I have nothing to say about me..... বউ এর বকুনী খেয়ে আজ তেরাব আলীর মাথা খারাপ, রাত-নেই, দিন-নেই শুধু এটা লাগবে, ওটা লাগবে, আজ রাতে ও খেতে বসে কি যেন কি বললো আর তাতেই হলো শুরু, সংসার জীবনের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত কখন কি হয়েছে, সব একেবারে কান্নার সুরে বকতে শুরু করছে।
আহ!!! আর ঘরে থাকা যাবে না, তোরাব আলী কানে আঙ্গূল দিয়ে বের হয়ে পাড়লো ঘরের বাইরে, আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলো চাদঁ উঠেছে, মনে হয় ভরা পূর্ণিমা, চাদেঁর আলো চার দিকে যেনো আলোর মাতন তুলেছে, রাতের অন্ধকারেও তেরাব আলী এই বয়সে পথ-ঘাট সব মোটা মুঠি দেখতো পাচ্ছে, পুরান হাইকোর্টের ছোট্ট পথ ধরে সে হাটঁতে লাগলো, একে বারে কোন গন্তব্য ছাড়া।
না, না না!!!! আর পারছে না, ক্লান্তী ভর করে বসলো তাকে, একটু হাটতেই হাপাতে লাগলো, গিয়ে বসলো মাযার দিকের রাস্তা হয়ে আসা শিশু একাডেমীর দিকে চলে যাওয়া পথটার ঠিক মাঝে থাকা সিড়িঁটার উপর।
দিনের বেলায়তো এখানে বসার কোনো সুযোগ নেই, থাকে অনেক পুলিশ, আনেক অনেক ক্যামেরা, থাকে আনেক নাম না জানা, অচেনা মানুষের আনাগুনা। আর রাতে কিছুই নেই, চার দিকে আছে শুধু ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক।
হঠাৎ করে তেরাব আলীর মনে পড়ে গেলো তার এখানে আসার স্মৃতিটা, সে সময় ছিলো সে টগবগে এক যুবক, গ্রামের দূরন্তপনা তার মাথায় সব সময় চেপে থাকতো, আর তার আত্যাচারে পুরো গ্রাম থাকতো অতিষ্ট, কারো ঘরের আম, কাঠাঁল গুলো যেনো তার হাতের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত না হয় সে জন্য তার ছিলো এক বিশাল ভক্ত বাহিনী, কতো রাত নির্ঘুম কাটিয়ে সে এসব ফলের ভাগ্যকে ধন্য করতো তা আজ হিসাব করার মতো সময় বা স্মুতি কোনোটিই তার নেই, আছে শুধু ফেলে আসা স্মৃতির জন্য এক দীর্ঘশ্মাস, আর মাঝে মধ্যে এনে দেই আফসোস , ফেলে আসার আফসোস, হারিয়ে ফেলার আফসোস।
দুষ্টমির ফাকেঁ এক সময় সে এস. এস.সি পাস করলো, আর তখনি শহরে থাকা এক দূর সম্পর্কের মামার হাত ধরে সে এসে পরলো ঢাকা শহরে, তার কাজ জোটলো এই হাইকোর্টে, না না তখন কিন্তু একে আর পুরাতন বলা হতো না, এটাই ছিলো নতুন।
কোর্টের কাজে তার মন বসতো না একটু ও, তাকে শুধু গ্রামের মাঝের দস্যিপনা টা টানতো। কতো রাত যে সে গ্রামে কথা স্মরন করে শুধু নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে, কেদেঁ- কেটে চোখের পানিতে বালিশ ভিজিয়ে ফেলেছে , আহা তা মনে পড়লে আজো বুকটা ভারি হয়ে আসে।
এর পর আস্তে আস্তে এই কোর্ট যেনো হয়ে উঠলো তার জীবনের অপরিহার্য অংশ, কোর্টকে সে ভালোবাসতে শুরু করলো, ভালোবাসার কারন ও আছে আবশ্যই, সে লক্ষ্য করলো বাংলাদেশর বিভিন্ন জায়গায় নির্যাতিত, নিপিড়িঁত ও বঞ্চিত মানুষ গুলো এখানে আসতো, আর তারা যতার্থ ও সুবিচার নিয়ে হাসি মুখে ফিরে যেতো।
সে তখন মানুষ গুলোর দিকে তাকিয়ে খুব আনন্দ পেতো। আর গর্ববোধ করতো মানুষ গুলোকে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করতে পারার কারনে। সে নিজে ও ছিলো অনেক সৎ। আর তাই তো আজ এই বুড়ো বয়সে এসে অভাবের কারনে স্ত্রীর বকুনি শুনতে হচ্ছে, বসবাস করতে হচ্ছে কুড়ো ঘরে।
হঠাৎ তোরাব আলীর ঘোর ভাঙ্গলো কি যোনে একটা শব্দে,,
ঃ"হেহ হেহ"
শব্দ টা লক্ষ করে তোরব আলী আবার চার পাশে তাকাতে শুরু করলো, কি হয়েছে বোঝার জন্য, আবার যেনো তোরাব আলী শব্দটা শুনতে পেলো
ঃ"হেহ হেহ কেকমন আআছো?.. আআমি ববলছি , তোতোমার পাপাশ থেথেকে...."
এবার তেরাব আলী বেঝার চেষ্টা করলো শব্দটা কোথা থেকে আসছে, কিন্তু সে কিছুই বুঝতে পারছেনা, মনে মনে সে দোয়া-দরূদ পড়তে লাগলো।
এ বয়সে সে আবার কোন ভূতের পাল্লায় পড়লো কি না। তখনিই আবার শুনতে পেলো সে নাকি নাকি কন্ঠ আবার
ঃ"হেহে তেতোরাব আলী অআমি ববলছি, অআমি টাটাইলস এএর নিনিচ থেথেকে ইইট ববলছি"
এবার তোরাব আলী ভূত দেখার মতো লাফ দিয়ে উঠলো, বাসায় এক ভূতের অত্যাচার থেকে বাচঁতে এখানে এসেছে সে, এ আবার কোন ভূতের পাল্লায় পড়লো সে?.....
যা হোক, সে সাহস করে পাথরটার কাছে গিয়ে হাত দিলো, তখন পাথরটা বললো...
"হেহে আআমিই আআমিই তোমার সাথে কথা বলছি, তেতোমাকে অনেকক্ষন মনখারাপ করে বসে থাকতে দেখে আমি কথা বললাম "
তখন তোরাব আলী বললোঃ তোমার ও কি মন খারাপ?
পাথরঃ মমন তোতো একটু আদটু খারাপই, আমরা আগে কতো স্বাধীন ছিলাম, বুক ভরে নিশ্বাস নিতে পারতাম, আমদের নিজেদের একটা জীবন ছিলো, কিন্তু আজ আমরা বন্দী।
তোরাব আলীঃ তোমাকে আবার কে বন্দী করলো?
পাথরঃ ...হেহে আআগে আমরা অঅনেক স্বাধীন ছিলাম, হঠাৎ গতো কয়েক বছরে আমরদের বন্দী করে ফেলা হলো নানা জাতের ও ধরনে টাইলস লাগিয়ে আমাদের উপর।
তেরাব আলীঃ হে তোমরা তো অনেক দিন অবহেলায় ছিলে, তোমদের খবর নেয়ার মতে তো কেউ ছিলো না, কিন্তু গত বছর কয়েক জুড়ে তোমাদের করে ফেলা হয়েছে একেবারে ঝকঝকে তকতকে।
পাথর: ... হেহে ঝকঝকে না ছাই? আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে আরেকটা বস্তুকে , যেনো ভিন দেশীরা শোষন করতে এসেছে আমাদের।
আমাদের অস্তিত্বকে করে দিয়েছে বিপন্ন।
তোরাব আলীঃ হে, কি যুদ্বাপরাধীর বিচার করবে বলেই তো তোমাদর এভাবে সাজানো হলো, তোমাদের দিকে সরকার আবার সুনজর দিলো, ভালেইতো হলো। আগে তো অনেক অবহেলায় ছিলে, এখন তোমাদের অনেক দাম। সারাদেশ ও পৃথিবি তাকিয়ে আছে তোমাদের দিকে।
পাথরঃ ....হেহে কিকি যে বলো? আমরা কি আগে খারাপ ছিলাম? আমাদের কাছ থেকেই তো কতো মানুষ ন্যায় বিচার নিয়ে ঘরে ফিরেছে, আমরাই তো কতো মানুষকে তার না পাওয়া অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে।
তাই বলে আমাদের উপর ভিন দেশী এই সব পাথর লাগিযে দেবে?
তোরাব আলীঃ তো কি হলো?
পাথরঃ ...হেহে এই পাথরগুলো কে দেখে মনে হয় যেনো আমার প্রতি কি চাপিয়ে দিয়েছে। আমাদের যেনো কোন নিজস্ব সত্ত্বা নাই। আমরা যেনো কিছুই বলতে না পারি, ওদের শেখানো বুলি ছাড়া।
তেরাব আলীঃ তাই? তেমাদের সব কিছুই তো আধুনিক হলো।
পাথরঃ... হেহে আমদের কে নুতন ভাবে রং করা হয়েছে, আমাদের নুতন ফার্নিচার দেয়া হয়েছে, ফ্যানের জায়গায় লাগানো হয়েয়েছ এসি।
কিন্তু কেড়ে নেয়া হেয়েছে আমাদের নিজেদের বিবেক, আমাদরে স্বকীয়তা, আমাদের চিন্তুার স্বাধীনতা, আমাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা। আমরা আজ আামদের চিন্তা আনুযায়ী কথা বলিনা, কথা বলতে পারি না, টাইলস গুলোর মতো আমাদের সবার উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে এক অজানা সিদ্ধান্ত।
তোরাব আলীঃ কেনো তোমাদের এখানে লোকজন সুবিচার পায় না?
পাথরঃ... হেহে না এখন পর্যন্ত পাইনি, কোন সুবিচার কারো প্রতি দেয়া হচ্ছে না। শুধু মাসের মাস, বছর জুড়ে অনেক গুলো মানুষকে আটকিয়ে রাখা হয়েছে কোন আভিযোগ ছাড়া, নেই তাদের বিরুদ্বে কোন প্রকার সুনিদ্বিষ্ট অভিযোগ।
তেরাব আলীঃ এখানে কি দেশের প্রচলিত দন্ড বিধি বা স্বাক্ষ্য আইন অনুসরন করে বিচার করা হচ্ছে না?
পাথরঃ.. হেহে না না ওরা তো যুদ্ধাপরাধী তাই ওদের বিচারের জন্য আলাদা আইন করা হয়েছে, এখানে দেশের প্রচলিত দন্ড বিধি বা স্বাক্ষ্য আইন অনুসরে বিচার পাওয়ার অধিকার তাদের নেই।
তোরাব আলীঃ তাদের কি দেশের সাংবিধানিক আইন অনুযায়ী মৌলিক অধিকার পাওয়ার অধিকার নেই?
পাথরঃ ...হেহে না তাদের সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার পাওয়ার ও কোন অধিকার নেই।
তোরাব আলীঃ তাদের বিরূদ্ধে অভিযোগতো এখনো প্রমানিত হয়নি, তাহলে কেনো তারা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে? কেনই বা তারা অভিযুক্ত হওয়ার আগে এভাবে অঘোষিত দন্ড পেতে থাকবে?
পাথরঃ...হেহে এই আইনে এটাই নিয়ম, এটা যারে ধরে তারে কিন্তু ছাড়ে না।
তোরাব আলী: হাই হাই তাই না কি? তাহলেতো মহা বেঈনসাফি কাজ, আচ্ছা যে সব পাকিস্থানী সেনাকে অভিযুক্ত করা হয়ছিলো তাদের বিচার না করে এদের বিচার করছে যে? ব্যাপারটা কেমন দেখাচ্ছে না?
পাথরঃ ...হেহে ব্যাপারটা তো কেমন যেনো লাগছে, আশপাশে শুনতে পায় যে, এই লোক গুলোর অনেক নাম ডাক তাই তাদেরকে দমিয়ে দেয়ার জন্য নাকি এই বিচার বা বিচারের নামে প্রহসন কারা হচ্ছে।
তোরাব আলী: আচ্ছা অতীতে তো অনেক দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে, তো এদের বিচারের ক্ষেত্রে ওই সব দেশের অনুসরন বা জাতীয়সংঘের কোন দিক নির্দেশনার অনুসরন করা হচ্ছে না?
পাথরঃ না তো? এই সব তো আমাদের এখানে আগে অনুসরন করা হতো, কিন্তু টাইলস লাগানোর পর থেকে করা হয় না।
তোরাব আলীঃ তাহলে কেনো এটাকে আন্তর্জতিক ট্রাইবুনাল বলা হয়ে থাকে???
পাথরঃ সে দিন যেনো উপরে বড় চেয়ার থেকে বলতে শুনলাম..."it is a
domestic tribunal dealing with the international crimes"
তোরাব আলীঃ হা হা তাই নাকি? হাস্যকর।
আর কি কি বলে?
পাথরঃ শুনলাম সে দিন কারা যেনো বলা বলি করছে, যে লোক গুলোর বিচার হচ্ছে তাদের বিচার নাকি আগে গন-আদালতে হয়ে গেছে, তাদের কে নাকি আগেই সাজা দিয়ে দেয়া হয়ে গেছে।
তোরাব আলীঃ ও তাতো মহা অন্যায়।
পাথরঃ হে মহাঅন্যায়, আর আমরা ও এর অংশ হতে যাচ্ছি আনিচ্ছা স্বত্ত্বেও।
তোরাব আলীঃ আনেক রাত হয়েছে ভাই আজ আসি?
পাথরঃ আচ্ছা
তোরাব আলী তার ঘরের পথ ধরলো, এসেছিলো এখানটাতে মনকে একটু হাল্কা করতে,কিন্তু মনটা আরো খারাপ হয়ে গেলো। আর মনে মনে বলতে লাগলো..." কোর্টতে কখনো অন্যায় করতে পারে না, কোর্টের কখনো অন্যায় করা উচিত না।
তাহলে মানুয় যাবে কোথায়?"
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।