বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ চন্দ্রকেতু নগর
খ্রিস্টপূর্ব ৩২৬। গ্রিক সম্রাট আলেকজান্ডার সৈন্যসামন্ত লইয়া ভারতবর্ষের পশ্চিম সীমান্ত আক্রমনে উদ্যত হইয়াছেন। এইরূপ এক ক্রান্তিকালে প্রাচীন বাংলার পুন্ড্রনগর হইতে ঋদ্ধ নামক একজন তরুণ ভ্রমনের উদ্দেশ্যে গঙ্গারিডি রাজ্যের রাজধানী চন্দ্রকেতু নগরে আসিয়া উপস্থিত হইল ।
গঙ্গারিডি রাজ্যটির অবস্থান ছিল প্রাচীন বাংলার দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে । চন্দ্রকেতু নগরটি গড়িয়া উঠিয়াছিল বিদ্যাধরী নামক একটি স্বচ্ছ সলিলা নদীর তীরে। অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী এই নগরখানির বিত্ত-বৈভব এবং সৌন্দর্য নগরে নবাগত পর্যটকের মনে গভীর বিস্ময়ে উদ্রেক করিত। পুন্ড্রনগরও বঙ্গজাতির ঐশ্বর্যশালী নগর। তথাপি চন্দ্রকেতু নগরের বিশালত্ব এবং শৈল্পিক স্থাপত্য ঋদ্ধকে বিস্মিত ও মুগ্ধ করিল।
একখানি প্রশস্ত রাজপথ উত্তর হইতে দক্ষিণে চলিয়া গিয়াছে। দুই পার্শ্বে ছায়াময় কড়–ই কিংবা দেবদারু প্রভৃতি বৃক্ষের সারি। রাথপথে গতিশীল ঝলমলে রথ এবং অশ্বারোহী যুবা পুরুষ । নগরের অট্টালিকা এবং ভবনসমূহ যেনবা গঙ্গারিডি রাজ্যের ঐশ্বর্য এবং প্রতিপত্তির কথা স্বদম্ভে ঘোষনা করিতেছে। নগরজুড়িয়া বহুসংখ্যক বৃহদাকার সরোবর ।
সেইসব সরোবর পাড়ে রাজভবন, দেবমন্দির, ধর্মশালা, কৌতূহলশালা (পানশালা) এবং বিপনী বিতান ইত্যাদি গড়িয়া উঠিয়াছে ।
সবুজাভ জলের মনোরম এক সরোবর পাড়ে অবস্থিত ধর্মশালাটি অতি পুরাতন। সেই ধর্মশালায় আশ্রয় নিয়াছে ঋদ্ধ। আদিত্য নামে অপর একটি যুবকও সেই ধর্মশালায় আশ্রয় নিয়াছে । সমবয়েসি বলিয়াই ঋদ্ধর সঙ্গে আদিত্যর ঘনিষ্টতা গড়িয়া উঠিল ।
আদিত্য গৌড়বর্ণের দীর্ঘকায় বলিষ্ট যুবক। সে তাহাকে ‘কলিঙ্গবাসী’ উদাসী এবং ভ্রমনপিপাসু বলিয়া পরিচয় দিল। ঋদ্ধ এবং আদিত্য একত্রে চন্দ্রকেতু নগর ঘুরিয়া বেড়াইতে লাগিল। একদিন আদিত্য বলিল, চাপা স্বরে বলিল, কাহারা যেন আমাদিগকে অনুসরণ করিতেছে। ঋদ্ধ প্রতিবাদ করিয়া বলিল, তাহা কেন হইবে? আমরা কি তস্কর? যা হা হউক।
আদিত্য বলিল সে দক্ষ শিকারী। সে অর্ধক্রোশ দূর হইতেই তীর ছুড়িয়া ধাবমান চিত্রল হরিণের প্রাণ হরণ করিতে পারে। ঋদ্ধের কৌতূহল হইল। তাহারা একদিন মৃগয়ায় যাইবে বলিয়া সিদ্ধান্ত গ্রহন করিল।
ভারতবর্ষের পশ্চিম সীমান্ত যবন সৈন্য কর্তৃক আক্রান্ত হইয়াছে।
ইহা লইয়া চন্দ্রকেতুনগরে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করিতে ছিল। পশ্চিমদেশিও যবনরাজ সেকান্দার নাকি গঙ্গারিডি রাজ্য পর্যুদস্ত করিতে পূর্বদিকে অগ্রসর হইবে । ইহা লইয়াই নগরবাসীর আতঙ্ক আর গুঞ্জন। অবশ্য অধিকাংশ নগরবাসীর বিশ্বাস- গঙ্গারিডি রাজ্যের বিপুলসংখ্যক রণহস্তি থাকায় যবন সৈন্যরাই সমূলে বিনাশ হইয়া যাইতে পারে।
যাহা হউক।
একদিন চন্দ্রকেতু নগরের হস্তিউদ্যানে শ্বেপাথরের নির্মিত দ্বিতল রাজপ্রাসাদ দেখিয়া ঋদ্ধ এবং আদিত্য উভয়ই বিস্মিত হইয়া গেল। তাহারা শুনিয়াছে গঙ্গারিডি রাজ্যের রাজা সৌবীর। তিনি যেমন দয়ালু তেমনই কঠোর শাসক বলিয়া খ্যাত। কিন্তু তাহারা কি জানে রাজা সৌবীরের মনে বিন্দুমাত্র সুখ নাই। তাহার কারণ আছে।
রাজার একটিমাত্র কন্যা সোমছন্দা রূপেগুণে অতুলনীয়া হইলেও বিবাহ করিতে অনিচ্ছুক। এইদিকে রাজার বৃদ্ধ হইয়াছেন। তাহার আর পুত্রকন্যা নাই। রাজার ইচ্ছা সোমছন্দার স্বামীর কাছে গঙ্গারিডি রাজ্যের ভার অর্পন করিয়া বনবাসী হইবেন। রাজার সেই ইচ্ছা পূরণ হইল কই? ... অনুঢ়া সোমছন্দার নগরের কোলাহল ভালো লাগিতে ছিল না বলিয়া সোমছন্দা এক সখীকে লইয়া বনবাসী হইয়াছিল।
রাজা সৌবীর দিব্যাধরী নদীর নির্জন পাড়ে সুনিবিড় বনতলে কন্যার জন্য একখানি মর্মর প্রস্তরের দেবালয় নির্মান করিয়া দিয়াছিলেন। রাজকন্যা তাহার সখী সুকন্যা কে লইয়া দেবালয়ে বসবাস করিত । সুকন্যা মন্ত্রী চারুদত্তের কন্যা। তরুণিটি শ্যামবর্ণা হইলেও অত্যন্ত রূপসী এবং বুদ্ধিমতী। মন্ত্রী চারুদত্ত নাকি রাজ্যপাট চালাইতে প্রায়শ কন্যার বুদ্ধিপরামর্শ গ্রহন করিয়া থাকে।
রাজকন্যা সোমছন্দা এবং তাহার সই সুকন্যা প্রত্যহ উষালগ্নে বিদ্যাধরী নদীর কাকচক্ষু জলে স্নান করিয়া মর্মর পাথরের ঘাটে বসিয়া শিউলি ফুলের মালা গাঁথিয়া গান করিত ... তাহার পর খিলখিল হাসিয়া ঘুমন্ত ময়ূরীর ঘুম ভাঙাইয়া মায়াহরিণের পিছনে ছুটিয়া বনের ফলমূল আহার করিয়া প্রকৃত অরণ্যচারী জীবন কাটাইত।
মৃগয়ায়
শরতের এক নির্মল প্রভাতে গঙ্গারিডি রাজ্যের অরণ্য মন্ত্রকের সম্মতিপত্র লইয়া মৃগয়ার উদ্দেশ্যে ঋদ্ধ এবং আদিত্য তীরধনুক লইয়া চন্দ্রকেতু নগরের নির্জন উপান্তে আসিয়া উপস্থিত হইল। স্বচ্ছ সলিলা বিদ্যাধরী নদীটি নীরবে বহিয়া চলিয়াছে। কেবল নদীপাড়ের একখানি আমলকী বৃক্ষে কাকপাখিরা কোলাহল করিতেছিল। শরৎকালের নীলাভ আকাশে ভাসমান মেঘের ভেলা; তাহার পাশ ঘেঁষিয়া শুভ্র বকের সারি উড়িয়া যাইতেছিল ।
নদীপাড়ে নিবিড় বনভূমি। আদিত্য এবং ঋদ্ধ সতর্ক পদক্ষেপে হাঁটিতেছিল। ক্রমশ অশ্বিন মাসের ঝকঝক সাদা রৌদ্র ফুটিয়া উঠিতেছিল। পাখপাখালি আর ঝিঁঝি ডাকে অরণ্যভূমি মূখরিত হইয়া ছিল । মৃদুমন্দ বাতাসে বকফুল দুলিতেছে।
বাতাসে বনপলাশের গন্ধ।
সহসা একখানি চিত্রল হরিণ দৃষ্টিগোচর হইল । আদিত্য ধাবমান হরিণ লক্ষ করিয়া তীর ছুড়িল বটে তবে তীর ফসকাইয়া অদূরে অবস্থিত একখানি কর্মরঙ্গ (কামরাঙা) বৃক্ষে বিঁধিল। শর ভ্রষ্ট হওয়ায় আদিত্য বিষন্ন এবং অস্থির হইয়া উঠিল । চাপা স্বরে বলিল, কাহারা যেন আমাদিগকে অনুসরণ করিতেছে বলিয়া আমার মনে হইতেছে।
ঋদ্ধ প্রতিবাদ করিয়া বলিল, তাহা কেন হইবে? আমরা তো অরণ্য মন্ত্রকের যথাযথ সম্মতিপত্র লইয়াই বনে আসিয়াছি।
তাহা সত্ত্বেও আদিত্যর গৌড়বর্ণের মুখোশ্রীতে গভীর উদ্বেগের ঘন ছায়া ঘনাইয়া উঠিল। তাহাতে ঋদ্ধও ঈষৎ উদ্বিগ্ন হইয়া উঠিল।
সহসা উদ্দানক (শিরীষ) বৃক্ষের পাশ দিয়া শুভ্র বসন পরিহিতা দুইটি তরুনিকে আসিতে দেখা গেল। একজন অপরূপ রূপবতী।
তাহার গাত্রবর্ণ গৌড় । অন্যজন কৃষ্ণবর্ণা হইলেও উদ্ভিন্ন যৌবনা। আদিত্যকে দেখিয়া গৌড়বর্ণা তরুণির মুখখানি বিবর্ণ হইয়া উঠিল। সে তাহার সহচরীর দিকে তাকাইল। তাহার পর অচেতন হইয়া ঢলিয়া পড়িল।
তরুণির কোঁচরের শিউলির ফুলসমূহ সব বনতলের তৃণগুচ্ছের উপর ছড়াইয়া পড়িল ।
কৃষ্ণবর্ণা তরুণিটি মুখে হাতচাপা দিয়া চিৎকার করিয়া উঠিল। ঋদ্ধ এবং আদিত্য দ্রুত তাহাদের নিকট ছুটিয়া গেল। গৌড়বর্ণার অচেতন দেহটি ক্ষাণিক ক্ষন নিরীক্ষা করিয়া আদিত্য ঋদ্ধকে জল আনতে বলিল । একখানি করঙ্গ (নাড়িকেলের মালা) করিয়া ঋদ্ধ জল লইয়া আসিল।
সেই জল গৌড়বর্ণার মুখমন্ডলে ছিটাইল।
আদিত্য কৃষ্ণবর্ণা তরুণি কে জিজ্ঞাসা করিল, ইহা কি তোমার সখী?
হ্যাঁ।
তোমার কি নাম?
সুকন্যা ।
আর ইহার?
সোমছন্দা। সোমছন্দা যে রাজ্যে রাজকন্যা তাহা আর সুকন্যা ভাঙিয়া বলিল না।
সোমছন্দা কি অসুস্থ্য?
এই প্রশ্নে সুকন্যা হ্যাঁ না কিছুই বলিল না।
ক্ষণ কাল পরে সোমছন্দার জ্ঞান ফিরিয়া আসিল। রাজকন্যা উঠিয়া উদ্দানক বৃক্ষের গুঁড়িতে হেলান দিয়া বসিল। তাহার পর আদিত্যর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকাইয়া রহিল। তাহার পর সুকন্যার কানে কানে কি যেন বলিল।
সুকন্যার মুখে বিস্ময়ের প্রগাঢ় ছাপ ফুটিয়া উঠিয়া মিলইয়া গেল।
সুকন্যা বলিল, আমরা নিকটস্থ একটি দেবালয়ে বাস করি। দয়া করিয়া আমাদের সেখানে পৌঁছাইয়া দিন ।
তাহারা দেবালয়ে আসিল।
ঋদ্ধ- সুকন্যা সংলাপ
মর্মর পাথরের মনোরম দেবালয়খানি বিদ্যাধরী কূল ঘেঁষিয়া প্রতিষ্ঠিত করা হইয়াছে।
বিদ্যাধরী নদীর জল হইতে মর্মর পাথরের প্রশস্ত সিঁড়ি উঠিয়া গিয়াছে একটি সুপরিসর প্রাঙ্গনে। প্রাঙ্গনটিও মর্মর পাথরে নির্মিত। সে প্রাঙ্গনে একখানি মায়াহরিণ ও একটি ময়ূরী নির্ভয়ে ঘুরিয়া বেড়াইতেছে। প্রাঙ্গনের মাঝমধ্যিখানে একখানি পুরাতন কপিত্থ (কয়েতবেল) বৃক্ষ । অবশ্য একখানিও শুস্ক পত্রালি কোথাও পড়িয়া নাই।
একঝাঁক শ্বেত পারাবত কেবল ঘুম ঘুম ঘুম ঘুম শব্দ তুলিয়া খুঁটিয়া খুঁটিয়া দানা খাইতেছে। প্রাঙ্গন ঘিরিয়া চতুস্কোন অলিন্দ। অলিন্দের এককোণে নীল রঙের শতরঞ্জী পাতা। একপার্শ্বে একখানি রুদ্রবীণা, কাঁসার পানপাত্র, পুষ্পাধার। তাহারা শতরঞ্জীর উপরে বসিল।
সুকন্যা ঋদ্ধকে বলিল, এক্ষণে সোমছন্দাকে উষ্ণ দুগ্ধ পান করানো উপযুক্ত হইবে। আপনি কি আমাকে সাহায্য করিবেন ? বলিয়া সোমছন্দার মুখের পানে গভীর অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাইল সুকন্যা । সোমছন্দা মৃদু হাসিল। আজ তাহার সঙ্গে তাহার সইটির জীবনও পরিপূর্ণ হইতে যাইতেছে।
চলুন।
বলিয়া ঋদ্ধ উঠিয়া দাঁড়াইল।
অলিন্দর একপাশে সারি সারি কক্ষ। তাহারই একটি সুপরিসর কক্ষে সুকন্যা প্রবেশ করিল। কক্ষটি যে রন্ধনশালা ঋদ্ধ তাহা নিমিষে বুঝিয়া লইল । এককোণে মাটির উনুন।
তাহার পার্শ্বে শুস্ক কাষ্ঠের স্তুপ এবং রন্ধনের উপকরণ রহিয়াছে। ঋদ্ধ দুই খানি চকমকি পাথর তুলিয়া নিয়া তাহা ঘঁষিয়া কাষ্ঠে অগ্নি সংযোগ করিল। একটি পাত্রে ছাগদুগ্ধ ছিল। তাহা উনানে চড়াইয়া দিয়া সুকন্যা বলিল, আপনার নাম জানিতে পারি কি?
আমার নাম ঋদ্ধ।
নিবাস?
পুন্ড্রনগর।
আমাদের রাজ্যে ভ্রমনের উদ্দেশ্যে নাকি ব্যবসা করিতে আসিয়াছেন?
না, ব্যবসায় আমার মন নাই। আমি ভ্রমনে আসিয়াছি।
ঋদ্ধ ভ্রমনপিপাসু শুনিয়া সুকন্যা নিশ্চিন্ত হইল। তাহারও যে দূর রাজ্যে ভ্রমনের ইচ্ছা হয়। পুন্ড্রনগরের নাম কত শুনিয়াছে।
সেই দেশে একবার যাইতে তাহার ইচ্ছা হয়। এক্ষণে অবশ্য তাহার ঋদ্ধর দেহখানি স্পর্শ করিবার সাধ হইল। কিন্তু কোন্ ছলে তাহা করিবে বুঝিয়া উঠিতে পারিল না। ঋদ্ধ তাহাকে ভ্রষ্টা ভাবিবে না আবার তহাকে স্পর্শ করা যাইবে- এমন একখানি উপায় সে ভাবিয়া বাহির করিল। সুকন্যা হঠাৎ গম্ভীর হইয়া বলিল, আমি আপনাকে একখানি গোপন সংবাদ বলিতে চাই।
কি সংবাদ?
সুকন্যা ঋদ্ধর কাছে ঘন হইয়া আসিয়া কহিল, আমাকে ছুঁইয়া বলুন আমি যাহা বলিব তাহা আর কাউকেও বলিবেন না।
ঋদ্ধ জমাকুসুম তেলের গন্ধ পাইল। সুকন্যার শরীরের উষ্ণতা টের পাইল। সে প্রগাঢ় স্বরে বলিল, বলিব না। বলিয়া সুকন্যার বাহু স্পর্শ করিল।
সুকন্যা কাঁপিয়া উঠিল। ঋদ্ধ তাহাকে স্পর্শ করিয়াছে। তাহার জীবন সার্থক হইয়াছে। সুকন্যা বলিল, আমার সই সোমছন্দা অবিবাহিত থাকিবে।
অবিবাহিত থাকিবে? কেন?
সুকন্যা বলিল, আমার সই সোমছন্দা দীর্ঘকাল ধরিয়া স্বপ্নে একখানি মুখ দেখিয়া আসিতেছে ।
সোমছন্দার বিশ্বাস স্বপ্নে যাহাকে দেখিতেছে তাহার সঙ্গে একদিন না একদিন তাহার দেখা হইবেই। কাজেই সোমছন্দা অবিবাহিতাই থাকিয়া গেল। রাজা দুঃখ পাইলেন।
রাজা?
সোমছন্দা গঙ্গারিডি রাজ্যের রাজা সৌবীরের একমাত্র কন্যা।
ঋদ্ধ চমকাইয়া উঠিল।
চমকাইলেন তো ?
হ্যাঁ।
চমকের আরও বাকি।
মানে-
মানে স্বপ্নে সোমছন্দা যে মুখ মুখখানি এতকাল দেখিয়া আসিতেছে তাহা আপনার বন্ধুর মুখ।
মানে আদিত্যর!
তাহার নামটি বুঝি আদিত্য?
হাঁ।
তাহলে তাহাকেই দেখিয়া আসিতেছে।
এখন কি হইবে?
মুচকি হাসিয়া সুকন্যা বলিল, এক্ষণে কি হইবে তাহা তাহারাই ঠিক করিবে। বলিয়া মনে মনে বলিল: আমাদের কথাই আমাদেরই ভাবা উচিত।
উষ্ণ দুগ্ধের পাত্রখানি উনান হইতে নামাইয়া একখানি কাঁসার পাত্রে ঢালিতে লাগিল সুকন্যা।
তাহার পর কাঁসার পাত্রে দুধ লইয়া তাহারা দুইজনে অলিন্দে ফিরিয়া আসিল।
শতরঞ্জীর উপর বসিয়া আদিত্যর দিকে তাকাইয়া ঋদ্ধ বলিল, আমি সমস্তই শুনিলাম আদিত্য।
আমার বড়ই আশ্চর্য বোধ হইতেছে।
সোমছন্দা কাঁদিতেছিল। তাহাকে অপূর্ব দেখাইতেছিল। সুকন্যা ‘আর কাঁদিস না লো সই’ বলাতে রাজকন্যা শুভ্রবসনের আঁচল দিয়া চোখের কোণা মুছিয়া লইল।
আদিত্য কে সুকন্যা বলিল, আমার সই রাজকন্যা হইয়াও আপনার জন্যই অবিবাহিতা রহিল।
পিতাকে দুঃখ দিল। এক্ষণে সমস্তই যখন শুনিলেন তখন আর সোমছন্দাকে স্ত্রীরূপে গ্রহন করিতে বিলম্ব কেন? আপনি অবিলম্বে রাজার নিকটে গিয়া আপনার প্রকৃত পরিচয় দিয়া সব খুলিয়া বলুন।
আদিত্য পাথরের মূর্তির ন্যায় বসিয়া ছিল। তাহাকে অত্যন্ত বিষন্ন এবং বিমূঢ় দেখাইতে ছিল। সে কি বলিতে যাইবে সহসা পদশব্দে চমকাইয়া উঠিয়া দেখিল সশস্ত্র সৈন্যদল ক্ষুরধার সঙ্গীন তুলিয়া তাহাদের ঘিরিয়া ফেলিল ।
সুকন্যা আর সোমছন্দা কাঁদিল চিৎকার করিল। লাভ হইল না। গঙ্গারিডি রাজ্যের দুধর্ষ সৈন্যগন আদিত্য এবং ঋদ্ধকে বন্দি করিয়া লইয়া গেল।
সোমছন্দা পূর্নবার মূর্চ্ছা গেল।
সুকন্যা চিৎকার করিয়া কাঁদিতে লাগিল।
তাঁহার মর্মান্তিক ক্রন্দনে বনভূমি আন্দেলিত হইল।
বন্দিদশা
বন্দিদের অবিলম্বে রাজার কাছে আনা হইল। রাজা গুপ্তচরের মাধ্যমে সমস্তই শুনিয়াছেন। অঙ্গরাজ্য গঙ্গারিডি রাজ্যের শক্ররাজ্য । অঙ্গ রাজ্যের রাজকুমার আদিত্য ছদ্মবেশে চন্দ্রকেতু নগরে আসিয়াছে।
রাজা গুপ্তচরদের আদিত্যর উপর লক্ষ রাখিতে নির্দেশ দিয়াছিলেন। আজ যখন আদিত্য রাজকন্যার দেবালয়ে উপস্থিত হইয়া সীমা লঙ্ঘন করিল সৈন্যরা তখনই তাহাকে সবান্ধব বন্দি করিয়া আনিয়াছে।
রাজা ঋদ্ধর দিকে তাকাইয়া বলিলেন, যুবক তোমার পরিচয় দাও। সত্য কথা বলিবে। তাহা না হইলে শূলে চড়িতে হইবে।
ঋদ্ধ বলিল, আমার নাম ঋদ্ধ। আমার নিবাস পুন্ড্রনগর। আমার পিতা স্বর্গত সনাতন মণিকার ছিলেন। আমি ভ্রমনের উদ্দেশ্যে চন্দ্রকেতু নগর আসিয়াছি।
হুমম।
আদিত্যকে দেখাইয়া রাজা জিজ্ঞাসা করিলেন, ইহার সঙ্গে তোমার কি সম্পর্ক?
ঋদ্ধ বলিল, চন্দ্রকেতু নগরে যে ধর্মশালায় আমি আশ্রয় নিয়াছিলাম , আদিত্যও সেই একই ধর্মশালায় আশ্রয় নিয়াছিল। আমরা সমবয়েসি বলিয়া আমাদের বন্ধত্বু হইয়াছে।
বুঝিলাম। রাজা বলিলেন। তাহার পর আদিত্যর দিকে তাকাইয়া বলিলেন, আর তোমার প্রকৃত পরিচয় কি যুবক?
আদিত্য সত্য কথাই বলিবে বলিয়া সিদ্ধান্ত নিল ।
রূপবতী রাজকন্যা সোমছন্দা তাহাকে স্বপ্ন দেখিয়াছে। তাহার জীবন সার্থক হইয়াছে। এক্ষণে সে মরিলেও শন্তি পাইবে। কেবল সোমছন্দার জন্য তাহার প্রবল দুঃখবোধ হইতেছিল । সোমছন্দা সমস্ত খুলিয়া বলিয়া কাঁদিতে কাঁদিতে তাঁহাকে চুম্বন করিয়াছিল।
আদিত্য বলিল, আমি অঙ্গরাজ্যের যুবরাজ আদিত্য। ছদ্মবেশে ভ্রমন করিতেছি।
কেন?
বিশেষ কোনও উদ্দেশ্য নাই।
সত্য কথা বল! তাহা না হইলে শূলে চড়িতে হইবে! রাজা হুঙ্কার দিয়া উঠিলেন।
আমি সত্য কথাই বলিলাম।
এইবার মন্ত্রী চারুদত্ত বলিল, অঙ্গরাজ্যের রাজপুত্র শক্ররাজ্যে বিনা কারণে কেন ভ্রমন করিবে? কোনও নিগূঢ় উদ্দেশ্য নিশ্চয়ই রহিয়াছে।
আদিত্য নিশ্চুপ থাকিল। সে কি উত্তর দিবে?
আমি যেই সময়ের কথা বলিতেছি, সেই যুগে রাজাই ছিলেন রাজ্যের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী । রাজা সৌবীর বলিলেন, ইহাদের অবিলম্বে কারাগারে নিক্ষেপ কর। এবং আগামীকাল প্রতুষে শূলে চড়াইয়া দাও।
ঋদ্ধ আর্তনাদ করিয়া উঠিয়া বলিল, মহারাজ। আমি নির্দোষ। আমায় কেন শূলে চড়াইবেন?
রাজা বলিলেন, যুবক, তোমার কথা সন্দেহজনক। রাজপুত্র কদাপি একাকী ভ্রমন করে না। তুমি নির্ঘাৎ তাহার সহচর।
বলিয়া রাজা প্রকোষ্ঠ ত্যাগ করিলেন।
আসন্ন মৃত্যুর কথা ভাবিয়া বিষন্ন হইল ঋদ্ধ। সুকন্যার কথাও ভাবিল। তাহার সঙ্গে বাক্যালাপ করিতে ভালো লাগিয়াছি। আর কি সেই সুযোগ হইবে?
দেবতার বর কিংবা রাজনৈতিক মৈত্রী
উষালগ্নে আসন্ন হেমন্তের কুয়াশায় চন্দ্রকেতু নগর আচ্ছাদিত হইয়া আছে।
নগরী ঘুমন্ত। রাজাও নিদ্রামগ্ন। কুয়াশায় একজন দূত কে ছুটিতে দেখা গেল । দূত অঙ্গ রাজ্য হইতে আসিয়াছে। মন্ত্রী চারুদত্তের গৃহে আসিয়া থামিল সে ।
তাহাকে উত্তেজিত দেখাইতে ছিল। দূত মন্ত্রীকে সমস্ত খুলিয়া বলিল। মন্ত্রী চারুদত্ত হন্তদন্ত হইয়া রাজপ্রাসাদে ছুটিলেন। রাজার নিদ্রা ভঙ্গে একমাত্র তারই অধিকার। নিদ্রা ভঙ্গ হওয়ায় ঈষৎ বিরক্ত হইলেও মন্ত্রিকে দেখিয়া রাজা ক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করিলেন।
মন্ত্রী চারুদত্ত বলিলেন, অঙ্গরাজ্যের রাজা হরিনাথ মৈত্রীর প্রস্তাব পাঠাইয়াছেন। পশ্চিমদেশিও যবনরাজ সেকান্দার পূর্বদিকে অগ্রসর হইতেছেন। এক্ষণে পূর্বাঞ্চলের রাজ্যসমূহকে ঐক্যবদ্ধ মৈত্রীর বন্ধনের আবদ্ধ হওয়া জরুরি বলিয়া মনে করেন রাজা হরিনাথ । অধিকন্ত, রাজা হরিনাথ আপনার কন্যা সোমছন্দাকে পুত্রবধূরূপে গ্রহন করিতেও সম্মত হইয়াছেন। রাজা পাত্রপক্ষ হইলেও বিবাহে ৫০০ রণহস্তি কন্যাপণ দিবেন বলিয়া আশ্বাস দিয়াছেন।
কন্যার বিবাহে ৫০০ রণহস্তি পণ পাইবেন শুনিয়া রাজা প্রসন্ন হইয়া উঠিলেন । পশ্চিমদেশিও যবনরাজ সেকান্দার যে গঙ্গারিডি রাজ্যকে ধূলিস্বাৎ করিতে পূর্বদিকে অগ্রসর হইতেছে তাহা তিনিও বিলক্ষণ জানেন। এই কারণে ভারতবর্ষের পুবের রাজ্যসমূহে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করিতেছে। এমতবস্থায় ৫০০ রণহস্তি পাইলে যবন আক্রমনের বিরুদ্ধে সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা গড়িয়া তোলা যাইবে । পশ্চিমদেশিও যবনরাজের অগ্রসর রোধ করা যাইবে।
একুশ হাত যবন বর্শার কাছে রথারোহী ভারতীয় সৈন্যরা অসহায়। এক্ষণে ভারতীয়দের প্রধান অবলম্বন রণহস্তি।
মন্ত্রী চারুদত্ত বলিলেন, অঙ্গরাজ্যের রাজা হরিনাথ আরও লিখিয়াছেন: তক্ষশিলার রাজা অম্ভি পশ্চিমদেশিও যবনরাজ কে ৬৫ হস্তি ৩০০ ষাঁড় উপহার দিয়া ভারতবর্ষের সহিত বিশ্বাসঘাতকতা করিয়াছেন। রাজা পুরু অবশ্য যবন আক্রমনের বিরুদ্ধে দূর্বার প্রতিরোধ গড়িয়া তুলিয়াছিলেন । যবনরাজ সেকান্দার রাজা পুরুকে পরাজিত করিয়া পূর্বদিকে অগ্রসর হইয়া বিপাশা নদীর কূলে পৌঁছাইয়াছেন।
এক্ষণে অঙ্গরাজ্য এবং গঙ্গারিডি রাজ্যের মধ্যে অতীতের বিরোধ বিস্মৃত হইয়া মৈত্রী স্থাপন করিয়া প্রবল প্রতিরোধ গড়িয়া তোলাই হইবে যথাযথ পদক্ষেপ ।
শেষ দৃশ্যে হেমন্তের কুয়াশায় ...
অঙ্গরাজ্যের রাজা হরিনাথ পাত্রমিত্র লইয়া চন্দ্রকেতু নগর আসিয়াছেন। সঙ্গে তাহার স্ত্রী দেবী সুদেষ্ণাও আসিয়াছেন। শক্ররাজ্যের উষ্ণ অভ্যর্থনায় প্রীত হইয়াছেন দেবী সুদেষ্ণা । ধূমধাম করিয়া আদিত্য ও সোমছন্দার বিবাহ হইয়া গেল।
সোমছন্দার স্বপ্ন সার্থক হইল। রাজপুত্র আদিত্য তাহার নবপরিণীতা স্ত্রীকে অঙ্গ রাজ্যের রাজধানী চম্পা নগরী তে লইয়া গেল। সুকন্যা সোমছন্দার চিরন্তন সখী বলিয়া সুকন্যাও তাহাদের সঙ্গে যাইত। তবে তাহাকে কোথাও খুঁজিয়া পাওয়া গেল না। আমি যে সময়ের কথা বলিতেছি সেই যুগের সমাজে ঘটা করিয়া মাতৃপূজা হইলেও জীবন্ত নারীকে নিরুদ্দেশ হইয়া গেলেও তাহা লইয়া কাহারও মাথা ব্যাথা হইত না।
রাজা ঋদ্ধকে জিজ্ঞাসা করিলেন, ওহে ঋদ্ধ?
আজ্ঞে, বলুন।
সেদিন তুমি বলিলে না তোমার পিতা দেহ রাখিয়াছেন ...
আজ্ঞে, হ্যাঁ।
তাহা হইলে সংসারে তোমার আর কে আছে?
ঋদ্ধ বলিল, আজ্ঞে, সংসারে আমার এক বিধবা মা ছাড়া আর কেউ নাই।
এই কথা শুনিয়া রাজা ক্ষেপিয়া উঠিয়া বলিলেন, বল কি! তুমি বিবধা মাকে ফেলিয়া পরদেশে বীরগিরি করিয়া বেড়াইতছ। আরেকটু হইলেই তো শূলে চড়িতে।
যাও। অবিলম্বে পুন্ড্রনগরে ফিরিয়া যাও। গিয়া বিবাহ কর। মায়ের সেবা কর। মাকে দুঃখ ক্লেশ দিও না।
মা হইলেন স্বর্গের দ্বার। মায়ের জন্যই তুমি জগতে আসিয়াছ। বিধাতার লীলা দেখিতেছ। ইহা যে কত বড় সৌভাগ্য তাহা একবার ভাবিয়া দেখিয়াছ কি?
ঋদ্ধ কোনও কথা না-বলিয়া নীরবে দাঁড়াইয়া থাকিল। তাহার স্নেহময়ী মায়ের কথা মনে পড়িল ।
তবে সুকন্যার জন্যও ব্যথিত হইল সে। শ্যামশ্রী উদ্ভিন্ন যৌবনা তরুণিটিকে কোথাও খুঁজিয়া পাইল না। কোথায় গেল সে?
রাজা এক্ষণে কোমল স্বরে বলিলেন, তুমি যখন আমার জামাতার বন্ধু তখন ... তখন আমি তোমায় ধনরত্ন উপহার দিতেই পারি।
ঋদ্ধ আর কি বলিবে। ধনরত্ন বলিতে সে কেবল শ্যামবর্ণা সুকন্যাকেই বুঝে।
সুকন্যা মন্ত্রীকন্যা হওয়ায় তাহার অনুসন্ধান করা সহজ নয়। লোকে কি ভাবিবে?
রাজা বলিলেন, শুন হে ঋদ্ধ। তুমি কাল প্রভাতেই পুন্ড্রনগর যাত্রা কর। তোমার যাত্রার জন্য আমি সুদক্ষ মাঝি-মাল্লাসহ ধনসম্পদে পরিপূর্ণ একখানি ময়ূরপঙ্খী নৌকা দিতেছি।
ঋদ্ধ আনত হইয়া গঙ্গারিডি রাজ্যের মহৎপ্রাণ রাজা সৌবীরের পদধূলি গ্রহন করিল।
‘বাঁচিয়া থাক,’ ‘বাঁচিয়া থাক,’ বলিয়া রাজা ঋদ্ধকে বক্ষে জড়াইয়া ফেলিলেন। ঋষিসম বৃদ্ধ রাজার চক্ষু হইতে অবিরল জলের ধারা ঝরিতে লাগিল।
অতঃপর হেমন্তের কুয়াশায় স্তিমিত আলোর প্রভাতে বিদ্যাধরী নদীর ঘাটে আসিয়া পৌঁছিল ঋদ্ধ। একখানি বিশাল ময়ূরপঙ্খি জলে মৃদু মৃদু দুলিতে ছিল । ঋদ্ধ নৌকায় উঠিলে মাঝিমাল্লারা ‘শিব’, ‘শিব’ বলিয়া ধ্বণি তুলিয়া নৌকাখানি ছাড়িয়া দিল।
ময়ূরপঙ্খিটি উত্তরমুখি হইয়া ভাসিতে লাগিল।
ঋদ্ধ বিষন্ন হইয়া রৌদ্রের আশায় চাদরমুড়ি দিয়া ছৈয়ের উপর হইয়া বসিয়া ছিল। তাহার চারিদিকে হেমন্তের ঘন কুয়াশা । তাহার বুকেও অথই শূন্যতা ঘুরপাক খাইতেছিল। তাহার একে এক আদিত্য সোমছন্দা সুকন্যা রাজা সৌবীর -এর মুখখানি মনে পড়িতেছিল ।
এক্ষণ সে বুঝিতে ইহারা তাহার হৃদয় জুড়িয়া আছে।
ঋদ্ধ দীর্ঘশ্বাস ফেলিল।
কে যেন কুয়াশা ভেদ করিয়া ছৈয়ে উঠিয়া আসিল।
নারীমূর্তি।
সুকন্যা কি?
সুকন্যাকে দেখিয়া আমূল চমকাইয়া উঠিল ঋদ্ধ।
। বলিল, তুমি!
হ্যাঁ, আমি। মা-বাবাকে বলিয়াই আসিয়াছি। সুকন্যা বলিল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।