুটী, ভেজাল রং, কৃত্রিম গহনা, ইট/পাথর ভাঙ্গা, ইটের ভাটায় কাজ করা সহ নানান অমানবিক এবং ঝুঁকি পূর্ণ কাজে সর্বত্র শিশু শ্রমিক রয়েছে।
এসব শিশুদের ১২ হতে ১৫ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়,একজন পূর্ণ বয়স্ক শ্রমিকের ন্যায় তাদের মালিকগণ কাজ আদায় করে নেন, অথচ ঠিকমত পারিশ্রমিক এরা পায়না।
এছাড়া গড়ে প্রায় প্রতিদিন দুর্ঘটনায় এদের অনেকের অঙ্গহানি হচ্ছে। পুরনো ঢাকার বিভিন্ন ঝুঁকিবহুল কারখানায় ঘুরলে এর স্বপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ মিলবে।
আশ্চর্যের বিষয় এই যে দৈব দুর্ঘটনায় হাত-পা কাটা পড়লেও এসব কারখানার মালিকদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্হা নেয়া শিশুটির গরিব মা-বাবার পক্ষে নেয়া হয়ে উঠেনা।
এসব ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশু শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ করা হোক। যে সকল কাজ শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ তা বন্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন এবং তার প্রয়োগ করা হোক।
ছবি সূত্র:ইন্টারনেট
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।