আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মূল্যবোধ পুরাতন হয় না।

হরবোলা দেখতে দেখতে গ্রীষ্মের ছুটি এসে গেল। গত বছর গ্রীষ্মের ছুটিতে ফেনী (আমার বাড়ী) গিয়েছিলাম মাত্র দু’দিনের জন্য। পরনে জিন্স ও হাফ-হাতা শার্ট, পায়ে কেডস্, চোখে ফটোসান গ্লাস ও ব্যাকপ্যাক নিয়ে বসলাম স্টারলাইন এসি বাসে। প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা পরে পৌঁছলাম ফেনীতে। বাসায় পৌঁছে নক করতে মা দরজা খুলে দিলেন।

মাকে সালাম করে সামনে এগিয়ে দেখি বড় চাচা সোফায় বসে আছেন। চাচাকে সালাম করে পাশে বসলাম। জিজ্ঞেস করলেন কেমন আছি ও আমার ইউনিভার্সিটি কেমন চলছে। বললাম ভাল আছি। ইউনিভার্সিটি কেমন চলছে তা পত্রিকা ও টিভিতে দেখেন নিশ্চয়ই।

তা দেখি। প্রতিদিন মারা-মারি, আন্দোলন তাই জিজ্ঞেস করলাম। আমি চাচার সাথে হালকা চালে কথা বলছি। বললাম জগন্নাথ আগে কলেজ ছিল। এখন ইউনিভার্সিটি।

কিন্তু দুঃখজনক হল খুব কম লোকে এটাকে ইউনিভার্সিটি হিসাবে জানে। আমি যখন সকাল বেলা বাস ফেল করে রিক্সাওয়ালা ভাইকে জিজ্ঞেস করি-এই রিক্সা জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি যাবে? সে বলে, জগন্নাথ হল? আমি বলি না জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, সদরঘাট। সে বলে, “ওহ, জগন্নাথ কলেজ?” আমার মন খারাপ হয়। আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদেরকেও ঠিক এমন বলে। তারা নিশ্চিত অপমানবোধ করে।

তাছাড়া জগন্নাথে অনেক গঠনমূলক কাজ হয়। যেমন রবীন্দ্র জয়ন্তী, নজরুল জয়ন্তী, পহেলা বৈশাখ, পহেলা ফাল্গুন, স্বরসতি পূজা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পিঠা উৎসব, ফিল্ম শো, বিতর্ক ইত্যাদি যা কদাচ পত্র-পত্রিকা ও বিভিন্ন চ্যানেলে খবর হিসাবে আসে। পক্ষান্তরে ছাত্র আন্দোলন, চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী, ছাত্র-শিক্ষক ধস্তা-ধস্তি এসব নেতিবাচক খবর পত্রিকার প্রথম পাতায় ১ম কলামে ও বিভিন্ন চ্যানেলে হেডলাইনে আসে। তাই আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিচিত করতে নেতিবাচক খবরের কোন বিকল্প নেই। এই বলে হে হে করে হেসে উঠলাম।

চাচা এতক্ষণ যাবত গুণমুগ্ধ ছাত্রের মত আমার কথা শুনছিলেন। হঠাৎ ধমকের সুরে বললেন, “তোমার সাথে সিরিয়াস আলাপ করছি। ” আমি রীতিমত ভ্যাবাচেকা খেলাম। নড়েচড়ে বসলাম। চাচা আমার আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করে বললেন, “তুমি কি এসব পরে ইউনিভার্সিটিতে যাও?” আমি বললাম হ্যাঁ।

অসুবিধা কি? আমি কানাডাতে দেখেছি প্রফেসর থ্রী কোয়ার্টার পরে ইউনিভার্সিটিতে ক্লাসে যায়। চাচা বললেন, “দেখ, আমাদের সামাজিক মূল্যবোধ তাদের মত না। ” তাহলে আপনি কি বলছেন আমি আপনার মত সাদা সূতি পাঞ্জাবী, মোটা ফ্রেমের চশমা ও পায়ে বাটার স্যান্ডাল পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাব? দেখ তুমি কি পরে যাবে সেটা আমি বলছি না। তোমাকে মার্জিত পোষাকে ইউনিভার্সিটিতে যাওয়া উচিত। কারণ তোমাকে দেখে তোমার ছাত্র-ছাত্রীরা শিখবে।

দেখুন আমার ছাত্র-ছাত্রীরা আমাকে কখনও অমার্জিত বলেনি। আপনি আমাকে ক্ষেত বানানোর চেষ্টা করছেন। শুন, আমি পোষাকের কথা বলছিনা-বলছি মূল্যবোধের কথা। হ্যাঁ বুঝেছি, টিভিতে এ্যাড দেখিতো। মাস্টার সাব কি টিন কিনব? কেন, গরু মার্কা মারা ডেউটিন।

এইসব মূল্যবোধের কথা বলছেনতো? প্রতিবেশীতো দূরের কথা-আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা মিছিলে যাবার সময়েও জিজ্ঞেস করে না, মাস্টার সাব কোন স্লোগান দিব? কারণ স্লোগান তাদের তৈরী করা আছে। জ্বলিয়ে দাও, পুঁড়িয়ে দাও, আগুন জ্বালাও, কালো হাত ভেঙ্গে দাও। কিন্তু কোথায়, কার গাড়ীতে আগুন জ্বালাবে, কার হাত ভেঙ্গে দিবে তারা কি একবারও ভাবে? এর প্রত্যুত্তরে চাচা বলে ছিলেন, “পোষাক বদলায়, সমাজ পরিবর্তিত হয় বটে কিন্তু মূল্যবোধ পুরাতন হয় না। ” তবে আশার কথা হলো-আপনার মূল্যবোধের কথা আমার ছাত্র-ছাত্রীরা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনে, ব্যতিক্রম শুধু ছাত্র নামধারী কিছু দুষ্কৃতিকারী। আমার বন্ধু ও সহকর্মীরা শিক্ষক ফোরামে অনেক জ্বালাময়ী বক্তব্য দেয়।

তালি পায়। আমিও তালি পাওয়ার আশায় আপনার মূল্যবোধের কথা বলেছিলাম। সবাই শুনেছে কিন্তু কেউ তালি দেয়নি। চাচা জান, এবার কি বলতে পারি আপনার মূল্যবোধ পুরানো হয়ে গেছে? ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।