আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুরাতন কথা নতুন করে....

মাঝে মাঝে মনে হয় বেরিয়ে পড়ি 'একতারা'টা হাতে নিয়ে......"দরবেশ বানায়া দাও মাওলা.........দরবেশ বানায়া দাও। । । "

এই লেখাটি আমার ব্লগে প্রথম দিকে প্রকাশ করেছিলাম। কদিন আগে সংবাদপত্রে বাংলাদেশের আউটসোর্সিং কম্পানি গুলোর সাফল্যের খবরটা দেখে মনে হলো বাপ‌্যারটা আবার একটু মনে করিয়ে দিই সবাইকে.... আমি আশাবাদী মানুষ।

। । গার্মেন্টস এর কাছ থেকে আমাদের অনেককিছু শেখার আছে। অর্থনীতিতে আমাদের এই সেক্টরটির অবদান আজ আর কেউ অশ্বীকার করতে পারবেনা। ।

তো আমরা আর কতকাল শুধু এটির উপর ভরসা করে বসে থাকবো!!!(যেভাবে ষড়যন্ত্র চলছে...ভয়ই লাগে!!)। আমাদের মনে হয় সময় এসেছে নতুন নতুন ক্ষেত্র খুজে বের করার। বিরক্তিকর লম্বা লখাটি আবারো দিলাম যদি কারো কোন কাজে আসেঃ আমরা যারা বাইরে থাকি পড়াশোনা বা পেশা যে কারনেই হোক না কেন, অনেক কিছুই দেখার সুযোগ পাই যেটা দেখলেই আমাদের প্রথমেই মাথায় আসে ইশ আমাদের দেশে যদি এরকম কিছু একটা করা যেত?? অনেকেই হয়তো বলবেন, এতই যদি দেশপ্রেম তাহলে বিদেশে না তেকে দেশে এসে দেশের জন্য কিছু একটা করছেন না কেন?? আমি বিনীত ভাবে আপনাদের সাথে একমত পোশন করছি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে দেশে গেলে এই বংগ সন্তানদের মাঝে যে সম্বাবনাটুকু থাকে বিভিধ কারনে (বেশীর ভাগ সময়ে নষ্ট রাজনীতির কারনে) তাও নষ্ট করে দেওয়া হয়। সে যাই হোক এ ব্যাপারে প্রতিটি মানুষেরই ভিন্ন দৃষ্টিভংগি ছিল, আছে এবং থাকবে এবং আমাদের উচিত প্রত্যেকের মতামতকে শ্রদ্বার সাথে দেখা।

আজ যে ব্যাপারটি নিয়ে লেখব সেটি হচ্ছে ইন্টারনেট শপিং!! মজার ব্যাপার হচ্ছে আমাদের দেশে এখনো লোকজন শপিং এর পরিবর্তে মার্কেটিং বলতে সচ্ছন্দ বোধ করে....কিন্তু শপিং এবং মার্কেটিং এর মাঝে যে বিপরীতমুখী পাথ্যর্ক অনেকে বুঝলেও বলতে এখনো অভ্যস্ত নয়। আজ 16ই ডিসেম্বর, বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস। আমরা সবাই জানি এ দিনে আমাদের কি বিশাল অর্জন, কিন্তু তাকে আমরা কতটা অর্থবহ করতে পেরেছি বসে বসে সেটাই ভাবছিলাম!!! এখানে এখন চলছে শপিং এর মহোতসব। লোকজন কেনাকাটার জন্য পাগল হয়ে ছুটছে, লন্ডনের কেন্দ্রস্তলে অবসস্তিত অক্সফোর্ড স্ট্রীট এ এখন হাটা মুশকিল। লন্ডনের ব্যস্ততম এই রাস্তায় প্রতি শনিবারে এখন সব ধরনের গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জনসাধারনের কেনাকাটার সুবিধার জন্য।

যদিও পরিসংখ্যান বলছে এবছর লোকজন ঘরে বসে কেনাকাটা করছে অন্যান্য যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক বেশী। ব্যাপারটি আসলেই বেশ মজার একারনে যে, দোকানদার সন্ধ্যা ৮টা বাজলেই তার দোকানের বাতি নিবিয়ে ঝাপি নামিয়ে চলে যাচ্ছে বাসায় পরিবারের সাথে সময় কাটাতে। আর আমরা যারা সারাদিন কাজ করে সময় বের করতে পারি না শপিং এ যাওয়ার কিংবা যারা এই ভিড় ভাট্টায় যেতে পচ্ছন্দ করি না তারা রাতে বাসায় এসে খাওয়া দাওয়া করে নিজের সময়, নিজের ইলেকট্রিসিটি বিল আর ইন্টারনেট বিল দিয়ে দোকানদারের দোকান খুলে বাজার সদাই করছি নিজেদের সুবিধামতো সময়ে নিজেদের পছন্দে। একটু খোলাসা করে বলি, আরগোস এখানকার একটি বেশ জনপ্রিয় ক্যাটালগ বেজড দোকান। এদের দোকানে কোন পণ্যই (সামান্য কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া) সাধারনত সাজিয়ে রাখা হয় না, রাখা হয় স্টোর রুমে।

দোকানে ঢ়ুকলেই চোখে পড়বে সারি সারি ক্যাটালগ, পেমেন্ট কাউন্টার এবং কালেকশান কাউন্টার। ক্যাটালগ থেকে আপানর পছন্দ মতো প্রোডাক্ট পছন্দ করে পাশেই রাখা স্টক চেকারে প্রোডাক্ট নাম্বার দিয়ে চেক করে নিতে পারেন আপনার পছন্দের জিনিসটি স্টকে আছে কিনা? স্টকে থাকলে পেমেন্ট কাউন্টার অথবা সেল্ফ পেমেন্ট কাউন্টারে গিয়ে পেমেন্ট করে দিলে আপনার পছন্দের জিনিসটি চলে আসবে কালেকশান কাউন্টারে অথবা যদি আপনার জিনিসটি বেশী বড় আকারের হয় তাহলে সিলেক্ট করতে পারেন হোম ডেলিভারি অপশনে, তখন আপনার জিনিসটি তারা পাঠিয়ে দিবে আপনার ঠিকানায় আপনার পছনদ করা দিন এবং সময় অনুসারে। একই দোকান থেকে আপনি অনলাইনেও শপিং করতে পারেন। ব্যাপারটা একই!! আপনি তাদের ওয়েব সাইটে গিয়ে আপনার পছন্দ মতো জিনিস ঠিক করে কার্ড (ডেবিট / ক্রেডিট ) এ পেমেন্ট করে অপশন দিতে পারেন হোম ডেলিভারির অথবা আপনার কাছাকাছি তাদের যে কোন স্টোর থেকে জিনিসটি কালেক্ট করার। এখন আমাদের মতো যারা ব্যস্ততার কারনে বা বাইরে যেতে পছন্দ না করার কারনে বা অলসতার কারনে দিনের বেলায় শপিং করতে পারি না তারা আমাদের নিজেদের সুবিধা তো সময়ে দিনে বা রাতে যে কোন সময়ে অনলাইনে বসে তাদের দোকানের ঝাপি খুলে ইচ্ছে মতো শপিং করতে পারি।

এতে ব্যবসায়ী হিসেবে তাদের লাভটা হচ্ছে সে বাসায় বসে থেকেও তার দোকান খোলা রাখছে ক্রেতার খরছে (কারন এ সময়ে তার দোকানে কোন বাতি জলছে না, কোন সেলস্ এসিসটেন্ট না থাকায় তাকে বেতনও দিতে হচ্ছে না, আর কে না জানে এসব দেশে লেবার কস্ট সবচেয়ে বেশী যে কোন ব্যবসা চালানোর জন্য!!!) আর ক্রেতা হিসেবে আমার সুবিধা হচ্ছে আমি আমার পছন্দ মতো সময়ে শপিং করতে পারছি। আর এ সুবিধার কারনেই প্রতি বছরই বাড়ছে ইন্টারনেট শপিং এর ব্যবহার। হয়তোবা অদুর ভবিষ্যতে আমাদের চিরাচরিত দোকানের কনসেপ্টটাই বদলে যাবে। আমি চাই না এটা ঘটুক, কারণ এতে যারা ঘুরে ঘুরে কেনাকাটা করতে পছন্দ করেন (আমিও বোধহয় মাঝে মাঝে কাজটা করতে পছন্দ করি!!!) তাদের সমস্যা হবে। কাগজে পড়ছি আমাদের বাংলাদেশেও এখন হাইস্পিড ইন্টারনেট কানেকশান পাওয়া যাবে অপটিক্যাল ফাইবার এর কারনে, তখন হয়তো আমরা দেশের বাইরে বসেও দেশের দোকান গুলো থেকে শপিং করতে পারবো (কিছুকিছু ওযেব সাইটের মাধ্যমে এখনো করা যাচ্ছে...তবে তাদের সার্ভিস সম্পর্কে এখনো কিছুটা সংশয় রয়ে গেছে)।

ইন্টারনেট বেজড ব্যবসার ভুরিভুরি উদাহরন রয়েছে এসব দেশে। শুধুমাত্র দোকান নয়, রয়েছে সার্ভিস বেজড ব্যবসাও। শুধুমাত্র ইন্টারনেট এর উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে অনেক ব্যাংক, যাদের কোথাও কোন শাখা নেই কিন্তু করে যাচ্ছে ব্যবসা অসম্ভব সাফল্যের সাথে। তেমনি রয়েছে অনেক এয়ার লাইনস (রাইয়ান এয়ার বা ইজি জেট) যারা টিকেট বিক্রি করে শুধুমাত্র তাদের ওয়েব সাইটের মাধ্যমে এবং যাদের কোথাও কোন এজেন্ট নেই। ফলে খুবই কম দামে তারা তাদের সার্ভিস দিতে পারছে।

এসব এয়ার লাইনের মাধ্যমে ইউরোপের যে কোন দেশে যাওয়া যায় অবিশাস্য কম খরচে, এমনকি বেশীরভাগ সময়েই কোচ বা ট্রেনের টিকেটের চাইতেও কম খরচ পড়ে এসব এয়ার লাইনে। কারণ শুধুমাত্র ইন্টারনেট বেজড হওয়ার কারনে তারা তাদের অপারেশান কস্ট কমাতে পেরেছে। কারণ তাদের কোন এজেন্ট কমিশন দিতে হয় না, কোন পেপার খরচ নেই কারণ কাস্টমারকে নিজের টিকেট নিজেই প্রিন্ট করে নিতে হয়, তেমনি নেই কোন অপারেশান কস্ট কারণ তাদের কোন অফিস নেই শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় অফিস ছাড়া। এছাড়াও আরো একটি ব্যবসা গড়ে উঠছে ইন্টারনেট এর উপর ভিত্তি করে। কিছুদিন আগে ডঃ ইউনুস ও একই ব্যাপারটা সম্পর্কে আলোকপাত করেছের একটি অনুষ্ঠানে।

ব্যাপারটি হচ্ছে, উন্নত দেশ গুলোতে প্রতিটি জায়গা এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই 24 ঘন্টা মনিটর করা হয় সিসিটিভি'র মাধ্যমে। সিসিটিভি'র কন্ট্রোল রুম গুলোতে বিভিন্ন শিফ্ট এ কিছু লোকজনকে মনিটরের দিকে দৃষ্টি রাখতে হয় সবসময় দিনরাত 24 ঘন্টা। যে কোন অস্বাভাবিক কোন কিছু দেখলেই তারা রিপোর্ট করে নিকটস্ত পুলিশ স্টেশনে। রাতদিন 24 ঘন্টার এই শিফর্টে রাতের শিফর্টের জন্য কোম্পানি গুলোকে বহন করতে হয় অতিরিক্ত খরচ। কারণ এসব দেশে রাতের শিফর্টে কাজের জন্য লোকজনকে অতিরিক্ত বেতন দিতে হয়।

আর এমনিতেই এখানে এধরনের কাজের জন্য বেতন দেওয়া লাগে কম্পারেটিভলি বেশী। তো যেটা বলতে চাচ্ছিলাম সেটা হচ্ছে হাইস্পিড ইন্টানেট এর কল্যাণে এ ধরনের মনিটরিং জাতীয় কাজ গুলো আমরা নিতে পারি আমাদের দেশে। কারণ আরো একটি ব্যবসা ছিল যেটা আমরা আমাদের দেশে নিতে পারিনি আমাদের লোক জনের ইংরেজী বলা এবং বোঝার দূর্বলতার কারনে। সেটি হলো কল-সেন্টার। হয়তো অনেকেই ব্যাপারটির সাথে পরিচিত।

ব্যাপারটি হলো, এসব দেশে বেশীর ভাগ বড় বড় কম্পানী তাদের কাস্টমারদেরকে টেলিফোনের মাধ্যমে সার্ভিস দিয়ে থাকে এবং টেলিফোনের মাধ্যমে কাস্টমারের কাছ থেকে অর্ডারও নিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে কাস্টোমার একটি নাম্বারে (বেশীর ভাগ সময়ে নাম্বারটি হয় ফ্রী নাম্বার, যেটিতে ফোন করলে কাস্টমারের কোন বিল আসবে না) ফোন করে এবং কলটি চলে যায় কোন কল সেন্টারে এবং সেখান থেকেই কাস্টমারকে যাবতীয় সাপোর্ট দেওয়া হয়। কল সেন্টারটি হয় সাধারনত একই দেশের এমন কোন স্থানে যেখানে অফিস খরচ কম অথবা অন্য কোন দেশে যেখানে অফিস এবং লেবার কস্ট দুটোই কম। এখানকার (বৃটেন) অনেক বড় বড় কোম্পানীর (টেলিফোন জায়ান্ট বিটি, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার এওএল বা এইচএসবিসি ব্যাংক প্রভৃতি) কল সেন্টার রয়েছে ইন্ডিয়ায়। আমরা যখনই এসব কোম্পানীর কাস্টমার সার্ভিস এ ফোন করি কলটি তখন চলে যায় ইন্ডিয়ায় এবং সেখান থেকেই দিবারাত্রি 24 ঘন্টা আমরা টেলিফোনের মাধ্যমে সেবা পাচ্ছি।

এভাবে কোম্পানী গুলো কম খরচে 24 ঘন্টা তাদের কাস্টমারকে সার্ভিস দিতে পারছে। এ ধরনের কল সেন্টারের ব্যবসাটি ইন্ডিয়ায় এখন বেশ জমজমাট। পশ্চিমা দেশ গুলো থেকে এভাবেই ইন্ডিয়া তাদের যোগ্যতা বলে আয় করে নিচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা যেটা আমরাও হয়তো করতে পারতাম। যাই হোক যেটা পারিনি সেটা নিয়ে আফসোস করার চাইতে সামনে আর কি কি সুযোগ এবং সম্ভাবনা রয়েছে সেটা নিয়ে চিন্তা, গবেষনার পাশাপাশি কিভাবে এই সুযোগ গুলোকে দ্রুত কাজে লাগানো যায় সে ব্যাপারে আমি সবার পরামর্শ কামনা করছি এই সাইটের মাধ্যমে। সিসিটিভি মনিটরিং যেটার ব্যাপারে বলছিলাম, আমরা কল-সেন্টার এর সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারিনি সঠিক জনবলের অভাবে কিন্তু সিসিটিভি মনিটরিং ব্যাপারটিতে যেহেতু খুববেশী দক্ষ জনবলের প্রয়োজন হয় না, আমরা কি পারি না এব্যাপারে কিছু একটা করতে??? আমাদের যা করতে হবে তা হলোঃ এখানকার কোম্পনীগুলুকে বোঝানো যে আমরা অত্তন্ত্য কম খরচে প্রপার এফিশিয়েন্সির মাধ্যমে কাজগুলো করতে পারি।

আমাদের হাইস্পীড ইন্টারনেট কানেকশান তো রয়েছেই, শুধু পুরো ব্যাপারটা কিভাবে কাজ করে তা বোঝা এবং বোঝানোর ব্যবস্তা করা। আমি জানি ব্যাপাটি বলা যতটা সহজ ঠিক বাস্তবায়ন করা ততটা সহজ হবে না। কিন্তু আমরা যদি আমাদের গার্মেন্টস শিল্পের দিকে তাকাই তাহলে কি কিছুটা উতসাহ পাই না?? এ শিল্পের শুরূটা যারা করেছিলেন তারা পথ দেখিয়েছেন অনেককেই। খুব বড় ধরনের কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই শুধুমাত্র অভিগতা নিয়েই আমাদের দেশে গড়ে উঠেছে অনেক গার্মেন্টস উদ্যোক্তা। আমাদের মাঝে যারা বাইরে আছি তারা তাদের সাধ্যমতো পরামর্শ ও কর্মক্ষেত্রের লিংক কাজে লাগিয়ে সিসিটিভি মনিটরিং এর সম্ভাবনাটুকুকে আমাদের দেশে নিয়ে যেতে পারলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের আরো একটি বিশাল সম্ভাবনার পাশাপাশি আমাদের ছোট্ট গরিব দেশটির বেকার সমস্যার সমাধানের পথেও রাখতে পারবে বিশাল একটি ভূমিকা।

শাহরিয়ার । । । ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।